১১। ১১ মে এ যুদ্ধ আপনার আমার সকলের

শিরোনামঃ সম্পাদকীয়; সংবাদপত্রঃ জয়বাংলা; ১ম বর্ষঃ ১ম সংখ্যা; তারিখঃ ১১ মে, ১৯৭১

এ যুদ্ধ আপনার আমার সকলের

রক্তের অক্ষরে লেখা হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। যেমন লেখা হয়েছে আরো অনেক দেশের। অন্যান্য দেশের মানুষের দেশপ্রেমের কাছে হার মেনেছে বিদেশী হানাদারেরা। আমাদের কাছেও মানবে। ঘাতকের ক্ষমা নেই। শত্রুকে নির্মুল না করে ক্ষান্ত হবো না আমরা।

আমরা এ যুদ্ধ চাইনি। কিন্তু যুদ্ধ আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমাদের উপর জঙ্গীশাহীর সেনাবাহিনী। হাতে তার সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র। সমস্ত শক্তি নিয়ে সে আক্রমণ করেছে। কিন্তু লক্ষ্য সিদ্ধ হয়নি। শত্রু আমাদের পরাভূত করতে পারে নি। হিটলারী কায়াদার হঠাত আক্রমণ করে, ভয় পাইয়ে আমাদের নিস্ক্রিয় করে দিতে চেয়েছিল। মৃত্যুর বিভীষিকা দেখিয়ে চেয়েছিল আমাদের স্তব্ধ করে দিতে। কিন্তু তা সে পারে নি। বাংলার একপ্রান্তথেকে অপর প্রান্ত রুখে দাঁড়িয়েছে প্রতিরোধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে। জেগে উঠেছে বীর জনতা তার বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে।

প্রথমে আমাদের দাবী ছিল স্বায়ত্তশাসনের। কিন্তু ইয়াহিয়া আর তার জঙ্গীচক্রের বিশ্বাসঘাতকতা খুলে দেয় আমাদের দৃষ্টি। জন্ম নিয়েছে আজ গণপ্রজাতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই সরকার ও জনতার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে মুক্তিফৌজ। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছে শত্রু নিধনের। আমাদের এই যুদ্ধ একটি জাতির বাঁচা মরার যুদ্ধ। আসুন, আপনিও শরীক হোন এই যুদ্ধে। শত্রু কে ধ্বংস করে রক্ষা করুন আপনার দেশের হাজার হাজার মানুষকে। আমাদের শত্রু নির্মম। আর নির্মম হাতেই রচনা করতে হবে তার কবর।

আমাদের রণনীতিঃ

আমরা যে রণনীতি গ্রহণ করেছি তার মূল লক্ষ্য হল যত কম ক্ষতি স্বীকার করে যত অধিক সংখ্যক শত্রু সৈন্য হত্যা করা যায়। আমাদের লক্ষ্য হল শত্রু সৈন্যকে আক্রমণের পর আক্রমণ করে তাকে সদা ব্যস্ত রাখা। তাকে ক্লান্ত করে তোলা। পাকিস্তান সরকার অস্ত্রপাতি তৈরি করে না। গোলাবারুদের জন্য বিশেষভাবে সে অন্যদেশ নির্ভর। তার অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। তাই দীর্ঘ প্রলম্বিত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে গিয়ে তার সমর কৌশল ব্যর্থ হতে বাধ্য।

আমাদের কাছে এ যুদ্ধ হল গণযুদ্ধ বা জনগণের যুদ্ধ। আমরা ভাড়াটে পেশাদার সৈনিক নই। অস্ত্রবল আমাদের কম। কিন্তু আমাদের মনে আছে প্রবল দেশপ্রেম। শুধু অস্ত্র দিয়ে যে যুদ্ধ হয় তার থেকে আমাদের যুদ্ধের চেহারা আলাদা। গণ-সমর্থন আমাদের যুদ্ধের মূল ভিত্তি। সমস্ত বাঙালী আজ জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ। এ যুদ্ধ মুষ্টিমেয় পেশাদার সৈনিকের বিরুদ্ধে একটা সমগ্র জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল নেই। আমাদের লড়াই কোন নির্দিষ্ট যুদ্ধক্ষেত্রের লড়াই নয়। যে কোন সময়, যে কোন স্থানে, সুযোগ পেলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব শত্রুসেনার ওপর। আমরা তাদের হত্যা করব। আমরা তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে বানচাল করবো। বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে যে পাকিস্তানি সৈন্য আছে তা একটি যুদ্ধজয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

Scroll to Top