৭.১৫৯.৪৭৭ ৪৭৮
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫৯। সামরিক গভর্ণরের সফর ও
বক্তৃতা-বিবৃতি |
দৈনিক পাকিস্তান | ৬ জুলাই, ১৯৭১ |
চুয়াডাঙ্গা, নাটোর ও রাজশাহীতে গভর্ণর
জনগণ পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য
কোন দলকে ম্যান্ডেট দেয়নি
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও সামরিক আইন শাসনকর্তা লেঃ জেঃ টিক্কা খান গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা, নাটোর ও রাজশাহী সফর করেন।
এপিপি পরিবেশিত এই খবরে প্রকাশ, সফরকালে তার সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘ আন্তঃএজেন্সী রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মিঃ রাহগাত আল তাবিল, তার সহকারী ও উপদেষ্টা মিঃ গ্লান-ই-হায়ডন, রেডক্রস সোসাইটি লীগের মিঃ পিষ্ট্যানসিস ও রিলিফ কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আলী।
গভর্ণর এই সফরকালে স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীগণ ও শান্তি কমিটিসমূহের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
তিনি তাদের সঙ্গে আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতি, মওজুদ খাদ্য পরিস্থিতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
তাঁকে জানান হয় যে সারা রাজশাহী বিভাগে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের নির্মূল করা হয়েছে এবং জনসাধারণ তাদের ঘর বাড়ীতে ফিরে এসেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মওজুদ রয়েছে, দোকানপাট খোলা হয়েছে, সরকারী অফিসে কাজকর্ম চলছে এবং অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসসমূহে স্বাভাবিকভাবে কাজ চলছে।
বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাদের উত্তম কাজের প্রশংসা করেন। তিনি গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের উপস্থিতির কথা কর্তপক্ষকে জানাবার জন্য তাদের আহ্বান জানান যাতে করে আইন ও শৃংখলা রক্ষাকারী এজেন্সীসমূহ তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
সর্বত্রই জনসাধারণ আগ্রহের সঙ্গে গভর্ণরকে অভিনন্দন জানান এবং পাকিস্তান পায়েন্দাবাদ ও কায়েদে আজম জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় গভর্ণর অভ্যর্থনা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। তিনি দেখেন যে, প্রত্যাবর্তনকারীদের গ্রহণের জন্য সেখানে প্র্য়োজনীয় সকল সু্যোগ-সুবিধা রয়েছে। তিনি বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা পরিদর্শন করেন। তিনি কয়েকজন প্রত্যাবর্তনকারীর সঙ্গেও দেখা করেন। এবং তাদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলাপ করেন।
গতকাল অভ্যর্থনা শিবিরে আগত একটি পরিবারের প্রধান গভর্ণরকে জানান যে, তিনি ইতিপূর্বে অনুমোদিত পথে দেশে আসার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে আসতে দেয়নি। পরে এক অনুমোদিত পথে পূর্ব পাকিস্তানে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তিনি ও অন্যান্য প্রত্যাবর্তনকারীদের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ভালোভাবে দেখাশুনা করা হচ্ছে।
গভর্ণর প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে লুঙ্গী ও শাড়ী বিতরণ করেন।
গভর্ণরের প্রশ্নের জবাবে অভ্যর্থনা শিবিরে মেডিকেল অফিসার জানান যে, সকল প্রত্যাবর্তনকারীকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং কোন গুরুতর অসুস্থতা বা মহামারী ঘটেনি। তিনি আরো জানান কয়েকদিন আগে আগত কয়েকজন প্রত্যাবর্তনকারী কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছিল কিন্তু তাদের অবিলম্বে রক্ষা করা হয়।
নাটোর
নাটোরে জেঃ টিক্কা খান জিন্নাহ সরকারী হাইস্কুল ও সরকারী গার্লস স্কুল পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে জানানো হয় যে, উপস্থিতি সন্তোষজনক এবং ক্লাশ রীতিমত চলছে। গার্লস স্কুলের ছাত্রীরা স্কুল প্রাঙ্গণে লাইন দিয়ে দাঁড়ায় এবং জাতীয় সংগীত শোনায়। তিনি পরে গাড়ীযোগে বাজারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করেন।
রাজশাহী
রাজশাহীতে শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান প্রসঙ্গে গভর্ণর বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই জনগণের মূল্যবান অবদান রয়েছে এবং পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য কোন ব্যক্তিবিশেষ বা রাজনৈতিক দলকে তারা ম্যান্ডেট দেয়নি। তারা প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন কিন্তু বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দেওয়ার ম্যান্ডেট হিসাবে তাদের সমর্থনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতায় সশস্ত্র বাহিনীর সময়োচিত হস্তক্ষেপের ফলে ভাঙ্গনের হাত থেকে পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে এবং বর্তমানে পাকিস্তানকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার জন্য সকল প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
শান্তিপূর্ণ অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে শান্তি কমিটিরসমূহের প্রচেষ্টার জন্য তিনি বিশেষভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
গভর্ণর বলেন তিনি অবহিত আছেন যে, গত মার্চ মাসে বিভিন্ন কারাগার থেকে ক্রমাগতভাবে ছেড়ে দেওয়া প্রায় ১১ হাজার দন্ডপ্রাপ্ত বিচারাধীন ব্যক্তি কতিপয় স্থানে শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের হয়রানি করছে। তিনি বলেন তাদের খুঁজে বের করা এবং শাস্তিদানের জন্য শাসন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি শান্তি কমিটির সদস্যদের জানান যে এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী এজেন্সীসমূহকে সাহায্য করার জন্য রাজাকার গঠন হচ্ছে এবং ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
পরে জেঃ টিক্কা খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তাকে জানানো হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল কর্মচারী কাজে যোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ২রা আগস্ট পুনরায় খোলার কথা।
গভর্ণর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পরে গাড়ী্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেন।
জেনারেল টিক্কা খান বিকেলে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।