<৪,৮২,১৪২-১৪৪>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮২। লন্ডনে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রচারপত্র | লন্ডন আওয়ামী লীগের ‘প্রচারপত্র-১’ | অক্টোবর,১৯৭১
|
‘প্রচারপত্র-১’
আওয়ামী লীগ লন্ডন
পূর্বের আকাশে সূর্য উঠেছে
আলোকে আলোকময়
জয় জয় জয় জয় বাংলার জয়।
পাকিস্তানের ইতিহাস হলো মোনাকেফী, বেঈমানী শাসক ও শোষক চক্রের ইতিহাস। জিন্নার সাধের পাকিস্তান পূর্ব বাংলার মানুষদের জন্য ছিল এক বিরাট ফাঁকি আর ফাঁকিস্তান। পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে, আর এর সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার ও স্তূপীকৃত হয়েছে। শাসন ও সামরিক বিভাগে বাঙালিদের স্থান নেই। জাতীয় সম্পদ হতে বাঙালিরা বঞ্চিত হয়েছে সদাই। সমগ্র পাকিস্তানের মোট রাজস্বের শতকরা ৬২ ভাগ দেশরক্ষা করতে ব্যাহত হয়, শতকরা ৩২ ভাগ খরচ হয় ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায়। মোট রাজস্বের শতকরা ৯৪ ভাগ বিভিন্ন নামে পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়। মাত্র ৬ ভাগ পূর্ব বাংলার ভাগ্য জোটে। যদিও পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের আয়ের শতকরা ৬৪ ভাগ জোগায়। তাই পূর্ব বাংলার মানুষের পরিশ্রমের বুনিয়াদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ইমারত গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষকে পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী গত ২৩ বছর ধরে বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ইসলাম বিরোধী জিগির-বাহানা প্রয়োগ করে আসছে। অতএব বাংলার মানুষ রাজনৈতিক ও স্বাধীকার নিয়ে বাঁচার দাবী উঠালো। শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য অগ্রসর হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ গত ২০ বছর ধরে বাংলার দাবী নিয়ে চরম লড়াই করে আসছে শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পূর্ব বাংলার মানুষেরা পাকিস্তানে জনসংখ্যার অনুপাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত ডিসেম্বরে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হলো। মহান নেতা শেখ মুজিব সমগ্র পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হলেন। পাঞ্জাবি শাসক, শোষকচক্র ও নররক্তপিপাসু পশুরাজ ইয়াহিয়া বাংলার দাবীকে বানচাল করে দেবার জন্য “ডাণ্ডা দিয়া ঠাণ্ডা করার খেয়ালে” ২৫শে মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর সৈন্য বাহিনী বাংলার মানুষের উপর লেলিয়ে দিলেন। বাংলার প্রিয় জননেতা শেখ মুজিবকে বন্দী করলেন। এসব নৃশংস ও নারকীয় কার্যকলাপের কাহিনী আপনাদের সবার জানা। বাংলাদেশকে কলোনিতে পরিণত করে রাখার জন্য অসূর ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ১২ লক্ষ নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করেছে। দলে দলে তরুণীদের গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আটক তরুণীদের একেবারে উলংগ অবস্থায় রেখে পাক পশুবাহিনী এক নারকীয় আনন্দ উপভগ করছে। শত শত তরুণীকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বাংলার আজ বড়ই দুর্দিন। অসহায় ছেলেমেয়ে ও লাঞ্ছিত নারীত্বের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ বাতাস আজ ভারী। গরীব মানুষের লাখো লাখো ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। তাই অসূর ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ফৌজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ‘মুক্তি বাহিনী’ গড়ে তুলেছে। সার্বভৌম ও প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে, বাংলার মাটিতে ‘মুজিবনগরে’। বাংলাদেশ এখন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। আজ এই জাতীয় সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাক শত্রুকে মরণ আঘাত হানতে হবে। ইনশা-আল্লাহ বাংলার জয় অনিবার্য।
___________________
জনাব সামাদের সভাপতিত্বে
লন্ডনে আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও ভ্রাম্যমাণ দূত এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুস সামাদ এম_এন_এ ইংল্যান্ড সফরে এসেছিলেন। তিনি বার্মিংহাম, ব্রাডফোর্ড ও ম্যাঞ্চেস্টার প্রভৃতি শহরগুলিতে আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন ও বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা করেন। গত ১৩ই অক্টোবর আওয়ামী লীগ লন্ডন শাখার এক কর্মী সম্মেলন হয়। এই কর্মী সম্মেলনে লন্ডন আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী ও জোরদার করে গড়ে তোলার জন্য জনাব আবদুস সামাদ বিশেষ জোর দেন এবং সকলের পরামর্শ অনুযায়ী জনাব আমাদের সভাপতিত্বে নিম্নলিখিত কর্মীবৃন্দকে নিয়ে আওয়ামী লীগ লন্ডনের অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়।
সভাপতি ঃ জনাব আলহাজ আবদুল মান্নান
১ম সহ সভাপতি ঃ জনাব মিনহাজ উদ্দিন আহমদ
২য় সহ সভাপতি ঃ জনাব ইসমাইল মিয়া
৩য় সহ সভাপতি ঃ জনাব মোহাম্মদ ইসহাক
সাধারণ সম্পাদক ঃ জনাব মোহাম্মদ আবুল বশর
সংগঠন সম্পাদক ঃ জনাব সুলতান মোহম্মদ শরীফ
জন-সংযোগ সম্পাদক ঃ জনাব জিল্লুর হক
সামাজিক সম্পাদক ঃ জনাব মিম্বর আলী
শ্রম সম্পাদক ঃ জনাব শাহ সিরাজুল হক
বহিরাগত সম্পর্কীয় সম্পাদক ঃ জনাব আব্দুর রকিব
মহিলা সম্পাদিকা ঃ বেগম হেলেন তালুকদার
দফতর সম্পাদক ঃ জনাব এম,এ,হাকিম
কোষাধক্ষ্য ঃ জনাব মজির উদ্দিন
সদস্যবৃন্দ ঃ জনাব রমজান আলী, শফিকুর রহমান,এন ইউ আহমদ, নুরুল ইসলাম, গাউস খান, বি এইচ তালুকদার, আবদুল হামিদ, শফিক মিয়া, মোহাম্মদ কলমদার আলী, শরিয়ত উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ একরাম হোসেন, নুরুল হক, তোয়াহিদ আলী, শামসুর রহমান, মশ্রফ আলী, মোহাম্মদ অমর, রেদওয়ান মিয়া, এ কে এস ইসলাম, তৈয়বুর রহমান, মহিন উদ্দিন, আবদুল আজিজ ও রহিম উদ্দিন।
অস্থায়ী আওয়ামী লীগ লন্ডন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ই অক্টোবর। এই অধিবেশনে বৃহত্তম লন্ডন শহরকে সাংগাঠনিক কার্যকলাপের ও গণ-সংযোগের সুবিধার জন্য লন্ডনকে ৯টি আঞ্চলিক ভাগে বিভক্ত করা হয় এবং এর এক এক ভাগকে একটি সাব-ডিভিশন আওয়ামী লীগের মর্যাদা দেওয়া হয়। সাব ডিভিশনগুলি নিম্নলিখিত ডিস্ট্রিক্ট এলাকা নিয়ে গঠিত হবেঃ-
১। এন+এন+ডবলিউ
২। ডাবলিউ+ ডাবলিউ-সি
৩। ই-১
৪। ই-২+৮+৫
৫। ই-৯+১৪+১৬+৬+১৩+১৫+৭+১২ ৩ হতে ৬ পূর্ব লন্ডন
৬। ই- ১০+১১+১৭১৮+৪+ইসেক্স
৭। দক্ষিণ টেমস এলাকা
৮। উত্তর টেমস এলাকা
৯। নর্থ+এন-ডাবলিউ
লন্ডনের বাঙালি ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ
আপনারা রাজনৈতিক বিভিন্ন ‘ইজম’ পন্থীদের প্রভাব থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে শক্তিশালী করে তুলুন আর একটি মাত্র আওয়াজ তুলুনঃ
প্রিয় নেতা শেখ মুজিব আমাদেরকে ডাক দিয়েছেন গোলামীর জিঞ্জির ছিঁড়ে ফেলতে। আসুন, আমরা বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য সর্বস্ব পণ করি।
______________________________________________________
সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ আবুল বশর কর্তৃক ২৭৫ উলড ব্রোমটন রোড, লন্ডন, দঃ পঃ ৫ হইতে প্রকাশিত ও প্রচারিত। দূরালাপনীঃ ০১-৩৭৩ ৭৫৬১, ০১-৬০৩ ৭৪৬১