১৫৭. ১২ অক্টোবর স্বাধীন বাংলাই একমাত্র সমাধান

শফিকুল ইসলাম

<৬,১৫৭,২৬৩-২৬৪>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
স্বাধীন বাংলাই একমাত্র সমাধান বাংলার বানী

মুজিব নগরঃ ৭ম সংখ্যা

১২ অক্টোবর, ১৯৭১

 

মৃত পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে নয়
স্বাধীন বাংলাই একমাত্র সমাধান
(রাজনৈতিক ভাষ্যকার)

পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেও বাংলাদেশের সমস্যার সমাধানের সূত্র মিলিতে পারে বলিয়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী শরণ সিং মন্তব্য করিয়াছেন উহা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যুগপৎ বিস্ময় ও ক্ষোভের সঞ্চার করিয়াছে।

তাহাদের মতে শ্রী শরণ সিংহ-এর এই বক্তব্য ভারত সরকারের পূর্ববর্তী বক্তব্যের সঙ্গে সংগতিদিবিহীন। এই প্রসঙ্গে তাহারা ভারতের মহান নেত্রী প্রধান্মন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর কিছুদিন আগেকার মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন। গত মাসে কলিকাতায় শ্রীমতি গান্ধী সাংবাদিকদের কাছে বলিয়াছেন, “আমাকে বারবার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। আমি ভারতে বাংলাদেশ মিশনকে কাজ করিতে দিতেছি। ইহা কি এক অর্থে স্বীকৃতি দেওয়া নয়? শ্রীমতি গান্ধীর এই বক্তব্যের এই কথাই সন্দেহাতীতভাবে স্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছিল যে ভারত সরকার পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন না বরং তারা স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করিলেও স্বাধীন বাংলাদেশেই বিশ্বাস করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম বলিয়াছেন, স্বাধীন বাংলাদেশই একমাত্র সমাধান। কিন্তু শ্রী শরণ সিং- এর মন্তব্যকে কোন মতেই শ্রীমতি গান্ধী ও শ্রী জগজীবন রামের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলিয়া মনে করা হয় না। তাই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিস্ময় ও ক্ষোভের সঞ্চার করিয়াছে। এ ব্যাপারে বাংলার জনগণের বক্তব্য সুস্পষ্ট। ভারত মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত বাঙ্গালী জাতির জন্য যা করিয়াছে, তার কোন তুলনা নাই, এবং এজন্য বাংলার মানুষ চিরদিন ভারতের জনগণের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ হইয়া থাকিবে। কিন্তু একমাত্র সত্য যে ভাতের কোন মহল যদি মনে করিয়া থাকেন যে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই বাংলাদেশের সমাধান সম্ভবপর, তবে মস্তবড় ভুল হইবে। দশ লক্ষ বাঙ্গালীর লাশের উপর দিয়া হাঁটিয়া হাঁটিয়া আবার পাকিস্তানের কাঠামো নামক উপনিবেশবাদী শাসনের নারকীয় গর্তের মধ্যে প্রবেশের কোন প্রশ্নই ওঠে না। বাংলার মানুষ চায় পূর্ণ স্বাধীনতা।

এদিকে শ্রী শরণ সিং-এর মন্তব্য প্রসঙ্গে সরাসরি কোন মন্তব্য পেশে বিরত থাকিলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হইতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নররুল ইসলাম পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে জঙ্গীশাহীর সঙ্গে যে কোন প্রকার আপোষের সম্ভাবনার উপর চুড়ান্ত যবনিকা টানিয়া দিয়া পুনরায় দ্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি এবং বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার স্বীকৃতিসহ চারি দফা পূর্বশর্ত পূরণের আগে কোন আপোষের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা স্বাধীনতার জন্য জীবনপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হইয়াছি। পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জিত হইবার আগে আমরা ক্ষান্ত হইব না।

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পূর্ণবাসন মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান ঘোষনা করিয়াছেন পাকিস্তান আজ মৃত।

যাহারা পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা করিতেছে তাহারা প্রকারান্তরে উপনিবেশবাদ এবং শোষনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাগ্রত জনগণের স্বার্থকেই ক্ষুন্ন করিতেছেন। এই অঞ্চলে যদি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠীত হয় তবে অবশ্যই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করিয়া লইতে হইবে।

আমরা মনে করি স্বাধীনতার কোন বিকল্প ব্যবস্থা থাকিতে পারে না এবং যে কোন মূল্যেই তাহা আমরা অর্জন করিব।

Scroll to Top