যুদ্ধের ডায়েরী

<১০, ৮.২, ২৫৮-২৭৭>

অনুবাদ

যুদ্ধের ডায়েরী

তারিখ স্থান বিবরণ
২৪ মে ‘৭১ লাতু ভোর চারটার দিকে আমাদের সেনারা শত্রুদের উপর হামলা করে লাতু নামক স্থানে এবং ৭ জন শত্রুসেনা কে নিহত এবং ৩ জনকে আহত করেছে।

 

১ জুন ‘৭১ ফকিরবাজার কমান্ডার ইন চিফ আজ ফকিরবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন এবং সবার সাথে দেখা করেন।

 

৬ জুন ’৭১ ফকিরবাজার রাত দুটোর দিকে জকিগঞ্জে হামলা করলাম, বাঙ্গালিবিরোধী তিন জনকে হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকবাহিনীকে সহায়তে দেবার অপরাধে জকিগঞ্জ থানার একজন এসআইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জকিগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।

 

৯ জুন ’৭১ বড়গ্রাম সাদনাপুর, বড়গ্রাম এবং কাঙ্গলিঘাটে অবস্থানরত শত্রুদের উপর হামলা করে তিনজন সেনা নিহত করলাম।

 

১০ জুন ৭১       বড়্গ্রাম বড়গ্রাম আমাদের সেনাদলকে বড়পুঞ্জিতে সরিয়ে নেয়া হল।

 

১২ জুন ’৭১ বড়গ্রাম ৪০ জন নতুন সৈন্য আমাদের দলে যোগ দিলো, ২৬ জন ছাত্রও আমাদের ক্যাম্পে যোগ দিলো। ৭ জন  কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশ এলাকায় পাঠানো হল।

 

১৩ জুন ’৭১ বড়গ্রাম ২৬ জন ছাত্রের মধ্যে ২০ জন বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে  বাংলাদেশে চলে গেল। আরও ৫ জন ছাত্র বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গেল সন্ধ্যা ৭:৩০ এর দিকে। বিকেল ৫ টার দিকে বিশেষ মিশন নিয়ে ৮ জন সৈন্য বাংলাদেশে গেল।

 

১৩ জুন ’৭১ কুমারসাইল সুবেদার আব্দুল আজিজ ৬ জন সৈনিক সাথে নিয়ে কুমারসাইলের হাজী রকিব আলির বাড়িয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হল।

 

১৪ জুন ’৭১ কুমারসাইল নায়েব সুবেদার মতিউর রহমান এগার জন সৈনিক এবং দুজন কুককে সাথে নিয়ে কুকিতাল ক্যাম্পে চলে গেল। রাত ৮ টার দিকে এক জন অফিসার

এসে আবার রাত ১১:৩০ তে বিশেষ অভিযানের দায়িত্ব নিয়ে বের হয়ে গেলেন। উনি ১৫ জন অস্ত্রধারী সৈনিকের সাথে ৫ জন ছাত্রকে নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে বিশেষ মিশনের নেতৃত্ব নিয়ে গেলেন।

 

১৫ জুন ‘৭১ শাবাজপুর সৈনিকদের সহায়তায় একদল ছাত্র শাবাজপুরে গিয়ে শাবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের থেকে দেড় মাইল দুরত্বে অবস্থিত লাতু-জুরি সড়কের দালাওয়ারি ব্রিজ ধ্বংস করে দিয়েছে। ওরা অত্র এলাকার শান্তি কমিটির মেম্বার হাজি মকবুল আলীর নির্দেশে ব্রিজ পাহারার দায়িত্বরত দুইজনকে ধরে এনেছে।

 

১৫ জুন ’৭১ শালিয়া চা বাগান ৪ জন সৈনিক আর এক দল ছাত্র আজ বিকাল ৪  টার দিকে শালিয়া চা বাগানে হামলা করে ফ্যাক্টরি বিধ্বস্ত করে, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মাইন দিয়ে একটি জীপ ধ্বংস করার পাশাপাশি ম্যানেজার এবং অন্য জনকে, যাদের একজন ছিল প্রাক্তন সেনা, খুন করে।

 

১৬ জুন ’৭১

০৪০০ ঘটিকা

শাবাজপুর নায়েব সুবেদার আব্দুল দায়ান এর নেতৃত্বে তেরজন সৈনিক শাবাজপুরে শত্রু অবস্থানের উপর হামলা করে ১৮ জন শত্রুসেনা হতাহত করে। ৩০ জন সৈনিক নিয়ে মুক্তিবাহিনীর একটা দল করিমগঞ্জ থেকে এখানে এলো।

 

১৭ জুন ’৭১

০২০০ ঘটিকা

শাবাজপুর এ কাইয়ুমের সাথে ১২ জন সৈনিকের প্রহরায় এক দল ছাত্র শাবাজপুর এলাকায় গিয়ে শাবাজপুর রেল স্টেশনের দুই মাইল দূরে বারিগ্রাম-জুরি সড়কের কবিরা ব্রিজ হাই এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

 

১৭ জুন ’৭১ শাবাজপুর দুপুর ২:৩০ এর দিকে সিলেট শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ সাব স্টেশন এবং নায়ের পুল এলাকায় টেলিফোন স্থাপনা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে ফিরে এল এক দল ছাত্র।

 

১৮ জুন ’৭১ শাবাজপুর দুপুর ১ টার দিকে জনাব তামিদের নেতৃত্বে ৬ জন ছাত্রের একটা দল এবং নায়েক আব্দুল জব্বার এর সাথে থাকা ১০ জন সৈনিক শাবাজপুরে গিয়ে শাবাজপুর রেল স্টেশনের আড়াইমাইল দূরে অবস্থিত সুজাউল গ্রামের নিকটবর্তী দেওছরি রেল সেতু উড়িয়ে দেয়।

 

২১ জুন ’৭১ কারারদি দুপুর ১টার দিকে হাবিলদার আজিরুদ্দিনের সাথে ৭০ জন সৈনিকের একটা দলের পাহারায় আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল ছাত্র বিস্ফোরক

নিয়ে শেওলা ঘাটের ৩ মাইল দক্ষিন পশ্চিমে শেওলা-বড়িয়াগ্রাম সড়কের কড়াইদি চাঙ্গার পুলের দিকে বিস্ফোরক নিয়ে গেল।

 

২৪ জুন ’৭১ পাল্লাথাল পাল্লাথাল চা বাগান থেকে ধরে আনা কাজল নামের একজন পাকি সিপাইকে হত্যা করা হয়েছে। পাল্লাথাল চা বাগানে হামলা করে বিশ ব্যাগ চা এবং ওজন মাপার একটা যন্ত্র দখল করা হয়েছে। পাকবাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগে আব্দুর রহমান নামের একজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ক্যাম্পে আনা হয়েছে।

 

২৫ জুন ’৭১ পাল্লাথাল উপরোল্লেখিত আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহিশ্মশান এর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

 

২৬ জুন ’৭১ কাঙ্গলিঘাট আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে ৬ জন ছাত্র এবং তাদের  হায়তায় থাকা হাবিলদার কাইউমের ১৭ জন সৈনিকের দল কাঙ্গলিঘাটের দেড় মাইল পশ্চিমে অবস্থিত বড়ইগ্রাম-জুরি সড়কের কাঙ্গলিঘাট ব্রিজ

বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

 

২৯ জুন ’৭১ বিয়ানীবাজার সুবেদার আব্দুল আজিজ এর নেতৃত্বে ৬ জন সৈনিকের দল বিয়ানীবাজারের আসাদুর আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাকবাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগে টার দুই ছেলে শফিকউদ্দিন ও শামসুদ্দিনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে এরা নির্দোষ বিবেচিত হওয়ায় এদেরকে স্বেচ্ছায় মুক্তিবাহিনী হিসাবে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য করিমগঞ্জ ট্র্যানজিট ক্যাম্পে পাঠান হল।

 

৩০ জুন ’৭১ বড়গ্রাম আমাদের প্রায় ৩০ জনের একটা দল ০৩০০ টার দিকে বড়গ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জন পাক সেনাকে নিহত করেছে।

 

১ জুলাই ’৭১ শেওলাঘাট হাবিলদার আরিশের নেতৃত্বে ১৫ জন সৈনিককে কাকড়দি গ্রামের কাছে শেওলা ফেরী ধ্বংসের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হল। পথে তারা পাক  মবুশের শিকার হয়, এবং দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই ল্যান্স নায়েক ফজল হোসেন নিহত হন। শত্রুদের ৩/৪ জনকে হতাহত করার পাশাপাশি ১০০ রাউন্ড গুলি সহ শত্রুর একটি এলএমজি আমাদের হস্তগত হয়।

 

১ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর শাবাজপুর এবং বড়লেখা স্টেশনের মধ্যস্থ রেল লাইনে মাইন পাতার জন্য গাইড আরিজউদ্দিন এবং ২ জন সৈনিক সহ একদল ছাত্র আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে বড়লেখা এলাকায় যায় রাত ১১:৩০ এর

দিকে, কিন্তু শত্রুরা আগেই ওখানে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন পেতে রাখায় তারা ব্যর্থ হয়।

 

২ জুলাই ’৭১

০২০০ ঘটিকা

জলঢুপ বড়ইগ্রাম-লাতু সড়কে মাইন পাতার জন্য হাবিলদা কুতুবুদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫ জন সৈনিক এবং একদল ছাত্র জলঢুপের দিকে রওনা দেয় কিন্তু নদী পারাপারের জন্য নৌকা না পাওয়ায় তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

 

২ জুলাই ’৭১ জলঢুপ আব্দুল মিয়া নামে একজন পাক সিপাইকে গ্রেফতারের পর বিএসজি মহিশাশনের হাতে তুলে দেয়া হয়।

 

৩ জুলাই ’৭১

১৯৩০ ঘটিকা

জলঢুপ সুবেদার আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে ১৫ জন সৈনিকের ডেমোলিশন পার্টি জলঢুপে গিয়ে জলঢুপ থানা বাজারের কাছে বড়ইগ্রাম-লাতু সড়কে তিনটি মাই পেতে রাখে। পরের দিন সকালে শত্রুরা সে মাইন সরিয়ে ফেলে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

৪ জুলাই ’৭১ অমলশিদ ক্যাপ্টেন এম এ রবের নেতৃত্বে ৪০জন জেসিও/সৈনিকের প্রহরায় আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে থাকা একদল ছাত্র অমলশিদ বিওপি এলাকায় গিয়ে রাত ৩ টার দিকে রহিমপুর সেতু বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেয় এবং সেতু প্রহরারত রাজাকারদের কাছ থেকে দুটো থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়।

 

০৬ জুলাই ’৭১

০৫০০ ঘটিকা

  সুবেদার আব্দুল আজিজ এবং সিপাই হাবিব আলি (দুজনই পুলিশ সদস্য) ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেলো।

 

০৬ জুলাই ’৭১ বিয়ানীবাজার চারজন সৈনিকের সহযোগিতায় এক দল ছাত্র বিয়ানীবাজার এলাকায় মাইন পেতে রাখার জন্য গিয়েছিল, কিন্তু শত্রুর ভারী গুলিবর্ষনের কারনে তারা ব্যর্থ হয়।

 

৭ জুলাই ’৭১

২২০০ ঘটিকা

শাবাজপুর হাবিলদার আব্দুল কাইউমের নেতৃত্বে চার জন সৈনিকের ডেমলিশন পার্টি রাত ১০টার দিকে শাবাজপুর এলাকায় সেতু ধ্বংস করতে যায়, তবে পাক বাহিনীর উপস্থিতির জন্য তারা সফল হতে পারেনি।

 

৭ জুলাই ’৭১ বড়গ্রাম বড়গ্রাম গ্রামে, বড়গ্রাম স্কুলে শত্রু অবস্থানের থেকে ৩০০ গজ দূরে আজ একদল স্নাইপার অবস্থান নিয়েছিল ১৫৩০ ঘটিকায়। তারা গুলি করে ৩ জন শত্রু সেনা হত্যা করতে সক্ষম হয়। আমাদের তরফে কেউ আহত হয়নি।

 

৮ জুলাই ’৭১

০৫০০ টা

শাবাজপুর দুপুর ৩ টার দিকে শাবাজপুর রেল স্টেশনে শত্রু অবস্থানের থেকে ৫০০ গজ উত্তরে বালিয়াটিলাতে আমাদের ৬ জন সৈনিকের একটা দল অবস্থান নেয়। তারা শত্রুর উপর গুলিবর্ষণ করে। শত্রু ২” মর্টার ও মেশিনগান দিয়ে পাল্টা আক্রমন করে। শত্রুদের ৭ জন হতাহত হয়েছে, আমাদের কেউ আহত হয়নি।

 

৯ জুলাই ’৭১

০৪০০ টা

বড়গ্রাম ক্যাপ্টেন এমে রবের নেতৃত্বে আমাদের ২৪ জন সৈনিকের একটা দল ভোর ৪ টার দিকে বড়গ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ জন শত্রু সেনা হত্যা করেছে।

 

১১ জুলাই ’৭১

০১৩০ টা

বড়লেখা রাত দেড়টার দিকে লাতু-বড়লেখা সড়কের পাবনিয়া সেতু (জিআর ৪৭৫৫৫৪, ৮৩ ডি/আই) সম্পুর্নভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় আমাদের ডেমোলিশন পার্টি।

 

১১ জুলাই ’৭১ বড়গ্রাম বড়লেখা, লাতু এবং বড়গ্রামের দিকে তিনটি দল পাঠানো হল। তারা শত্রু অবস্থানের উপর ২” মর্টার এবং ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। শত্রুপক্ষ লাতুতে ৩” মর্টার এবং মেশিনগান দিয়ে জবাব দেয়,

অন্যদিকে বড়গ্রামে তারা শুধু মেশিনগান এবং ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়ে পালটা হামলা করে। শত্রুপক্ষের কয়জন হতাহত হয়েছে জানা যায়নি। আমাদের পক্ষে কেউ আহত হয়নি।

 

১০ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর হাবিলদার ময়নার নেতৃত্বে ১২ জনের একটা ডেমোলিশন পার্টি শাবাজপুর রেল স্টেশনের আধা মাইল দক্ষিনে অবস্থিত নান্দুয়া সেতু ধ্বংস করার লক্ষ্যে যায়, কিন্তু শত্রুর কড়া পাহারার কারনে ব্যর্থ হয়। সৈনিকরা সবাই নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।

 

১১ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর ক্যাপ্টেন এম এ রবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন সৈনিকের ছত্রছায়ায় আজ একদল ছাত্র শাবাজপুর-বড়লেখা সড়কের দিকে যায়। এদিন সেখানে শত্রুর অবস্থান ছিল না। ফিরে আসার আগে তারা রাস্তায় তিনটা মাইন স্থাপন করে আসে। তার ফলাফল এখনও জানা যায়নি।

 

১২ জুলাই ’৭১

২৩০০ টা

বড়গ্রাম শত্রুপক্ষকে উত্যক্ত করার উদ্দেশ্যে বড়গ্রাম এলাকাতে ২” মর্টার দিয়ে শত্রু অবস্থানের উপর গোলাবর্ষন করা হয়। শত্রুপক্ষ মাঝারি ও হালকা মেশিনগান দিয়ে পালটা জবাব দেয়। শত্রুপক্ষের হতাহতের খবর জানা যায়নি।

 

১২ জুলাই ’৭১

০০৩০ টা

শাবাজপুর হাবিলদার ময়না মিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি দল রাত ১২:৩০ টার দিকে শাবাজপুর রেল স্টেশনে শত্রু অবস্থানের উপর ২” মর্টার দিয়ে হামলা করে ২ জন পাক সেনাকে হত্যা করে।

 

১৩ জুলাই ’৭১

০০২০ টা

শাবাজপুর মাইন পাতার জন্য আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল শাবাজপুর এলাকার নান্দুয়া গ্রামের দিকে যায়, কিন্তু প্রতিকুল অবস্থার কারনে ব্যর্থ হয়। ১১ জুলাই ধ্বংস করে দেয়া পাবনিয়া সেতু পার হতে

গিয়ে একজন শত্রুসেনার নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

 

১৩ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর লাতু এবং বড়লেখার মধ্যে টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার জন্য শাবাজপুর এলাকায় একটি দল যায় এবং ২০০০ গজ তার কেটে নিয়ে আসে।
১৪ জুলাই ’৭১

০০৩০ টা

শাবাজপুর হাবিলদার আরিশ আলির নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি দল শত্রুপক্ষকে উত্যক্ত করার উদ্দেশ্যে রাত তিনটার দিকে শাবাজপুর রেল স্টেশনে হামলা করে। তারা ২” মর্টার এবং এলএমজি দিয়ে শত্রুর বাঙ্কারের

উপর গোলাগুলি করে। শত্রুও তাৎক্ষণিক ভাবে ২” মর্টার এবং মাঝারি মেশিনগান দিয়ে জবাব দেয়। ৫ মিনিট পর তারা ৩” মর্ট্র দিয়েও ৫ রাউন্ড গোলা ছুড়ে। হামলার ফলে আগুন লেগে স্টেশন ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

 

১৫ জুলাই ’৭১

০৫০০ টা

শাবাজপুর নায়েক মোহাম্মদ ইলিয়াসের নেতৃত্বে এক সেকশন সৈনিককে অ্যামবুশ পার্টি হিসাবে শাবাজপুর পাঠান হয়। আনুমানিক ভোর ৫ টার দিকে তারা এক প্লাটুন শত্রু সেনাকে তাদের সামনে দিয়ে যেতে দেখে। শত্রুসেনারা অস্ত্রবিহীন অবস্থার শারীরিক কসরত করছিল।

 

১৫ জুলাই ’৭১

০৫০০ টা

শাবাজপুর তারা ২০০ গজের মধ্যে চলে এলে এলএমজি এবং রাইফেল দিয়ে তাদের উপর হামলা করা হয়। হতচকিত শত্রুপক্ষের আনুমানিক ২০ জন নিহত হয়, ৯ জনের মৃতদেহ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানেই পড়ে ছিল। এছাড়াও শত্রুপক্ষের অনেককে বিভিন্ন রকম আঘাত নিয়ে অন্যদের সহায়তায় পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।

 

১৫ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর আমাদের ৩” মর্টার সেকশন কুমারসাইল চা বাগানের ডান দিক থেকে শত্রুর প্রধান অবস্থান শাবাজপুর রেলওয়ে গুদামের উপর ১৪টি গোলাবর্ষন করে সকাল ৮:৩০ এ। রেল স্টেশনে গোলা পড়তে ও ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো আসেনি। শত্রু ৩” মর্টার দিয়ে আমাদের উপর ৭ রাউন্ড গোলাবর্ষন করে। আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

১৬ জুলাই ’৭১

০৪০০ টা

বড়গ্রাম শত্রুকে উত্যক্ত করার জন্য ভোর চারটার দিকে শাবাজপুর রেল স্টেশনে শত্রু অবস্থানের উপর ২” মর্টার এবং এলএমজি দিয়ে হামলা করা হয়। শত্রু মাঝারি মেশিনগান এবং রাইফেলের গুলিতে জবাব

দেয়। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি, আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি।

১৬ জুলাই ’৭১ পাল্লাথাল পাল্লাথাল চা বাগান এলাকায় একটি অ্যামবুশ পার্টি গেল, কিন্তু হত্রু পক্ষের টহলদল সেখানে এলোনা।

 

১৬ জুলাই ’৭১ পাল্লাপুঞ্জি লাতু এবং বড়লেখার মধ্যকার রেললাইন ধ্বংস করার জন্য একটি ডেমোলিশন পার্টি পাঠানো হয়। ভোর ৫টায় শত্রুর চোখে আমাদের দলটি ধরা পরে যায় এবং জায়গামত পৌঁছানর আগেই শত্রুর এলএমজি এবং রাইফেলের গুলির সম্মুখীন হয়। আমাদের দল পালটা গুলি করে। স্থানীয় লোকদের বরাতে দুইজন শত্রু সেনা আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
১৭ জুলাই ’৭১

২৩০০ টা

চানারু ঘাট শত্রুর ভারী গুলিবর্ষনের মধ্যেই একটি ডেমোলিশন পার্টি রেললাইন ধ্বংস করতে যায়। আমাদের দলটি চারগ্রাম নামের গ্রামের কাছে পৌঁছে (এস কিউ৪৬৫৫) এবং সফলভাবে কয়েক স্থানে রেললাইন উড়িয়ে দেয় এবং লাতু-বড়লেখার প্রধান সড়কে ১০টি প্লাস্টিক মাইনও পেতে আসে। কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আমাদের দল ফিরে এসেছে।

 

১৭ জুলাই ’৭১ শাবাজপুর ভোর চারটায় দুটি শত্রু উত্যক্তকারী দল ২” মর্টার আর সাব মেশিনগান নিয়ে শাবাজপুরে যায় এবং সফল ভাবে লাতু বিওপি (পাকিস্তানি) আক্রমণ করে ১২ রাউন্ড ২” মর্টারের গোলাবর্ষন করে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি।

 

১৮ জুলাই ’৭১

০৪৩০ টা

বড়গ্রাম বড়গ্রাম এলাকায় শত্রু উত্যক্তকারী দল গিয়ে ২” মর্টার দিয়ে বড়গ্রাম স্কুলের মোড়ে কাছে শত্রু অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষন করে ভোর ৪:৩০ এর দিকে। শত্রু তাৎক্ষণিকভাবে মাঝারি ও হালকা মেশিনগান দিয়ে পাল্টা আক্রমন করে। জবাবে আমাদের সৈনিকরা এলএমজি ও রাইফেল দিলে গুলিবর্ষন করে তিন জন শত্রুসেনাকে গুরুতর আহত

করেছে।

১৯ জুলাই ৭১

০৯৩০ টা

শাবাজপুর আমাদের ৩” মর্টারবাহী দল কুমারসাইল চা বাগান থেকে শাবাজপুর রেল স্টেশনে শত্রু অবস্থানের উপর ২৪ রাউন্ড গোলাবর্ষন করে সকাল ৯:৩০ এ। শত্রুও ৩” মর্টারের ৪ রাউন্ড গোলা ছুঁড়ে। আমাদের আক্রমনে শত্রুদের ৪ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছে। রেল স্টেশনের কাছে দুটো ছোট বাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছে। কোন ক্ষতি ছাড়াই আমাদের দল ফিরে এসেছে।

 

২০ জুলাই ’৭১

০৪২০ টা

বড়গ্রাম হাবিলদার শামসুল হকের নেতৃত্বে একটি টহলদল ২” মর্টার নিয়ে বড়গ্রাম বিওপি এলাকায় অভিযানে যায় এবং শত্রুর উপর গোলাবর্ষন করে। শত্রুও বিওপি এর পেছনদিক এবং স্কুল এলাকা থেকে হালকা ও মাঝারি মেশিনগানের গুলিতে পাল্টা জবাব দেয়। এছাড়াও শত্রুরা ১২০ মিমি মর্টারের বেশি কিছু গোলা আমাদের উপর বর্ষন করে। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি অজানা। আমাদের ক্ষতি শুন্য।

 

২০ জুলাই ’৭১ বড়গ্রাম স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে যে আমাদের ১৭ তারিখে পেতে রাখা প্লাস্টিক মাইনের বিস্ফোরণে ৩ জন শত্রুসেনা গুরুতর আহত হয়েছে।

 

২৫ জুলাই ’৭১

১২০০ টা

শাবাজপুর ২৫ তারিখ রাত ১২ টার দিকে আমরা পাচটি দলে ভাগ হয়ে শাবাজপুর রেল স্টেশন আক্রমন করলাম। আরো দুটি দলকে পাঠানো হল বড়লেখা আর কাঙ্গলি সড়কে মাইন পেতে শত্রুর পশ্চাদপসারন অথবা রিইনফোর্সমেন্ট ঠেকানোর জন্য। আমরা দুপুর  ১ টার দিকে শত্রুর বিওপি আক্রমন করে ওদের পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে আসি। শত্রু পক্ষে ২০ জন মারা গেছে। আমাদের পক্ষে চার জন মারা গেছে, কয়েকজন আহত হলেও বাকি সবাই ফিরে এসেছে।

 

২৭ জুলাই ’৭১

১২০০ টা

শাবাজপুর দুটি দল শত্রুকে উতক্ত করতে লাতু রেল স্টেশনে গিয়েছিল। সারারাত ধরে থেকে থেকে গুলি করে গেছে আমাদের সেনারা। শত্রুর বাঙ্কার পাহারার দায়িত্বে থাকা দুজন রাজাকার নিহত হয়েছে। সেনারা নিরাপদে ফিরে এসেছে।

 

২৮ জুলাই ’৭১

২১৩০ টা

পাল্লাথাল পাল্লাথাল চা বাগান এলাকায় একটি অ্যামবুশ পার্টি পাঠানো হয়েছিল। তারা আর ফেরত আসেনি। নতুন সেনাদের সাথে প্রশিক্ষনরত আমাদের ৯০ জন সেনার একটি দল এর পরের পক্ষে পাঠানো হল।

 

৩১ জুলাই ’৭১

০৪০০ টা

কেরামতনগর ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল কেরামতনগর টিজি তে হামলা করতে যায়। একটি বিল্ডিং ধ্বংস করার পাশাপাশি ৭ জন শত্রু হত্যা করতে সক্ষম হয় তারা। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১ আগস্ট ’৭১ শাবাজপুর শাবাজপুর রেল স্টেশনে একটি দল গিয়েছিল। তারা

শত্রুকে উত্যক্ত করার লক্ষ্যে ২” মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষন করে। শত্রু খুব দ্রুততার সাথে জোরালভাবে পাল্টা জবাব দেয় ৩” মর্টার এবং মাঝারি মেশিনগান দিয়ে। আমাদের দল এলএমজি এবং রাইফেলের গুলিতে পাল্টা জবাব দেয়। শত্রুপক্ষে হতাহতের খবর জানা যায়নি। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১ আগস্ট ’৭১ শাবাজপুর সকাল ৯ টার দিকে শাবাজপুর বিওপি এলাকায়

বাঙ্কার বানানোর সময় পাকবাহিনী এবং রাজাকারদের উপর ৬ রাউন্ড ৩” মর্টারের গোলা সফলভাবে বর্ষন করা হয়। শত্রু ঝড়ের গতিতে পালিয়ে যায় এবং এখনও ফেরত আসেনি। এই পদ্ধতি চালু রাখা হয়।

 

১ আগস্ট ’৭১ শাবাজপুর নিম্নলিখিত অভিযান পরিচালনার জন্য গেরিলাদের

(বাংলাদেশের) ভেতরে পাঠানো হয়: ১/ চারজন মুক্তিযোদ্ধার একটি দলকে বিস্ফোরকসহ সিলেট শহরের আড়াই মাইল পুর্বে গোটা টিকার নামের এক স্থানে পাঠানো হল ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার দিকে যাওয়া গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার জন্য। ২/ গ্রেনেড সাথে দিয়ে দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে সিলেট শহরে রাতে পাকবাহিনীর চলাচলের সময় তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা করার জন্য পাঠানো হল। ৩/ দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেনেড সাথে দিয়ে চারকাই পাঠানো  হল পোস্টঅফিস আর টেলিফোন অফিস ধ্বংস করার জন্য। ৪/ দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেনেড সাথে দিয়ে গোলাপগঞ্জ পাঠানো  হল পোস্টঅফিস আর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ধ্বংস করার জন্য। ৫/ চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে পেক-১ (বিস্ফোরক) সাথে দিয়ে মংলা বাজারে পিলার ধ্বংস করার জন্য পাঠানো হল।

 

২ আগস্ট ’৭১

০২০০ টা

পাবনিয়া ব্রিজ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বড়লেখা এবং শাবাজপুরের

মধ্যস্থ পাবনিয়া সেতু (GR476554) ধ্বংস করার জন্য পাঠানো হয়। দলটি সফলভাবে সেতুটি সম্পুর্নভাবে ধ্বংস করে ফিরে আসে। সেতু ধ্বংস করার সময়ে তাদের উপর শত্রুর গুলিবর্ষন চলছিল। এই সেতুটি আগেঅ একবার ধ্বংস করা হয়েছিল, তবে পাক সেনারা সেটা আবার মেরামত করে নিয়েছিল।

 

২ আগস্ট ’৭১

১০০০ টা

শাবাজপুর আমরা ১২ রাউন্ড ৩” মর্টারের গোলা বর্ষন করি

শাবাজপুর রেল স্টেশনের উপর। একজন রাজাকার নিহত হবার পাশাপাশি দুইজন পাকসেনা এবং দুজন রাজাকার গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

৩ আগস্ট ’৭১

০১৪৫ টা

কাংলি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কাংলি ফেরী ধ্বংস করতে এবং

এর পাহারায় থাকা রাজাকারদের উপর হামলা করতে যায়। রাত ১:৪৫ এর দিকে আমরা হামলা করে একটি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ছিনিয়ে নেই। বিস্ফোরকের মাধ্যমে নতুন ফেরীটা ধ্বংস করে ডুবিয়ে দেয়া হয়। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

৩ আগস্ট ’৭১

০১৪৫ টা

শাবাজপুর শাবাজপুর রেল স্টেশন এবং গুদামের উপর ২৪ রাউন্ড

২” মর্টারের গোলাবর্ষন করে শত্রুকে উত্যক্ত করে আমাদের জিটার পার্টি। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি জানা যায়নি। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

৩ আগস্ট ’৭১ বিয়ানীবাজার আরেকটি শত্রু উত্যক্তকারি দল বিয়ানীবাজারে পাঠান

হয়। তারা টার্গেটে পৌঁছানর আগেই রাজাকাররা তাদের উপর গুলি করে। আমাদের দলটি পাল্টা গুলি করে রাজাকারদের তাড়িয়ে দেয়।

 

৩ আগস্ট ’৭১

২২০০ টা

বড়লেখা বড়লেখা সড়কে অ্যান্টিপার্সোনাল মাইন বসানর জন্য একটি

দলকে পাঠানো হয়। তারা ১৬ টি মাইন স্থাপন করে ফিরে আসে। বড়লেখায় পাকিস্তান সমর্থকদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন পাকিস্তান সমর্থকের বাসা থেকে একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।

 

৪ আগস্ট ’৭১ পাল্লাথাল পাল্লাথাল চা বাগান সড়কে আমাদের একটি অ্যামবুশ পার্টি পাঠানো হয়েছিল। তারা অগ্রসরমান পাক সেনাদের একটি টহল দলের উপর গুলিবর্ষন করে। শত্রু পালিয়ে যাবার সময় ৩টি এলএমজি ম্যাগাজিন এবং ২৫০ রাউন্ড থ্রি-নট-থ্রির গুলি ফেলে যায়।

 

৫ আগস্ট ’৭১ ছোটলেখা বড়লেখা ঘাটি থেকে একটি উত্যক্তকারি দল ছোটলেখাতে যায়। তারা পাকবাহিনীর উপর ২” মর্টার দিয়ে হামলা করে। শত্রু হালকা অ মাঝারি মেশিনগান দিয়ে পাল্টা গুলি করে।

 

৭ আগস্ট ’৭১ (০৩০০)

শাবাজপুর

আমাদের ৩” মর্টার সেকশন শাবাজপুর রেল স্টেশনের উপর ১২ রাউন্ড গোলাবর্ষন করে। বাঙ্কারে থাকা ৩ জন পাক সেনা নিহত হবার পাশাপাশি দুটি বাঙ্কারও ধ্বংস হয়েছে।

 

৭ আগস্ট ’৭১ পাল্লাথাল অগ্রসরমান পাকসেনাদের একটি টহল দলের উপর আমাদের অ্যামবুশ পার্টি হামলা করে পাল্লাথাল চা বাগান এলাকায়। এতে একজন পাকসেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। পালিয়ে যাবার সময় তারা চারটি এলএমজি ম্যাগাজিন এবং ৮০ রাউন্ড থ্রি-নট-থ্রির গুলি ফেলে যায়।
৭ আগস্ট ’৭১ পাল্লাথাল আমাদের একটি টহলদলকে পাকিস্তানিরা ধরে ফেলে। আমাদের রিইনফোর্সমেন্ট দ্রুত সেখানে যায় এবং আমাদের সেনাদের মুক্ত করে নিয়ে আসে। ৩” মর্টার এবং এলএমজি দিয়ে তাদের কাভারিং ফায়ার দেয়া হয়। শত্রু ৩” মর্টার ছাড়াও হালকা ও মাঝারি মেশিনগান দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা জানা যায়নি। আমাদের দুজন আহত হয়েছে।

 

৮ আগস্ট ’৭১ গোলাপগঞ্জ দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেনেড দিয়ে পাঠানো হয়েছিল গোলাপগঞ্জের পোস্ট অফিস এবং টেলিফোন অফিস ধ্বংস করার জন্য। তারা পোস্ট এবং টেলিফোন অফিস ধ্বংস করে দিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা পালিয়ে যাবার সময় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েছে।

 

১৩ আগস্ট ’৭১ সুতারকান্দি ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দলকে সুতারকান্দি পাঠানো হয়। তারা ৩” মর্টারের গোলা বর্ষন করে। শত্রু হালকা ও মাঝারি মেশিনগান দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। শত্রুর ক্ষতির পরিমান জানা যায়নি। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১৩ আগস্ট ’৭১ (০০০১টা) সুতারকান্দি আমাদের ৩” মর্টার সেকশনকে বড়গ্রামে পাঠানো হয় জনপুর/বড়গ্রামে গোলাবর্ষন করার জন্য। সুজনপুরে আমাদের ৩” মর্টারের হামলায় ৩জন নিহত, ৫ জন আহত হবার পাশাপাশি ৪ জন বেসামরিক লোক আহত হয়েছে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১৩ আগস্ট ‘৭১ (২০০০ টা ) কাংলি ঘাট ৫০ জনের একটা দলকে কাংলি ঘাটে ফেরী ধ্বংস করতে পাঠানো হয়। তারা সেখানে পৌঁছে ফেরী দেখতে পায়নি, তবে এই কাজে ব্যবহৃত দুটি বড় নৌকা দেখতে পেয়ে সেগুলোকে ধ্বংস করে নিরাপদে ফিরে আসে।

 

১৩ আগস্ট ’৭১ (০০০১টা) কোনাগাঁও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা দল কোনাগাঁও এর চেয়ারম্যানের অফিসে হামলা করতে যায়। কিন্তু আমাদের দল সেখানে পৌঁছানর আগেই শত্রুদল পালিয়ে যায়।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ (২২০০ টা) বড়লেখা রেলসেতু ৫৫ জনের একটি দলকে পাঠানো হয় বড়লেখা এবং লাতুর মধ্যস্ত রেল সেতু ধ্বংস করার জন্য। শত্রুর গোলাগুলির মধ্যেই তারা সেখানে পৌঁছে এবং সেতু পাহারায় থাকা রাজাকারদের আক্রমন করে। এক জন রাজাকার নিহত হয়েছে। আমাদের একজন আহত হয়েছে। চারদিক থেকে শত্রুর অবিরাম গুলিবর্ষনের কারনে ডেমোলিশন পার্টি টার্গেটে পৌঁছুতে পারেনি।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ (০০০১টা) বিয়ানীবাজার ৩০ জন মুক্তিফৌজের একটি দল বিয়ানীবাজারে পাঠানো হয়েছিল। তারা পথে একদল রাজাকারের দেখা পায়। আমাদের দল তাদের উপর গুলিবর্ষন করে দুজন রাজাকার হত্যা করে। আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ শাবাজপুর ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন পাতার জন্য শাবাজপুর পাঠানো হয়েছিল। তারা শত্রুর চলাচলের পথে ২০ টি এম-১৪ মাইন পেতে রেখে এসেছে।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ (০৭০০টা) বড়লেখা ৪টি অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন এবং প্রত্যেককে ২ টি করে গ্রেনেড দিয়ে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বড়লেখাতে পাঠানো হল ভীতি সৃষ্টি করার জন্য।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ (১৭০০ টা) সিলেটের নিকট প্রত্যেককে গ্রেনেড এবং ৮ পাউন্ড বিস্ফোরক দিয়ে গতাতিকার (সিলেটের কাছে) পাঠান হল গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ সিলেট সিলেটে বিদ্যুৎ পরিবহনের খুঁটি ধ্বংস করার জন্য ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পাঠানো হল। প্রত্যেককে একটি করে গ্রেনেড আর ৮ পাউন্ড বিস্ফোরক দেয়া হল।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ (১৮০০ টা) চারখড়ি ২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যেকে ২ টি করে গ্রেনেড নিয়ে চারখড়ি পোস্ট অফিস এবং টেলিফোন অফিস ধ্বংস করতে গেল।

 

১৪ আগস্ট ’৭১ সিলেট জনমনে ভীতি সঞ্চার করার লক্ষ্যে ২ টি করে গ্রেনেড সাথে নিয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা সিলেটে গেল।

 

১৭ আগস্ট ’৭১ লাতু ১২০জন মুক্তিযোদ্ধার এবং ৪০ জন গণবাহিনীর একটা দল আজকে চারগ্রাম রেল সেতু ধ্বংস করার লক্ষ্যে পাঠানো হয়। কিন্তু শত্রুপক্ষের ব্যাপক প্রতিরোধের কারনে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।

 

১৮ আগস্ট ’৭১ (২২০০টা) চারগ্রাম রেলসেতু ১৫০জন মুক্তিযোদ্ধার এবং ৬০ জন গণবাহিনীর একটা দলকে চারগ্রাম রেল সেতু ধ্বংস করার লক্ষ্যে পাঠানো হয়। শত্রুর ব্যাপক প্রতিরক্ষার চেষ্টা সত্বেও তারা সেতুটিকে সম্পুর্নভাবে ধ্বংস করে দেন। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১৮ আগস্ট ’৭১ (০০০১টা) সুতারকান্দি সুতারকান্দিতে আমাদের শত্রু উত্যক্তকারি দল ২” মর্টার আর এলএমজি দিয়ে গোলাগুলি করে। জবাবে শত্রুপক্ষ ৩” মর্টারের ৬ রাউন্ড গোলা বর্ষনের পাশাপাশি মাঝারি ও হালকা মেশিনগানের গুলি চালায়। শত্রু পক্ষের হতাহতের খবর জানা যায়নি। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

১৬ আগস্ট ’৭১ (০৪৩০টা) বঘা ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন পাতার জন্য একটি নদীর ধারে পাঠানো হয়, যেখানে শত্রুর দল আখ নিতে আসে বলে জানা গেছে। সেই মাইন বিস্ফোরণে এক জন পাক সেনার গুরুতর আহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে।

 

১৬ আগস্ট ’৭১ ছোটলেখা চাবাগান ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ছোটলেখা চা বাগানে অ্যামবুশ করে। তারা অগ্রসরমান পাকিস্তানই সেনা ও রাজাকারদের উপর এলএমজি ও রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষন করে। এতে ২ জন রাজাকার ও একজন পাক সেনা আহত হয়। পাকিস্তানি সেনাদের তথ্যদিয়ে সহায়তাকারী দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পরে হত্যা করা হয়। শত্রুরা তাদের আহতদেরকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

 

১৮ আগস্ট ’৭১ (২০০০টা) সিলেট শহর সিলেট শহরে পাকিস্তনাই সেনা হত্যা করার জন্য দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয়। রাত ৮ টার দিকে তারা কদমতলা জালোপাড়ার কাছে একটি সামরিক জিপকে আসতে দেখে। তারা সেই জিপে দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে যার ফলে ঘটনাস্থলেই একজন পাকিস্তানি অফিসার, ২ জন সেনা এবং ২ জন স্থানীয় দালাল নিহত হয়। আমাদের যোদ্ধারা নিরাপদে ফিরে এসেছে।

 

১৯ আগস্ট ’৭১ (০২৩০টা) ছোটলেখা ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা দলকে শত্রুকে উত্যক্ত করতে ছোটলেখা চা বাগানে পাঠানো হয়। তারা রাত ২:৩০ এর দিকে দুই দিক থেকে ২” মর্টার এবং এলএমজি দিয়ে আক্রমন করে। শত্রুপক্ষ চরম ভয় পেয়ে গিয়ে এলোপাথারি গোলাগুলি করতে থাকে। পরে জানা গেছে যে তাদের নিজের গুলিতেই শত্রুদের অনেকে আহত হয়েছে।

 

১৯ আগস্ট ’৭১ লাতু সড়ক ২০ জন মুক্তিফৌজকে অ্যামবুশ করার জন্য পাঠানো হল লাতু এবং বড়লেখার মধ্যের রাস্তায়। শত্রুদল সেদিন এ পথে এলো না।
১৯ আগস্ট ’৭১ (০৪৩০টা) শাবাজপুর ৩০ জনের একটা জিটার পার্টি পাঠানো হল শাবাজপুর রেল স্টেশনে। আমাদের দল শত্রুর দিকে গুলি ছুঁড়ল। শত্রু মাঝারি মেশিনগান আর ২” মর্টারের গোলা দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়।

 

১৯ আগস্ট ’৭১ (০১৩০টা) সুতারকান্দি গয়লাপুর গ্রামে অভিযান চালাতে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল গেল। শত্রু অবস্থানের ডান দিক দিয়ে আমাদের দল আক্রমন করে, কিন্তু ধরা পড়ার আগেই শত্রুদল পালিয়ে যায়। তারপরেও দুজন পাকিস্তানি দালালকে গ্রেফতার এবং হত্যা করা হয়। এক জন পাকিস্তানি সেনা আহতও হয়েছে। একটি ওয়ান ব্যান্ড ট্রাঞ্জিস্টর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

 

২০ আগস্ট ’৭১ লাতু সড়ক আমাদের একটি দল লাতু-বড়লেখা সড়কে অ্যামবুশ পেতে বসে ছিল। রাজাকারদের একটি দলকে দেখে তারা গুলি চালায়। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 

২০ আগস্ট ’৭১ বাংলাদেশ গ্রেনেড এবং অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন নিয়ে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাংলাদেশের ভেতর পাঠানো হল। এদের মধ্যে একটা দল ঢাকার দক্ষিন অঞ্চলে একটি গুপ্ত ঘাঁটি স্থাপন করার চেষ্টা করবে।

 

২০ আগস্ট ’৭১ (০১৩০টা) তালু খাল ৭০ জন মুক্তিসেনার একটা দলকে তালু খাল এলাকায় পাঠানো হয় বাধ উড়িয়ে দেবার জন্য। বিস্ফোরক দিয়ে তারা সে বাধ ধ্বংস করে দেয়। বাধ ধ্বংস করে দেবার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০ থেকে ৪০ মাইল এলাকা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

২১ আগস্ট ’৭১ (০৪৩০টা) ভঞ্জ অমলশিদে ২ প্লাটুন মুক্তি সেনা পাঠান হল জালালপুরে অবস্থিত আমাদের বাহিনিকে শত্রুকে মোকাবেলা করায় বাড়তি সহায়তা দেবার জন্য।

 

২২ আগস্ট ’৭১ সারাপার সারাপারে বাংলাদেশ সীমান্তের দুই মাইল ভেতরে সোনাই নদীর তীরে রক্ষণাত্মক অবস্থান নেয় ১৫০ জন মুক্তি সেনার একটা দল। মহিশাশনের বিপরীতে বাংলাদেশের বঘাতে এক প্লাটুন সৈনিক রাখা হয়েছে এবং শত্রুর চলাচলে বাঁধা দেবার জন্য আটুয়াতে এক দল সেনা রাখা হল।

 

২৩ আগস্ট ’৭১ গোবিন্দপুর গোবিন্দপুর আর বারুদা এলাকায়ও ১৫০ জন মুক্তিসেনার দল রক্ষনাত্মক অবস্থান নিয়েছে। এতে করে প্রায় ১০ স্কয়ার মাইল এলাকা মুক্তিবাহিনী কর্তৃক মুক্ত হল। আমাদের রক্ষণাত্মক অবস্থানের চারপাশে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন স্থাপন করতে নির্দেশ দেয়া হল। সে নির্দেশ মোতাবেক সব রক্ষণাত্মক অবস্থানের চারপাশে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন পেতে রাখা হল।
২৪ আগস্ট ’৭১ সারাপুর সারাপুর এবং লাতুতে অবস্থিত ভারতীয় অ্যাডভান্স ক্যাম্পের মধ্যে একটি টেলিফোন লাইন স্থাপন করা হল ০৯০০টায়।

 

২৪ আগস্ট ’৭১ সারাপুর আমাদের স্থাপন করা অ্যান্টি পার্সোনাল মাইনের বিস্ফোরণে একজন বেসামরিক লোক পা হারিয়েছে।

 

২৫ আগস্ট ’৭১ (০২৩০টা) লক্ষ্মীবাজার লক্ষ্মীবাজার এলাকার কাছে একটা বাধ কেটে ফেলার জন্য ২২ জন সেনার একটি দল পাঠানো হয়। তারা বিস্ফোরকের সহায়তায় সফলভাবে বাধ ধ্বংস করে দেয়। কোন হতাহত হয়নি।

 

২৬ আগস্ট ’৭১ কাঙ্গলিঘাট কাঙ্গলিঘাট ফেরী ধ্বংস করার জন্য বিস্ফোরক সহ ৪০ জন মুক্তিসেনার একটি দল পাঠানো হয়। কিন্তু শত্রুর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে তারা অসফল হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

 

২৭ আগস্ট ’৭১ (০০৪৫টা) কাকড়দি শেওলা ঘাটের কাছেই কাকড়দিতে একটি সেতু ধ্বংস করতে ২০ জন মুক্তিসেনার একটি দল পাঠানো হয়। তারা সেতুর কাছে পৌঁছুলে সেতুর পাহারায় থাকা রাজাকাররা আমাদের দলের উপর গুলি ছুঁড়ে। আমাদের দল ও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে, যার ফলে ২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং একটি রাইফেল ও দুই রাউন্ড গুলি সহ আরেকজন আমাদের হাতে ধরা পড়ে। সেতুটি পরে সফলভাবে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। আমাদের কেউ আহত হয়নি।

 

২৭ আগস্ট ’৭১ কাঙ্গলিঘাট কাঙ্গলিঘাট ফেরী ধ্বংস করার জন্য বিস্ফোরক সহ ২৩ জন মুক্তিসেনার আরো একটি দল পাঠানো হয়। কিন্তু শত্রুর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে তারাও অসফল হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
২৮ আগস্ট ’৭১ তাজপুর ২৪০ জন মুক্তি সেনা তাজপুরে রক্ষনাত্নক অবস্থান নিয়েছে। শত্রুরা শাবাজপুর রেল স্টেশন থেকে তাজপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে আমাদের অগ্রসর দল তাদের উপর হামলা করে এবং ৪ জন রাজাকারকে নিহত করে। ১ জন পাকি সেনা সহ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
২৯ আগস্ট ’৭১ তাজপুর শত্রুপক্ষ বিয়ানীবাজার এবং শাবাজপুর থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের দল তাদের সে চেষ্টা প্রতিহত করেছে।
২৯ আগস্ট ’৭১ কুমারসাইল কুমারসাইল চা বাগানে, যা একেবারে সীমান্ত লাগোয়া এবং আমাদের ক্যাম্প থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে, শত্রুসেনা এসেছে শুনে ৫০ জন মুক্তিসেনা সেখানে পাঠানো হল। আমাদের দল শত্রুকে পেছন থেকে ঘিরে ফেলে। শত্রুরা সংখ্যায় ছিল শতাধিক। তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ৫ জন শত্রু আহত হয়েছে। আমাদের একজন গুরুতর আহত হয়েছে, অন্য ৫ জনের ছোটখাট আঘাত লেগেছে।
৩০ আগস্ট ’৭১ মুক্তাঞ্চল রক্ষা সত্রু বঘা ও খড়মপুর গ্রামের দিক থেকে ২ কোম্পানী সেনা নিয়ে আক্রমন করার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের আক্রমন চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়। মাইন বিস্ফোরণে শত্রুদলের ৩ জন নিহত হয়। আমাদের ক্ষতি শুন্য।
৩০ আগস্ট ’৭১ কুমারসাইল শত্রুর একটা দল কুমারসাইল চা বাগানে এসে ট্রেঞ্চ খননরত আমাদের সেনাদের উপর গুলি চালায়। আমাদের মুক্তিসেনারা দুই দিক থেকে তাদের উপর আক্রমন চালিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে। চা বাগানটি এখন আমাদের দখলে আছে এবং এর প্রতিরক্ষায় একটি প্লাটুন নিয়োজিত আছে। শত্রুপক্ষের ৭ জন নিহত হয়েছে। আমাদের হতাহত শুন্য।
৩১ আগস্ট ’৭১ টাকাইকোনা ৩১ আগস্ট রাত ২ টার দিকে পাক সেনা ও রাজাকারদের দুটো কোম্পানী টাকাইকোনা, বঘা এবং খড়মপুর থেকে আমাদের উপর আক্রমন করে। কিন্তু আমাদের প্রবল প্রতিরোধের কারনে তারা ভোর ৪:৩০ এর দিকে ফিরে যায়। মাইন বিস্ফোরণে শত্রুদের ৬ জন নিহত হয়েছে।

 

দুপুর ১টার দিকে শত্রুরা একই দিক থেকে আবারো আক্রমন করে। এবার তারা মরনপন আক্রমন করে, কিন্তু আমাদের ৩” মর্টারের সফল গোলাবর্ষনের ফলে তারা আবারো পিছাতে বাধ্য হয় বিকেল ৪ টার দিকে। শত্রুদের ৭ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে আমাদের গোলাবর্ষনের ফলে। আমাদের মধ্যে দুজন বুলেটের আঘাতে এবং ২ জন গোলার আঘাতে আহত হয়েছে।

 

২ সেপ্টেম্বর ’৭১ কোনাগ্রাম ৪৫ জন মুক্তিসেনার একটা দল কোনাগ্রাম আর বিয়ানীবাজারে অভিযানে যায়।, কিন্তু কোন পাক সেনার দেখা তারা পায়নি। ৩ জন রাজাকার এবং একজন পাকিস্তানি দালালকে হত্যা করা হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর/বড়লেখা ১০ জনের দুটি দল পাঠানো হয়েছিল দুটি রেল সেতু ধ্বংস করার জন্য, কিন্তু তারা বিফল হয়ে ফেরত এসেছে।

 

২ সেপ্টেম্বর ’৭১ কাঙ্গলি ফেরী শত্রুর একটি টহল দল কাঙ্গলি ফেরির কাছে এলে আমাদের নিজেদের টহলদল তাদের উপর গুলি ছুঁড়ে তাদেরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
২ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল শত্রু কুমারসাইল চা বাগানে আমাদের রক্ষন অবস্থানের উপর জোরাল হামলা করে। প্রায় দুই ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর তারা ফিরে যায়। শত্রুরা আক্রমনের জন্য মাঝারি মেশিনগান, ২” মর্টার এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে। শত্রুর হতাহতের হিসাব জানা যায়নি।
৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর/বড়লেখা ৬ জন মুক্তিসেনাকে অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মাইন রেল লাইনে বসানর জন্য পাঠানো হয়। তারা বিস্ফোরক বসায় দুই জায়গাতেই, কিন্তু একটি জায়গায় লাইন বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়। ৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ তারিখে শাবাজপুরে ট্রেন আসতে পারেনি।
৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ অমলশিদ অমলশিদে মুক্তাঞ্চল পাহারায় থাকা ২ প্লাটুন মুক্তিসেনার উপর রাত ৮ টার দিকে শত্রু চারিদিক থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। শত্রুর সাথে যুদ্ধ পরদিন সকাল পর্যন্ত চলে। বাঙ্কার প্রহরারত থাকা আমাদের দুজন সেনা শত্রুর গোলা বর্ষনে শহীদ হয়েছে এবং একজন গুরুতর আহত হয়েছে। শত্রুর হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। (শহীদ: ১। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, পিতা আব্দুল করিম ২। মুক্তিযোদ্ধা আকমল আলি, পিতা নুরুজ আলি)

 

৫ সেপ্টেম্বর ’৭১ তাজপুর ৩০০ মুক্তিসেনা মুক্তাঞ্চল রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল এখানে। শত্রু দুবার চেষ্টা করে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙ্গে ফেলার। তারা বিপুল শক্তি নিয়ে আক্রমন করে কিন্তু আমাদের কাছে ব্যর্থ হয়। একজন পাক সেনা ও ৬ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। আমাদের কেউ নিহত বা আহত হয়নি।

 

৬ সেপ্টেম্বর ’৭১ বঘা/খড়মপুর শত্রু পুর্নশক্তিতে বঘা এবং খড়মপুর গ্রামে আমাদের রক্ষনব্যুহের উপর আক্রমন করে মর্টারের সহায়তা নিয়ে। শত্রু ৩” মর্টারের ৫০ রাউন্ড গোলা বর্ষন করে আমাদের উপর। এছাড়াও তারা প্যারাশুট বম্ব ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে। তারা অনেক কষ্টে তাদের নিহত সৈনিকদের মৃতদেহ নিয়ে পালায়। ৩ জন পাকিস্তানি সেনা এবং ৪ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। আমাদের কেউ আহত বা নিহত হয়নি।

 

৬ সেপ্টেম্বর ’৭১ সোর্স রিপোর্ট চর মারফত জানা গেছে যে “শত্রুদের একটা বিশাল বাহিনী শাবাজপুর চা বাগান এলাকায় জড়ো হয়েছে, প্রায় দুই কোম্পানী সাধারণ সৈনিক এবং রাজাকার। এক কোম্পানী শাবাজপুর চা বাগানে, দুই প্লাটুন রহমানীয়া চা বাগানে, আরও দু প্লাটুন ছোটলেখা চা বাগানে এবং ২ কোম্পানী বড়লেখা চাবাগানে। পুরো এক ব্যাটেলিয়ন (২১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট) সৈনিক এখন বড়লেখা এবং বিয়ানীবাজারের মধ্যবর্তি এলাকায় আছে। আমাদের রক্ষণাত্মক অবস্থানগুলোর জন্য আর্টিলারি সাপোর্ট এখন খুবই দরকার। প্রয়োজনীয় অবস্থা নিন।”
৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ মুক্তাঞ্চল রক্ষণ শত্রু একাধিকবার বঘা গ্রামে বাম দিক দিয়ে আমাদের রক্ষণব্যুহ ভেঙ্গে এগুনোর চেষ্টা করে। শত্রুদল ৩” মর্টার সহ সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের ৬ জন নিহত হয়েছে।

 

৯ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর আমাদের সেনারা পাকিস্তানিদের একটি টহলদলকে অ্যামবুশ করে বিয়ানীবাজার সড়কে। শত্রু বেশ দূরে থাকতেই আমাদের দল গুলিবর্ষন শুরু করে। গত দুই তিন দিন ধরে ট্রেন আসা যাওয়া করছে।

 

৯ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর স্টেশন শত্রুর একটি এমআই-৮ হেলিকপ্টার আজ আমাদের রক্ষণ অবস্থানের উপর দিয়ে উড়ে যায়। শত্রু সম্ভবত আকাশ পথে হামলার চিন্তা করছে।
১১ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০২০০টা) শাবাজপুর আমাদের রক্ষণব্যুহের উপর দিয়ে শাবাজপুর থেকে সুতারকান্দির দিকে শত্রুর একটি বিমান উড়ে যায় রাত দুটোর দিকে। শত্রুরা শাবাজপুরের দিক থেকে গোলাগুলিও করে।

 

১২ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০২৩০টা) শাবাজপুর চাবাগান ৫০ জন মুক্তিসেনার দল শাবাজপুর চা বাগানে ২” মর্টার আর এলএমজি নিয়ে হামলা করে রাত ২:৩০ এর দিকে। শত্রু ১০ মিনিট পরে জবাব দেয়া শুরু করে। ১৫ জন পাক সেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুন্য।

 

১৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ আবঙ্গি শত্রু আমাদের রক্ষণব্যুহ ভেঙ্গে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে কিন্তু আমাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে হার মানতে বাধ্য হয়। ১১ জন পাকিস্তানি সেনা/রাজাকার নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস শহীদ হয়েছেন এবং কুকিতাল থেকে আসা আরো দুজন আহত হয়েছে।

 

১৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০৪৩০টা) কুমারসাইল ভোর ৪:৩০ এর দিকে শত্রু বিপুল শক্তি নিয়ে কুমারসাইলে আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের সেনারা ৯:৩০ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে অবশেষে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ২ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে।

 

১৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০৪০০টা) বুঘা ভোর ৪ টায় এক কোম্পানি সৈন্য আমাদের আক্রমন করে। সকাল ৯ টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়েছে। ১৬ জন পাক সেনা/রাজাকার নিহত। আমাদের ক্ষতি শুন্য।

 

১৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০৬০০টা) খড়মপুর শত্রুরা দুই কোম্পানি সৈনিক নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে ভোর ৬ টার দিকে, কিন্তু আমাদের রক্ষণব্যুহ ভাংতে ব্যর্থ হয়। সকাল ৭:৩০ তে তারা আবার আক্রমন করে। আমাদের সেনাদল সকাল ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ করে, কিন্তু অবশেষে অবস্থান ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। শত্রুপক্ষের আনুমানিক ১০ জন নিহত হয়েছে।

 

১৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০৩০০টা) সারাপুর/গোবিন্দপুর শত্রু প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে রাত ৩ টার দিকে আমাদের রক্ষণ অবস্থানের উপর হামলা করে। সব ধরনের অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে হামলে পরে শত্রুরা। আমাদের অবস্থানের উপর আর্টিলারি গোলা বর্ষন শুরু হয় রাত ২ টার দিক থেকে। শত্রু আমাদের সাথে সারাপুরের যোগাযোগ পথ বন্ধ করে দেয়। শেষ গুলিটা থাকা পর্যন্ত আমাদের সেনারা যুদ্ধ করে যায়। পরে তারা অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় কিন্তু পিছিয়ে আসার পথ বন্ধ থাকায় তারা সোনাই নদী সাঁতরে পার হতে বাধ্য হয়, যার ফলে তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র পেছনে ফেলে আসতে বাধ্য হয়। আমাদের ৬ জন সেনা নিখোঁজ আছে। শত্রু সেনা নিহত হয়েছে: আস্তাগারি – ৫,  স্বরুপা – ৪, পাথারিয়া পাড়া – ৪, পীরের চক – ৬, নোয়াগ্রাম – ৩ , তাজপুর – ১৫, আভঙ্গি ১০ জন। আমাদের ৫ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ।

 

১৫ সেপ্টেম্বর ’৭১   শত্রু সকাল ৮ টা থেকে আর্টিলারি গোলাবর্ষন শুরু করে। শত্রু ১৩টি গোলা বর্ষন করে যার মধ্যে ৯ টি বড়পুঞ্জিতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে পরে। কেউ আহত বা নিহত হয়নি।
১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর চাবাগান বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে যে গত ১৩ তারিখে আমাদের সাথে যুদ্ধে ৪ জন পাক সেনা এবং ৭ জন রাজাকার মারা গিয়েছিল।

 

১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ শাবাজপুর চাবাগান ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শাবাজপুর চা বাগানে (ঝিঙ্গালা) হামলা করতে যায়। তারা শত্রুর উপর ২” মর্টার, এলএমজি এবং রাইফেল দিয়ে হামলা করে। ৭ জন পাক সেনা এবং রাজাকারের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ সারাপুর এলাকা ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শত্রুর ফেলে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে যায়। তারা ২টি এসএলআর এবং ৪ টি .৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করে।
১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ সারাপুর এলাকা ৮ জন মুক্তিযোদ্ধার আরেকটি দল শত্রুর ফেলে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে যায়। তারা সোনাই নদী থেকে একটি ২” মর্টার উদ্ধার করেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ সুতারকান্দি ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি জিটার পার্টি গয়লাপাড়া (সিলেটি পাড়ার বিপরীতে) গিয়ে এলএমজি, রাইফেল এবং ২” মর্টারের গলাবর্ষন করে, শত্রুও তাৎক্ষণিক জবাব দেয়। তারা ৩” মর্টার, মাঝারি এবং হালকা মেশিনগান দিয়ে জবাব দেয়। শত্রুদের ২ জন নিহত হয়েছে। আমাদের ক্ষতি শুন্য।

 

১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ সুতারকান্দি সীমান্ত এলাকার উপর দিয়ে শত্রুর একটি হেলিকপ্টার উড়ে যেতে দেখা গেছে। সম্ভবত শত্রু আমাদের ক্যাম্পের অবস্থান দেখার জন্যে এসেছিল। রাত ১ টা হয়ে শত্রু ১০৫ মিমি. কামান দিয়ে আমাদের উপর গোলাবর্ষন শুরু করে। তারা ২৫ রাউন্ড গোলা বর্ষন করে, এর সব কটিই আমাদের ক্যাম্পের উপর এবং আশেপাশে পরে। আমাদের কেউ হতাহত হয়নি।
১৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল ৭০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল অ্যামবুশ করে বসেছিল কুমারসাইল এবং দেওতলি এলাকায়। শত্রু সেখানে এসে আমাদের উপর এলএমজির গুলি বর্ষন করে রাত ২টায়। আমাদের দল শত্রু অস্ত্রের নাগালের বাইরে ছিল বলে পাল্টা গুলিবর্ষন করেনি।

 

১৯ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল শত্রুর একটি টহলদল কুমারসাইল চা বাগানে এসে আমাদের ক্যাম্পের দিকে প্রবল গুলিবর্ষন করে। আমাদের কেউ হতাহত হয়নি।

 

২০ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল আমাদের পেতে রাখা অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন বিস্ফোরণে একজন পাক সেনা মারা গেছে।

 

২০ সেপ্টেম্বর ’৭১ বঘা আমাদের পাতা মাইন বিস্ফোরণে একজন পাক সেনা মারা গেছে।

 

২১ সেপ্টেম্বর ’৭১ গোবিন্দপুর ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গোবিন্দপুর গ্রামে একটা অ্যামবুশ পাতার জন্য পাঠানো হয়। ৩ পাক সেনা সহ এক রাজাকার নৌকায় করে গোবিন্দপুর গ্রামে আসে। রাজাকারটি পর্যবেক্ষনের জন্য যে গ্রামে আমাদের দল অ্যামবুশ করে বসেছিল সেই গ্রামে প্রবেশ করে। মুক্তিসেনারা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষনের পর সেই রাজাকারটিকে ধরে ফেলে। বাকিরা পালিয়ে যায়। রাকাজারটির কাছ থেকে একটি .৩০৩ রাইফেলও উদ্ধার করা হয়।

 

২১ সেপ্টেম্বর ’৭১ পাল্লাথাল চা বাগান ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল পাল্লাথাল চা বাগানে অ্যামবুশ করে বসে ছিল কিন্তু শত্রুর দল সেই পথে আসেনি।

 

২২ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে যে অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন বিস্ফোরণে ৭ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে, এছাড়াও একইভাবে আরও ৪ জন নিহত হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর।

 

২৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা দেওতলিতে অ্যামবুশ করে বসে থাকার সময় পাক সেনাদের সীমান্তের দিকে আসতে দেখে। শত্রুরা যখন কুমারসাইল মসজিদের কাছাকাছি চলে আসে তখন আমাদের দল এলএমজি দিয়ে গুলি ছোঁড়া শুরু করে যার ফলে ৮ জন শত্রু নিহত হবার পাশাপাশি ১০ জন আহত হয়েছে। আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
২৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল প্রায় এক প্লাটুন শত্রু সেনা কুমারসাইল চা বাগানের রাস্তা দিয়ে আসছিল। আগে থেকে অ্যামবুশ করে থাকা আমাদের দল তাদের উপর গুলি ছুঁড়ে শত্রু কিলিং রেঞ্জে আসার পর। সামনে থাকা দুজন স্কাউটকে হত্যা করে আমাদের সেনারা। বাকিরা পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মাইন ফিল্ডে গিয়ে পড়ে এবং ৭ জন শত্রুসেনা মাইন বিস্ফোরণে তাদের পা হারিয়েছে। আমাদের কোন হতাহত নেই।

 

২৪ সেপ্টেম্বর ’৭১ (১৫০০টা) খড়মপুর ৬০ জন মুক্তিসেনার দল খড়মপুরে অ্যামবুশ করে বসেছিল। ৪০ জনের মত শত্রুসেনা সীমান্তের দিকে আসলে আমাদের দল তাদের উপর গুলিবর্ষন করে। শত্রুও হালকা ও মাঝারি মেশিনগান এবং ৩” মর্টারের কয়েক রাউন্ড দিয়ে পাল্টা জবাব দেবার চেষ্টা করে। শত্রু দলের ৫ জন নিহত হয় এবং ১০ জন আহত হয়। গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে শত্রুরা তাদের নিহতদের লাশ নিয়ে যেতে পারেনি। আমাদের কোন হতাহত নেই।

 

২৫ সেপ্টেম্বর ’৭১ (০৬০০টা) দেওতলি ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি অ্যামবুশ পার্টি দেওতলি পাঠানো হয়েছিল। তারা শত্রুর একটি অ্যামবুশ পার্টিকে সীমান্তের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখে এবং তাদের উপর গুলি বর্ষন করে। শত্রুর দিক থেকেও প্রবল গোলাগুলি চলে। এক জন মুক্তিযোদ্ধা ২” মর্টারের গোলার আঘাতে আহত হয়েছে। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি অনুমান করা যায়নি।

 

২৬ সেপ্টেম্বর ’৭১ (১৭১৫টা) কুমারসাইল ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শত্রুর উপর হামলা চালাতে কুমারসাইল চা বাগানে যায়। দুই দলের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘন্টা প্রচন্ড গোলাগুলি চলে। ৯ জন শত্রুসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

 

২৭ সেপ্টেম্বর ’৭১ কুমারসাইল শত্রু আমাদের ক্যাম্পের উপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আর্টিলারি গোলা বর্ষন করে। এতে আমাদের তাঁবুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

 

২৭ সেপ্টেম্বর ’৭১ বড়াইল ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বড়াইলে অ্যামবুশ করে। একদল শত্রু সেনা যখন বড়াইলে তাদের অগ্রবর্তী দলের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিল তখন তাদের উপর হামলা করে আমাদের দল। ২ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে।

 

২৮ সেপ্টেম্বর ’৭১ ইন্ডাকশন ৩২ জন মুক্তিসেনা ডীপ ইন্ডাকশনের জন্য ঢাকা দক্ষিন ও হাকালুকি হাওর এলাকায় গেল।

 

১ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল কুমারসাইল গ্রামে একটি অ্যামবুশ পাতে। শত্রুর একটি টহলদল সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে আমাদের দল গুলি করে। ঘটনাস্থলে শত্রুদের ৫ জনকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আমাদের কেউ আহত হয়নি।

 

১ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার আরেকটি দল কুমারসাইল চা বাগানে একটি অ্যামবুশ পাতে। কিন্তু শত্রুরা সেদিন ভিন্ন পথে আসার কারনে আমাদের দল হামলা করতে পারেনি।

 

১ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ৩০ জন গেরিলাকে অস্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশের ভেতর থাকার জন্য ঢাকা দক্ষিন এবং হাকালুকি হাওর এলাকায় পাঠানো হল।

 

৪ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল অ্যামবুশ করার জন্য ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দলকে কুমারসাইল পাঠানো হল। বিকাল ৫ টার দিকে তারা শরতুর দেখা পায়। আমাদের দল গুলি করে ৩ জন পাক সেনাকে হত্যা করেছে।

 

৪ অক্টোবর ’৭১ বড়াইল বড়াইল গ্রামে শত্রুর উপর অ্যামবুশ করার জন্য ৩০ জনের একটা দল পাঠানো হল। তারা শত্রুর টহলদলকে সেই গ্রামে দেখতে পায়। আমাদের দল শত্রুর উপর গুলি চালিয়েছে, কিন্তু হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি।

 

  ইন্ডাকশন ৫১ জন গেরিলাকে  অস্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশের ভেতর থাকার জন্য ঢাকা দক্ষিন এবং হাকালুকি হাওর এলাকায় পাঠানো হল।

 

৫ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল কুমারসাইল গ্রামে একটি অ্যামবুশ করে। প্রায় এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনাকে কুমারসাইল চা বাগানে আসতে দেখা যায়। আমাদের সেনারা শুত্রুর উপর গুলি চালিয়ে পাক জন সৈন্যকে হত্যা করে। শত্রুর দল সেদিন বিকেল পর্যন্ত ৩” মর্টারের গোলাবর্ষন করে (আমাদেরকে দূরে থাকতে বাধ্য করে) মৃতদেহ সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
৫ অক্টোবর ’৭১ আটুয়া ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যামবুশ করার জন্য আটুয়া গ্রামে পাঠানো হয়, কিন্তু তারা সেখানে শত্রুর দেখা পায়নি।

 

৬ অক্টোবর ’৭১ (১৪৩০টা) কুমারসাইল ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কুমারসাইল গ্রামে অ্যামবুশ করে ছিল, শত্রুর টহল দল সে গ্রামে এলে তারা গুলি করে ৪ জন শত্রুসেনা হত্যা করে। একজন মুক্তিযোদ্ধা বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হয়েছে।

 

৭ অক্টোবর ’৭১ আটুয়া ২২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যামবুশ করার জন্য পাঠানো হয়, কিন্তু তারা সেখানে শত্রুর দেখা পায়নি।

 

৮ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা একটা দল শত্রুর ওপর অ্যামবুশ করে কুমারসাইল গ্রামে। শত্রু বৈরাগী টিলা থেকে মাঝারি মেশিনগান দিয়ে আমাদের উপর গুলি করে। হতাহত শুন্য।

 

১০ অক্টোবর ’৭১ কালাছড়া ক্যাম্প ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ১০ অক্টোবর ভোর রাত ৪টার দিকে কালাছড়া ক্যাম্পে হামলা করে, এবং শত্রু (বুঝে উঠে) পাল্টা গুলি করার আগেই ৫ জন শত্রুকে হত্যা করার পাশাপাশি দুজন রাজাকারকে .৩০৩ রাইফেলসহ আটক করে। আমাদের হতাহত শুন্য।

 

১২ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যামবুশ করার জন্য কুমারসাইল গ্রামে পাঠানো হয়। তারা সারাদিন অ্যামবুশ করে থেকেও শত্রুর দেখা পায়নি।

 

১৩ অক্টোবর ’৭১ পাল্লাথাল চাবাগান পাল্লাথাল চা বাগানের বিভিন্ন পথে প্রায় ৫০টি অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন পেতে রাখা হল।

 

১৪ অক্টোবর ’৭১ (১৬০০টা) কালিকাপুর চা:বা: ৬০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল কালিকাপুর চা বাগানে অ্যামবুশ করে। প্রায় এক কোম্পানি শত্রু সেনা সেই এলাকায় এসে আমাদের দলের উপর গুলি চালায়। আমাদের দল এলএমজি, রাইফেল এবং ২” মর্টার দিকে পাল্টা জবাব দিয়ে ১ জন রাজাকারকে নিহত এবং দুজন পাঞ্জাবীকে আহত করতে সক্ষম হয়। আমাদের নিজেদের কেউ হতাহত হয়নি।

 

১৬ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল শত্রুকে উত্যক্ত করার জন্য আমাদের একটি দল কুমারসাইল যায়। তারা শত্রুর বাঙ্কারের উপর এলএমজি এবং রাইফেল দিয়ে গুলি বর্ষন করে। শত্রু শাবাজপুর থেকে ৩” দিয়ে গোলাবর্ষন এবং বৈরাগী টিলা থেকে মাঝারি মেশিনগানের গুলি ছোঁড়ে। ব্যাপক গুলি বিনিময়ের পর আমাদের দল ফিরে আসে। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতির নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি।

 

১৮ অক্টোবর ’৭১ ডিপ ইন্ডাকশন ৬৭ জন গেরিলাকে তিনটি দলে ভাগ করে বাংলাদেশের ভেতর লুকিয়ে থাকার জন্য বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার পাঠানো হল।

 

১৯ অক্টোবর ’৭১ ডিপ ইন্ডাকশন ২৩ জন গেরিলাকে লুকিয়ে থাকার জন্য গোলাপগঞ্জ এলাকায় পাঠানো হল।
১৯ অক্টোবর ’৭১ পাল্লাথাল চাবাগান পাল্লাথাল চা বাগানে আমাদের পেতে রাখা  মাইনের বিস্ফরনের ফলে দুইজন শত্রু সেনার আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
২০ অক্টোবর ’৭১ ইন্ডাকশন আরও ৪৪ জন গেরিলাকে লুকিয়ে থাকার জন্য কয়েক দলে ভাগ করে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠানো হল। আমাদের ক্যাম্প থেকে এরকম পাঠানো মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৪৪। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পৌঁছে গেছে।

 

২১ অক্টোবর ’৭১ শাবাজপুর ৫০ জনের একটি জিটার পার্টিকে শাবাজপুরে পাঠানো হয়েছিল। শত্রুর প্রায় ৯০ জনের একটি দল সীমান্তের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করলে আমাদের দল দুই দিক থেকে তাদের উপর অ্যামবুশ করে। শত্রু পালিয়ে যায়, তবে তাদের রক্ষণব্যুহ বঘা এবং শাবাজপুর থেকে আমাদের দিকে প্রচন্ড গুলিবর্ষন হয়েছে।

 

২০ অক্টোবর ’৭১ বঘা আমাদের ৩” মর্টারের গোলাবর্ষনে শত্রুর দুটি বাংকার ধ্বংস হয়েছে। শত্রু ২” এবং ৩” মর্টার দিয়ে আমাদের উপর ২৩ রাউন্ড গোলাবর্ষন করে। আমাদের হতাহত শুন্য, শত্রুর হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 

২৩ অক্টোবর ’৭১ বড়লেখা রেললাইন বড়লেখা এবং শাবাপুরের মধ্যের রেল লাইনে একটি রেল ট্রলি মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয় আমাদের গেরিলারা। এর ফলে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়েছে।

 

২৪ অক্টোবর ’৭১ পাক দালাল হত্যা বরলেখার তেরাদর থানার চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট পাকিস্তানি দালাল আব্দুল আজিজ আমাদের গেরিলাদের আক্রমনে গুরুতর আহত হয়েছে।
২৫ অক্টোবর ’৭১ শত্রুর অবস্থান শাবাজপুরে শত্রুর অবস্থানের উপর হামলা চালিয়ে ৩জন রাকাজারকে হত্যা এবং আরও ৪ জনকে আহত করা হয়েছে। আমাদের কোন হতাহত নেই।
২৮ অক্টোবর ’৭১   বিয়ানীবাজারের কাছে আমুরাতে শত্রুদলের সাথে আমাদের গেরিলাদের একটি সঙ্ঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে ২৫ অক্টোবর ’৭১ তারিখে বেলা ৩টা নাগাদ। ৮ জন রাজাকার এবং দুইজন পাঞ্জাবী নিহত হয়েছে।

 

২৯ অক্টোবর ’৭১ কুমারসাইল একটি জিটার পার্টি পাঠানো হয়েছিল কুমারসাইল গ্রামে। তারা শত্রু অবস্থানের উপর গুলি ছুঁড়লে শত্রুও সাথে সাথে এলএমজি এর গুলিতে জবাব দেয়।

 

১ নভেম্বর ’৭১ লাতু/বড়লেখা লাতু এবং বড়লেখার মাঝের রেল লাইন বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সেনারা।

 

৩ নভেম্বর ’৭১   শত্রুকে সহায়তাকারী একজন কুমারসাইল গ্রামে আমাদের পাতা মাইনের বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে।

 

৮ নভেম্বর ’৭১   ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১৬৬ জন নতুন মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিলো।

 

১০ নভেম্বর ’৭১ আটগ্রাম শত্রুরা বাল্লা এবং গোটাগ্রাম মুক্তাঞ্চল প্রতিরক্ষায় থাকা  আমাদের এক কোম্পানি সৈনিক এর উপর আক্রমন করে, কিন্তু আমাদের সেনারা বীরত্বের সাথে তাদেরকে রুখে দেয়। শত্রু আবারো ভোর ৪:৩০ এর দিকে প্রায় ৩০০ সৈনিক নিয়ে আক্রমন করে, কিন্তু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে আবারো পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পাক সেনাদের সাথে মিলে ৩০০/৪০০ স্থানীয় লোক অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলে আমাদের সেনারা তাদের উপর গুলি চালাতে বাধ্য হয়। কৌশলগত কারনে আমাদের দল সেখান থেকে পিছিয়ে আসে। একজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন (অমলশিদ কোম্পানি) আরো দুজন আহত হয়েছে। শত্রুরা প্রায় ১০০ জনকে হারিয়েছে।

 

১০ নভেম্বর ’৭১ সাদিনাপুর সাদিনাপুরে শত্রুর শক্তি বেড়ে প্রায় ১৫০ জন নিয়মিত সৈনিকে দাঁড়িয়েছে।

 

১২ নভেম্বর ’৭১ গাজুকাটা নভেম্বরের ১০ তারিখে গাজুকাটায় আমাদের গেরিলারা দুজন রাজাকার কে হত্যা করে একটি .৩০৩ রাইফেল দখল করেছে।

 

২০ নভেম্বর ’৭১ আটগ্রাম শত্রুর ব্যাপক বাধা সত্বেও আমাদের সেনারা সালাম টিলা এবং মনিপুর টিলা দখল করেছে। দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সালাম টিলায় এবং এক প্লাটুন মনিপুর টিলায় অবস্থান নিয়েছে। শত্রু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে অস্ত্রপাতি ফেলেই পালিয়ে গেছে। মিত্রবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ অভিযানে জকিগঞ্জ দখল করা হয়েছে এবং অসংখ্য শত্রু সেনা হত্যার পাশাপাশি ৩ জন পাঞ্জাবি এবং ২৩ জন রাজাকারকে আটক করা হয়েছে। একজন বালুচকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করার পর করিমগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমাদের সৈয়দ এমদাদুল হক আর জনাব আলি অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন বিস্ফোরণে একটি পা হারিয়েছেন। শত্রুর গোলাগুলিতে প্রায় ১০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
২২ নভেম্বর ’৭১ রাজা টিলা আমাদের প্রায় এক কোম্পানি সৈন্য শত্রুর ব্যাপক প্রানহানি ঘটিয়ে রাজা টিলা দখল করে নিয়েছে। শত্রু রাতের আধারে পালিয়ে যায়। আমাদের দিকে হতাহত হয়নি কেউ।

 

২৩ নভেম্বর ’৭১   আমাদের সেনারা কানাই ঘাটে শত্রুর অবস্থানে হামলা করার জন্য ডাউকারগালের  দিকে গিয়েছে এবং ২৫ নভেম্বর তারিখে  ডাউকারগাল  এবং লাউয়াছড়া শত্রুমুক্ত করেছে । শত্রুরা কাঙ্গলিঘাটে জড়ো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

২৮ নভেম্বর ’৭১ বড়চাতাল আমাদের সেনাদল কানাইঘাটের দিকে যাওয়া এক মাত্র রাস্তা বড়চাতাল ও দারবাস্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। শত্রু আমাদেরকে হটানোর অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। শত্রু আর্টিলারী গোলার আঘাত হানার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি ২ জন রাজাকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের বেঙ্গল রেজিমেন্টকে মোকাবেলা করার জন্য শত্রুরা প্রায় এক কোম্পানি সেনা এনেছিল, কিন্তু তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। প্রায় ৩০০ এর মত রাজাকার কানাইঘাটে জড়ো হয়েছে। রাস্তা এবং নদীর ধার দিয়ে শত্রুর চলাফেরা বন্ধ করার জন্য উত্তর  লক্ষী প্রসাদ এর অধীনে দুই প্লাটুন সেনা নিয়োজিত করা হয়েছে।

 

৩০ নভেম্বর ’৭১ বড়চাতাল আর্টিলারী হামলার আড়ালে শত্রুর সেনারা কানাইঘাটের ৩ মাইল দূরে নয়াগ্রামে আমাদের অবস্থানের উপর হামলা করেছে। রাজাকার এবং নিয়মিত সেনা মিলিয়ে প্রায় এক কোম্পানি রিইনফোর্সমেন্ট পেয়েছে শত্রুরা।

 

৫ ডিসেম্বর ’৭১ বীরদল এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কানাই ঘাটের কাছে বীরদলে টহল দেবার সময় শত্রুর মুখোমুখি হয়। হতাহতের সংখ্যা শুন্য।

 

৫ ডিসেম্বর ’৭১ কানাইঘাট চারিদিক থেকে আমাদের সেনারা রক্ষণব্যূহ আরো শক্তিশালী করে তুলল।
৭ ডিসেম্বর ’৭১ কানাইঘাট মিত্র বাহিনীর সাথে সম্মিলিত ভাবে আমাদের সেনারা দারবস্তের  দিকে অগ্রসর হয় এবং কানাইঘাটকে শত্রুমুক্ত করে।
৮ ডিসেম্বর ’৭১ দারবস্ত মিত্র বাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে আমাদের সেনাদল দারবস্তে শত্রু অবস্থানের উপর হামলা করে। শত্রু আর্টিলারি এবং অন্যান্য অস্ত্রের মাধ্যমে বিপুল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও আমাদের সেনারা শত্রুর ব্যাপক ক্ষতি ঘটিয়ে সহজেই দারবস্ত দখল করে নেয়। কর্নেল দত্ত এবং মেজর রব আক্রমন নিয়ন্ত্রণ করেন। মিত্রবাহিনীর একজন অফিসার (ক্যাপ্টেন) নিহত এবং আমাদের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছে। প্রায় ২০ জন রাজাকার মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছে। শত্রু এখানে থেকে পিছিয়ে গিয়ে হরিপুর এ ঘাঁটি গেড়েছে। শত্রু ৩টি আর্টিলারি কামান ব্যবহার করেছে।

 

৯ ডিসেম্বর ’৭১ হরিপুর মিত্রবাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে আমাদের সেনারা এগিয়ে গিয়ে হরিপুরের কাছে অবস্থান নিয়েছে। শত্রুরা হেমুতে  একটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে। চারিদিক থেকে শত্রু সেনারা মুক্তি বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পন করছে।

 

১০ ডিসেম্বর ’৭১ হেমু হেমুতে শত্রুর উপর চারিদিক থেকে প্রবল চাপ সৃষ্টি করার কারনে দুই পক্ষ থেকেই সকাল পর্যন্ত ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়েছে। শত্রুর দুটি গোলা আমাদের অবস্থানের উপর পড়ার কারনে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। মৃতদেহ আমরা নিয়ে আসতে পারিনি। স্থানীয় এক ব্যাক্তকে ২০০ টাকা দেয়া হয়েছে শহীদদের কবর দেওয়ার জন্য। এখানে থেকে শত্রুদলকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে।

 

১১ ডিসেম্বর ’৭১ (২০০০টা) চিকনাগুল লে: কর্নেল দত্ত ৫০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চিকনাগুল এলাকায় গিয়ে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিলেন।

 

১২ ডিসেম্বর ’৭১ (১৬০০টা) দারবস্ত ৮ম মাউন্টেন ডিভিশনের কমান্ডার বিকেল ৪ টায় দারবস্ত এ এসেছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ওয়াতকে।

 

১৩ ডিসেম্বর ’৭১ (১৪০০টা) হরিপুর আমাদের সেনাদল এবং মিত্রবাহিনীর সাথে মিলে হরিপুর দখল করে নিলো। শত্রুরা এমসি কলেজের দিয়ে পালিয়ে গেছে, দুজন শত্রু সেনাকে আটক করা হয়েছে, এছাড়াও তাদের অনেকেই আহত হয়েছে।। শত্রু পালিয়ে যাবার সময় বিপুল পরিমান গোলাবারুদ এবং দুটি চাইনিজ মেশিনগান ফেলে গেছে। আমাদের ৫ জন যোদ্ধা হালকা আঘাত পেয়েছেন।

 

১৩ ডিসেম্বর ’৭১ (১৬০০টা) চিকনাগুল শত্রুসেনারা এমসি কলেজ এলাকায় জড়ো হচ্ছে খবর পেয়ে আমাদের সেনাদল সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

১৪ ডিসেম্বর ’৭১ (২৩০০টা) চিকনাগুল চিকনাগুল চা বাগানের কাছে ১৩ ডিসেম্বর ’৭১ এ সারা রাত জুড়েই দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় চলে যা ১৪ তারিখ সকালেও চলছিল। আমাদের দল শত্রু অবস্থানের দিকে অগ্রসর হবার সময় আর্টিলারী শেলের আঘাতে একজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন। মাঝারি মেশিনগানের গুলিতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং ৪ জন আহত হয়েছেন। শত্রু পিছিয়ে খাদেমনগরে অবস্থান নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক রাজাকার তাদের অস্ত্র সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছে।

 

১৫ ডিসেম্বর ’৭১ (০৭৩০টা) খাদেমনগর শত্রু খাদেমনগরে (তাদের হেড কোয়ার্টার) শক্তিশালী রক্ষণ অবস্থান নিয়েছে, যেখান থেকে তারা ভারী আর্টিলারি কামান ব্যবহার করছে। আমাদের সেনারা মিত্রবাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে খাদেমনগরের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সারাদিন প্রচন্ড গুলি বিনিময় চলল। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুদলকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। আমাদের বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেট শহরে প্রবেশ করেছে। মিত্রবাহিনীর তরফ থেকে শত্রুকে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মসমর্পনের উপদেশ জানানো হয়েছে।

 

১৬ ডিসেম্বর ’৭১ খাদেমনগর শত্রু সম্মিলিত বাহিনীর প্রস্তাব মেনে নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছে।

 

১৭ ডিসেম্বর ’৭১ (১২০০টা) এমসি কলেজ ১৭ ডিসেম্বর ’৭১ তারিখে শত্রু তাদের সব সৈনিককে এমসি কলেজে অস্ত্র অ্যান্ড গোলাবারুদ সহ জড়ো করে এবং মিত্রবাহিনীর কমান্ডারের হাতে তুলে দেয়।

 

 

Scroll to Top