৫৯. ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

অনুবাদঃ সাইমা তাবাসসুম

<৬, ৫৯, ৬৮৪-৬৮৫>

শিরোনামঃ বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ লেটার  শিকাগো : নং ১১

তারিখঃ ২৫ অক্টোবর,১৯৭১

.

পাইপ নগরীতে দশদিন

ওয়াশিংটন এর লাফায়েত পার্ক একটি সুযোগ পেয়েছে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় দৈন্যতার নমুনা দেখার।উঠেছে ওয়াশিংটনের নাগরিকদের কে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পের চিত্র আরও কাছ থেকে তুলে ধরতে একটি ক্ষুদ্র শরণার্থী শহর গজিয়ে উঠেছে এ পার্কে। ফিলাডেলফিয়া ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল এটি আয়োজন করেছে। এবং অনেক বাংলাদেশি সংঘ এতে সমর্থন করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রেনপাইপ আশ্রয়স্থল নির্মাণ করা হয়েছে অক্টোবর এর ১৪ থেকে দশ দিন ব্যাপী সময়ের জন্য। শরণার্থী সমস্যার এ নাটকীয় রূপায়ণ ওয়াশিংটনের জনগণ ও সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী এসেছে নিউইয়র্ক, ফিলাডেল্ফিয়া, বাল্টিমর ও বোস্টন থেকে ওয়াশিংটনে এই দশদিনের প্রকল্পে যোগদান করার জন্য।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার (১৬ই অক্টোবর) পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখী মিছিল, রবিবার ধর্মীয় স্মরণ অনুষ্ঠান ও সোমবার সিনেটে গণ সংযোগ।

এই দশদিন ব্যাপি “শরণার্থী শিবির” “ক্যাম্প পরিচালক” ডিক ট্যালার পরিচালিত করেন, যিনি পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অস্ত্র বহনকারী পদ্মা জাহাজটিকে নৌপথে অবরোধ কর্মসূচী আয়োজন করেছিলেন। ডেভিস হারসা এবং বিল মইয়ার ডিক ট্যালারকে সহায়তা করেন।

.

বৃহত্তর কূটনৈতিক গোষ্ঠীর বাংলাদেশকে যথাযোগ্য সম্মান দেয়ার ঘোষণা

অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে সারা বিশ্বের মোট ১৪৪ জন কূটনৈতিক ইয়াহিয়া সরকারের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন  করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সম্প্রতি যোগদান করা কূটনৈতিকদের মাঝে ছিলেন আর্জেন্টিনার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মিষ্টার আব্দুল মমিন, যুক্তরাজ্যের পাকিস্তানি হাইকমিশনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মিষ্টার এম.এম. রেজাউল করিম, নিউ দিল্লির পাকিস্তানি হাই কমিশনের মন্ত্রী পরিষদের উপদেষ্টা মিষ্টার হুমায়ুন রাশেদ চৌধুরী, বেরুত এর মিষ্টার লতিফ, মাদ্রিদ এর মিষ্টার আব্দুল করিম মন্ডল, বেলজিয়াম এর মিষ্টার নায়েবুল এবং নেপালের পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মিষ্টার মুস্তাফিজুর রহমান।

.

সংক্ষিপ্ত খবর

 

মিশিগান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে এন আরবর সিটি হলের সামনে এক বিশাল র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে একশোরও বেশি মানুষ প্ল্যাকার্ড বহন করেছিল, তাদের দাবি ছিল আমেরিকান সৈন্য বাহিনী এবং তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য সম্পূর্ণ নিষেধ করা হোক।

সেদিনের র‍্যালি শেষে “ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান” এ বাংলাদেশের উপর একটি সেমিনার অনুষ্ঠান হয়। প্রফেসর রোড মারফি, চাইনিজ স্ট্যাডি সেন্টারের ডিরেক্টর, মেয়র হ্যারিস, প্রফেসর আর.সি. পর্টার, ইকোনমিক্স এর প্রফেসর, প্রফেসর রড হুবের, মিষ্টার মোজাম্মেল হক, মিষ্টার রাশেদুর রেজা ফারুকি সেদিনের সেই সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

মিশিগানের গভর্নর মিলিকান সমগ্র অঙ্গরাজ্যে “বাংলাদেশ দিবস” নামে একটি দিবস পালনের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বর্ণনার জন্য ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান সিনেটর কেনেডি কে আমন্ত্রণ জানান।

ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাওয়ার্ড সুমেনের তত্ত্বাবধানে একটি “ফ্যাকাল্টি কমিটি” গঠন করা হয় যেখানে বাংলাদেশের সে সমস্ত শিক্ষকদের সহায়তা করা হয় যারা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

.

বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাডিসনে শোভাযাত্রা

বাংলাদেশের ডিফেন্স লিগের সেক্রেটারি  অক্টোবর ৭ এবং ৮ ম্যাডিসনব্যাপী সফর করেন এবং স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,তারা যেন উন্নতির এই প্রকল্পে নিজেদের সামিল করে, যা ম্যাডিসনে রবিবার, অক্টোবর ১৭,১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে বছর গ্রুপটি বাংলাদেশকে একটি বৈদেশিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে এবং সংগৃহিত ফান্ডের একাংশ বাংলাদেশের জরুরী অবস্থায় অনুদানের জন্য আবেদন করে। বিগত বছর তারা ৮৫০০০ ডলার সংগ্রহ করে। এ বছর সেটা বৃদ্ধি পেয়ে আনুমানিক ১লক্ষ ডলারের উপরে পৌঁছাবে আশা করা যায়।

এই পথ চলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ হচ্ছে মতভেদ প্রকল্পে স্থানীয় জনসাধারণকে শিক্ষা দেয়া এবং এই মতভেদ দূর করার জন্যই এটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এর সূত্র ধরে এলাকার প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং সপ্তাহব্যাপী রেডিও-টেলিভিশন শো স্পন্সর করা হয়েছে।

Scroll to Top