৯৪। ৩ অক্টোবর স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাই

দীপংকর ঘোষ দ্বীপ

<৬,৯৪,১৫০-১৫১>

শিরোনামসংবাদপত্রতারিখ
স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাইমুক্তিযুদ্ধ ১ম বর্ষঃ ১৩শ

সংখ্যা

৩ অক্টোবর, ১৯৭১

 

                               সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখিয়া দাঁড়ান

                                স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাই

                                      (বিশেষ প্রতিনিধি) 

 

       বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও উহাদের তাবেদার কোন মহল সম্প্রতি অতি তৎপর হইয়া উঠিয়াছে । বীর মুক্তিবাহিনী ও গেরিলাবাহিনীর অকুতোভয় তরুন যোদ্ধারা স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনাইয়া আনার জন্য যখন অকাতরে বুকের রক্ত ঢালিতেছেন, তখন ইহাদের কণ্ঠে আপোষের সুর । যে স্বাধীনতার স্বপ্নকে সামনে রাখিয়া দেশবাসী গত ছয় মাস যাবৎ কঠোরতর দুঃখ কষ্ট ও চরম লাঞ্চনা সহ্য করিয়াছেন কিন্তু কখনও হতাশ হন নাই বা ভাঙ্গিয়া পড়েন নাই সেই স্বাধীনতার স্বপ্নকে নস্যাৎ করিয়া দিতে উদ্যত হইয়াছে ইহারা । ইহাদের সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং অবিলম্বে উহাদের অশুভ তৎপরতা বন্ধ করা দরকার ।

.

গলব্রেথের মিশন

ভারতে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদুত গলব্রেথ খোলাখুলিই বলিয়াছেন স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হইলেই পূর্ব বাংলা সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে । অর্থ্যাৎ তাহার মতে স্বায়ত্বশাসনের অধিক কোন কিছুর জন্য জেদ ধরা বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের পক্ষে ঠিক হইবে না । তিনি নাকি সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠনের ব্যাপারে উদ্বেগ গোপন না করিয়া বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিগণকে শাসাইয়াছেন যে, এভাবে চলিলে বাংলাদেশ ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের লেজুড়ে পরিণত হইবে । তাহার মত স্বাধীনতার দাবী ছাড়িয়া দিয়া বাংলাদেশের উচিত মার্কিনের মধ্যস্থতায় ইয়াহিয়া-চক্রের সহিত আপোষ মীমাংসার পথে আসা ।

.

হাফটনের ফর্মুলা

অন্যদিকে বৃটেনের সংসদীয় শ্রমিক দলের চেয়ারম্যান ডগলাস হাপফটন সম্প্রতি বলেন, ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামীলীগ প্রতিনিধিগণকে আলোচনা বৈঠকে মিলিত করার ব্যাপারে বৃটেন মধ্যস্থের ভূমিকা গ্রহণ করিতে পারে । তাহার মতে পাকিস্তানের জন্য একটি নয় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কিংবা ইয়াহিয়া খানের শাসনতন্ত্রে সংশোধনের ব্যবস্থা সন্নিবেশিত করিয়াই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব । এ সম্পর্কে মন্তব্য নিস্প্রয়োজন ।

.

কিছু দিন আগে ইরানের মারফত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা আর এক দফা আপোষের টোপ ফেলিয়াছিল কিন্তু বাংলাদেশ উহাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করিয়াছে ।

.

হিজ মাষ্টারস ভয়েস

জল্লাদ ইয়াহিয়াচক্র ও দোসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের কোন মুখপাত্র কি বলিল উহা সমস্যা নয় । কারণ বাংলাদেশের জনগণ রক্তমূল্যে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বরূপ চিনিয়াছে কিন্তু সমস্যা হইতেছে বাংলাদেশের কিছু কিছু মার্কিন-প্রেমীর কার্যকলাপ । ইহারা ইহাদের মার্কিন প্রভুদের সুরে সুর মিলাইয়া আপোষের ধুয়া তুলিয়াছে, প্রকাশ্যে আপোষের কথা বলার সাহস না থাকায় গুজবের আশ্রয় লইয়াছ । গুজবে গুজবে দেশ ছাইয়া ফেলিতেছে। সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি সম্পর্কেও ইহাদের বিরুপতা সুবিদিত ইয়াহিয়াচক্র ছয় ডিভিশন সৈন্য আমদানী করিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন করিতে পারে নাই, ইহারা ভিতর হইতে এই সংগ্রামকে দুর্বল করিয়া ফেলিতে উদ্যত হইয়াছে ।

.

বেতারযোগে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ মজহারুল ইসলাম ভারতের কোন এক স্থানে এক বক্তৃতায় নাকি বলিয়াছেন যে, শেখ মুজিবর রহমান কে মুক্তিদান ও পূর্ববাংলা হইতে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী প্রত্যাহার করা হইলে বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের সহিত একটা শিথিল ধরনের ফেডারেশন গঠন করিতে রাজী হইতে পারে । এই সংবাদ সঠিক হইলে ইহাকে বাংলাদেশের জনগণ ও তাহাদের প্রতিনিধিরা যখন দ্যর্থহীন ভাষায় ও সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা করিয়াছেন যে, স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন কিছুই দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তখন এই মার্কিনপ্রেমী পণ্ডিত ব্যক্তিটি জনগণের পক্ষ হইতে ভিন্নরূপ কথা বলার অধিকার পাইলেন কোথায় ? প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার জনাব হোসেন আলীর একটি সাম্প্রতিক বিবৃতির জনমনে নানা প্রশ্ন জাগাইয়াছে ।

.

স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাই

আমরা দ্যর্থহীন কন্ঠে সকল মহলকে একথা জানাইয়া দিতে চাই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার সমাধান দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । গত ৮ই সেপ্টেম্বর ও সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি এ ব্যাপারেও সর্বসম্মতিক্রমে যে প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন দেশবাসী দৃঢ়ভাবে উহার পিছনে রহিয়াছেন উহা হইতে কোন প্রকার পশ্চাদাপসরণ দেশবাসী বরদাস্ত করিবেন না ।