বাংলাদেশের শোচনীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে বিবৃতি ও বিতর্ক

শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশের শোচনীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি ও সংক্রান্ত বিতর্ক কমনস সভার কার্যবিবরনী ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 

হাউজ অফ কমনস

বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

পুর্ব বাংলা

 

মি। হীলে (এক ব্যাক্তিগত বিজ্ঞপ্তিতে) পররাষ্ট্র এবং কমোনওয়েলথ সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি এবং তার সরকার কি পূর্ব পাকিস্থানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নীতি প্রনয়নে কোন বিবৃতি প্রাদান করবেন কি না।

 

 

স্যার এলান ডগলাস হিউম, সচিব, বৈদেশিক এবং কমনওয়েলথ বিষয়ক দপ্তরঃ

ইস্ট বেঙ্গলের বর্তমান অবস্থা আমাদের অত্যন্ত ভাবিয়ে তুলছে; ২৩শে জুন পার্লামেন্ট হাউজে আমার বক্তব্যের পর বেশ কিছু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পূর্বের বেসামরিক প্রশাসন এবং সরকার গঠনের  লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রস্তাব করেছেন। একজন বেসামরিক গভর্নর এবং বেশ কিছু বেসামরিক মন্ত্রীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, নির্বাচিত সরকার গঠনের জন্য, সাধারন নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছেন; ১৯৭১ সালের ১ম মার্চ থেকে ৫তম সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছেন। তবে ধারনা করা হয়, এই প্রস্তাব থেকে লাভবান হওয়া, অনেক ব্যাক্তিই ইন্ডিয়াতে পালিয়ে গেছেন।

আমরা এসব উন্নয়নকে নির্বাচিত সরকার গঠনের একটি ধাপ মনে করে স্বাগত জানাই এবং আদেশক্রমে পুর্ব পাকিস্তানকে তাদের সাধারন অবস্থায় ফিরে আসার জন্য আহবান জানাই।

যদিও ইস্ট পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত; ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে, যা বর্তমানে, ইন্ডিয়ান সরকার মতে, প্রায় ৮ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে; এত সংখ্যাক উদ্বাস্তুদের চাহিদা পূরন করা ইন্ডিয়ান অর্থনীতি এবং তার সম্পদের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে; তবে ইন্ডিয়ান সরকার যে ভাবে এত বিশাল জনগোষ্ঠির অন্তঃপ্রবাহকে অবিচ্ছেদ্দ সমর্থন করে যাচ্ছেন, তার জন্য ইন্ডিয়ান সরকারকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই; তবে এরুপ সমস্যা সমাধান শুধু ইন্ডিয়ার একার দায়িত্ব নয়; ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান সরকার ৮মিলিয়ন পাউন্ড, রিলিফ এবং ইন্ডিয়াতে পুনর্বাসনের জন্য লিন্ড প্রদান করেছেন; ইউ থ্যান্টের সাহায্যের আবেদনে, আমরাও ইতমধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড ইস্ট পাকিস্তানে পাঠিয়েছি; আমরা আশা করছি, জাতিসংঘের অন্যান্য দেশও ইউ থ্যান্টের এই সাহায্যে আবেদনে এগিয়ে আসবেন।যেহেতু সংসদে আমি আগে বলেছি, আমরা আরো সাহায্য প্রেরনের জন্য প্রস্তুত আছি।

আমি নিশ্চিত যে, সংসদ আমার এই গভীর উদ্বেগকে গুরুত্বারোপ করে, ইস্ট-পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়াতে আসন্ন খাদ্য সংকট, শিশু মৃত্যুহার এবং রোগ-ব্যাধিকে, রিপোর্টে উল্লেখ করবেন। এটা আমাদের দৃঢ় দৃষ্টি যে, আন্তর্জাতিক রিলিফ ব্যাবস্থাপনা এবং ভবিষ্যতের কোন মানবিক দূর্যোগ প্রতিহত করার জন্য, ইউনাইটেড ন্যাশনস ভুমিকা অনসিকার্য; আমাদের সকলেরই উচিত ইউনাইটেড ন্যাশনস’এর রিলিফ অপারেশনের এমন চেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো এবং তাদের সাহায্যে সপুর্নভাবে এগিয়ে আসা; এই লক্ষ্যে আমি আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে ইউনাইটেড ন্যাশনের সাধারন-সচিবের সাথে বৈঠকের সিন্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে এক যোগে, উপমহাদেশের এহেন সমস্যা দূরকর এবং যথা সম্ভব উদবাস্তুদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে এনে, সাধারন জীবন-যাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করা।

মি. হিলেঃ প্রথমত আমি ফরেইন সক্রেটারি কে তার বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভনন্দন জানাতে চাই, বিশেষ করে, যে আন্তরিকতার সাথে তিনি বক্তব্যটি উপস্থাপন করলেন। আমি বলতে চাই, আমরা সকলেই এটা মানি যে, তার মহিমান্বিত সরকার এই বিয়গান্তক সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকেবেহাল আছেন, কিন্তু, তিনি নিজেই বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান, ইন্ডিয়া বা ব্রিটেইন বা অন্য কোন রাষ্ট্রের পক্ষে বা কিছু রাষ্ট্রের পক্ষে একা সমাধান সম্ভব নয়।

ইউনাইটেড ন্যাশনের সংস্থাগুলো কতৃক, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন না করা গেলে, ক্রিসমাসের আগে, লক্ষাধিক কিংবা তারো বেশী মানুশ মারা জেতে পারে, এ ব্যাপারে মাননীয় বিশিষ্ট সদস্যরা কি অবগত আছেন?

মাননীয় বিশিষ্ট সদস্যরা কি আরো অবগত আছেন যে, এক মাস পুর্বে আমি তাকে বলেছিলাম, মৌসুমি বায়ু শেষ হওয়ার সাথে সাথে, পুর্ব পাকিস্থানে যুদ্ধ লাগার সম্ভবনা আছে, যার ভয়াবহতা শুধু উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না? তাই তিনি যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংহ যাবেন, তিনি কি  এটা নিশ্চিত করবেন, জাতিসংহ, শুধু রিলিফের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেবেন না, বরং তার চেয়ে ভয়াবহ এবং গুরুত্বপুর্ন, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে দায়ত্ব নেবেন?

স্যার এলেক ডগলাস হোমঃ আমি মি. হীলের কাছে, তার বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। যেহেতু তিনি বললেন, এই সমস্যার পরিধি অনেক বেশী, এটি সত্যি আমাদের মাথা ব্যাথার কারন। আমার মনে হয়, পুর্ব পাকিস্থানের এক মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ্য শুরু হতে যাচ্ছে। যদিও আমাদের পক্ষে একেবারে সঠিক তথ্য যোগার করা খুব কঠিন, তবে, রিপোর্ট বলছে, যদিও মোটামুটি পর্যাপ্ত পরিমান খাবার মজুদ আছে, তবে তা সবার কাছে পৌছে দেয়ার জন্য, যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই করূন। তাই, জাতিসংঘের কাছে, অনেক সমস্যার একটি হচ্ছে, কিভাবে এই খাবার, দরকারী জায়গাগুলোতে পৌছে দেয়া।

আগামী সপ্তাহে ইউ থ্যাণ্টের সাথে বৈঠকে, আমি এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং তার সাথে, আমেরিকান রাষ্ট্র সচিব এবং অন্যান্য যারা এই সমস্যার রিলিফ এবং মানিবিক ব্যাপারে আলোচনায় আগ্রহী, তাদের সাথেও বৈঠক করবো।

রাজনৈতিক ব্যাপারে, একটা বন্দোবস্ত দরকার, যাতে, ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্থানে ফেরা উদবাস্তুদের সার্থ্য রক্ষা হয়। এটা আরো জটিল বিষয়, এবং উভয় পক্ষের সম্মতি ব্যাতিত, জাতিসংঘের একার পক্ষে এই ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়।করব।যেহেতু, যতদূর আমি জানি, পাকিস্থান, উদবাস্তূদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে, তাদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের যে কোন সংখ্যক কর্মীবৃন্দকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইন্ডিয়া এই ব্যাপারে জাতিসংঘের সাথে কাজ করতে অমত প্রকাশ করেছে, এবং তাদেরকে পাকিস্থানে ফিরে গিয়ে, পাকিস্থানের সাথে কথা বলার আহবান করেছে।

মি। হীলেঃ আমি পররাস্ট্র সচিবের সাথে একমত যে, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান উভয়ের সম্মতি ছাড়া, জাতিসংঘের একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান খুব জটিল, কিন্তু, তিনি কি এই ব্যাপারে অবগত নন, যদি জাতিসংঘ তার নিজের মহাসচিবের কথা মত কাজ না করে, তবে, তা শান্তি এবং লক্ষ্যাধিক মানুশের জীবনের জন্য মারাত্নক ঝুঁকির কারন হতে পারে? যদি ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান, উভয়ের সম্মতিতে কোন সমাধানে না পৌছানো যায়, তবে, তিনি যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের অধিদপ্তরে যাবেন, তিনি কি নিরাপত্তা পরিষদে এই ব্যাপারে সম্পুর্ণ আলোচনা করবেন?

স্যার আলেক ডগলাস হোমঃ নিউ ইয়র্কে আমি ইন্ডিয়ান পররাষ্ট্র মন্তীর সাথে দেখা করবো এবং এই ব্যাপারে আলোচনার চেষ্টা করবো। আমি জানি না, এই ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা কতটা সাহায্য করবে, তবে, আমি নিশ্চিত, যদি ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান এই ব্যাপারে জাতিসংঘের সাথে সহোযগীতা না করে, তবে তার পরিনতি যুদ্ধ দিয়ে হবে।

মি। ব্রেইনীঃ এটা কি সবসময় সঠিক যে, পর্যাপ্ত পরিমান খাবার থাকা সর্তেও, শুধুমাত্র, যোগাযোগ ব্যাবস্থার কারনে, সঠিক ভাবে বিতরণ না করার জন্য দুর্ভিক্ষ্য শুরু হয়? আমার সন্মানিত প্রিয় বন্ধুরা কি এই ব্যাপারে অবগত আছেন যে, পুর্ব পাকিস্থানে জাতিসংঘের মাঠ কর্মীরা বলছে, যদি জাতিসংঘ কোন পদক্ষেপ না নেয় তবে, কল্পনাতীত এক বিপর্যয়ের জন্ম দেবে আর এই বিপর্যয়ের ফলে, পাকিস্থান থেকে ইন্ডিয়াতে গমনরন উদ্বাস্তু দের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেবে, কারন, ক্ষুদার্থ মানুশ এক জায়গায় থেমে থাকে না? তাই আমি কি আমার সন্মানীত বন্ধুকে, তার পেশকৃত বক্তব্য বাস্তবায়নে জোর দিতে পারি? আমি নিশ্চিত যে, তিনি, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের মিটিংএ, যে সকল সরকার, ইউ থান্টের আপীল, যা কিনা শুধু পুর্ব পাকিস্থানের মানবীক রিলিফ সম্পপর্কীত না বরং ইন্ডিয়ার এই অসহনীয় উদবাস্তু সমস্যা সমাধানের ব্যাপার্‌ উদাসীন ছিলেন, তাদের মনোযোগ আকর্ষনে সক্ষম হবেন।

স্যার আলেক ডগ্লাস হোমঃ আমি আমার মাননীয় বন্ধুর আবেদনকে সমর্থন জানাই। আমি শুধু ইউ থ্যান্টের সাথেই দেখা করবো না, বরং এই সকল বিষয় উপস্থাপন করে, সমাবেশে বক্তব্য উপস্থাপন করবো। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয়, এই সমস্যা সমাধানে, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান, উভয় পক্ষের সহযোগীতা।এক পক্ষের অমতে, এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

মি। স্টোনহাউজঃ পররাষ্ট্র সচিব কি এই বিষয়টি উত্থাপন করবেন যে, তিনি এই সমস্যায় যেভাবে মানবিক এবং সহানুভুতিপুর্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে তিনি এবং সংসদ, উভয়ই ব্যাপকভাবে প্রস হয়েছে? তিনি কি সাধারন সভায় তার বিবৃতিতে, এই ভয়ংকর অবস্থার কথা উল্লেখ করে, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আবেদন করবেন, তা পাকিস্থান কর্তৃপক্ষের অমতে গেলেও, কারন যতদুর শোনা যায়, পুর্ব পাকিস্থানে বেসামরিক যুদ্ধের সম্ভবনা আছে, আর যেহেতু, পাকিস্থান আর্মি সম্পুর্ন পুর্ব পাকিস্থান নিয়ন্ত্রন করে না, কারন তার অনেক বড় একটা অংশ বাংলাদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়? তিনি কি তার বিবৃতির আলোকে স্বীকার করবেন না যে, শেখ মুজিবকে মুক্তি না দিলে এবং তাকে এই আলোচনার সামীল না করলে, এই অবস্থার নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ মাননীয় মহাদয়, যেহেতু আপনারা জানেন যে, আমরা ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে পাকিস্থানের প্রেসিডেন্টের কাছে বিচারে ক্ষমাশীলতা প্রদানের আবেদন করেছি এবং বিষয়টি এখন দেখা হচ্ছে। আমরা মনে হয়, আমরা এর চেয়ে বেশী কিছুই করতে পারি না, তবে আমরা বেশ আশাবাদী।মানিনীয় মহাদয়, আমি এই সকল বিষয় নিয়ে ইউ থ্যান্টের এবং জাতিসংঘের সাথে আলোচনায় উপস্থাপন করবো এবং আশারাখি ফিরে এসে সংসদে বিবৃতি পেষ করবো।

 

মি। পার্ডোঃ আমি মাননীয় অ্যালেক ডগলাস্কে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই, ব্রিটিশ সরকারের এমন সাহাজ্যের জন্য। কিন্তু তিনি কি আমাদের, বর্তমানে শেখ মুজিবের শারিরীক অবস্থা এবং তিনি কবে নাগাদ মুক্তি হতে পারেন, এই অবস্থা সম্পর্কে ধারনা দিতে পারেন, যেহেতু তার মুক্তি ব্যাতীত, অবস্থা নিয়ন্ত্রের কোন সম্ভবনা নেই? পররাষ্ট্র সচিব কি আমাদের আরো বলতে পারেন যে তিনি কমোনওয়েলথ ভুক্ত দেশের সাথে, সম্মিলিতভাবে পাকিস্থানের উপর জোর করার ব্যাপারে কি বলেছেন?

স্যার অ্যালেক ডগলাসঃ অনেক দেশই পাকিস্থানের প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছে। এটাই আমি জানি। আমার মনে হয়, এর চেয়ে বেশী প্রকাশ্যে কিছুই বলা আমার পক্ষে অনুচিত।

মিঃ বিগস-ড্যাভিসনঃ পুর্ব পাকিস্থানে  দুর্ভিক্ষের প্রভাব এড়ানোর জন্য সকল ব্যাবস্থা কি গ্রহন করা হয়েছে? আমি জতদুর জানি, পাকিস্থান সরকারের যানবাহন ক্রয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল এবং কিছু চালান বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আমার মানিনীয় বন্ধু কি, এই ব্যাপারটা একটু দেখবেন যে, কি করা জেতে পারে?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাসঃ আমরা ইতিমধ্যে রিলিভ বিতরনের জন্য ভাসমান নৌকা দিয়েছি, এবং আমাদের সাধ্যের ভিতরে আর যা যা বিতরণ করতে পারি, আমরা তা করবো; কিন্তু যেহেতু আমার মাননীর বন্ধু বলেছেন, এই মুহুর্তে যাতায়াত ব্যাবস্থাটা প্রধান সমস্যা, খাদ্য বিতরন না।

মিঃ প্যাজেটঃ আমার প্রিয় বন্ধু কি একমত প্রকাশ করবেন যে, দুর্ভিক্ষ এবং উদবাস্তু সমস্যা সমাধানের পর, প্রধান ইস্যু হবে, পুর্ব পাকিস্থানের অধিকাংশ মানুশ, অপ্ল সংখ্যাক পশ্চিম পাকিস্থানিদের এমত আচরনের কারনে, পাকিস্থানী আর্মির শাষন ব্যাবস্থা আর মেনে নেবেন না? আমরা কি, ১৫০০ মাইল দূরে অবস্থিত এই দুটি রাষ্ট্রের, ভংগন ঠেকাতে কিছু করতে পারি?

স্যার আলেক ডগ্লাস-হোমঃ আমি জানি না, আমরা এই দুটি রাষ্ট্র পৃথক হয়ে গেলে, শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় আমরা আসলেও কিছু করতে পারি কি না। আমি মনে করি, অনেক ব্যাক্তি, আশংকার সাথে এই ব্যাপারটি দেখছেন। প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, সাধারন নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকার গঠনে তার উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন। আমি মনে করি, তার এই উদ্দেশ্য পুরনের উপর এই অবস্থার সার্বিক অবস্থা নির্ভর করছে।

মি। মৌলেঃ আমি জনাব স্টোন হাউজের সাথে একমত হয়ে, মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব কে, এরুপ বিষাদগ্রস্থ অবস্থায় তার এই মানবিক এবং দ্রুত উদ্যোগকে স্বাগত জানাই; কিন্তু, মানিনীয় সচিব কি অবগত আছেন যে,   প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এই গনতান্ত্রিক সরকার গঠনের আলোচনা কি সত্যিই তাদের কাছে স্বাগত হবে, যারা দেখেছে, শেখমুজিবের অপরাধ এবং তার কারাবরনের কারন ছিল, গনতান্ত্রিক সরকার গঠন এবং তার অধিকাংশ সংখ্যা প্রাপ্তি? মানিনীয় সচিব কি আরো অবগত আছেন যে, পাকিস্থানী আর্মি অনেক সেচ্ছা সেবক সংস্থা, বিশেষ করে, ওয়ার অন ওয়ান্টএর মত সংস্থাদের বাংলাদেশে রিলিফ এবং ত্রান প্রদানে জেতে দিচ্ছেন না?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ আমি জতটুকু জানি, পাকিস্থানী সরকার, স্বেচ্ছা সেবক সংস্থাদের ব্যাপারে খুব আশাবাদী, তবে তারা চায়, যেসব জাগয়া বন্যা দ্বারা ক্ষতিগ্রাস্থ সে সব যায়গা, সে সব যায়গায় রিলিফ এবং ত্রাণ কার্যক্রম চলুক। তবে আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে চাই, জাতিসংঘের পুরা ত্রান ব্যাবস্থাকে পর্যালোচনা করা উচিত। এছাড়া এখানে অনিশ্চয়তা রয়ে যাবে। কিন্তু আমি আশাবাদী, স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা গুলোকে কাজে লাগানো হবে।

মিসেস। হার্টঃ মি। হিলের এ যাবত বিবৃতি থেকে এটা কি আমরা বলতে পারি, তিনি এই ব্যাপারে একমত যে, সুষ্ঠূভাবে খাদ্য বিতরনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক উপস্থিতি দরকার, তানাহলে এই, কোন পদ্ধতি  অবলম্বন না করে, ত্রান বিতরন করা হলে, তা সামরিক উদ্দ্যশে ব্যাবহার হতে পারে?

দ্বিতীয়ত, মি। হীলে, কি সম্পূর্ণভাবে অবগত আছেন, ওইসব প্রশ্নের ব্যাপারে, যা ব্রিটেইনের বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা দ্বারা উল্লেখিত হয়েছে?

তৃতীয়ত, জনাব হীলে যখন নিউ-ইউর্কে যাবেন, তিনি কি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পাকিস্থান এইডের কন্সোরটিয়ামের সাথে আলোচনায় করবেন, যেন ইয়াহিয়া খানকে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা স্থীতিশীল করার জন্য একটি অকৃত্রিম ব্যাবস্থা গ্রহন করতে তাড়না প্রদান করা হয় এবং ইন্ডিয়াকে অতিরিক্ত অর্থনৈতক সাহায্য প্রদান করা হয়?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ আমার মনে হয়, একটি গুরুত্বপুর্ণ আন্ত্ররজাতিক উপস্থিতির প্রয়োজন হবে।পুর্ব পাকিস্থানে ইতিমধ্যে ৪০ জন কর্মী কর্মরত আছেন, এবং আমার মনে হয় আরো কর্মীর প্র্য়োজন হবে, বিশেষ করে যারা, যোগাযোগ এবং যাতায়াতের ব্যাপারে অভিজ্ঞ। আমি আগামী কাল স্বেচ্ছা-সেবক সংস্থাগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করবো এবং মিসেস হার্টের উপস্থাপিত প্রশ্নগুলোর নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো; দেখা যাক তারা কতদুর কি করতে পারে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না যে, আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবো কি না, তবে আমি চেষ্টা করবো। পাকিস্থানের সার্বিক সাহায্যের ব্যাপারে, কোন্সোর্টিয়ামের পুরো পাকিস্থানের সার্বিক উন্নয়নে, একটি পরিকল্পনা প্রনয়নের চেষ্টা করছেন। মিসেস হার্ট, আমি মনে করি, পাকিস্থানের সম্মতিক্রমে, কনসোর্টিয়ামে একটি সর্বসম্মত নীতি প্রনয়ন হয়েছিল যে, অধিকাংশ সাহায্য পুর্ব-পাকিস্থানে প্রদান করা হবে, তবে, সেটা নির্ভর করছে সেখান কার রাজনৈতিক গঠন্ততন্ত্রের উপর যাকি না ভবিষ্যত রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা আনবে।

Scroll to Top