৫৫। ফেনীতে পাকবাহিনীর নৃশংসতার কাহিনী (৪৫২)
সূত্র – দৈনিক আজাদ, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২
নরহত্যা, অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞই ওদের কাজ ছিল
ফেনীতে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কাহিনী
(নিজস্ব সংবাদদাতা)
লক্ষাধিক শরনার্থীর দেশে প্রত্যাবর্তন ও তথায় কর্মচাঞ্চল্য শুরু হওয়ার পর জেলার ক্ষয়ক্ষতি ও গণহত্যার আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
প্রকাশ, ফেনী মহকুমার ১ লক্ষ ২০ হাজার শরনার্থীর মাঝে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ফিরে এসেছে। এদের লুন্ঠিত দ্রব্যাদি পুনরুদ্ধার ও দখলকৃত সম্পদ দেয়ার জন্যে গণপরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গুলো দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে যে, গত ২৩ শে এপ্রিল পাক হানাদাররা ফেনীর মহকুমায় প্রবেশকালে সর্বপ্রথম দরবেশ আবদুল কাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। তারা ফেনী শহরে প্রবেশকালে দেওয়ানগঞ্জ, আমতলী ও শহরতলীতে কয়েকশ লোককে হত্যা করেছিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত দেওয়ানগঞ্জের ট্র্যাংধক রোডের পার্শ্বে বহু নরকংকাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। শহরের উপকন্ঠে একটি সরকারী ভবন সংলগ্ন বধ্যভূমিতে শতশত দেশপ্রেমিককে ধরে এনে হত্যা করা হয়।
একই আওময়ে বর্বরেরা মার্চেন্ট সমিতির কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারকে অপর ৮ জনের সাথে বেধে গুলী করে হত্যা করে। ফেণী কলেজের পাশ্ববর্তী একটি গোপণ বধ্যভূমিতে বাহির থেকে বহু লোক ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে। এ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী একজন রেলকর্মীর কাছ থেকে এ সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়া ধুমাঘাট রেলওয়ে পুলের পার্শ্বে বৃদ্ধ যুবক ও অগণিত বালককে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। জনৈক উর্দুভাষী স্টেশনের অদূরে এক বাংগালী ভদ্রলোকের বাড়িতে তিনটি বয়স্কা মেয়েসহ আশ্রয় নিয়েছিল। হানাদারেরা তাকেও রেহাই দেয় নি। পরিবারের সকলকে হত্যা করে আর মেয়ে তিনটিকে নিয়ে যায়। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। পাক বর্বরেরা ধুম এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ৩ শতাধিক লোককে হত্যা করে আর ১০২ টি ঘর ভস্মীভূত করে দেয়। মে মাসে ফেনী স্টেশনের পেছনের ডোবায় বহু অফিসার কে হত্যা করে নিক্ষেপ করা হয়েছে।
পাক হানাদারদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল কুখ্যাত মহকুমা প্রশাসক বেলাল আহমদ খান। ফেণীতে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল সে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে সে বহু বিশিষ্ট লোককে হত্যা ও তাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত করতে সহায়তা করেছিল। রাজাকার ও বদর বাহিনীর শয়তানেরা বহু বিশিষ্ট লোককে হত্যা করেছিল। ফেণী এলাকার খালবিলে আর নদীতে মাছ ধরার সময় এখনও বহু নরকংকাল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।