সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আবদুল ওয়াহাব

<১০, ৪.১০, ১৪৬-১৪৮>

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আবদুল ওয়াহাব  (বীর বিক্রম)

 

আমি এপ্রিল মাসেই ভারতের সোনামুড়াতে চলিয়া যাই এবং সেখান হইতে ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে দেবীপুর আসি। তখন সি কোম্পানীর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন গাফফার। আমি তখন সি কোম্পানীর ৭ নং প্লাটুনের প্লাটুন কমান্দার ছিলাম। এইখানে পুরো কোম্পানি লইয়া আমরা কয়েকটি অপারেশন করি। আমি আমার নিজস্ব প্লাটুন লইয়াও ছোটখাটো কয়েকটা অপারেশন করি।

 

১২-৪-৭১ তারিখে খবর পাইলাম যে, ৭ জন পাকসৈন্য রেললাইন ধরিয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাতুন লইয়া সেইদিকে অগ্রসর হই। গিয়াই দেখিতে পাই তাহারা অনেক দূর আগাইয়া গিয়াছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ রেল স্টেশনের উত্তর দিকে দীঘিরপাড় নামক স্থানে এমবুশ বসাই। তাহারা যখন পুনরায় ওই রাস্তা হইয়া ফিইতেছিল তখন আমরা তাহাদের উপর আক্রমন করি। আমার আক্রমনে সেখানে ১৮ জন নিহত হয়, ৯ জন আহত হয়। বাকি লোক পলায়ন করিতে সক্ষম হয়, পরে আমরা দেবীপুর চলিয়া যাই।

 

২৫-৪-৭১ তারিখে ২২ জন জোয়ান লইয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করি। চালনা নামক গ্রামে আসার পর আমাদের রাত্রি হইয়া যায়। তাই সেখানকার জনগনের সহযোগীতায় সেখানেই রাত্রি যাপন করি। পরের দিন ভোর ৪ টার সময় সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া শিতলাই নামক গ্রামে যাই। সেখান হইতে আমি নিজে গিয়া সি এন্ড বি রোড রেকি করিয়া আসি। রাত্রিতে শালঘর নামক স্থানে সি এন্ড বি রাস্তায় এমবুশ লাগাই। রাত্র ১১ টার সময় কুমিল্লা হইতে ২৭ খানা গাড়ি লইয়া পাকসৈন্য সিলেটের দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর হামলা চালাই। আমার এই আক্রমনে তাহাদের ১০ টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৮ টি গাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। তাহাতে বহূ পাকসৈন্য হতাহত হয়। বাকিগুলি চলিয়া যায়। পরের দিন সকাল ১০ ঘটিকার সময় পুনরায় আমি দেবীপুর চলিয়া আসি।

 

১৩-৫-৭১ তারিখে খবর পাই যে, প্রায় ২০০ জন পাকসৈন্য রেললাইন হইয়া গাড়িতে করিয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ রেল স্টেশনে গিয়া তাহাদের উপর আক্রমন করি। আমাদের আক্রমনে প্রায় ২৫ জন মারা যায়। বাকীগুলি তখন পজিশন নেয়। এমতাবস্থায় তাহাদের মালপত্রের গাড়িতে আগুন লাগিয়া যায়। তখন তাহারা সেখান হইতে পলায়ন করে। এই আগুন তিনদিন পর্যন্ত জ্বলিতেছিল।

 

১৭-৫-৭১ তারিখে আমি আমার প্লাটুন লইয়া পৃথক হয়ে পরি। তখন আমার কমান্ডে ৫০ জন লোক ছিল। তাহাদেরকে লইয়া মন্দভাগ (কোনাবন) রেল স্টেশন এরিয়ায় ডিফেন্স করি।

 

২১-৫-৭১ তারিখে পাকসৈন্যরা ২ টা গাড়ি লইয়া শালদা নদির দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি তাহাদের উপর আক্রমন করি। তাহাতে তাহাদের ২ টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয় ও ৯ জন সৈন্য মারা যায়।

 

১৮-৬-৭১ তারিখে ৪০ জন সৈনিকের একটি পেট্রল পার্টি তাহাদের বিজলি তার মেরামতের জন্য শালদা নদী হইতে কসবার দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি আমার জোয়ান লইয়া তাহাদের উপর অতর্কিত ভাবে আক্রমন চালাই। আমার এই অতর্কিত আক্রমনে ৯ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। বাকী সৈন্যগন আমাদের তীব্র আক্রমনে টিকিতে না পারিয়া পিছনে হটে।

 

২০-৬-৭১ তারিখে আমরা আমাদের মন্দভাগ ডিফেন্স ছাড়িয়া পূর্বোল্লিখিত ডিফেন্স দেবীপুর চলিয়া যাই। তখন বর্তমান মেজর গাফফার সাহেব সেখান হইতে ডিফেন্স লইয়া বেলুনিয়ার দিকে চলিয়া যান। দেবীপুর যাওয়ার পর আমার জোয়ানের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০০ জন।

 

২৭-৬-৭১ তারিখে ১৮ জন পাকসৈন্য কসবা হইতে ইমামবাড়ির দিকে যাইতেছিল। তখন আমি আমার ১২ জন জোয়ান লইয়া কসবা রেল স্টেশনের নিকট তাহাদের উপর আক্রমন করি। আমার এই আক্রমনে তাহাদের ১৭ জন সৈনিক নিহত হয়। মাত্র ১ জন সৈনিক বাঁচিয়া যায়। আমরা তখন তাহাদের লাশ আনিবার জন্য অগ্রসর হইলে কসবা হইতে পাকসৈন্যর আর একটি পার্টি ফায়ার করিতে করিতে অগ্রসর হলে আমরা পিছনে হটি। পরে এখান হইতে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করি।

 

৮-৭-৭১ তারিখে বর্তমান মেজর গাফফার সাহেব বেলুনিয়া হইতে ফিরিয়া আসিয়া কোনাবনে পুনরায় হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে।

 

৯-৭-৭১ তারিখে গাফফার সাহেব দেবীপুর হইতে আমার প্লাতুনকে কোনাবন লইয়া আসেন। ঐ তারিখ রাত্রিতেই আমি গাফফার সাহেবকে বলি যে, পাঞ্জাবিরা রেশন লইয়া প্রতি সপ্তাহে শালদা ও মন্দভাগের দিকে যায়। আমি সেখানে গিয়া  তাহাদেরকে আক্রমন করিব।

 

১০-৭-৭১ তারিখেই আমি ১৮ জন লোক লইয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হই। মঈনপুর নামক জায়গায় গিয়ে দেখতে পাই কয়েকখানা নৌকা ও স্পীডবোট লইয়া তাহারা মন্দভাগের দিকে অগ্রসররত। তখন আমি তাহাদের হইতে ১৩ শত গজ দূরে। তাই ঐ সময় তাহাদেরকে আক্রমন করিতে পারিনাই। পরে আমি নিজে গিয়া এমবুশ লাগাইবার জায়গা রেকি করিয়া আসি। আমি পরে আমার জোয়ানদেরকে লইয়া সেখানে এমবুশ বসাই। বিকাল আড়াইটার সময় তাহারা ফিরিতেছিল। তখন আমি তাহাদের ওপর আক্রমন চালাই। ঐ সময় তাহারা আমার নিকট হইতে ২৫ গজ দূরে ছিল। তাহাদের স্পীডবোটে ২ জন লে; কর্নেল ২ জন মেজর, ২ জন ক্যাপ্টেন ১ জন নায়েব সুবেদার ৩ জন সিপাই ও ১ জন অবাঙ্গালি ব্যবসায়ী। আমার তীব্র আক্রমনে তাহাদের স্পীডবোট ছিন্নভিন্ন হইয়া পরে। ফলে সবাই নিহত হয়। এখান হইতে একটা অতি প্রয়োজনিয় ম্যাপ, ১ টা ওয়ারলেস সেট ৩ টা MGIA-3 সহ আরো কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করি। আমরা চালিজা যাওয়ার পর পাকসৈন্য আসিয়া তাহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তাহারা জানিতে পারে যে, ক্যাপ্টেন বোখারীসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ অফিসারদিগকে আমি হত্যা করিয়াছি তখন তাহারা ঐ এয়াকায় প্রকাশ করে যে যে লক সুবেদার ওয়াহাব সাহেবের মৃত লাশ লইয়া আসিবে তাহাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হইবে।

 

১৮-৭-৭১ তারিখে নওগা নামক জায়গায় পাক ডিফেন্সের ও পি পোস্টে আক্রমন করি। প্রকাশ থাকে যে, ঐদিন ২ জন অফিসার ১  জন জেসিও ও ৩ জন সান্ত্রি তাহাদের ওপি পোস্টে আসিয়া চারিদিক লক্ষ্য করিতেছিল। ওই সময় ই আমি তাহাদের উপর আক্রমন চালাই। আমার তীব্র আক্রমনে ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও ও ২ জন সেপাই নিহত হয়। বাকী ১ জন সেপাই আহত হইয়া ওপি পোস্ত এর উপর হইতে নিচে পরিয়া যায়।

 

৭-৮-৭১ তারিখে আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ গ্রাম এলাকায় পাক বাহিনীর শক্ত ডিফেন্সের উপর আক্রমন চালাই। আমারর তিব্র আক্রমনে পাক বাহিনি তাহাদের প্রায় ১০০ টি বাঙ্কার ছারিয়া পিছু হটে। যাওয়ার পথে তাহারা বহূ এম্যুনিশন ফেলিয়া যায়। আমার এই আক্রমনের সময় মেজর আজিজ পাশা তাহার মুজিব ব্যটারি ও বর্তমান সুবেদার মেজর শামসুল হক তাহার ৩” মর্টারের সাহায্যে সর্বপ্রকার সাহায্য করেন।

 

২৪-৮-৭১ তারিখে আমি কয়েকজন জোয়ান লইয়া সিএন্দবি রোডের কালামুড়া ব্রিজ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া ফেলি। এখানে যত রাজাকার ছিল তাহারা আমাদের সহিত একত্রিত হয়। তাহাদেরকে কোনাবন পাঠাইয়া দিয়া আমরা কালুমুড়া ব্রীজের ২ মাইল দক্ষিণে মাধবপুর ও মীরপুরের মাঝখানে এমবুশ করি। তারপর দেখা যায় পাকসৈন্য ভর্তি ২ টা টেস্ট বাস, ৩ টা জিপ ও ২ টা ডজ অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর প্রচন্দ আক্রমন চালাই। আমার এই তীব্র আক্রমনে ৭ টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হইয়া যায়। তাহাদের বহূ সৈনিক মারা যায়। ৪ জন পাকসৈন্যকে অস্ত্রশস্ত্র সহ জ্যান্ত ধরিয়া ফেলি। পরে রাজাকারটাকে রাখিয়া বাকি ৩ জন পাকসৈন্যকে ভারতে পাঠাইয়া দেই।

 

২৮-৮-৭১ তারিখে কোম্পানিগঞ্জ হইতে প্রায় ১৫০ জনের মত রাজাকার ও পাকসৈন্য মহেশপুর লুটপাট করার জন্য আসে। আমি তখন তাড়াতাড়ি আমার পার্টি লইয়া গ্রামটির চারিদিকে এমবুশ করিয়া তাহাদের উপর আক্রমন চালাই। আমাদের এই আক্রমন বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত চলে। শেষে আমাদের আক্রমনে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। বাকী সবাই লুটের মাল ফেলিয়া পলায়ন করিতে সক্ষম হয়। বিকাল ৫ ঘটিকার সময় আমরা কোনাবনের দিকে অগ্রসর হই। কিছুদুর যাওয়ার পর দেখিতে পাই মীরপুর ও মাধবপুর এলাকা পাকবাহিনি জ্বালাইয়া দিতেছে। অনেক দূর হইতে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া দেখা যাইতেছিল। তখন আমরা সেইদিকে রওয়ানা হই। মাধবপুর উপস্থিত হইয়া অতি তাড়াতাড়ি এমবুশ পাতিয়া তাহাদের উপর আক্রমন চালাই। আমাদের আক্রমনে তাহারা পিছু হটে কিছুসংখ্যক লোক সেখানে হতাহত হয়। রাত্রি ১০ টার দিকে আমরা চালনা নামক গ্রামের এক বাড়িতে গিয়া উঠি তখন তাহারা তাড়াতাড়ি আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে। খাওয়া দাওয়ার পর রাত্র ৩ ঘটিকার সময় আমাদের ডিফেন্স মন্দভাগে ফিরিয়া আসে।

 

৩০-৮-৭১ তারিখে খবর পাইলাম যে, চালনা গ্রামে পাক বাহিনী প্রবেশ করিয়া ডিফেন্স করিয়াছে। এই খবর পাইয়া ঐ দিনগত রাত্রিতেই আমি আমার ৫০ জন জোয়ান লইয়া সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই। সুবেদার শামসুল হক সাহেব ও তখন ২ টা মর্টার সহ ১ টি সেকশন লইয়া আমাকে সাহায্য করার জন্য আসেন। ভোরের দিকে আমি তাহাদের উপর গুলি করি। আমার চারিদিকের আক্রমনে ১৩ জন রাজাকার সাঁতরাইয়া পালাইয়া যায়। সারাদিন যুদ্ধ চলার পর রাত্রির অন্ধকারে কয়েকজন পাকসৈন্য পালাইয়া যায়। বাকি ১ জন ক্যাপ্টেন ১৫ জন সিপাই ২৯ জন রাজাকার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এখানে আমরা ৭ টি বড় নৌকা মালসহ দখল করিয়া ফেলি। ৬ টা এল এম জি, ম্যাগাজিন বাক্স ৬ টা, এল এম জি ম্যাগাজিন ৭২ টা, রাইফেল ১২ টা, ৮১০ টা বুলেট উদ্ধার করি। সাঁতরাইয়া যাওয়া রাজাকারদের ভিতর শিতলাই গ্রামের জনগন ৬ জনকে খতম করিয়া ফেলে। বাকী রাজাকারদেরকে আবদুল হক কোনাবন পৌঁছাইয়া দেয়। শেষে আমরা চালনাতেই ডিফেন্স করি।

 

২-৯-৭১ তারিখে পাকসৈন্যরা নৌকাযোগে চারিদিকে জ্বালাইতে আমাদের দিকে অগ্রসর হয়। তাহারা জয়দ্ধনি দিতে দিতে আগাইয়া আসিতেছিল। তাহারা যখন আমাদের এমবুশের ভিতর আসিয়া পরে তখন আমরা তাহাদের উপর আক্রমন চালাই আমাদের তীব্র আক্রমনে তাহাদের তিনখানা নৌকা ডুবিয়া যায়। বহূ পাকসৈন্য নিহত হয়। শেষে তাহারা আর্টিলারির সাহায্যে আমাদের উপর ভীষন ফায়ার চালায়। এই আক্রমনে আমাদের পক্ষে আজাহার আলী শহিদ ও সিপাই আব্দুস সাত্তার আহত হন। সেখানে সারাদিন রাত্রি থাকার পর ৩-৯-৭১ তারিখে আমরা আমাদের ডিফেন্স তুলিয়া কোনাবন চলিয়া যাই।

 

১৫-১০-৭১ তারিখে আমাদের প্রায় ১ ব্যাটেলিয়নের মত মুক্তিযোদ্ধা শালদা নদী পাক ডিফেন্স তোলার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু পারে নাই। তাহাদের পিছনে তখন মুজিব ব্যাটারি ছিল। শেষে তাহারা অকৃতকার্য হইয়া পিছনের দিকে চলিয়া যায়। ঐ সময় আমার অসুখ থাকায় আমি তাহাদের সহিত যোগদান করিতে পারিনাই।

 

১৮-১০-৭১ তারিখে বিকালে আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ বাজারের পশ্চিম দিকে দেউশ নামক জায়গায় ডিফেন্স লই। ১৮-১০-৭১ তারিখে ১ কোম্পানী পাকসৈন্য অন্যদিকে যাওয়ার পথে আমাদের ডিফেন্সের মাঝে আটকাইয়া যায়। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর আক্রমন চালাই। আমাদের আক্রমনে ১ জন মেজর, ১ জন লেঃ সহ প্রায় ১০০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। চারজন আহতকে চিকিৎসার জন্য কোনাবন পাঠাইয়া দেই। ঐ দিন আমরা পাকবাহিনীর বহূ মৃত লাশ উদ্ধার করি। পাক বাহিনীর মৃত লাশ হইতে আমরা বহূ টাকা পয়সা ঘড়ি কলম উদ্ধার করি। এগুলি আমরা জোয়ানদেরকে দিয়া দেই। সেখানে আমরা ৬ টি এমজিআই – এ-৩, ৭ টি এল এম জি, ৭০ টা জি ৩ রাইফেল, ১ টা ৬০ এমএম মোটর, ৩ টা ৮৩ এম এম বি সি, ১ টা ওয়ারলেস সেট ৩ টা , টেলিফোন ৩ টা , ২” মর্টার,  ১ জন হাবিলদারের পকেট থেকে তিনশত ডলার, কয়েকটা ট্রানজিস্টার উদ্ধার করি। পরদিন সকালে পাকবাহিনি আমাদের উপর বিমান হামলা করে। এ সময়ও তাহারা আমাকে ধরিয়া দেবার জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘোষনা দেয়। প্রকাশ থাকে যে, ১৯ তারিখেই আমাকে ৪র্থ  বেঙ্গলের সি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।

 

২৩-১১-৭১ তারিখে আমি আমার পুরো কোম্পানী লইয়া শালদা নদীতে তিন দিক হইতে আক্রমন করি। আমি নিজে ৮ নং প্লাটুন লইয়া পাকা ডিফেন্সের উপর হামলা চালাই। আমি তখন একটা এলএমজি ও ওয়ারলেস সেট বহন করিয়া চলিতাম। ৬০ এমএম ও ২” মর্টার বহন করার জন্য অন্য লোক ছিল। আমি নিজে এই অস্ত্রের সাহায্যে তাহাদের ৫ টা পাকা বাঙ্কার উড়াইয়া দেই। আমাদের এই আক্রমনের মাঝেই আমি বর্তমান মেজর গফফার সাহেবের সহিত অয়ারলেসে আলাপ করিতেছিলাম। ঐ সময় আমার অয়ারলেসে আলাপ করিতেছিলাম। ঐ সময় আমার ওয়ারলেসে পাকসেনাদের কথা ধরিতে পারি। তখনই আমি ওয়ারলেসের মাধ্যমে পাকসেনাদের গালি দিতে থাকি এবং বলি যে, তোরা আমাদেরকে জানিস না, আমরা বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোক তখন পাকসেনারা ভয় পাইয়া পিছনে হটিতে থাকে। এই সুযোগে আমরা তাহাদের উপর আরো প্রচন্ড বেগে আক্রমন চালাই। তখন তাহারা আরো তাড়াতাড়ি পিছনে হটে। আমাদের এই আক্রমনে ৫০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। ১ জন রাজাকারসহ ৪ জন পাকসেনাকে বন্দী করিয়া ফেলি। পাক বাহিনি হটিয়া যাবার পর আমরা এখান হইতে বহূ অস্ত্র শস্ত্র ও মালামাল উদ্ধার করি।

 

*বাংলে একাডেমীর পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

Scroll to Top