১৭ ডিসেম্বর পর্যালচনা

অনুবাদঃ মুশফিকুর রহমান অমিও

<৬, ৯৭, ৭৪৫>

শিরোনামঃ পর্যালচনা

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ১৬

তারিখঃ ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পৃথিবীতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সবচাইতে পুরাতন প্রতিরক্ষা বাহিনী হল আমেরিকারর এবং সবচাইতে নতুন বাংলাদেশের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যার সফল সমাপ্তি হয়ে ছিল, তা পৃথিবীজুড়ে হওয়া উপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্তির আন্দোলনের অংশ ছিল।এই আন্দোলন ১৭৭৫ সালে উত্তর আমেরিকা তে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে প্রায় দুই দশক আগে আমেরিকান দেশপ্রেমিক দের স্বাধীনতা যুদ্ধের কোনো পার্থক্য ছিল না। আমেরিকান উপনিবেশ গুলোর মতই পূব  পাকিস্তানও বহুদুরের পরাশাসকদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য শোষিত হচ্ছিল।আমেরিকানদের মত তাদেরও অত্যাচারী পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকদের কর দিতে হত, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উন্নতির প্রতি উদাসীন ছিল। তাই আমেরিকান দের মত বাঙালিরাও তাদের নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার প্রয়োগের জন্য নিজেদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাইল।বাঙালিরাও আমেরিকান দের মত জয়ী হল। তারা স্বাধীনতা,সমতা,মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের সহজাত অধিকার লাভ করল। আমেরিকানদের মত বাঙালিরাও “জনগণের সরকার,জনগণের দ্বারা সরকার,জনগণের জন্য সরকার” প্রতিষ্ঠা করে।

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ

আমেরিকানরা আটলান্টিক মহাসাগরের অপরপাশে ৩০০০ মাইল দূরে অবস্থিত ব্রিটিশদের শাসন দ্বারা শোষিত হচ্ছিল। তারা কোনোরূপ বিবরণ ছাড়াই আমেরিকান দের উপর করারোপ করতে শুরু করল। আমেরিকান উপনিবেশিকরা পশ্চিমের প্রভাব নষ্টের আদেশ, পরাসেনাবাহিনীর ভরণপোষণ,তাদের পশ্চিম ভারতীয় সংস্কৃতির উপর বিধি নিষেধ এবং হস্তক্ষেপ করা, বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতি ইত্যাদি কারণে ব্রিটিশ দের প্রতি অভিযোগ প্রকাশ করে।

প্রথমে ব্রিটিশদের কাছে আমেরিকানরা তাদের অধিকার দাবী করে। ব্রিটিশরা উপনিবেশিকদের উপর সশস্ত্র হামলা করে তাদের প্রভুত্ব জাহির করে।ক্রমেই আমেরিকান দেশপ্রেমিক রা বুঝতে পারে যে তাদেরকে তাদের অধিকার আদায় করতে হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।

অবশেষে ১৭৭৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটিশ রাজ্য ১৭৭৫ সালের ২৩ আগস্ট একে রাজবিদ্রোহ বলে ঘোষণা দেয়।ব্রিটিশ সৈন্যরা গণহত্যা শুরু করে যার জন্য আমেরিকার স্বাধীনতারর জন্য দ্বিতীয় মহাদেশীয় মহাসভা গঠিত হয়।

অবশেষে, আমেরিকান উপনিবেশিকরা বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে বৃটিশ পরাজিত করে। আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা পৃথিবীর স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঘোষণাটি, সব মানুষই সমান এবং সবারই স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

২৪ বছর ধরে বাঙালিরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ সহ্য করছিল এইভেবে যে হয়ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আওয়ামীলীগ এর ছয় দফা আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে বাঙালিদের সম্মানের সাথে বাঁচতে সক্ষম করা। কিন্তু ভারতীয় মহাসাগরের অপরপাশে ৩০০০ মাইল দূরে পাকিস্তানি শাসকেরা ছয় দফা আন্দোলনের মধ্যে পুরব পাকিস্তান হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দেখতে পায়।

২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালিদের গণহত্যারর নির্দেশ দেয় এবং পূরব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করা হয়।সেই মুহুরতে তারা এটা বুঝতে পারে পূরব পাকিস্তানের সাথে একত্রিত থাকা সম্ভব নয়।

বাঙালি মুক্তিবাহিনীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুদ্ধ করল। গত মাসে ১৫০,০০০ মুক্তিযোদ্ধা সহযোগে একটি সফল আক্রমণ পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বের স্বাধীনতা প্রেমী মানুষেরা মুক্তিবাহিনীকে নৈতিক ও বস্তুগত সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা

বাংলাদেশের মুজিবনগরে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্মের ঘোষণা দেয়। ততকালীন রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেই ঘোষণাতে বলেন “ বাংলাদেশকে তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য, পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ছাড়া আর কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। ”

Scroll to Top