বাংলাদেশ প্রশ্নে বৃটিশ লেবার পার্টির সিদ্ধান্ত জানিয়ে মিঃ আয়ান মিকার্ডো এম,পি-র চিঠি

<৪,৮৩,১৪৫-১৪৭>

অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৮৩।বাংলাদেশ প্রশ্নে বৃটিশ লেবার পার্টির সিদ্ধান্ত জানিয়ে মিঃ আয়ান মিকার্ডো এম,পি-র চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র ১৩ অক্টোবর,১৯৭১

প্যালেস চেম্বারস
                                                               ব্রিজ স্ট্রিট, লন্ডন এসডব্লিউ১এ ২ জেএক্স
                                                                      টেলিফোন: ০১.৮৩৯২৭২১

 
জনাব এম এ এইচ মিয়া বিকম
৩৭’ বিসকট হাউজ
ডিভাস স্ট্রিট                                                                      
লন্ডন ই৩ ৩এল

 

১৩ অক্টোবর ১৯৭১

জনাব মিয়া,
            আমি আপনার ৩ তারিখের চিঠির জন্য আমার লেবার পার্টি সম্মেলনের বিবরণীতে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে জাতীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক যে বিশ্লেষণটি সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে যা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মেলন ও বাইরের সন্ধ্যার বৈঠকগুলোর উভয়ের বক্তৃতা পড়ে থাকবেন। লেবার পার্টিতে আপনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সমর্থন রয়েছে।
একান্তে,

এসডি/  

                                                                       
জনাব মিকারডো কর্তৃক আদিষ্ট এবং
তাঁর অনুপস্থিতি তে সই করা

                                                             

আয়ান মিকারডো, এমপির পক্ষ থেকে    

                                     ……………………………..

খবর প্রকাশিত

লেবার পার্টির তথ্য বিভাগ থেকে প্রকাশিত
ট্রান্সপোর্ট
হাউজ লন্ডন এসডব্লিউ ১.০১-৮৩৪-৯৪৩৪
তথ্য পরিচালক
: পার্সি ক্লার্ক

 

পিএস ৮৩/৭১
আশু প্রকাশের জন্য


পাকিস্তান

লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক কমিটির আজকের বৈঠকে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আলোচিত হয়েছে এবং নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়েছে

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান মানবীয় সংকট নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এন.ই.সি. ধারণা করে যে, পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান সংঘর্ষের ঝুঁকি বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ,  শুধুমাত্র একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করা ও শান্তির প্রতি হুমকির শেষ ঘটানো যেতে পারে এবং জরুরি অবস্থা ও শরণার্থীদের বর্তমান ভোগান্তির পরিমাণ এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বৃটেনের কাছে একটি মুক্তহস্ত প্রতিক্রিয়া দাবি করে। নিম্নলিখিত আশু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এইচ. এম. সরকারকে সুপারিশ করা যাচ্ছে :

(ক) পাকিস্তানের শান্তির হুমকিস্বরূপ এবং অন্যদের নিরাপত্তা বিপন্নকারী সংঘর্ষ সিকিউরিটি কাউন্সিলে জরুরী প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে।

 (খ) উ থান্টের রিলিফ ফান্ডে বৃটিশ অবদান পর্যাপ্তরূপে বাড়ানো এবং শরনার্থীগত সমস্যায় ভারতকে  অর্থনৈতিকভাবে বাড়তি সাহায্যের জন্য আশু দ্বিপার্শিক প্রস্তাব দিতে হবে।

এন.ই.সি. আরো ধারণা করে যে, এই অবস্থায় এটি ঠিক যে বৃটিশ জনগণের জানা উচিত এইচ.এম. সরকার পাকিস্তান এইড কনসোরটিয়াম এর আসন্ন বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, যা পাকিস্তানের মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটাবস্থা নিয়ে আলোচনা করবে।

     এন.ই.সি. ধারণা করে যে, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধসে গেছে সেখানে উন্নয়নের জন্য সাহায্য অর্থবহ হতে পারে না। অতএব, কনসোরটিয়াম এর আসন্ন মিটিংএ সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যতদিন না পূর্ব পাকিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসা অর্জন করা হয়, ততদিন ত্রাণ এবং ব্যধি ও সংকটাবস্থা নিবারণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জন্য সাহায্য সীমিত হওয়া উচিত কারণ যাদের সাহায্য দরকার তারা আর পাকিস্তানে নেই।

২। ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে না পারায় এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের সময় অনুরূপ প্রযুক্তিগত সমস্যায় কমিটি এইচ এম সরকারকে একটি আন্তর্জাতিক রিলিফ কমিশন প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেয়ার জন্য সুপারিশ করছে। এই কমিশন দ্রুত গঠন করা উচিত এবং ত্রাণ, পরিবহন ও বৃহৎ সংস্থা দক্ষতার সহিত সুবিন্যাশ করা উচিত। এমতাবস্থায় কমিশন পাকিস্তানে চলমান বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী জাতিসংঙ্ঘ কর্তৃক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রাকৃতিক এবং মানুষসৃষ্ট দুর্যোগে জীবন বাঁচাতে কমিশন শীঘ্রই ত্রাণ সরবরাহের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জরুরী ওষুধ সরবরাহ করবে এবং প্রয়োজনে বর্তমান অবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেবে যতক্ষণ দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা যাচ্ছে। এই কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে এইচ.এম. সরকারের উচিত সম্পূর্ণ বৃটিশ অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।



জুন ৮, ১৯৭১
                              ——————————–

                                                                                আইডি/১৯৭০-৭১/৯৩

 


            পাকিস্তানের বিষয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিবৃতি

আলোচনাসভা বাংলায় সংঘটিত হওয়া ভয়ানক দুঃখজনক ঘটনায় ভীতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা মনে করে যে, পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলার মানুষের সহ্য করা ভয়ানক দুর্ভোগের দায়িত্ব নিতে হবে এবং আলোচনাসভা পাকিস্তান সরকারকে জনগণ ও পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে মিলিটারি বাহিনীর অহেতুক ব্যবহারের নিন্দা জানায়।

শরণার্থী
বিশাল শরণার্থী সমস্যায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়ায় আলোচনাসভা মারাত্মক উদ্বিগ্ন। ভারতীয় সরকার এই সমস্যার কিছু অংশের দায়িত্ব নিয়েছে এবং শরণার্থীদের সহযোগিতার সকল দায়িত্ব নেয়ার জন্য আলোচনাসভা একটি জাতিসংঘ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেছে। আলোচনাসভা এরকম একটি সংস্থাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য এবং ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে ত্রাণের বর্তমান জরুরি সমস্যার সাথে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বৃটিশ সরকারকে সুপারিশ করে।

সহযোগিতা

আশানুরূপ রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার অর্থ দাঁড়াবে একটি নিন্দিত মিলিটারি শাসনব্যাবস্থায় ভর্তুকি প্রদান। অতএব, আলোচনাসভা সকল দেশ ও বিশেষ করে পাকিস্তান এইড কনসোরটিয়াম এর সদস্যদের পূর্ব বাংলার জনগণের সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের জরুরি মানবিক সহযোগিতা প্রতিরোধ করতে সুপারিশ করছে।

রাজনৈতিক

সমাধান

আলোচনাসভা মনে করে যে একটি রাজনৈতিক সমাধানে তখনই পৌঁছানো যাবে যখন:

১।পূর্ব বাংলায় সামরিক অত্যাচার বন্ধ হবে।

২। পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান কে কারামুক্ত করা হবে।
পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত এবং জনগণ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য নেতাদের সাথে যেকোন রাজনৈতিক সমাধানের বন্দোবস্ত করা উচিত।

শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ

আলোচনাসভা ধারণা করে যে, ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান অবস্থা বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ। অতএব, পূর্ব বাংলার মানুষের ইচ্ছানুযায়ী রাজনৈতিক সমধানের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সরাসরি অংশগ্রহণ করা উচিত। আলোচনাসভা বিষয়টিকে জাতিসংঘের চলমান বৈঠকে উত্থাপন করার জন্য বৃটিশ সরকারকে সুপারিশ করেছে।

Scroll to Top