কম্পাইলারঃ জেসিকা গুলশান তোড়া
<৬,২৮,৫৮>
সম্পাদকীয়ঃ সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি
সংবাদপত্রঃ জয় বাংলা ১ম বর্ষঃ ১৯শ সংখ্যা,
তারিখঃ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি
.
বর্তমান মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারকে উপদেশ দানের জন্য বাংলাদেশের চারটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার খবর দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এবং এ সম্পর্কে অনেক উৎসাহী আলোচনাও মুদ্রিত হয়েছে। বস্তুতঃ এই সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হওয়ায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতির যে নিবিড় ও অটুট ঐক্য আরেকবার প্রমাণিত হল, তাতে বাংলাদেশের ভিতরে মুক্তিসংগ্রামীরা যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনি বাইরে বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু দেশগুলোও উৎসাহী হবেন। বস্তুতঃ এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের গুরুত্ব এইখানেই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং উগ্র তত্ত্বসর্বস্বদের সুবিধাবাদী ভেদনীতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লক্ষে অবিচল চারটি প্রগতিশীল দল বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রতি তাদের ঘোষিত সমর্থন আরো কার্যকর ও সক্রিয় করে তুলবেন। এই ব্যাপারে এই দলগুলোর ভূমিকার যেমন প্রশংসা করতে হয়, তেমনি প্রশংসা করতে হয় আওয়ামী লীগেরও। আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রায় শতকরা নিরানব্বইটি আসনে জয়লাভ করে জাতিকে নেতৃত্ব দানের অবিসম্বাদিত অধিকার লাভ করা সত্ত্বেও মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার অন্যান্য প্রগতিশীল দলের সমর্থন ও উপদেশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্বারা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থের প্রতি তাদের আনুগত্য বলিষ্ঠভাবে প্রমাণ করছেন।
.
সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক মত ও পথে পার্থক্য থাকলেও সকলেই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। কমিটিতে ভাসানী ন্যাপের প্রতিনিধিত্ব করছেন মাওলানা ভাসানী, বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন মণি সিং, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের শ্রী মনোরঞ্জন ধর এবং মোজাফফর ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এ ছাড়া এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের দুজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই কমিটিতে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কমিটির বৈঠক আহবান ও পরিচালনা করবেন।
.
মুজিব নগরে অনুষ্ঠিত এই উপদেষ্টা কমিটির প্রথম কমিটির প্রথম বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারই যে বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত জাতীয় নেতা এ সত্যটির অকুণ্ঠ অভিব্যক্তি দেখা গেছে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি এই সমঝোতা ও অভিন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
.
বাংলাদেশের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার এবং এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে স্বাভাবিক চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু রয়েছে উদ্দেশ্য ও লক্ষগত ঐক্য। এই লক্ষ হল বাংলাদেশের পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতা। চরিত্রগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে বলা চলে, গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একমাত্র সংস্থা। জনগণের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও তা কার্যকর করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার তার। অন্যদিকে জনগণের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা কার্যকর করার ব্যাপারে সাহায্য ও সুপরামর্শ দান হবে উপদেষ্টা কমিটির কাজ। তাই এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে জোরদার করার কাজে একটি বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলা চলে। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের সকল এলাকার স্বাধীনতা এবং হানাদার দস্যুদের চূড়ান্ত পরাজয়ের দিনটি অবশ্যই ত্বরান্বিত হবে।