বাংলার মুখ
২২ নভেম্বর, ১৯৭১
হেমন্তের সন্ধ্যা দ্রুত নেমে এলো। আমরা এখানে এসে পৌঁছুনোর অপেক্ষাতেই যেন সে বসেছিলো। এসে পৌঁছুনোর সঙ্গে সঙ্গে তুরা পড়ে গেল। আমার চার পাশে, সমুখের ওই বিস্তীর্ণ মাঠের ওপর আর এই দূরের গ্রামগুলোর কোলে ঘেষে ঘেঁষে নীল ধোঁয়ার মতো কুয়াশারা জমে উঠেছে। চাপা কান্নায় ভেজা দৃষ্টির মতো হালকা কুয়াশার জমে উঠেছে ঢাকার উপকণ্ঠের এই বনানীর প্রান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
একটু আগেই আমরা এই ছোট্ট উপবনটিতে এসে পৌঁছেছি। আমাদের সঙ্গে বেশ কিছু জিনিসপত্র মেশিনগান। এ সবই আমরা পেয়েছিলাম শালদা নদীর তীরে পাকিস্তানী-সৈন্যদের বেলুচ রেজিমেন্টের ১০৩ ব্রিগ্রেডের একটা কোম্পানীর সঙ্গে প্রচণ্ড এক লড়াইয়ের পর। এই লড়াইয়ে শত্রুপক্ষের ১৪৩ জন নিহত হয়েছিল। আর আমাদের পক্ষে একজন বীর মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তিনজন আহত হছেন। শালদা নদীর তীরের এই লড়াইকে আমরা আমাদের কোন বড়রকম বিজয় বলে মনে করি না। কারণ এ লড়াইয়ে আমাদের একজন মুক্তিসেনারও আহত হওয়ার কথা ছিল না। এই লড়াইয়ে আমাদের গেরিলা বাহিনীর যে ইউনিটটি অংশগ্রহণ করেছিলো তারা প্রত্যেকেই ছিলেন সুশিক্ষিত, অধিকাংশই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র। আমাদের আক্রমণ অভিযানের পরিকল্পনাটিও ছিলো নিখুঁত। পরিকল্পনা অনুযায়ী শত্রুবাহিনীর প্রতিটি সৈন্য নিহত হবার কথা ছিলো। কিন্তু ওদের কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ গরম আলোচনা হয়েছে, আমাদের সামান্যতম ভুলত্রটি ও শিথিলতার কঠোর সমালোচানাও করা হয়েছে।
কিন্তু যে কথা বলছিলাম, আমরা পাঁচজন মুক্তিসেনা সঙ্গে করে যেসব অস্ত্রশস্ত্র এনেছি ওজনে বেশ ভারী ছিলো। আমাদের এক-একজনের ওজন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিলো। এগুলো পিঠে-কাঁধে ঝুলিয়ে একটানা বেশ কয়েক ঘণ্টা আমাদের হাঁটতে হয়েছে। হাঁটতে হয়েছে নদীতীরের বালুকারাশির ওপর দিয়ে, মাঠের ওপর দিয়ে, মাঠ পেরিয়ে জলাভূমি ভেঙে ভেঙে। আবার কখনো হেঁটেছি ছবির মতন শান্তস্নিগ্ধ ছোট ছোট সব গ্রাম আর ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দিয়ে।
স্বাভাবিকভাবেই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। পিঠে আর কাঁধের বোঝা নামিয়ে আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী হাতিয়ারটা নিয়ে অপেক্ষাকৃত হালকা একটা ঝোপের পাশে এসে বসলাম। সঙ্গীরাও আমার পথ অনুসরণ করলো।
এই উপবনটিতে এসে পৌছুনোর পরমুহুর্ত থেকেই একটা পাখির ডাকের জন্যে আমি উৎকর্ণ হয়ে ছিলাম। বাংলাদেশের এমনি সব বন-উপবন মুখর করা একটি অত্যন্ত পরিচিত পাখির ডাক।
সৌভাগ্যক্রমে আমাকে বেশীক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে থাকতে হলো না। কয়েক মিনিট পরেই শুনতে পেলাম আমাদের সেই আকাংক্ষিত পাখির ডাক। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাঁচজন সঙ্গীত একজনের কণ্ঠে সে ডাক প্রতিধ্বনিত হলো। একটু পরেই দেখতে পেলাম তিনজন শীর্ণকায় লোক। গ্রামের সাধারণ ক্ষেতমজুর ছাড়া তাদের আর কিছু মনে করা সম্ভব নয়। এদের আগে কখনও দেখিনি। এরা তিনজনই ভয়ংকরভাবে রোগা। এদের বুকের পাঁজরের হাড়গুলো মাঠের বা গ্রামের খাল-নালার ওপরকার বাঁশের সাঁকোর মতো উচু উচু। এরা তিনজনেই আমাদের গেরিলা বাহিনীর অত্যন্ত দক্ষ সৈনিক। আগে ইপিআর প্যারামিলিটারী গ্রুপে কাজ করতেন। তাদের সঙ্গে আমরা অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় আলোচনা সেরে নিলাম। আজ রাতেই এই এলাকা আমরা ছেড়ে যাবো। যাবো-ঢাকা শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে, শত্রুবাহিনীর চেকপোষ্টগুলোর কাছাকাছি। ওই তিনজনের
সঙ্গে কথাবার্তার পর বুঝলাম এ স্থান ত্যাগ করতে আরও ঘন্টা তিনেক লাগবে। গভীর অন্ধকারের মধ্যে আমাদের এগোতে হবে এবং তাও ওদের সিগন্যাল পেলে তবেই। সুতরাং হাতে আমাদের অঢেল সময়। ওরা আমাদের জন্যে কিছু খাবর এনেছিলেন- ঢেকিভাঙ্গা চালের আটার রুটি আর হাঁসের মাংস। পাশের গ্রামের এক গৃহস্থ পরিবার আমাদের জন্যে এই খাবার পাঠিয়েছে।
হাঁসের মাংসের হালকা একটা গন্ধ পেলাম।- বুকটা কেমন যেন ছ্যাৎ করে উঠলো- বুকের অনেক গভীরে একটা বেদনা, ভারী একটা যন্ত্রণা অনুভব করলাম।
সন্ধ্যার অন্ধকার আর বিক্ষিপ্ত কুয়াশার সিড়ি ভেঙে আমার সমুখে যেন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিলো আমার মা, আমার নিঃসন্তান বিধবা বড়ো আপার মুখ। বুকের ভিতরের যন্ত্রণাটা ক্রমশঃ যেন আমায় আচ্ছন্ন করে ফেলছিলো। হেমন্ত সন্ধ্যায় মাঠের তৃণের মতোই আমার দুচোখ আর্দ্র হয়ে উঠেছিলো।
তাড়াতাড়ি করে কোন রকমে খাওয়া সেরে আমি আবার সেই ঝোপটার পাশে এসে বসলাম। একটা পোড়া সিগ্রেট ধরিয়ে সমুখে তাকিয়ে ছিলাম। সমুখের অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়- দেখা যায় আমার প্রিয় নগরী আমার ঢাকার প্রান্তদেশ পর্যন্ত। চারপাশে বহুদূর বিস্তৃত ঝোপঝাড় থাকলেও এখান থেকে সমুখের অনেক দূর দূর এলাকা দেখতে পাচ্ছিলাম। কারণ, আমি যে জায়গাটিতে বসে ছিলাম সেটি ছিলো বেশ উচুবলা যায়, এই বনান্তরে একটা উচু ঢেউয়ের চূড়ায় বসেছিলাম।
সমুখের দিকে তাকিয়েছিলাম কিছুটা উদ্দেশ্যহীন এক দৃষ্টি নিয়ে। একটু পরেই জুলে উঠলো ঢাকার উপশহর সাভারের আলোকমালা। দেখতে পেলাম ঢাকা বেতারের হাইপাওয়ার ট্রান্সমিটারের টাওয়ার লাইট, লাল একটা জ্বলন্ত বুলেটের মতো ঝুলছে।
সহকর্মীদের সঙ্গে দু’একটা কথার মাঝ দিয়ে আমার সময় কাটছিলো। কাজের কথাই বলছিলাম। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন প্রসঙ্গ যা ঘটনা নিয়েও আমরা কথা বলছিলাম।
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আমরা রওয়ানা হবো। কিন্তু মাঝখানের সময়টা বড়ো অসহ্য মনে হচ্ছিল। আর এই অসহ্য ভাবটা কাটিয়ে ওঠার জন্যেই বেশ কিছুটা নির্ভাবনা ও নির্লিপ্ততার ভাব নিয়ে বিশ্রামের চেষ্টা করলাম। সমুখে ফেলে দেয়া জ্বলন্ত সিগ্রেটের থেকে শেষ ধোঁয়ার শীর্ণ রেখাটি তখন বিসর্পিল গতিতে একে বেঁকে ছোট্ট একটা শটিঝোপের দিকে মিলিয়ে যচ্ছিল।
শঁটিবনে হারিয়ে যাওয়া ওই বিশীর্ণ নীল ধোঁয়ার মতোই মনটা আমার হারিয়ে গেল পিছনে ফেলে আসা নাম-না-জানা অনেক গ্রাম-জনপদ, নদী, নদীর তীরভূমি-মাঠ, মাঠের মাঝখানের বিজন বটগাছটি-আপনমনে ঘাস ছিড়ে খাওয়া কতগুলো গরু। আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম মাঠের একান্তে বাঁধা একটা গরু-লম্বা মুখ তুলে উদাস চোখে তাকিয়ে আছে দূরের গ্রামটির দিকে। দেখতে পাচ্ছিলাম মাঠের মাঝখানে চিলতে একটুখানি জায়গায় জমে থাকা পানির ধারে ধারে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের মতো অসংখ্য বক-কয়েকটা অল্প উচু দিয়ে ইতস্তঃত উড়েছে।
হটাৎ করে আমার চিন্তার নীল বিশীর্ণ রেখাটি যেন শঁঅটি বনে ছড়িয়ে আরো অনেক- অনেক দূরে হারিয়ে গেল। উপশহর সাভারের ওই ঝিলমিল আলোকমালার চেয়ে অনেক স্পষ্ট হয়ে উঠলো আমার গ্রাম-গ্রামের মাঠের সেই বিজন বটতলাটি, যেখানে কেটেছে আমার শৈশবের দিনগুলোর অনেক অলস দুপুর, চারপাশের গ্রামের বৃত্তরেখার অনেক ওপরে ছড়ানো আমার সেই শিশু আমির কল্পনাগুলো যেখানে রামধনু হয়ে থাকতো।
অত্যন্ত গরীব এক কৃষক পরিবারের ছেলে ছিলাম আমি। তবু আমার মা-বাবার সাধ ছিলে, আশাআকাংক্ষা ছিলো-আমি বড়ো হবো, লেখাপড়া শিখে মানুষ হবো-সীমাহীন দারিদ্রের কশাঘাত থেকে পরিবারটিকে বাঁচিয়ে তুলবো। আমার মা-বাবার গোটা জীবন-তাদের আজীবন বাঁচার লড়াই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো লেখাপড়া শিখতে। গাঁয়ের নওশের মাস্টারের পাঠশালে যেতাম। পাঠশালা বসতো সকালে, কারণ নওশের মাস্টারকেও আমার বাবার মতো মাঠে কাজ করতে হতো শুধু পেট চালানোর জন্যেই। দুপুরে আমার মাঠে কাটতো। আমাদের একটি গাই গরু ছিল। পাঠশালার পড়া সেরে আমি তাকে মাঠে চরাতে নিয়ে যেতাম। দুপুরে মাঠের মাঝখানের বটগাছের তলায় বসে যেন এক দারণ একাকীত্ব আমার ঘিরে ধরতো। একটা বাঁশির অভাব আমি বোধ করতাম।
একদিন অনেক রাতে মায়ের কোলে ঘুমানোর সময় মাকে কথাটা বলেছিলাম। মা রাজী হয়েছিলেন, আমাদের গা থেকে দু’মাইল দূরে বৈশাখী মেলা বসলে আমাকে একটা তালপাতায় রাঙা বাঁশি কিনে দেয়া হবে।
এরপর থেকে প্রতিদিন প্রতিটি মুহুর্তে আমার কল্পনার ভাসতে লাগলো তালপাতার একটা বাঁশি। মুহূর্ত দিন গুণতে গুণতে সত্যি সত্যিই সেই দিনটি ফিরে এলো । মা আমাকে দু’আনা পয়সা দিলো। সাতরাজার ধন মানিকের মতো ওই দু’আনা পয়সা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে চঞ্চল এক হরিণশিশুর মতো আমি ছুটে যাচ্ছিলাম। পুকুরের পাড়ে বসেছিলেন ফকির দাদু। আশি বছরের এক সহায়-সম্বলহীন বৃদ্ধ। গাঁয়ের সব ছোটরা তাঁকে দাদু বলতো। আমাকে ওভাবে ছুটে যেতে দেখে তিনি আমায় ডাক দিলেনঃ কোথায় যাচ্ছো দাদুভাই। হাঁপাতে হাঁপাতে আমি বললামঃ আমি-আমি মেলায় যাচ্ছি- বাঁশি কিনতে। মা আমাকে দু’আনা পয়সা দিয়েছে। বৃদ্ধ আমার শেষের কথাগুলো শুনতে পেয়েছিলেন কিনা জানি না, মেলা থেকে ফেরার সময় বৃদ্ধকে ওই একই জায়গায় আমি দেখেছিলাম। তিনি অবশি সকাল-সন্ধ্যে ওই জায়গাতেই বসতেন। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন বিকেলের হলুদ রোদ গাছের চূড়োয় চূড়োয়। বৃদ্ধ আমায় জিজ্ঞেস করলেনঃ কই দাদুভাই তোমার বাঁশি কই? আমি সহজভাবে বললামঃ কিনিনি তো বৃদ্ধ বললেনঃ তবে তুমি যে বললে বাঁশি কিনবে? বললামঃ সারাদিন মেলায় ঘুরে ঘুরে আমার খুব ক্ষুদে পেয়েছিলো, মুড়ি কিনে খেয়ে ফেলেছি। বৃদ্ধ অপলক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে কয়েক মুহুর্ত ধরে তাকিয়ে ছিলেন, তারপর হঠাৎ উচ্ছাসের সঙ্গে বলে উঠেছিলেনঃ বেশ, বেশ, করেছো দাদুভাই! মুড়ি খেতে আমারও বেশ ভালো লাগে- এখন সব নতুন চালের মুড়ি তো, বেশি মিষ্টি লাগে- তাই না দাদুভাই।
মিষ্টি আমার মোটেই লাগেনি। প্রচণ্ড ক্ষিদের সময় মুড়িগুলো গিয়েছিলাম মাত্র। মেলায় ঘুরে ঘুরে রকমারি মিষ্টি আর নানা ধরনের নানা স্বাদের খাবার দেখার পর ওই শুকনো মুড়িগুলো মিষ্টি লাগার কথাও নয়। তাছাড়া বৃদ্ধ যতোই উচ্ছাস আর হাসির সঙ্গে কথাগুলো বলুন কেন, আমার কাছে তা বিষন্ন মনে হয়েছিল।
সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে মাও আমার বাঁশি কেনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম। মা দারুণ স্নেহের আবেগে বুকে টেনে ধরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু কয়েক মুহুর্ত পরেই মুখ তুলে মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। মায়ের দু’চোখে জল। পারলাম না- উঠোন থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলাম আমাদের ভিটের এক প্রান্তে একটা ডালভাঙ্গা সজনে গাছের তলায়। সেখানে দাঁড়িয়ে চারিদিকের অন্ধকারে হঠাৎ হঠাৎ জুলে ওঠা জোনাকীদের আলো আর আমার বিধবা আপার ধরানোর চুলোর অগ্নিশিখা দেখতে দেখতে আমিও কাঁদছিলাম।
সেদিন আমাদের দাদুভাইয়ের কণ্ঠের সেই বেদনাভারাক্রান্তের বিষণ্ণতা, আমার মায়ের এই আবেগাকুলতা, চোখের জল, আমার কান্না- এসবের কোন অর্থ আমি খুঁজে পাইনি।
অর্থ খুঁজে পেয়েছি আরও অনেক পরে- দীর্ঘ একুশ বছরের পর, ঢাকায়-গত ২৫শে মার্চের বীভৎস রাতে। একটি সংবাদপত্র অফিসের ছাদে বসে। আমাদের গায়ের ভিটের সেই ডালভাঙা সজনে গাছের চারপাশের অন্ধকার আর হঠাৎ হঠাৎ জুলে ওঠা জোনাকীর আলোর মধ্যে নয়, চারদিকে পাকিস্তানী বর্বরদের স্বয়ংক্রিয় রাইফফেল, মেশিনগান, মর্টার ও ট্যাঙ্কের গোলাগুলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমার বিধবা আপার ধরানো চুলোর চকবাজার, পিলখানা আর ফার্মগেটে হাজার হাজার ঘরে পাকিস্তানী বর্বরদের লাগানো ভয়াবহ আগুন দেখতে দেখতে।
সেদিন রাতে আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম আমার সেই গ্রাম, গ্রামের মাঠ আর বৈশাখী মেলায় ঘুরে বেড়ানো আমার সেই শিশু আমিকে। দেখতে পাচ্ছিলাম প্যান্ট পরা নগ্ন গায়ের সেই চঞ্চল শিশু- তার মাথাটা ওরা গুলির আঘাতে উড়িয়ে দিয়েছে-কালো পীচের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তধারা -মাথার খুলির টুকরোগুলো- সেইদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের গাঁয়ের সেই দাদুভায়ের কান্নাভারাক্রান্ত কণ্ঠের পেরেছিলাম আমার সেই শিশু আমির ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার অর্থ। অতীতের এইসব টুকরো টুকরো স্মৃতির কথা ভাবতে অজান্তেই কখন যে হাতের এল-এম-জিটাকে ইস্পাতের সাঁড়াশির মতো দু’হাতে চেপে ধরেছিলাম তা আমার মনে নেই।
(সাদেকীন রচিত)