শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন
২৭শে জুলাই, ১৯৭১
(দ্বিতীয় পর্যায়)
বাংলদেশ রত্নগর্ভা। বাংলাদেশে শুধু সম্পদ নয়, আছে মানুষের মত মানুষ। বাংলাদেশের জননেতারা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিজ দেশের জনগণকে ভালোবেসে যে নির্যাতন ভোগ করেছেন, তার তুলনা সমকালীন ইতিহাসে নেই। বঙ্গজননী তার কোলে শুধু তীতুমীর, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, বাঘা যতীনদের মত বিপ্লবীদের ধারণ করেনি, করেছে চিত্তরঞ্জন, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত বিখ্যাত নিয়মতান্ত্রিক নেতাদেরও। নিয়মতান্ত্রিক নেতা হয়েও এরা দেশের জন্য কম নির্যাতন ভোগ করেননি। শেরে বাংলা ফজলুল হককে পাকিস্তানের তৃতীয় বড়লাট গোলাম মোহাম্মদ ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে নজরবন্দী করেছিলেন। এই বৃদ্ধ সর্বজনমান্য নেতাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শয়তান শাসকচক্র ঈদের নামাজের জামাতেও যোগ দিতে দেয়নি। এর চাইতেও নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর সঙ্গে। হৃদরোগে আক্রান্ত এই নেতাকে বৃদ্ধ বয়সে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক ষড়যন্ত্রের’ কাল্পনিক অভিযোগে দীর্ঘ ছয় মাস
জেলে আটকে রাখা হয়েছে। জেলেই তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। মুক্তিলাভের পর দেশের বাইরে সুদূর বৈরুতে প্রিয় পরিজনের সান্নিধ্য থেকে বহুদূরে নিঃসঙ্গ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশের আরেক জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি এখনো আমাদের মধ্যে আছেন। ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের পর গিয়েছিলেন লণ্ডনে। তিনি দেশে ফেরার আগেই হয়ে গেল সব ওলট-পালট। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে কলমের এক খোঁচায় বরখাস্ত করে দিলেন বড়লাট গোলাম মোহাম্মদ। ফজলুল হক হলেন নজরবন্দি। গোলাম মোহাম্মদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসকান্দার মীর্জা হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ‘মওলানা ভাসানী যদি দেশে ফেরেন, তাকে আমি গুলি করার নির্দেশ দেব।’
বিবরণ দিতে গেলে এক মস্তবড় পুঁথি তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের এমন একজন নেতা, এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী নেই যাকে পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট শাসকচক্র হয়রানি করেনি, নির্যাতন করেনি, অমর্যাদা করেনি। তাই এবারেও বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদলের কাছে পাকিস্তানের বর্তমান ফ্যাসিষ্ট জঙ্গীচক্রের নায়ক ইয়হিয়া খাঁ যখন বলেন ‘শেখ মুজিব একজন ক্রিমিনাল, তখন আমরা বিস্মিত হই না। ইয়াহিয়ার মত একজন অর্ধশিক্ষিত বর্বরের কাছ থেকে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা সম্পর্কে এর চাইতে শোভন ও ভদ্র ভাষা আমরা আশা করি না। যে ব্যক্তি নিজে ক্রিমিনাল,যার হাতে এখনো নিরীহ-নিরপরাধ বাঙালীর বুকের তাজা রক্ত লেগে রয়েছে, ইতিহাসের সেই জঘন্যতম খুনী দস্যু বাংলার ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক মহান জননায়ক সম্পর্কে শ্রদ্ধাভরে কথা বলবেন, এটা কেমন করে সম্ভব হয়?
আমি আগেই বলেছি, বাংলাদেশে অনেক মহান নেতা জন্মেছেন। দেশের জন্য তারা যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তারা সকলেই আমাদের শ্রদ্ধেয়। তবু এ কথা স্বীকার করতেই হবে, নির্যাতন বরণ ও নেতৃত্বাদানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যুগ সৃষ্টিকারী নেতা। তার ত্যাগ, সাহস ও ব্যক্তিত্ব অতুলনীয়। তিনি এখন শুধু বাঙালীর নয়নমণি নন, কিংবদন্তীর রাজা। জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রায় বারটি বছর তিনি কাটিয়েছেন জেলে। ইয়াহিয়ার আগে আইয়ুব একবার তার গলায় ফাসির রজ্জ্ব পরাতে চেয়েছিলো। পারেনি। এখন আবার সেই ফাঁসির রজ্জ্ব হাতে নিয়ে খুনী ইয়াহিয়া নতুন খুনের নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছে। শেখ মুজিবের অপরাধ তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। শেখ মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে যে অধ্যায় যোজনা করেছেন, তার কোন দ্বিতীয় নজির নেই। একটি নিয়মতান্ত্রিক গণআন্দোলনকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের প্রভাবে তিনি রূপান্তরিত করেছেন বিপ্লবে। বিপ্লবকে রূপান্তরিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আজ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ ইতিহাসের সবচাইতে জঘন্য ও বর্বর হত্যাকাণ্ড রুখে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি সুদক্ষ ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে বলতে গিয়ে প্রায় খালি হাতে লড়ছে। এ কি ইতিহাসের কম বড় বিস্ময়? এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে একটিমাত্র মানুষের সবল ও প্রেরণাদানকারী নেতৃত্বের জন্য। একটি নামই আজ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রাম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেছে। আর বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের নতুন সংগ্রামী ইতিহাস। তাই বাংলাদেশের ঘৃণ্য শত্রু ইয়াহিয়া, হামিদ ও টিক্কা খাঁর দল এই ইতিহাস এবং এই ইতিহাসের নায়ক শেখ মুজিবকে ধ্বংস করার জন্য পাগলা কুকুরের মত হয়ে উঠেছে। শেখ মুজিবকে জেলে বন্দী রেখে কাপুরুষ ইয়াহিয়া সাহস ও স্বস্তি পাচ্ছে না। সুতরাং বিচারের নামে তাকে হত্যা করার এই শয়তানি চক্রান্ত।…
(আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত)
২০শে আগষ্ট, ১৯৭১
(এই পর্যায়ের শেষ আলোচনা)
সত্তরের নির্বাচনবিজয়ী বাংলাদেশের একচ্ছত্র জাতীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার গোপন চক্রান্ত চলছে পকিস্তানী নাৎসীদের জেলে। এটা যেবিচার নয়, বিচার প্রহসন এবং হত্যা করার নারকীয় চক্রান্ত,
সে সম্পর্কে বিশ্বের কোন দেশের কোন মানুষের মনে এতটুকু সন্দেহ নেই। শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন সম্পর্কে ইউরোপের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ পত্রিকা গত ১২ই আগষ্ট তারিখে এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বলেছেনঃ “এই বিচারে বিদেশী সাংবাদিকদের পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে দেয়া হচ্ছে না। বিদেশের সংবদাপত্রগুলোর প্রতি ইসলাবাদের এই অবিশ্বাস, পাকিস্তানের কল্যাণ সাধন করবে না।”
‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ পত্রিকা ঠিকই বলেছেন। তবে তিনি বলছেন বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি ইসলামাবাদের জঙ্গীচক্রের অবিশ্বাস, আসলে সেটা ভয়। ইয়াহিয়া জানে, গত ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় বিদেশী সাংবাদিকেরা ছিলেন বলেই, তার পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের কথা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে। আজো শেখ মুজিবের তথাকথিত প্রহসন মূলুক বিচারে যদি বিদেশী সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকেন, তাহলে আসল কথা ফাঁস হয়ে যাবে। ধরা পড়বে আসল অপরাধী ইয়াহিয়া এবং তার বেঈমান খুনী চক্র। তাই বিচারের নামে খুনী ইয়াহিয়ার এই কঠোর গোপনীয়তা। প্রতি যুগে বিচারের নামে ইয়াহিয়ার মত খুনীচক্রের যে হত্যালীলা, তারই প্রতি ধিক্কার জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন
‘আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’
পশ্চিম পাকিস্তানে ইয়াহিয়ার খুনীচক্রের ষড়যন্ত্রে আজ এই বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। তবে কবিগুরু, তোমাকে আজ সাড়ে সাত কোটি বাঙালী দৃঢ় আস্থার সঙ্গে এই আশ্বাস দিতে পারে, বাংলাদেশে প্রতিকারহীন শক্তির যুগ শেষ হয়ে গেছে। শয়তান ইয়াহিয়া চক্র আজ বাংলাদেশে প্রতিকারহীন শক্তি নয়। এই জানোয়ারদের, এই বর্বর পশুশক্তির পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতিকার করার জন্য বাংলাদেশের তরুণরা আজ অস্ত্ৰধারণ করেছে। বাঙালী মুক্তিবাহিনী আজ অজেয়, অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য। এই অপরাজেয় মুক্তিবাহিনীর ভয়ে কাপুরুষ ইয়াহিয়া ঢাকা আগমনের সাহস পাচ্ছে না। টিক্কা এবং সৈন্যরা আশ্রয় নিয়েছে ছাউনিতে।
এখন প্রশ্ন, এত শীঘ্ৰ শেখ মুজিবকে বিচারের নামে হত্যা করার জন্য পাগলা কুকুরের মত কেন হন্যে হয়ে উঠেছে ইয়াহিয়া? এই প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত সোজা। মূর্খ ইয়াহিয়া ভেবেছে- এক, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর উৎসাহ নষ্ট হবে এবং মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ হবে; দুই, বাংলাদেশ নেতাহীন হবে এবং তার প্রতিরোধ শক্তি ধ্বংস হবে; তিন. শেখ মুজিব বেঁচে না থাকলে বাংলাদেশের সারা এলাকা স্বাধীন হলেও তাকে সংগঠিত ও স্থিতিশীল করার মত কোন নেতা ও সংগঠন থাকবে না।
আগেই বলেছি, অতীতের ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি এই মূৰ্খ ইয়াহিয়া। নইলে সে জানতো, আইয়ুবের আমলে এই পরীক্ষা একবার নয়, বহুবার হয়ে গেছে। ১৯৬৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফার আন্দোলন শুরু করেন, তখন আইয়ুব বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘকালের জন্য কারাগারে রেখে ভেবেছিল আন্দোলন ব্যর্থ হবে। শেখ মুজিবকে ছাড়া তার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে টিকিয়ে রখতে পারবে না। আইয়ুবের এই দুরাশা ব্যর্থ হয়। ১৯৬৭ সালে কুচক্রী নওয়াবজাদা নসুরুল্লাকে হাত করে পশ্চিম পাঞ্জাবের চৌধুরী মোহম্মদ আলী চক্র ভেবেছিল, শেখ মুজিব জেলে রয়েছেন এই সুযোগে আওয়ামী লীগকে ভেঙে তাদের পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যাবে। কিছু লোককে হাত করে এজন্য তারা চেষ্টাও চালিয়েছিলেন, কিন্তু নসুরুল্লার এই চক্রান্তও সফল হয়নি। ১৯৬৮ সালে যখন তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করা হয়, তখনও আইয়ুব চক্র ভেবেছিল শেখ মুজিবকে জেলে রেখে এই মামলার বিচার চালানো হলে দেশে নেতৃত্বের অভাবে কোন আন্দোলন হবে না। আইয়ুবকে এই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে অত্যন্ত কঠোরভাবে। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে যে গণবিপ্লব হয়, তখনো শেখ
মুজিব কারাগারে। তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নবীন অথচ সংগ্রামী নেতারা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাত্রনেতারা এই বিপ্লবকে সাফল্যের দিকে নির্ভুলভাবে পরিচালনা করেন।
ইয়াহিয়া বাংলাদেশের এই বিপ্লবী ইতিহাস জানে না তা নয়। কিন্তু মানবতাবোধ ও ইতিহাসজ্ঞান বর্জিত এক মূৰ্খ সেনাপতির কাছ থেকে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞা আশা করা বাতুলতা। ইয়াহিয়া এবং তার চারপাশে জমায়েত জঙ্গী নায়কেরা জানে না, একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা যায়; কিন্তু একটি আইডিয়া বা আদর্শকে হত্যা করা যায় না। শেখ মুজিব আজ শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি সংগ্রামী আইডিয়া বা আদর্শ। বাংলাদেশের বর্তমান সংগ্রামী জাতীয়তা এবং তার সংগ্রামী সংগঠন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি শেখ মুজিবরূপী এক আদর্শ। এই আদর্শেই আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের মুক্তিসেনারা আজ বলীয়ান। শেখ মুজিব যদি সশরীরে এই আদর্শ রূপায়ণে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকতে পারেন, তাহলে সারা বাংলাদেশের ও বাঙালী জাতির পরম গৌরব। আর তিনি যদি কোন চক্রান্তের শিকার হয়ে নাও থাকেন, তাহলেও তার প্রদর্শিত পথেই আওয়ামী লীগ ও বাঙালী জাতির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। শেখ মুজিব আজ দেশের বাইরে বহুদূরে কারান্তরালে রয়েছেন; তবু তার প্রদর্শিত পথে অবিচল থেকে আওয়ামী লীগ বর্তমানে একটি সুসংগঠিত সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান। স্বাধীন গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারে শক্তি ও স্থিতিশীলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মুক্তিযোদ্ধারা দিন দিন সংগিঠত ও শক্তিশালী হচ্ছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র দ্বারা বাঙালী জাতির এই নবঅভ্যুত্থান ব্যর্থ করার আশা মূর্খ ইয়াহিয়ার দূরাশা মাত্র।
তবে বাঙালীর নয়নমণি, জাতির প্রাণপ্রিয় মুজিব ভাইকে যদি হত্যা করা হয়, তাহলে ইয়াহিয়া চক্র নিস্তার পাবে তারা এমন আশা যেন স্বপ্নেও না করে। এই কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র পরিণতি হবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ। আমরা বলি, একজন বাঙালীর দেহে শেষ রক্তবিন্দু থাকতে এই পৈশাচিক হত্যার পরিশোধ না নিয়ে তারা ছাড়বে না। ইয়াহিয়া চক্র পালিয়েও প্রাণে বাঁচবে না। তোজো ও হিটলারের পরিণতি বরণই তাদের ভাগ্যে অবধারিত হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে আমরা বিশ্বাস করি, কোটি কোটি বিশ্ববাসী এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার জোরে শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার সমস্ত শয়তানি চক্র ব্যর্থ করে বেঁচে থাকবেন এবং তার প্রিয় জনগণের মধ্যে ফিরে আসবেন। আজ এই সংকট সন্ধিক্ষণে সেই শুভদিনের প্রতীক্ষায় আমরা দিন গুনছি।
শেখ মুজিব দীর্ঘজীবী হোন। জয় বাংলা। ..
(আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত)