১১. নভেম্বর সম্পাঃ অনিবার্য সফলতা তরান্বিত করুণ

অনুবাদঃ চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি

<৬, ১১,৫৮৪-৫৮৫>

        শিরোনাম          সংবাদপত্র          তারিখ
সম্পাদকীয়ঃ অনিবার্য সফলতা ত্বরান্বিত করুন। বাংলাদেশ লিউজ লেটার*

       লন্ডনঃ নং ১২

    নভেম্বর ১৯৭১

 

[* এই সংবাদপত্রটিতে সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম ও ঠিকানার উল্লেখ নেই। যোগাযোগের জন্য একটি ঠিকান নির্দেশ রয়েছে, সেটি হলঃ Editorial Board, Bangladesh News letter. P.O. Box 4 RG, London WL.. ]

 

মিসেস গান্ধী দৃঢ়ভাবে বলেছেন পূর্ব বাংলা

অবশ্যই স্বাধীনতা লাভ করা উচিত

আর আমরা বলছিঃ

চলুন আমরা সবাই একত্র হই এই অনিবার্য

সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করতে

 

        মিসেস গান্ধী বর্তমানে তার বিশ্ব ভ্রমণের শেষ পর্যায় শেষ করেছেন। এই ভ্রমণ ছিল বিশ্ব বিবেককে এসব ব্যাপারে আলোকিত করা যা ছিল- পূর্ব বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা, একটি নতুন জাতির যৌক্তিক আকাঙ্ক্ষাকে রক্তে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য একটি সামরিক একনায়কতন্ত্রের বর্বর এবং ভয়ানক কর্মকান্ড যা ভারতের টানাপড়েনে ধরে রাখা ভূমিতে ৯০ লক্ষ বেপরোয়া,উদ্বিগ্ন এবং উন্মত্ত শরণার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল। মিসেস গান্ধীর ভারতে প্রত্যাবর্তনের সাথে বাংলাদেশ সংকটটি অনমনীয় ভাবে শেষ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে এবং এর চূড়ান্ত সীমার দিকেই এগোচ্ছে। ভারত এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতদিন তারা এভাবে “আগ্নেয়গিরি’র উপর বসে” থাকতে পারবেন।

               সকল অবস্থান থেকেই এখন মনে হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এর জান্তা অবস্থান এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে সকল ধরনের অস্ত্রবোঝাই জাহাজ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ভুট্টোর প্রতিনিধি দলকে শুধুমাত্র শুভকামনা জানিয়েই শেষ করেছেন। সেই সাথে পাকিস্তানি জেনারেলরাও তাদের আনাড়ী বর্বরতার পথের শেষে চলে এসেছেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার সামনে বিকল্প পথ এখন সীমিত। তিনি এবং তার শিকারী জেনারেলরা এখন যুদ্ধ করে হারতে পারে; অথবা সুবুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে কথা বলে অব্যাহতি দিতে পারে; অথবা সর্বশেষ বেপরোয়া অবলম্বন হিসেবে উন্মত্ততার শেষ সীমায় গিয়ে ভারতের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে নিজেদের বিপদ আরো বাড়াতে পারে।

                ভারত এবং সারা বিশ্বের এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তাদের এখন মিথ্যা বা মোহজনক সমাধানের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ করা উচিত। তাদের এখন দ্রুত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত,যেহেতু মিসেস গান্ধী প্যারিস থেকে তাঁর টেলিভিশন সম্প্রচারের সময় দূর্বল গলায় বলার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে….”পূর্ব বাংলা সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা। এটি অনিবার্য। আজ অথবা কাল এটি আসবেই..”

                ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বড় শক্তিদের কাছে যেমন অনুপ্রেরণামূলক সমর্থন আশা করেছিলেন তেমনটি হয়ত পান নি, কিন্তু তিনি তাদের কাছে সহানুভূতিমূলক বোঝাপড়া পেয়েছিলেন। এখন তাঁর দায়িত্ব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য কাজ করা। যাই ঘটুক, তিনি তাঁর সাথে পুরো বাংলার মানুষের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পাবেন, যতদিন মানুষের সাহস এবং যেকোন উপায় থাকবে, বর্তমান সময়ের একমাত্র সঠিক সমাধানটির সফলতা আনতে, একমাত্র “অনিবার্য সমাধান”, যার নাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাংলার দেশপ্রেমিকেরা এটি অবশ্যই বুঝতে চেষ্টা করবে, এর

.

সাথে জড়িত সকল আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ না করে হলেও। এবং শুধুমাত্র এই একটি উপায়েই বাংলাদেশ সরকার আমাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে পারবে যারা ভারতের মাটিতে সহায়-সম্বলহীন নিঃস্ব হয়ে পড়ে আছে। সেই সমাপ্তির প্রতি চলুন আমরা সবাই, বাংলাদেশের মুক্তি সেনারা, বাংলাদেশ সরকার, দেশের বাইরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা, এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সকল বন্ধু এবং মিত্র রাষ্ট্র,সবাই মিলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

                                                                                                                                          

                                                                                                                                                                 সম্পাদনা পরিষদ হতে

Scroll to Top