৩১৪. ৮ অক্টোবর আপাতঃ দৃষ্টিতে

অনুবাদঃ শিহাব শারার মুকিত

<৬, ৩১৪, ৫৪৩>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
আপাতঃ দৃষ্টিতে দ্যা নেশন

১ম খণ্ডঃ নম্বর ২

৮ অক্টোবর ১৯৭১

 

আপাতঃ দৃষ্টিতে

ভুট্টো এখন রাগে ফুঁসছে আর বিশ্রীভাবে কান্না করছে। ক্ষমতায় যাওয়ার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা এখনও শুধুই ধারণামাত্র, বাস্তব নয়। ইয়াহিয়ার বাহিনীর হাতে শুরু হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের অভিযানের পথে রক্তমাখা গালিচা বিছিয়ে দেওয়া ভুট্টো আসলে ফাপড় ছাড়া কিছুইনা। সে এখন তার নিজের ঠোঁট কামড়াচ্ছে। ইয়াহিয়া তাকে ব্যবহার করেছে এবং পরে তাকে লাথি দিয়ে বাতিল করে দিয়েছে।

সেনাপ্রধানের পাকিস্তানের “নিখাত সৌন্দর্য” কে পুনরুদ্ধার করা এবং নতুন সংবিধানের সাথে তথাকথিত সমন্বয় করার ধারণা এখন ফুর্তিবাজ রাজনীতিবিদ ভুট্টোর হাতে, যা তাদের কাছে একটা ভয়ানক ধাক্কা ও হতাশার কারণ। একজন বহিষ্কার হওয়া রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার গনহত্যায় সব রকমের সাহায্য প্রদান করেছিলেন, তিনি এখন আবিষ্কার করলেন ইয়াহিয়ার গণতন্ত্র পুনস্থাপন ভাবনা ছিল “সাধারণ জনগণের আশার বিপরীত।”

বিশ্বাসঘাতককে কখনই বিশ্বাস করা যায় না। একবার যে বাংলাদেশের সৃষ্টিতে বিশ্বাস ভেঙেছে সে কোনভাবেই ইয়াহিয়ার প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারে না। তাই তার বিপথগামিতা গণতন্ত্রের পবিত্র নীতিসমূহ বা নিজস্ব ইচ্ছাধীন সমাজতন্ত্র কোনকিছুর প্রতিই ভালবাসা প্রকাশ করেনা। বরং এটি তার কলঙ্কিত চেহারার সাথে আরও কিছু সন্দেহের সমষ্টি ঘটায়।

হ্যাঁ, বাংলাদেশের জনগণ জানে যে “পূর্ববাংলায় এখন আগুন জ্বলছে, পুরো দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।” কিন্তু তারা এই কথাটি মায়াকান্না কেঁদে যাওয়া একজন বিশ্বাসঘাতকের মুখ থেকে শুনতে চায় না। এবং এছাড়াও “আড়াই বছর ধরে চলে আসা সামরিক শাসন এখন নিজেদেরকে অন্তর্বর্তী সরকার বলে পরিচয় দিচ্ছে” এটাও কোন খবর না। এটা ভুট্টো সাহেবের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করে না, সারা দুনিয়া জানে।

তিনি রাজি হোক বা না হোক, ভুট্টো তার নিজের জন্য নতুন ক্ষেত্র তৈরির প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ইয়াহিয়ার দেয়া পূর্ববাংলায় নির্বাচনের আশ্বাসই তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার সহানুভূতি শুধুই লোক দেখানো, আর কিছু নয়। তিনি যদি ভেবে থাকেন বাংলার মানুষের স্মৃতি এতই কম, তাহলে দুঃখের সাথে বলতে হয় তিনি ভুল করছেন। বাংলাদেশের সচেতন জনগণ আর ভুট্টোর মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজাবে না।

Scroll to Top