৫২। ময়মনসিংহে খান সেনাদের বর্বরতা (৪৪৮)
সূত্র -দৈনিক বাংলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২
বাক্সভর্তি নরকংকাল
কুয়োভর্তি নরমুণ্ড
ময়মনসিংহে খান সেনাদের বর্বরতা
।। নিজস্ব সংবাদদাতা ।।
ময়মনসিংহ শহর ও শহরতলী এলাকা সমেত জেলার ৭ টি থানাতে পাক-হানাদার বাহিনী সর্বমোট ১২ টি বধ্যভূমিতে বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে। শহর ও শহরতলী এলাকার ৫ টি বধ্যভূমির মধ্যে বহু নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ডাকবাংলো, কেওয়াটখালী, বড় বাজার, নিউমার্কেট ও কালীবাড়ির বধ্যভুমিতে সহস্রাধিক নরকঙ্কালের সন্ধান পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহ পূর্বে ময়মনসিংহ শহরের সাহেব আলী রোডের একটি পুকুরে বাক্সভর্তি নরকংকাল পাওয়া গেছে। অনুমান করা হচ্ছে পাকসেনারা ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করে বাক্সভর্তি করে পুকুরে ডুবিয়ে রাখে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে যে ময়মনসিংহ শহর শুত্রুমুক্ত হবার অব্যাহতি পর শহরের বাসিন্দারা কালিবাড়ী, বড় বাজার, নিউমার্কেটের অন্ধকার গলিতে দুটি কয়োভর্তি নরকংকাল, নরমুণ্ডু উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের এপার ওপার অসংখ্য গর্ত ও অসংখ্য নরকংকাল বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। নরকংকাল গুলোর উপরে ও পাশে পড়ে রয়েছে চট ও কাপড়ের টুকরো টুকরো অংশ। জানা গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে নিয়ে নদী তীরে গুলী করে হত্যা করা হতো। পরে ঐসব লাশের কতক এখানেই মাটিচাপা দিয়ে ফেলত আর কতক লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো।
রাম অমৃতগঞ্জের ফজর ও চর আলমগিরের মফির নামক চর এলাকার দু’জন বাসিন্দা জানায়, ৮মাস ব্যাপি তারা ব্রহ্মপুত্র নদে গলাকাটা ও হাত পা বাঁধা অবস্থায় অসংখ্য লাশ ভেসে যেতে দেখেছে। এছাড়া পাকসেনারা ময়মনসিংহের সরচা, ক্ষীরা ও সুতুয়া নদীতে কত অসংখ্য বাঙ্গালীকে হত্যা করে সে ভাসিয়ে দিয়েছে তার হদিস হয়তো বা কোন কালেই পাওয়া যাবে না।