৩৪. শিকাগো, ১৭ মে বাংলাদেশ আন্দোলনঃ সম্পাদকীয় ও খবর

অনুবাদঃ অভিজিৎ সরকার

<৬,৩৪,৬২৩-৬২৭>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
বাংলাদেশ আন্দোলনঃ সম্পাদকীয় ও খবর বাংলাদেশ নিউজলেটার শিকাগোঃ নং ১ ১৭ মে, ১৯৭১

 

সম্পাদকীয়

এ সপ্তাহে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ৭ম সপ্তাহ শুরু হলো। পূর্বের ৬ সপ্তাহে, বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো অমানুষিক বর্বরতার প্রতিক্রিয়ায় প্রবাসী বাঙ্গালিরা তাদের আতংক বেশ ভালোভাবেই ব্যক্ত করেছে, একই সঙ্গে তাদের প্রয়োজন এবং সমর্থনে জনমত সংহত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী স্ব স্ব রাজ্যের সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদেরকে চিঠি লিখেছেন, তাঁদের সাথে দেখা করেছেন –তাঁদেরকেরাজি করাতে, তাঁদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে রাজি করাতে, যাতে করে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিকযন্ত্রকে সব রকম সহায়তা দেয়া বন্ধ করা হয়। এতো সব তদবিরের ফলাফল সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সাম্প্রতিক ঘোষণাবলী এবং সিনেটে পাশের অপেক্ষায় থাকা সমাধানসমূহের মধ্যে দৃশ্যমান। সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশন মিডিয়া, উভয় মাধ্যমেই বেশ কিছু ভালো কাজ করা হয়েছে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় এবং লড়াইয়ের দৃপ্ত সংকল্প সম্পর্কে ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্কের সকল বৈদেশিক দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের এ কেবল শুরু। কারণ, এমনকি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ের পরেও, একেবারে শেষ ভিনদেশি সৈন্যটিকেবাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার পরেও, আমাদের মুখোমুখি হতে হবে একটি জাতিকে শুন্য থেকে গড়ে তোলার বিশাল কাজের সামনে। শত্রুর পোড়ামাটিনীতি বাংলাদেশ থেকে শত্রুর পলায়নের আগে বাংলাদেশের সকল অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেবে। বলা নিষ্প্রয়োজন, এই পুনর্গঠনের কাজে স্থানীয়-প্রবাসী সকল বাঙ্গালির প্রচুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রয়োজন হবে। এ প্রয়াস হতে হবে সামগ্রিক ওসমন্বিত । বর্তমানে আমাদের সামনে দু’টোকাজরয়েছে, মুক্তিসংগ্রামেসহায়তাকরা এবং পাশাপাশি পাকিস্তানি আর্মির কারণে উদ্বাস্ত হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষকে ত্রাণসাহায্য পাঠানো। আমরা জানি, প্রতিরোধী বাঙালি গোষ্ঠীসমূহ দু’টো কাজেই মনোনিবেশ করেছে, কিন্তু কার্যক্রমের কোন সমন্বয় না থাকায় এক গ্রুপের পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছেনা অন্যরা কী করছে।এরফলে অনেক ক্ষেত্রেই কাজের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এ কার্যক্রমে সমন্বয় আনার লক্ষ্যে, আমরা এই সংবাদবাহী পত্রটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য বিভিন্ন গ্রুপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং সকল বাঙালি ও বন্ধুদের সুবিধার্থে এ তথ্য প্রচার করা। আমরা বিভিন্ন গ্রুপের তোলা টাকার একটা কেন্দ্রীয় তহবিল  রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে করে এ টাকাগুলো সর্বাধিক সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করা যায়।

ভিন্ন ভিন্ন ভাগ থেকে আনা সংবাদের পাশাপাশি আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধার্থে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার কেন্দ্র থেকে পাওয়া সংবাদও সরবরাহ করবো। আমরা আরো আশা করি সরাসরি বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাওয়া সংবাদ আমাদের পাঠকদের পরিবেশন করার।

আরো বড় পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে, আমরা নিউজলেটার পেতে ইচ্ছুক সকল বাঙালি এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের তালিকা চাই। সেজন্য, আমরা আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি আমাদের নাম-ঠিকানা পাঠানোর জন্য, যেগুলো আমাদের তালিকায় নাও থাকতে পারে। অনুগ্রহ করে নিচের ঠিকানায় এখনই চিঠি লিখে আমাদের সহায়তা করুন:
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, শিকাগো চ্যাপ্টার
৫২৪৫ সাউথ কনউড অ্যাভিনিউ
শিকাগো, ইলিনয়, ৬০৬১৫
প্রতিরোধের সংবাদ

পাকিস্তানি সরকার তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে বাঙ্গালিদের এদেশের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে একগাদা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং পুরো স্বাধীনতা আন্দোলনই “কিছু সংখ্যক ভারত পন্থী  দুর্বৃত্তের” তৈরিকরা।

এ সবই অর্থহীন কথাবার্তা। আপনারা যদি এ ধরণের লেখা আপনার কাছে আসা থামাতে না পারেন, তাহলে বরং এ মিথ্যাচারগুলো ময়লা কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিন।

মূল যে কারণে এদেশের সংবাদপত্রে ইদানিং কোন প্রতিরোধের খবর দেয়া হয় না, সেটি হলো, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলকাতা থেকে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে মোটরযান চলাচলোপযোগী একমাত্র রাস্তাটি সাফল্যের সাথেউপড়ে ফেলেছে। যুদ্ধের প্রথম দু’সপ্তাহে এ অঞ্চল থেকেই কলকাতা ভিত্তিক বিদেশী সংবাদকর্মীরা খবর সংগ্রহ করতেন। অবশ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৩০০ মাইল লম্বা সীমান্তের অনেকাংশই এখনো খোলা। ভারতীয় সংবাদকর্মীরা এবং আমাদের নিজেদের লোকজন নিয়মিত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র প্রতিরোধ কর্মকাণ্ডের খবর নিয়ে আসছেন।

একজন বাংলাদেশী প্রতিনিধি যিনি মাত্রই এদেশে পৌঁছেছেন, তিনি লিখেছেন, “সিলেট, যেখানে চা-বাগানের বন প্রাকৃতিক ভাবেই আড়াল তৈরি করে, তা এখনো বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়ন্ত্রণে। এ বাহিনীটি এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করে রেখেছে। সারা বাংলাদেশেই সশস্ত্র বাঙ্গালিরা পালিয়ে গ্রামীণ অঞ্চলে চলে গেছে এবং সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলোকে গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে আক্রমণ করছে। এটা সামনে আরো ঘন ঘন এবং আরো বেশি তীব্রতায় হবে বলেই আশা করা হচ্ছে, কারণ এ ধরণের যুদ্ধে প্রতিরোধী বাহিনী আরো অনেক দক্ষতা অর্জন করে, আরো যুদ্ধাস্ত্র ও সরবরাহ পায় — যার মধ্যে বেশ বড় অংশ এরই মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে, এবং বর্ষা মৌসুমে সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র বণ্টন ও পরিবহণ সমস্যা আরো অনিরাপত্তার মুখোমুখি হবে। সেখানে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ সেনাবাহিনীর নির্বিচার আক্রমণ জনতার রাজনৈতিক উদ্দীপনাকে নিশ্চিত করেছে। তাদের অস্ত্রের সীমানার মধ্যে থাকা গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে এবং সে এলাকাগুলোকে “ফ্রিফায়ারজোন”ঘোষণাকরেতারানিজেদের [সেনাবাহিনী] ঘৃণারপাত্রেএবং৭৫মিলিয়নবাঙ্গালির, যারা বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধে অংশগ্রহণ অথবা সাহায্য প্রদানে বদ্ধপরিকর, তাদের নিরাপত্তার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে পরিণত করেছে।

প্রায় এক মাস আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া আরেক বাঙালি আগরতলা থেকে লিখেছেন, “প্রতিদিন শতশত তরুণ গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা কত দ্রুত শিখে ফেলছে, তা অবিশ্বাস্য। আমি এসেছি, তাই আমি খুশি। নয়তো বাঙ্গালির একাগ্রতা, দেশপ্রেম এবং দেশের স্বাধীনতা-সম্মানের জন্য তাদের মৃত্যুকে বরণ করে নেয়ার ইচ্ছা সম্পর্কে কখনোই জানতাম না আমি।”

চ্যাপ্টার নিউজ

নিউজ লেটারের এ অংশে আমরা ভিন্ন ভিন্ন চ্যাপ্টার এবং বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার জাতীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া সংবাদ ছাপাবো। আশা করি যে, চ্যাপ্টার প্রতিনিধিরা আমাদেরকে তাঁদের কার্যক্রমের ব্যাপারে সরাসরি লিখবেন, যাতে আমরা অন্যদের কাছে সেগুলো পাঠিয়ে দিতে পারি। এখন পর্যন্ত আমরা জানি যে নিউ ইয়র্কে জাতীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ লীগের বিভিন্ন চ্যাপ্টার চালু করা হয়েছে বোস্টন, ওয়াশিংটন, বাল্টিমোর, ব্লুমিংটন (ইন্ডিয়ানা), হিউস্টন, কলেজ স্টেশন (টেক্সাস), বার্কলে এবং লস অ্যাঞ্জেলসে। আরো চ্যাপ্টার থেকে থাকতে পারে যাদের সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তাই অনুগ্রহ করে আমাদের জানান এবং আপনাদের অফিসের কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠান। আমাদের একত্রিত হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিউইয়র্কস্থ জাতীয় কার্যালয় আমাদের জানিয়েছে যে বাংলাদেশ লীগের একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক মেট্রোপলিটন এলাকায় জুনের কোন এক সময় এটি অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের দিনক্ষণ সম্পর্কে জানানো হবে।

নিউ ইয়র্ক গ্রুপ জুন ১২, ১৯৭১ এ জাতিসংঘের সামনে বড় আকারের একটি র‍্যালির আয়োজন করছে। আপনারা যদি আসতে পারেন তাহলে দয়া করে জানান এ ঠিকানায়: জনাব কে এস আহমেদ, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, ২৬৬৭ ব্রডওয়ে, এন ওয়াই সি, নিউ ইয়র্ক ১০২৫, ফোন (২১২) ৮৬৬-৭৪৭৪।

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক

আমাদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আগত সবারই পশ্চিম পাকিস্তানে বন্ধু ছিল, ২৫ মার্চ মিলিটারি ক্র্যাকডাউনের আগ পর্যন্ত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের তাদের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। সকল পশ্চিম পাকিস্তানিই যে আমাদের শত্রু –এটা অবশ্যই সত্য নয়। তাদের অনেকেই আমাদের দাবিতে সমর্থন জানিয়েছেন (পাকিস্তান ফোরামের এপ্রিল-মে, ’৭১ ইস্যু দ্রষ্টব্য, সম্পাদক জনাব ফিরোজ আহমেদ, ১৯০০ সাউথ চার্লসস্ট্রিট, গ্রিনভিল, এনসি ২৭৮৩৪)

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। আমাদের যত বেশি সম্ভব মিত্রদের প্রয়োজন। কেবলমাত্র বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, বরং পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রেও জয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করতে পারবো । আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানি বন্ধুরা সে যুদ্ধে জয়লাভে আমাদের সহায়তা করতে পারবেন।

আমাদের মনে হয় যে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের দাবিতে এখনো সমর্থন জানাচ্ছেন না, সেটি হলো, তাঁরা হয় অজ্ঞাত অথবা পাকিস্তান দূতাবাসের ছড়ানো মিথ্যে প্রোপাগান্ডায় তাঁরা ভুল পথে চালিত হচ্ছেন। বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী ঘটনাসমূহ সম্পর্কে তাদের জানানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা নিশ্চিত, তারা একবার যদি আমাদের পক্ষ থেকে ঘটনাগুলোর রূপ সম্পর্কে অবগত হয়, তারা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে। আমরা প্রস্তাব করছি, আপনি তাদেরকে তাজউদ্দীন আহমেদের দেয়া বক্তব্যের আপনার কাছে থাকা অনুলিপিটি ধারে পড়তে দিন, বক্তব্যটিতে বর্তমান সংকটের ওপর চমৎকার পটভূমি বর্ণনা করা রয়েছে। আপনার কাছে কোন অনুলিপি না থাকলে আমাদের জানান। আমরা ডঃ রেহমান সোবহানের অন্য একটি দলিল নামমাত্র মূল্যে সরবরাহ করবো, যার শিরোনাম “বাংলাদেশ: সিচুয়েশন অ্যান্ড অপশনস”।

চাকুরি এবং বৃত্তি

বাংলাদেশ থেকে আগত যেসব বাঙ্গালিরা এই মুহূর্তে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক নন তাদের জন্য চাকুরি এবং বৃত্তির ব্যবস্থা করার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা বর্তমানে কাজ করছি। যদি আপনার বৃত্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে থাকে, অথবা পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক আপনার বৃত্তির মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে, অথবা যদি আপনার কোন কাজের প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে শিকাগো চ্যাপ্টারের সচিবের কাছে অনুগ্রহ করে লিখুন। সব ধরণের অনুসন্ধানের সাথে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো থাকা উচিৎ: ভিসার ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, যে ধরনের কাজ অথবা বৃত্তি পেতে ইচ্ছুক। তাছাড়া আপনার কোন ধরণের ভিসা সম্পর্কিত সমস্যা থেকে থাকলেও আমাদের জানান। আমাদের পক্ষে কিছু পরামর্শ দেয়া সম্ভব হতে পারে।

মেইলিং লিস্ট

আমাদের শক্তি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি করার জন্য এ দেশে অবস্থানরত সকল বাঙ্গালির তালিকা আমাদের কাছে থাকতে হবে। তাই দয়া করে আমাদের শিকাগোর ঠিকানায় যেসব বাঙ্গালিকে আপনি চেনেন, তাদের নাম ঠিকানা পাঠিয়ে দিন।
আমরা বাংলাদেশের সকল বন্ধু এবং সমর্থকের তালিকাও পেতে ইচ্ছুক। যদি আপনার মনে হয় যে আমাদের মেইলিং লিস্টে কারো থাকা উচিৎ, আমাদের জানান।

তহবিল

বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের জন্য জরুরী ভিত্তিতে তহবিল প্রয়োজন, বিশেষত বৈদেশিক মুদ্রা। এ প্রয়োজন মেটাতে লীগ দু’টোতহবিলগঠনকরেছে, বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিল এবং সাধারণ তহবিল। প্রথম তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা শুধুমাত্র ত্রাণ কার্যেই ব্যবহৃত হবে, দ্বিতীয় তহবিলে প্রদত্ত অনুদান ব্যবহৃত হবে লীগের কার্যক্রমের খরচ যোগানো,  তদবির কার্য ইত্যাদির জন্য।

ত্রাণ

জরুরী ত্রাণের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। আজ পর্যন্ত বিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছে এবং প্রতিদিনই প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ ভারতে প্রবেশ করছে। পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য ভারতের সরকার এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। ভারতে শরণার্থীরা আপনাদেরই আত্মীয়, আপনাদেরই দেশের মানুষ। তাদের আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, এবং পরিস্থিতি ভালো হবার আগে সেটির আরো অবনতি হবে এরকমটা ধরে নেয়ার সব রকম কারণই রয়েছে। দশ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু। আগামী কয়েক মাসে দুর্ভিক্ষ এবং মহামারীর সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসন এটা পরিস্কার করে দিয়েছে যে বাঙ্গালিদের দুর্দশা লাঘবে তারা এখন অথবা পরবর্তীতেও কিছুই করতে ইছুক নয়। উলটো, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়ার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে, তারা বাংলাদেশের জনগণকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করার জন্যে তাদেরকে অনাহারে রাখতেও প্রস্তুত। আমেরিকাতে আমরা যারা আছি, তারা এখন এবং পরবর্তী মাসগুলোতে যতটা সম্ভব ত্রাণ পাঠাতে প্রস্তুত থাকবো। আপনিও পারেন সাহায্য করতে। নিম্নোক্ত ঠিকানায় অনুদান পাঠান, আপনার বন্ধুদেরকেও অনুদান পাঠাতে বলুন:

বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিল
৫২৪৫ সাউথ কেনউড এভিনিউ
শিকাগো, ইলিনয় ৬০৬১৫

 

কার্যক্রমজনিত খরচ

লীগ বাংলাদেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক ধরণের কার্যক্রম চালু করেছে। সমস্যা হচ্ছে, এ কার্যক্রমগুলোর সবগুলোতেই অর্থের প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে এই খরচ যোগাতে অর্থ উত্তোলনের জন্য আমরা অনুরোধ করছি সেসব চাকুরিরত বাঙ্গালিদের , তাঁদের আয়ের যতটুকু শতাংশ সম্ভব ততটুকুই লীগের তহবিলে দেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার এবং মাসিক হারে লীগে এই অর্থ পরিশোধ করার। নিম্নের ফর্মটি পুরণ করে অনুগ্রহপূর্বক শিকাগো চ্যাপ্টারে পাঠিয়ে দিন:
আমি, ________, প্রতি মাসে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকাতে অনুদান হিসেবে $ ___________ দেয়ার অঙ্গীকার করছি। আমার অনুদান লীগের সাধারণ তহবিলে জমা হবে, তাই এই অনুদানের কর মওকুফ হবে না, এ মর্মে আমি অবগত আছি।

স্বাক্ষর ______________
তারিখ ______________
ঠিকানা _____________
টেলিফোন ___________

( এটা বলা নিষ্প্রয়োজন, অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত প্রদত্ত সকল তথ্য শিকাগো চ্যাপ্টারের কোষাগার-রক্ষক নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। আপনার চেক পাঠিয়ে দিন বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, ৫২৪৫ সাউথ কেনউড এভিনিউ, শিকাগো, ইলিনয়, ৬০৬১৫ এই ঠিকানায়। আপনার প্রদত্ত যে কোন পরিমাণ চাঁদার বিনিময়ে আপনি রসিদ পাবেন। বাংলাদেশ সরকার তার দূতের মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছে যে আপনাদের প্রদত্ত চাঁদা পরবর্তীতে যাতে আপনারা ফেরত পান সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাই আপনাদের রসিদগুলো সংগ্রহে রাখুন।

Scroll to Top