অনুবাদঃ রাশেদ সাইফুল
<৬, ৬১, ৬৮৯-৬৯০>
শিরোনামঃ বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজলেটার শিকাগোঃ নং ৩১
তারিখঃ ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১
.
জাতিসংঘে বাংলাদেশ রিফিউজি ক্যাম্প
নিউ ইয়র্কঃ ভারতে বাঙ্গালী শরণার্থী ক্যাম্পের চিত্র তুলে ধরার জন্য গত ১ নভেম্বর তারিখে জাতিসংঘ ভবনের সামনের হ্যামারসজোল্ড প্লাজায় সুয়ারেজ পাইপ দিয়ে একটি শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীর অত্যাচার থেকে ইন্ডিয়াতে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ মিলিয়ন বাঙ্গালীর অবস্থা তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ একশন কোয়ালিশন কর্তৃক স্থাপিত ক্যাম্পটি ১ সপ্তাহ ধরে অবস্থান করেছিল।
ভাত, ডাল এবং ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পের রেশনের উপর নির্ভর করে স্বেচ্ছাসেবীরা পুরো সপ্তাহ ক্যাম্পে অবস্থা করেছিল। ইউএন রিফিউজি ক্যাম্পের সংগঠকদের উদ্ধৃতি অনুযায়ী, ক্যাম্পের অবস্থান করা স্বেচ্ছাসেবীরা কলেরা, টাইপয়েড দ্বারা মৃত্যু ঝুঁকিতে ছিল, এমন কি তাদের হতভাগ্য স্বজাতির মত বর্বর সেনা আক্রমনের শিকার ছিল না কিন্তু তারা জাতিসংঘের ভালো খাদ্য গ্রহণ করা এবং ভালো পোষাক পড়া কূটনৈতিকদের কাছে বাংলাদেশের করুণ বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ একশন কোয়ালিশন এর চেয়ারম্যান ইগাল রুডেঙ্কো বলেছেন, “ক্যাম্পটি গত সাত মাসে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অগ্রহনযোগ্য অসাড়তা এবং অনৈতিক মৌনতার বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদ যখন একটি পুরো জাতি মানব সভ্যতার সবচেয়ে বর্বর গণহত্যার শিকার হচ্ছিল”। তিনি আরো বলেন “ক্যাম্পটি ছিল মার্কিন সরকারের পাকিস্তানী সেনা শাষনের প্রতি অস্ত্র এবং আর্থিক সহায়তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দের প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে যেখান গণতন্ত্র পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল স্বৈরতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সেখানে মার্কিন সরকার অনরত আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম কে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাতে শুধুমাত্র নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে”।
রুডেঙ্কো বলেন, জাতি সংঘের সব সহায়তা পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা শাষকদের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে জাতি সংঘের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে আগের ত্রাণ সহায়তাগুলো সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
কোয়ালিশনে আর্থিক সহায়তাদানকারী গ্রুপগুলোর মাঝে রয়েছে- বাংলাদেশের জন্য আমেরিকান, আমেরিকার বাংলাদেশলীগ, পূর্ববঙ্গ রক্ষা কমিটি, যুদ্ধ প্রতিরোধক লীগ, কোয়াকার সামাজিক কার্যক্রম কর্মসূচী, ক্যাথলিক শান্তি সংঘ এবং আর এক ডজন এর বেশি নাগরিক সংগঠন।
কবি এলেন গিন্সবার্গ এবং ডব্লিও. এস. মরউইন সপ্তাহব্যাপী কবিতা আবৃতি কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কর্মসূচিতে আরো অন্তর্ভুক্ত ছিল ত্রাণ সংগ্রহ, স্মৃতিচারণ, সিক্সথ এভিনিউতে শান্তি মিছিল, পাকিস্তান কনস্যুলেট অভিমুখে প্রতিবাদ মিছিল।
.
ইস্ট ল্যান্সিং এ বাংলাদেশ কার্যক্রম
শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে Lansing Area Committee for emergency Refugee Fund নামক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সংগ্রহ কার্যক্রম সাফল্যের সাথে অগ্রসর হচ্ছে।
MSU রেজিস্ট্রেশনের সময় ৩ দিনের জন্য একটি বুথ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন দ্বারা স্থাপন করা হয়েছিল। বাংলাদেশের উপর সাহিত্যকর্ম বিতরণ করা হয়েছে এবং “জয় বাংলা” বোতাম বিক্রি করা হয়েছে। এসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিভিন্ন চার্চ এবং স্কুলে বাংলাদেশের উপর একটি শিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ডক্টর এ. আর. মল্লিক এবং ডক্টর আসাবুল হক এর সভাপতিত্বে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ইউনিয়ন বিল্ডিং এ একটি পাবলিক মিটিং এর আয়োজন করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মিশিগান ভ্রমণ রেডিও সিরিজ, টিভি ইন্টারভিউ, প্যানেল ডিসকাশন এবং প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সকলের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে।
.
বাংলাদেশের জন্য ফরাসী কমিটি
সম্প্রতি ফান্সে বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাসের জন্য ফরাসী কমিটি (French Committee of Solidarity with Bangladesh) গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। কমিটি ফরাসী সরকারে সকল ধরনের অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, হেলিকপ্টার, সাবমেরিন সহ ধরনের অতিরিক্ত পার্টস সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ আক্রমের আগে পাকিস্তানী সরকারের সাথে সে সকল চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল তার ডেলিভারির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিবৃত প্রকাশ করেছে। কমিটি বিশেষভাবে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের একটি বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেখানে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার দেশকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য ফরাসী সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।