১৭। রমনা পার্কের বধ্যভূমি (৩৮৭)
সূত্র – দৈনিক বাংলা, ৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২
রমনা পার্কের বধ্যভূমি ক্ষয়ে যাওয়া পোষাক দেখে কি তাদের সনাক্ত করা যাবে?
হাসিনা আশরাফ
রমনা পার্কের উত্তর পূর্ব কোণটা কি পাক সামরিক চক্রের কোন বধ্যভূমি সমাধিস্থল?
রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রমনা পার্কের উত্তর কোণটার যেদিকে ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট হাউজের সীমানা শুরু হয়েছে, তার কিছুটা ভেতরের দিকেই এটি অবস্থিত। পুরো জায়গাটাই প্রায় জুড়ে রয়েছে, বেগুনী বর্ণের বোগেন ভিলা বা বাগান বিলাসের রঙিন কুঞ্জ।
এই ঝোপটির নিচে বড় বড় কয়েকটি গর্তে এবং পাশের উঁচু স্থানে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে নরকংকালের অস্থি এবং মাথার খুলি। মাটির সাথে সমান হয়ে ছড়িয়ে আছে, হঠাৎ দেখলে বোঝা যায় না। জায়গাটা যে সত্যিকার কতখানি বিস্তৃত বার থেকে তা আজ বোঝার উপায় নেই। তবে এখানকার অনেকেই জানিয়েছে যে, পশুরা অসংখ্য মানুষকে ট্রাকে করে প্রেসিডেন্ট হাউজের মধ্যে নিয়ে হত্যা করার পর গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতো।
বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো যখন ভরে যায় তখন পানির সাথে সাথে কতগুলা আধপচা লাশ এবং সঙ্গে অসংখ্য স্কুল কলেজের বই ভেসে উঠত। এসব লাশের মধ্যে কয়েকটি লাশের লম্বা চুল এবং দেহের গঠন দেখে মহিলা বলে চেনা গিয়েছিল। রমনা পার্কের নিভৃত এই প্রান্তে কোন হতভাগা ভাইবোনদের সমাধিস্থল যে রচিত হয়েছিল, কংকালের অস্থি আর ভগ্ন খুলির মাঝে, আজ তা জানা যাবে না।
তবে প্রশ্ন জাগে মনে, এরা কি সেই হতভাগা পুলিশ ভাইদের কেউ, যারা অসহযোগ আন্দোলনের সময় দস্যু ইয়াহিয়াকে পাহারা দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট হাউজে নিযুক্ত হয়েছিলো; প্রশ্ন জাগে মনে, এরা কি সে ছাত্র ভাইদের কেউ, যারা শুধু দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে জীবন্ত আত্মার তাগিদে শূন্য হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলো জল্লাদ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে?