তানুজা বড়ুয়া
<৬, ৭১,৭০৯-৭১০>
শিরোনামঃ ‘পদ্মা’র ঘটনা
সংবাদপত্রঃ স্ফুলিঙ্গ কিউবেকঃ নং ২
তারিখঃ ১ আগস্ট, ১৯৭১
.
পদ্মার গল্প
সরোয়ার আলম
.
পদ্মা, বাংলার বুকে প্রবহমান খরস্রোতা এক নদী, নিপীড়ন এবং বিপ্লবের ইতিহাসের নীরব সাক্ষ্য বহন করছে, যা বাঙ্গালি কৃষকের জন্য আদৌ নতুন কিছু নয়। এ নামেরই একটি পাকিস্তানি জাহাজ সম্প্রতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যোগসাজশে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমনের প্রচেষ্টা চালায়।
.
“গত রাতে পাকিস্তানের পতাকাবাহী একটি জাহাজ মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম সমেত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে করাচীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে, যা নিক্সন প্রশাসনের এ সংক্রান্ত নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” (Ted Szulc, Montreal Star, June 22, 1971.)। ৩০ জুন জাহাজটি মন্ট্রিলে পৌঁছায়। সেদিনেই, দৈনিক মন্ট্রিল স্টার এর প্রথম পাতায় প্রকাশ করে “অস্ত্রবাহী জাহাজকে বিক্ষভ প্রদর্শন”। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কূইবেক ত্বরিত একটি প্রতিবাদ এবং মিছিল আয়োজন করে। তারা স্থানীয় সংবাদ সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে এবং পাকিস্তানে কানাডিয়ান সম্ভাব্য অস্ত্র চালান বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। যদিও কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিশেল শার্প গণমাধ্যমে ঘোষণা দেন, “পদ্মার সাথে কানাডার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই”, কিন্তু এই ঘোষণা তাদেরকে মোটেও আশ্বস্ত করতে পারেনি। এদিকে, হাউজ অফ কমনস এ বিরোধিদলীয় নেতা রবার্ট এল. স্টেইনফিল্ডকে সংসদে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
.
সিএনটিইউ নেতা মিশেল চারট্রেন্ড, পলাতক আমেরিকান, দ্যা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন, ভিয়েতনামি দেশপ্রেমিক সংঘ, ভিয়েতনামের স্থগিত কমিটি, নারী মুক্তি সংগঠন এবং অনেক স্থানীয় কানাডিয়ান প্রতিবাদ র্যালিতে/সমাবেশে অংশগ্রহন করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানে অস্ত্র চালান নীতি এবং সামগ্রিক ভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নীতির কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
.
সেই দিনে সন্ধ্যার মধ্যেই, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আবিস্কার করে “ কানাডায় তৈরি স্যাবার জেট বিমানের যন্ত্রাংশ পদ্মা জাহাজের মাধ্যমে পাকিস্তান যাচ্ছে”। হেলথ ম্যাককুয়ারী, এমপি, পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। অবশেষে এই অস্ত্র চালানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
.
আমাদের প্রতিবাদ ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদ নীতির বিরুদ্ধে, বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি বা প্রগতিশীল আমেরিকানদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী তীব্র মনোভাবের প্রতি যাদের কোন সহানুভূতি নেই। অন্যান্য দল, বিশেষত ভিয়েতনামিজ এবং প্যালেস্টানিয়ানদের অংশগ্রহণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভিয়েতনাম , প্যালেস্টাইন এবং বাংলাতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে একই সংগ্রাম চলমান। আমাদের প্রতি তারা যে সংহতি প্রদর্শন করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই তাদের স্ব স্ব দেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রদর্শন নির্দেশ করে। কানাডার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম অস্ত্র চালানের বিরোধিতা করে কারণ তারা জানতো পাকিস্তানের সাথে সামরিক সম্পৃক্ততা সামরিক-শিল্পকে আরও পুষ্ট করবে এবং এর ফলস্বরূপ জনসাধারণকে অধিক করের বোঝা বহন করতে হবে। আমেরিকানরা ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যয়ভার সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলো; আমেরিকান সমর-শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রচুর কর প্রদান করতে হয়েছে। তারা কি বাংলায় আরেকটি ভিয়েতনাম দেখতে চাইবে? এর উত্তর না। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ খরচের আরও অনেক জায়গা রয়েছে।
* * *
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সম্পাদক আপনাদের চিঠি এবং মন্তব্যকে স্বাগত জানাবেন।
দ্যা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কুইবেক এর জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন । দয়া করে নিম্নোক্ত ঠিকানায় আপনার অনুদান পাঠানঃ
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কুইবেক
৩৫২০ লোনি এভিনিউ, মন্ট্রাল ১৩০, পি. কিউ.