চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি এবং ইফতেখার হাসান
<৬, ১৮, ৫৯৬-৫৯৭> অনুবাদ
শিরোনামঃ বৃটিশ লেবার পার্টি ইয়াহিয়ার বর্বরতার নিন্দা করেছে
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ টুডে ভলিউম ১ নং ২
তারিখঃ ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১
বিশ্ব শান্তির পথে হুমকি
ইয়াহিয়ার বর্বরতার প্রতি
ব্রিটিশ লিবারেল পার্টির নিন্দা।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ লিবারেল পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে সংগঠনটি বাংলাদেশে ঘটতে থাকা নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতি তাদের গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এবং গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের উপর অনৈতিকভাবে মিলিটারি ব্যবহারের কারনে তারা পাকিস্তান সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে। বাংলাদেশের মানুষের এ ভয়াবহ অবস্থার জন্য তারা পাকিস্তান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে দোষারোপ করে।
সম্মেলনে উপস্থিত তিন হাজারের ও অধিক প্রতিনিধিদের সকলের সম্মতি অনুযায়ী সংগঠনটি জাতীয় নির্বাহী কমিটির একটি অনুবন্ধ প্রকাশ করে যাতে কাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শরনার্থীআশ্রয়ের সমস্যার ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার প্রতি গভীর উদ্ধেগের কথা জানানো হয়েছে। এছাড়াও অনুবন্ধটিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষ প্রতিরোধে একটি জরুরী মানবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য এবং দাবী জানানো হয়েছে পাকিস্তানকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করার জন্য যতদিন না পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিলিটারী প্রত্যাহার করা হচ্ছে ও সকল বন্দি নেতাদের,বিশেষ করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া না হচ্ছে।
অনুবন্ধের কপি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সম্মেলনে অনুমোদিত অনুবন্ধটি ছিল-
এই অধিবেশন বাংলাদেশে সংগঠিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতি গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করছে। পাকিস্তান সরকারকে অবশ্যই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের এ ভয়াবহ পরিনতির দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং পাকিস্বতান সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ও জননেতাদের উপর অনৈতিকভাবে মিলিটারী আক্রমনের কারনে।
মুজিবকে মুক্তি দাও
এই অধিবেশন বিশ্বাস করে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় তখনই পৌছানো যাবে যখন-
১. পূর্ব পাকিস্তান থেকে মিলিটারী আক্রমন প্রত্যাহার করা হবে।
২. পূর্ব পাকিস্তানের আটককৃত নেতৃবৃন্দ, বিশেষত শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হবে।
যেকোন রাজনৈতিক সমাধান অবশ্যই পূর্বপাকিস্তানের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে করতে হবে।
“গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানকে সহায়তা দিলে তা হবে একটি প্রশ্নবিধ্য সামরিক শক্তিকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার নামান্তর। এই কনফারেন্স তাই পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জরূরি মানবিক সাহায্য ছাড়া আর কোন রকমের অনুদান বা সহায়তা দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সব দেশ, বিশেষ করে ‘পাকিস্তান এইড কনসোর্টিয়ামের’ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”
বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি
“এই ধরণের পরিস্থিতে বৃহৎ শক্তিগুলোর জড়িয়ে পড়ার যে স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা, তা আলোকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিরাজমান অবস্থা বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি স্বরূপ বলে এই কনফারেন্স মনে করে। সুতরাং, পূর্ব বাংলার মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলনে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতা বাঞ্ছনীয়; এবং এই ইস্যুটি জাতিসংঘে উত্থাপন করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
শরণার্থী এবং দুর্ভিক্ষ
“শরণার্থী সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করা স্বত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অপ্রতুল সাড়ায় এই কনফারেন্স উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভারত সরকারকে এই সমস্যার সিংহভাগের ভারসাম্যহীন দায় নিতে হয়েছে। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ অদূর ভবিষ্যতে পূর্ববাংলায় দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাষ দেয়। বাইরে থেকে খাদ্যসহায়তা সরবরাহ করে নিরপেক্ষভাবে সরাসরি গ্রামীণ এলাকাগুলোতে তা বিতরণ করতে হবে, এবং সেটি হতে হবে প্রধানতঃ জাতিসংঘের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত এরকম পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা ও সরঞ্জাম সম্পন্ন একটি কর্তৃপক্ষের তদারকিতে। আমরা পাকিস্তান সরকারকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের এই ব্যবস্থাকে মেনে নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। এই প্রসঙ্গে জাতিসংঘের তরফে গৃহীত উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য আমরা ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করছি, এবং এমতাবস্থায় উদ্ভূত জরুরী সংকট মোকাবেলার জন্য ভারতীয় সরকারকে প্রদত্ত সহায়তা অব্যাহতভাবে জোরদার করতেও আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য যে এই কনফারেন্সের ৩,০০০ এরও বেশি প্রতিনিধির সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেন্ট্রাল স্টিয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে ১৪ সদস্যের একটি দলকে পাঠানো হয়েছিল। এছাড়া বারমিংহ্যাম একশন কমিটি ও বাংলাদেশ উওমেন’স এ্যাসোসিয়েশনের কিছু প্রতিনিধিও কনফারেন্সে যোগ দেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সপক্ষে লেবার পার্টির প্রতিনিধিদের সমর্থন আদায় করা।
স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক আজিজুল হক ভুঁইয়া এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন।