<৪,১৯৯,৪১৫-৪১৭>
অনুবাদকঃ সাফায়েত জামিল
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১৯৯। বিজয়োত্তরকালে বাংলাদেশ সরকার কতৃর্ক “আমরা” গোষ্ঠীকে লিখিত চিঠি | ‘আমরা’ | ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ভারতস্থ গনপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ হাই কমিশন
৯ সার্কাস এ্যভিনিউ
কলিকাতা-১৭
নং-বি-৫/৫০/৭১ ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭১
প্রিয় জনাব কামাল,
এক গৌরবান্বিত উপসংহারের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের সমাপ্তি ঘটে । বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভ করে। বীর মুক্তিযুদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী সার্বজনীনভাবে বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্ভর বিকেল বেলা এই ঘটনা ঘটে। সমগ্র বাংলাদেশ এখন পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত।
বাংলাদেশি জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা শেষ করতে বাধ্য হয়।
কালো সন্ত্রাসের দীর্ঘ রাত বিতাড়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের জনগণ তাদের বাস্তব স্বাধীনতা খুঁজে পায়।
এটা কেবল একটি মহান সামরিক বিজয় নয়, এটা ছিল বর্বরতা এবং নারকীয় আচরণের বিরুদ্ধে উচ্চনীতি ও উন্নত চরিত্রের এবং ঔপনিবেশবাদের উপর গণতন্ত্রের বিজয়। পশ্চিম পাকিস্তানি ফ্যাসিস্টদের লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয় যখন তারা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ঔপনিবেশিক উপায়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ শাসন করে এবং ধর্ম,বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে গণহত্যার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
যুদ্ধ শেষ। দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ধ্বংসলীলা মেরামত, ভারতে আশ্রয় নেওয়া দশ মিলিয়ন উদ্বাস্তু ফেরত আনা , পশ্চিম পাকিস্তানি বর্বর দ্বারা গৃহহীনদের পুনর্বাসন সহ বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রকে হিমালয় সম কাজের সম্মুখীন হতে হয়। ট্রাজেডি হল,ফ্যাসিস্ট পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের লুটতরাজ সৈন্য কর্তৃক হিংস্রতার শিকার হওয়া লক্ষ্যাধিক বাঙালি এবং আরো কয়েক লাখ যারা দীর্ঘ আট মাসের শরণার্থী জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশকে স্বাধীনতার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সমস্ত জাতি থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রার্থনা করে। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ভারত ও উদার ভুটান স্বীকৃতি নতুন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে একমত হয়। অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলে তাৎক্ষণিক লক্ষ্য ছিল,আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসলীলা মেরামত করা এবং দেশের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
সকল প্রচেষ্টা এখন এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য। স্বদেশবাসী,বন্ধু এবং বিদেশী সমর্থকদের কাছে আমাদের আশা,তাদের সমর্থন এবং সাহায্যের হাত যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশকে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ এবং বহির্বিশ্বে পশ্চিম পাকিস্তানি এবং তাদের পৃষ্টপোষক মদতদাতার আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে জাতীয় স্বাধীনতার আনন্দে আমরা চোখ বন্ধ রাখতে পারিনা। পশ্চিম পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক কূটনীতি,রাজনীতি এবং বিশাল শক্তির গানবোট কূটনীতিকে নস্যাৎ করার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ধন্যবাদান্তে,
আপনার অনুগত
সায়িদুর রহমান
হাই কমিশনারের পক্ষে।
জনাব তুয়ান কামাল
পক্ষে এন.জে.বাদ্রোইন
ডি.জি.এল ক্যাম্পেইন ৪
জিদেং বারত
(ডিকাত ডি.জে.এল মুসি)
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া