যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার আবেদন

<৪,১৩৪,২৪৭-২৪৮>

অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৩৪। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার আবেদন বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র ২৭ এপ্রিল, ১৯৭১

 

যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানিত কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি

 

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে প্রাদেশিক এবং জাতীয় স্তরে মুক্ত এবং বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি সংবিধানসিদ্ধ বিধানসভা গঠন করা এবং গণতন্ত্র (যা ১৯৫৮ সাল থেকে এদেশে অনুপস্থিত) পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি জাতীয় কাঠামো গঠন করাই ছিল জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশ্য। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এর জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের বিষ্ময়কর সমর্থন জুগিয়েছে (বিধানসভায় ১৬৯ এর ভিতর ১৬৭ টি আসন)। শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে দলটি বিধানসভা গঠনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে সায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর বাসিন্দাদের প্রতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটবে। এছাড়া এই অসাধারণ সমর্থনের ফলে আওয়ামী লীগ বিধান সভায় সংখ্যাধিক্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নিয়মানুযায়ী তারা এখন নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম। তথাপি সহিংসতা সংঘটনের দুই মাস পূর্বে এবং বিধানসভা বসার পূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিরোধী দলের নেতা জে, এ, ভূট্টো এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সাথে ঐক্যমত্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু, কোন পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রদেশের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষার্থী এবং প্রধান রাজনীতিবিদদের ওপর পূর্বনির্ধারিত আক্রমণ দ্বারা আপস আলোচনার আকস্মিক সমাপ্তি ঘটানো হয়।

 

এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, পাকিস্তান সরকার এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের অসাংঘর্ষিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে তাদের পাষন্ড সৈন্যদল ব্যবহার করে অবদমিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সৈন্যদল চিন্তাবহির্ভূতভাবে সকল বয়স এবং উভয় লিঙ্গের মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে, যার সংখ্যা প্রায় ২০০,০০০ থেকে ১,০০০,০০০ এর মধ্যে। পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সৈন্যমৈত্রীর থেকে অর্জিত অস্ত্রগুলো আসল উদ্দেশ্যের বিপরীতে বিদেশী শত্রুর বিপক্ষে ব্যবহার না করে দেশীয় জনগণের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। সংঘটিত গণহত্যা সভ্য সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত সাধারণ মানবাধিকার, বিশেষত জীবনযাপনের অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে।

 

পাকিস্তানের সাথে আইটি৫ সৈন্যমৈত্রীর নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র্ পরোক্ষভাবে এই মর্মান্তিক নিষ্ঠুরতা সংঘটনের ভাগীদার হিসেবে নজির প্রতিষ্ঠা করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে আশা করা যাচ্ছে ততক্ষণ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ওই অঞ্চলে রক্তবন্যা থামিয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করতে সহায়তা করবে এবং তা বাঙালীদের সমর্থনের দ্বারা উপযুক্ততা লাভ করবে।

 

পদক্ষেপগুলো নিম্নে বর্ণিত হল:

১। বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান।

২। যতক্ষণ পর্যন্ত সব সংঘর্ষ স্থগিত করে বাঙালীদের বৈধ আকাঙ্ক্ষা মেনে নেয়া না হয় ততক্ষণ পাকিস্তানের প্রতি সকল আর্থিক এবং সৈন্য সাহায্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

৩। অন্যান্য রাষ্ট্র এবং সাহায্য সংস্থার সাথে যোগসূত্র রেখে জাতিসংঘের পদক্ষেপ গ্রহন এবং পাশবিকতায় আক্রান্তদের খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এছাড়া বাংলাদেশে আক্রান্ত এবং ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা।

৪। পাকিস্তান সরকারের প্রতি কূটনৈতিক পন্থায় অতিসত্ত্বর পাশবিকতা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ এবং বাঙালী জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান।

 

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এতদিন হয়ত আক্রমণের জন্য উচ্চ মহলের সাহায্য পেয়েছে, কিন্তু সাড়েসাত কোটি জনগণের বৈধ ইচ্ছা অবশ্যই বিজয়লাভ করবে। যদি এই সংঘর্ষ অতিসত্ত্বর থামানো যেত এবং বাঙালী জনগণের সমর্থনযোগ্য অধিকারগুলো স্বীকৃতি প্রদান করা যেত তবেই আমেরিকা প্রদত্ত সুবিধার সদ্ব্যবহার করা হত। নাহলে, স্থিতিশীল রাজ্যের প্রত্যাশা অস্তিত্বহীন এবং গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের অধীনে বর্তমান বাংলাদেশের আন্দোলন আওয়ামী লীগ অথবা ভিত্তিগত বামপন্থীদের আন্দোলন বলে বিবেচিত হতে পারে।

এপ্রিল ২৭, ১৯৭১

বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা

৩১১৭ ৭ম স্ট্রিট এন, ই

ওয়াশিংটন ডি, সি, ২০০১৭

টেলিফোন: ৪৩২-৮৭২৭

Scroll to Top