৪০। ১২ নভেম্বর মোনেমের ভাগ্য সব দালালকেই বরণ করতে হবে

কম্পাইলারঃ রবিউল হাসান সিফাত
<৬,৪০,৮০-৮০>

শিরোনামঃ মোনেমের ভাগ্য সব দালালকেই বরণ করতে হবে

সংবাদপত্রঃ জয় বাংলা ১ম বর্ষঃ ২৭শ সংখ্যা

তারিখঃ ১২ নভেম্বর, ১৯৭১

মোনেমের ভাগ্য সব দালালকেই বরণ করতে হবে

মসনদের লোভে পড়ে যে মীর জাফর আলী খান পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়েছিল ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে থাকলেও মৃত্যুর পর সে বাংলারই মাটিতে শায়িত থাকার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বাংলার লাটগিরির আশায় যে কুখ্যাত মোনেম খান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটী মানুশের সাথে বেঈমানী করেছে এমনকি লাথি মেরে গদি হারাবার পরও জীবনের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত সাত কোটি বাঙ্গালীকে পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ রাখার প্রয়াস পেয়েছে, আজিকার বাঙ্গালী সমাজ তাকে কোনদিনও পারে না। বাঙ্গালী বীর মুক্তিযোদ্ধারা ইয়াকে স্টেনগানের গুলিতে কুকুরের মত হত্যা করেছে। মোনেমের আত্নীয়রা ভেবেছিল ওখানেই সব কিছুর শেষ। মৃত্যুর পরে অন্তত মোনেম খান বাংলার মাটিতে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকতে পারবে। তাই তারা জায়গা কিনে আজিমপুরায় নয়া গোরস্থানে তার লাশ সমাহিত করেছিল। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে বাঙ্গালী তরুণরা মৃত্যুর পরও মোনেম খানকে ক্ষমা করতে পারেনা, তাকে বাংলার মাটি অপবিত্র করতে দিতে পারেনা। মোনেমের আত্নীয়রা আরো ভুলে গিয়েছিল যে, এই আজিম্পুরা গোরস্থানেই শায়িত রয়েছেন ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদান বরকত, সালাম, ও রফিক। আরো রয়েছেন বংবন্ধুর দক্ষিণ হস্ত সৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) এবং আজীবন সংগ্রামী জনাব আবু হাসেন সরকার প্রমুখ। তাই, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধ্বারা হাজার হাজার পশ্চিমা সৈন্য ও তাদের দালালদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের বেলায় মোনেম খানের লাশটি গোরস্থান থেকে তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছেন।

*

প্রকাশ, মোনেম খানের অপবিত্র লাশ তুলে নেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধ্বারা সেখানে একখানা কাগজে কতিপয় কথা লিখে গেছেন। তাতে লেখা হয়েছে, অন্যান্য দালালদেরও মোনেমেরই দশা হবে। তাদেরকে কুকুরের মত হত্যা করা হবে। তারপর তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হবে বা শিয়াল-কুকুরের উদারপূর্তির কাজে লাগান হবে যাতে মৃত্যুর পর তারা বাংলার মাটিকে অপবিত্র করতে না পারে।

Scroll to Top