জেসিকা গুলশান তোড়া
<৬,৮৫,১৩৫>
.
শিরোনামঃ সম্পাদকীয়
সংবাদপত্রঃ স্বাধীন বাংলা ১ম বর্ষঃ ৭ম সংখ্যা
তারিখঃ ১২ জুলাই, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
.
[স্বাধীন বাংলা (সোনারদেশ): স্বাধীন বাংলার সাপ্তাহিক মুখপত্র। প্রতিষ্ঠাত্রী সম্পাদিকাঃ মিসেস জাহানারা কামারুজ্জামান। সম্পাদকঃ এস, এম এ, আলমাহমুদ চৌধুরী কতৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত এবং বলাকা প্রেস জামানগঞ্জ, রাজশাহী, বাংলাদেশ হতে এম, এ, মজিদ কর্তৃক মুদ্রিত।]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ আজ ১০০টি দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। বীর মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক আক্রমনে হানাদার পাক সেনারা ভূত দেখার মত আঁতকে উঠছে। এদের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ভীত সন্ত্রস্ত পাক জঙ্গীরা ক্যান্টনমেন্ট এর বাইরে বেরুতে সাহস পাচ্ছে না। শুধু কি তাই? নিজেদের মধ্যে শুরু হয়েছে কোন্দল। সাধারন একজন সৈনিক, একজন মেজরের আদেশ ঘৃনাচ্ছলে অমান্য করেছে। এক মাস যুদ্ধ করার নামে জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া যে তান্ডবলীলা শুরু করেছেন, তাতে অনেক সৈনিকই বিরক্ত বোধ করছে। তারা চঞ্চল হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ছেড়ে আসা মা-ভাই-স্ত্রী-পুত্রদের অদর্শনে। ওদিকে বেলুচ সৈন্যরা নরহত্যা করতে অস্বীকার করায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রায় ৫ পাঁচ হাজার বেলুচ ও পাঞ্জাবী সেনাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই যে যাকে পারছে সুযোগ অনুযায়ী হত্যা করছে।
.
নদীমাতৃক বাংলাদেশ বর্ষার আগমনে ঝলমল করছে। চারিদিকে জলে জলাকার। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত, গাড়ী-ঘোড়া আর চলছে না। প্রকৃতি দেবী বর্বর পাক-জঙ্গীর অমানুষিক অত্যাচারিত সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর দুরবস্থায় ম্রিয়মান বাংলার পশু-পাখিও ভুলে গেছে তাদের কুজন। বনে জঙ্গলে আর শোনা যায়না কোকিলের কুহুতান। বাংলার পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলার যুবক আজ বদ্ধপরিকর, তাই দিকে দিকে তাদের আক্রমণে পাক সেনারা যথেষ্ট নাজেহাল হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় সেতু ধ্বংস করে দিয়ে তাদের চলাচলে যে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে তাতে পাক সৈন্যরা কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না। বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, পাক সেনারা আজ এমনই এক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে যে তারা আজ ‘চাচা আপন পরান বাঁচা’ মানে কোন প্রকারে পৈতৃক প্রাণটা বাঁচানোর তাগিদেই অস্থির হয়ে পড়েছে।
.
এদিকে বর্ষার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ মুক্তিবাহিনী এই সুযোগের অপেক্ষাই করেছিল। তারা আজ দেশমাতৃকাকে শত্রুকবল থেকে মুক্ত করবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার পাক সেনাকে খতমও করেছে। চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুরসহ বহু অঞ্চল আজ মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। হিসাব মোতাবেক দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় তিন অংশ আজ মুক্তিবাহিনীর দখলে। অল্পদিনের মধ্যে হয়তো বাকী অংশ দখল হয়ে যাবে।
.
তাই পরিশেষে সেই সব পাকিস্তানের শক্ত কেন্দ্রের দাবীদারদের বলতে হয়- হে বাংলার দরদী বন্ধুরা তোমরা তোমাদের শক্ত কেন্দ্র নিয়ে থাক। তোমাদের সৃষ্ট ঐ সখের পাকিস্তানকে বাংলার জনগণ অনেক আগেই কবর দিয়ে তার মৃত আত্মার সদগতির জন্য তামদারী ও দোয়া দরুদ পড়ে সবই শেষ করে দিয়েছে। চিন্তা কর না, যেটুকু বাকী আছে তাও অতি শীঘ্রই শেষ করে দেবে।