অনুবাদঃ চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি এবং তাসমিয়াহ তাহসীন
<৬, ১৬,৫৯৩-৫৯৪>
শিরোনামঃ বাংলাদেশ মানবাধিকার নিশ্চিত করবে
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ টুডে ভলিউম ১ নং ২
তারিখঃ ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
বাংলাদেশ মানবাধিকার নিশ্চিত করবে;
সকলের জন্য সমান সুবিধা।
-বিচারপতি চৌধুরী
.
“বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সাম্য ও ভাতৃত্বের ভিত্তিতে মৌলিক মানবাধিকার ভোগ করবে”, লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি আরো বলেছেন যে, বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্র সবাইকে এক বলে গন্য করা হবে এবং সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রায় ৩০০ নাগরিকের এক সমারোহে বিচারপতি চৌধুরী বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠা একটা বড় পদক্ষেপ, যা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বৈশ্বিক আন্দোলনের কেন্দ্র, এবং গ্রেট ব্রিটেনে বাংলাদেশের নাগরিকদের সদিচ্ছারই ফল।তিনি আশাবাদী যে, সেদিন বেশি দূরে নয় যখন বিশ্বের বহু রাষ্ট্র বাস্তবতা মেনে নিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকার করে নেবে।
তিনি আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তান দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা রাজনৈতিকভাবে অধীনস্থ এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষিত হয়ে আসছে। সাংবিধানিক উপায়ে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী সত্য ও ন্যায়কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে লুটতরাজ, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ বজায় রাখে এবং তারা এখনো গণহত্যাও চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, বাস্তবতা হল আজ পাকিস্তান একটি মৃত ধারণা।
মুক্তিবাহিনীর প্রতি সম্মাননা
মুক্তিবাহিনীকে সম্মান জানিয়ে, বিচারপতি চৌধুরী বলেন, “আমাদের পবিত্র মাটি থেকে হানাদার সেনাবাহিনীদের দূর করতে তারা এখন এক ভয়ানক যুদ্ধে নিযুক্ত, যে মাটিতে আমরা শান্তিতে ও সৌহার্দ্যে বসবাস করতে আমাদের সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলবো”।
বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিপ্লবী প্রেরণাকে যারা পথ প্রদর্শন করেছেন ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের এবং যে সকল তরুণ তরুণী বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছে তাদের, তিনি প্রদীপ্ত সম্মাননা জানান।
মুজিবকে মুক্তি দাও
মানব ইতিহাসে জঘন্যতম অপরাধের জন্য ইয়াহিয়া খানকে দোষারোপ করে, বিচারপতি বলেন, সেনাবাহিনী জান্তা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে অবৈধভাবে আটক করেছে, এবং এখন তাকে তথাকথিত ‘সিক্রেট ট্রায়াল’ এ রাখা হয়েছে। তিনি ঘোষণা করেন যে ইয়াহিয়া খানের কোনো অধিকার নেই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে আটকে রাখে।শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি কিনা একজন নিবেদিত প্রাণ এবং নির্ভীক নেতাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিশ্বে পরিচিত, গত পাঁচ মাসে তার সাথে কারো সাক্ষাৎ হয়নি, এমনকি তার আইনজীবীদের সাথেও নয়। তিনি সতর্ক করেন যে, তার কোনো ক্ষতি হলে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তা কখনোই ক্ষমা করবেনা এবং সমগ্র বিশ্বের শান্তি হুমকির সম্মুখীন হবে।
.
যুক্তরাজ্যের বাঙ্গালিরা প্রশংসিত
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, যিনি বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরু থেকে যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন এর নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, গ্রেট ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের দেশকে স্বাধীনতা লাভে সহায়তায় তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও অসাধারণ উৎসর্গের জন্য তিনি প্রশংসা করেন। তিনি সরকার এবং মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের এই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন ।
মিশন ও পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম বর্ণনা করে বিচারপতি চৌধুরী বলেন, মিশনটি যেমুন তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসাবে যুক্তরাজ্যে থাকবে এবং তাদের সাধারণ কূটনৈতিক কার্যাবলী সম্পাদন করবে, পরিচালনা কমিটিও যথারীতি যুক্তরাজ্যে প্রধান প্রধান কার্যনির্বাহী কমিটির মধ্যে সমন্বয় সাধনে তাদের যে কর্তব্য তা পালন করতে থাকবে এবং এটি বাংলাদেশকে আক্রমনকারী সেনাবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করা সংক্রান্ত সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য দায় বদ্ধ থাকবে। এটি নিশ্চিত করেন যে পরিচালনা কমিটিতে তার সেবা আগের মতোই বজায় থাকবে, এবং তিনি মুক্তিসংগ্রামে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন।