বাংলাদেশ গেরিলা
২৯ আগষ্ট, ১৯৭১
‘গেরিলা’ শব্দটি এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে উচ্চারিত। এ শব্দটা শুনলেই মানসপটে ভেসে উঠে একটা ছবি-রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি চলেছে এক যুবক, কখন ঝড়ের রাতে তার সর্বাঙ্গে ঝরে পড়ছে বাংলা মায়ের আনন্দাশ্র বৃষ্টিধারায়, কখন স্রষ্টার বরাভয়ের মত ঝরে পড়ছে তালনবমীর আধো আধো জোছনা। পরনে কেন নির্দিষ্ট যুদ্ধসাজ নেই। কখন লুঙ্গী, কখন পাজামা, উর্ধ্বাংগে কখন শার্ট কখন ফতুয়া। সে চলেছে শত্রুপক্ষের
কোন গুপ্ত অবস্থানের খবর পেয়ে। অস্ত্র তার দেহের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো কিছুক্ষণ পরেই গর্জন করে উঠবে প্রচণ্ডভাবে…।
এখন প্রশ্ন-গেরিলা কে? তাকে দেখতে কেমন? কী এমন তার মাঝে আছে যা তাকে সাধারণের থেকে স্বতন্ত্র করে তোলে?
প্রথম প্রশ্নের একমাত্র উত্তর : বর্তমানে বাংলাদেশে গেরিলা সবাই। গেরিলা যে কেউ হতে পারে, সে ছাত্র হোক অথবা শিক্ষিত হোক। কৃষক শ্রমিক মজুর মালিক যে কেউই গেরিলা হতে পারে। জীবিকার জন্যে যে -যে পেশায় নিয়োজিত আছে- যেমন মুদি দোকানী, হোটেল বা রেস্টুরেন্টের মালিক, কর্মচারী, রিকশাঅলা, বুদ্ধিজীবী- সবাই গেরিলা। গেরিলা শব্দের অর্থ আরো ব্যাপক হতে পারে। যেমন শত্রুনিধনে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদেরই শুধু নয়, বরঞ্চ যারা সক্রিয় গেরিলাদের প্রকারান্তরে সাহায্য করছে গেরিলা বলতে তাদেরকেও বোঝায়। বাংলাদেশের মা-বোনেরা যারা মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের খাবার দিয়ে বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে সাহায্য করে অশীতিপর বৃদ্ধা, বেঁকে যাওয়া কোমড়ের ভাঁজে মুড়ির ধামা আর লোলচর্ম হাতে জলের বালতি নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনীর জন্যে অক্লান্ত স্মিত মুখে। সেই অর্থে এমন বাংলাদেশের আবলবৃদ্ধবনিতা, কুলি-মজুর, কৃষক-শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী সবাই গেরিলা’।
(শামীম চৌধুরী রচিত)