রাশেদুজ্জামান রণ
<৬,১০৬,১৭৬-১৭৭>
শিরোনামঃ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মুক্তিবাহিনী জয়মাল্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে
সংবাদপত্রঃ সোনার বাংলা ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা
তারিখঃ জুলাই(?), ১৯৭১
.
[*সোনার বাংলাঃ সাপ্তাহিক। মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র। সরকার কবীর খান কর্তৃক সম্পাদিত এবং কে জি মুস্তফা কর্তৃক সোনার বাংলা প্রেস হতে মুদ্রিত ও প্রাচারিত।]
.
[বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তর
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মুক্তিবাহিনী জয়মাল্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে (ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি)]
.
স্বধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের অদম্য মনোবলের অধিকারী ও দুর্জয় শপথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে হানাদার খান সেনারা যতই পর্যুদস্ত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, ততই দিনের পর দিন মুক্ত অঞ্চলের সীমানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ প্রায় চারমাস অতিক্রম করতে চলেছে আর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর শক্তি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে খান সেনাদের ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।
.
আমাদের ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি বিভিন্ন রণাঙ্গন পরিদর্শন করে খবর পাঠিয়েছেন মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফ থেকে শুরু করে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা খান সেনাদের কবল মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এখন বাংলাদেশের সবুজ-লাল রঙ্গে রঞ্জিত, সোনালী বংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকা শস্য শ্যামল মাটির বুকে দাঁড়িয়ে আছে। ঠাকুরগাঁও মহকুমা, মেহেরপুর মহকুমাও একই গর্বে গর্বিত। এমনকি বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা নগরীর রেল স্টেশনেও মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে একটি সামরিক অস্ত্র বোঝাই ট্রেন ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ঢাকা শহর গত কয়েক দিন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আমাদের কমাণ্ডো(এখানে কমান্ডো হবে) বাহিনী ঢাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সুইমিং পুলের নিকটে, হাবিব ব্যাংক, নবাবপুর রোড,(এখানে কমা হবেনা।) এবং গভর্ণর ভবনে হ্যাণ্ড(এখানে হ্যান্ড হবে।) গ্রেনেড দিয়ে আক্রমণ করে। ফলে ঢাকা শহরে প্রবেশর সকল পথ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাক সেনারা কমাণ্ডো(এখানে কমান্ডো হবে)দের ভয়ে ঢাকার প্রধান সামরিক দপ্তরটি গভর্ণর ভবন থেকে অধিকতর সুরক্ষিত তেজগাঁও এলাকায় প্রাদেশিক পরিষদ ভবনে স্থানান্তরিত করেছেন।
.
রংপুর জেলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে আক্রমন চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডো(এখানে কমান্ডো হবে)রা হাতীবান্দা(এখানে হাতিবান্ধা হবে।) সেক্টর দখল করে খান সেনাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। দিনাজপুরের রণাঙ্গন মুক্ত হয়েছে তিন দিনের প্রতিরোধের পর। যশোর অঞ্চলের পঁয়ত্রিশজন খান(এখানে মনে হয় খানসেনা শব্দটি হবে) মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র জলঢাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাত দিন অবরোধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে এসেছে। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম চিনির কল দর্শনাও এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। পূর্ব রণাঙ্গনে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে একটি সামরিক দল কয়েকটি নৌকা করে যখন তাদের মনের কুপ্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করার জন্য নদী পাড়ি দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে একজন মেজর সহ ১৭জন খান সেনা নদীর জল পেট পুরে খেয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। আখাউড়া ও ফেনী মহকুমার বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালিয়ে ১ জন উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশকিছু সংখ্যক খান সেনাদের খতম করে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখছে।
.
কুষ্টিয়ার নয়নপুরে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডো(এখানে কমান্ডো হবে)রা ২০ জন খান সেনার প্রাণনাশ করেছে। পরে সামরিক হেলিকপ্টারযোগে মৃত খান সেনাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। আক্রমণের ফলে বাজিতপুরে ৫ জন দালাল, ফকিরহাটে ৭ জন ও কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েক জন দালাল নিহত হয়েছে।
.
কুষ্টিয়ায় প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডো(এখানে কমান্ডো হবে)রা পাকিস্তানি খান সেনাদের একটি অস্থায়ী সামরিক ব্যারাক দখল করে নিয়েছে এবং বেশ কিছুসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্রও দখল করেছে।