বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া কর্মকর্তার প্রতিবেদন

<৪,১৬৭,৩৩০>

অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি   

শিরোনামসূত্রতারিখ
১৬৭। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া কর্মকর্তার প্রতিবেদন

 

সমিতির দলিলপত্র২৭ সেপ্টেম্বর,১৯৭১

 

              বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বৃটিশ কলম্বিয়া

                 ৯০৫-৫৫০ পশ্চিম ১২তম এভিনিউ,

জয় বাংলা        ভ্যানকভার ৯, বি. সি. , কানাডা

                    টেলিফোন: (৬০৪)৮৭৬-৮৪৫৩

সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯১১.

প্রায় ছয় মাস হলো যখন থেকে বাংলাদেশের (অতীতের পূর্ব-পাকিস্তান) পঁচাত্তর মিলিয়ন মানুষ শুধুমাত্র তাদের মৌলিক অধিকার দাবি করতে একটি সংগ্রামেই লিপ্ত হয়নি, টিকে থাকার এক ভয়ানক সংগ্রামেও লিপ্ত হয়েছে।

    পশ্চিম পাকিস্তানি সংখ্যালঘুদের কয়েক দশকের বিদ্বেষপূর্ণ শাসনের পর, পূর্ব-পাকিস্তানিরা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলো। ১৯৭০ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে, আওয়ামী লীগ এক পরম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জাতীয় সভায় জয়লাভ করেছিলো। তার ফলাফল ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকদের দ্বারা পূর্ব-পাকিস্তানিদের গণহত্যা, যখন কিনা একটি সুষ্ঠূ-পরিচালিত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এমন একটি ফলাফল দিয়েছিলো যা  সেনাবাহিনী বরদাস্ত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ পূর্ব-পাকিস্তান থেকে আপসারণ চায় না। শেখ মুজিবুর রহমান আগে থেকেই কিছু আন্দাজ করতে পেরে বাঙালি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তিনি মূলতঃ বৈধভাবে যে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়েছিলেন ও নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন, তার চেয়ে বেশি কিছু চাননি।

     নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যার পূর্ব-পরিকল্পিত উপায় অবলম্বন করে, বাছাইকৃত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের ধ্বংস করে এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন সমূলে উৎপাটন করে দিতে হিন্দুদের শিরোচ্ছেদ করে ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী প্রমাণ করেছিলো যে পাকিস্তানের দুই ভাগ ভৌগলিক এক হাজার মাইলের ফারাকের চেয়েও বেশি কিছুর মাধ্যমে আলাদা এবং পূর্ব-পাকিস্তানিদের বাধ্য করেছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিতে।

    সাহায্যের জন্য বাঙালিদের আর্তনাদে বিশ্বের সাড়া ছিলো দুঃখজনকভাবে হতাশাব্যঞ্জক। প্রত্যেকটা দিন বাড়ার সাথে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার মানেই দুর্ভোগ বাড়ার সাথে জান-মালের বিনাশ।

   দুঃখজনকভাবে এই দ্বন্দে যুক্তরাষ্ট্র তার অভিব্যক্ত নিরপেক্ষতা সত্ত্বেও সেই পশ্চিম পাকিস্তানি জেনারেলদের অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন যারা এই রক্তগঙ্গার শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি নিক্সন সম্প্রতি পাকিস্তানিদের কোনরকম সহায়তা দেওয়া বন্ধের কোনরকম নড়চড়ের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। সন্দেহাতীতভাবে আমেরিকার প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ শত হাজার বাঙালির হত্যার জন্য দায়ী, যেখানে পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহায়তা হাস্টিংসে একটি বড় অধিষ্ঠিত সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে যাচ্ছিলো। যুদ্ধে এটা অবশ্যই কোন নিরপেক্ষ অবস্থান নয়। বিশ্বজুড়ে স্বাধীন বিশ্ব এবং গণতন্ত্রের  রক্ষক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তার অধীকৃত ভূমিকার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে, এবং লাখ লাখ ক্ষুধার্ত, অসুস্থ এবং ক্রুদ্ধ শরণার্থীদের ভারতে ধাবিত করার জন্য ও উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতি ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে আংশিকভাবে দায়ী।

    আমরা বাংলাদেশি জনগণ ও মানবতার নামে আপনার বিবেকের নিকট আবেদন জানাই, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে কোনরকম আর্থিক এবং/ অথবা ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনীর গুপ্তসভায় কোনরকম সহায়তা দেওয়া থেকে নিবৃত্ত হতে আপনার সরকারের উপর চাপ দেওয়ার জন্য আপনার সকল প্রকার প্রভাব প্রয়োগ করতে। কেননা এই ধরনের সহায়তা শুধুমাত্র তাদের একগুঁয়েমি এবং গণহত্যার যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। সর্বোপরি আমাদের সঠিক আত্মপ্রত্যয়কে শ্রদ্ধা করতে আমরা আপনার এবং আমেরিকাবাসীর নিকট আবেদন জানাই।

                                            আপনার বিশ্বস্ত,

                                          (ডক্টর এ. এম. খান)

                           বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বৃটিশ কলম্বিয়া