৭.১৯২.৫৪৪ ৫৫২
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯২। অধিকৃত বাংলাদেশের পাক-সামরিক চক্রের বেসামরিক গভর্ণর ডাঃ মালিক-এর বক্তৃতা-বিবৃতি | দৈনিক পাকিস্তান ২৭ সেপ্টেম্বর | ২৭ সেপ্টেম্বর,২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ |
.
নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলুনঃ
ছাত্রদের প্রতি গভর্ণরের উপদেশ
.
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম মালিক ছাত্রদিগকে ক্লাসে যোগদান এবং আগামীদিনের নেতা হিসেবে জাতিগঠনমূলক কাজের দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্যে আবেদন জানিয়েছেন। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয় যে, গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের এক বিশেষ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে গভর্ণর ছাত্রদের এই মর্মে উপদেশ দেন যে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ও উত্তম দেশ সেবার উপযুক্ত করে নিজেদেরকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত হওয়া ছাত্রদের অপরিহার্য কর্তব্য।
গভর্ণর মালিক পাকিস্তানের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে সত্যের পতাকাকে সমুন্নত রাখা যায় এমনভাবে চরিত্র গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যতীত কোন লোকই কোন রকমের উন্নতিসাধন করতে পারেন না এবং সে জন্যই জাতি যাতে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য প্রত্যেকটি স্থানে আমাদের যথোপযুক্ত লোকের দরকার এবং এভাবে উপযুক্ত নেতৃত্বের শূন্যতা আমাদের পূরণ করতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ডাঃ মালিক বলেন, জাতি এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে চলেছে।
তিনি বলেন, এটা আমাদের বিবেকের সংকট-বিশ্বাসের মহান গুণাবলী দ্বারা জাতিকে প্রেরণা যোগানো, ন্যায়বিচারের আদর্শপূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যর্থতা এবং সমাজ জীবনে সততা, ভ্রাতৃত্ববোধ, জ্ঞাতিভাব ও সহনশীলতার অভাবেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। গভর্ণর ছাত্রদিগকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ক্লাশে যোগদান থেকে অনুপস্থিত না থাকার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্ররা ক্লাশে যোগদানে বিরত থাকলে তা শুধু তাদের নিজের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, উপরন্তু জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতিও তাতে বিঘ্নিত হবে। অথচ আমরা সবাই জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দৈনিক পাকিস্তান
২৯ সেপ্টেম্বর,
নাগরিকদের প্রতি গভর্ণর
সংহতি বিনষ্টের তৎপরতার
বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন
.
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম মালিক পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্রুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এপিপির খবরে প্রকাশ, গভর্ণর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গভর্ণর ভবনে ঢাকার ত্রিশটি ইউনিয়ন কমিটির প্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নাগরিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
সভায় গভর্ণরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও প্রাদেশিক মন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। গভর্ণর বলেন যে, শত্রুর এজেন্টরা তাদের হীন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত ও জনগণকে বিপথগামী করার প্রয়াসে সম্ভাব্য সব রকম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন যে, পরিস্থিতির এখন অনেক উন্নতি হলেও আত্মপ্রসাদের কোন অবকাশ নেই বরং সদা জাগ্রত থাকতে হবে।
ডাঃ মালিক এই নজির বিহীন সংকটের মুখে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য সকল শ্রেণীর নাগরিকের প্রতি আবেদন জানান। তিনি দেশের সংহতি ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে শপথ গ্রহণেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসেবে টিকে থাকবে, না আমরা শেষ হয়ে যাব সেইটেই আমাদের সামনে প্রশ্ন।
তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুতর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্যে জনগণের সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন। অতীতে আমাদের ব্যর্থতার কারণ বর্ণনা করে গভর্ণর বলেন যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের নীতি শিক্ষাকে আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করিনি। তিনি বলেন যে, আমাদের কথা, কাজ, চিন্তা ও অনুভূতির মধ্যে কখনো সামঞ্জস্য ছিল না। ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত আমরা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন সংকটের সম্মুখীন হই।
গভর্ণর বলেন যে, তার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়তির প্রতি সত্যিকার বিশ্বাস ও সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমেই জাতি তার লক্ষ্য হাসিল করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি জনগণের প্রতি আদর্শকে উন্নত করার আহ্বান জানান। অতীতের তিক্ততা ও ভুল বুঝাবুঝি ভুলে জাতি একটি নয়া অধ্যায় শুরু করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গভর্ণর আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা ও সর্বস্তরে কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার ব্যাপারে ঢাকার নাগরিকগণকে তাদের বিশেষ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার জন্যে কোন ত্যাগই বিরাট বলে মনে হয়া উচিত নয়। পরে ঢাকা শহর শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক এম পি এ জনাব সিরাজ উদ্দীন আহমদ ঢাকার নাগরিকদের পক্ষ থেকে গভর্ণরকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তান রক্ষার জন্য যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলা এমন কি শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিতেও তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
.
.
দৈনিক পাকিস্তান
৩রা অক্টোবর
খুলানায় গভর্ণর
বাস্তুত্যাগীদের প্রতি পুনরায় দেশে ফেরার আহ্বান
(নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত)
.
খুলনা ২রা অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক যে সব পূর্ব পাকিস্তানী ভারতীয় প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে চলে গেছে তাদের প্রতি দেশে ফিরে আসার জন্য আর একবার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সকালে এখানে স্থানীয় অফিসার ও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাবেশে ভাষণদানকালে গভর্ণর বলেন, সরকার বাস্তুত্যাগীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারত পরিচালিত ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা করে তিনি বলেন, এসব কার্যকলাপের দ্বারা তারা লক্ষ লক্ষ লোকের দুঃখ দুর্দশা সৃষ্টি করেছে। শিল্প কারখানার ক্ষতি সাধন করে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা শ্রমিকদের বেকার করে দিয়ে এই দুর্দিনে দুঃখ-কষ্টে ফেলেছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভারতীয়দের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের ও আমাদের দেশকে ধ্বংস করা। তিনি শিক্ষিত লোকদের প্রতি গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়ে বলেন, দুষ্কৃতকারীরা ও দেশের শত্রুরা জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, যেসব দুষ্কৃতকারী জনসাধারণের সম্পত্তি নষ্ট করছে এবং দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের কেউ কেউ আমাদের আত্মীয় স্বজন হলেও তারা সবাই আমাদের শত্রু। ইতিপূর্বে স্থানীয় জেলা স্কুল মিলনায়তনে রাজাকারদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে গভর্ণর তাদের প্রতি সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করার এবং সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পুত চরিত্রের দ্বারা জনগণের স্নেহ ও ভালবাসা লাভ করার আহ্বান জানান।
পরে গভর্ণর ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের জন্য খোলা সাহায্য শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং জেলা কর্মকর্তাদের ক্ষতির প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়ার নির্দেশ দেন।
.
.
দৈনিক পাকিস্তান
১৬ অক্টোবর।
সিলেটের সমাবেশে গভর্ণর মালিক
বিপথগামীদের প্রতি শত্রুদের অভিসন্ধি
অনুধাবনের আহ্বান
.
সিলেট ১৫ই অক্টোবর (এপিপি)। আজ প্রাদেশিক গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার ভারতীয় দাবীতে বিভ্রান্ত লোকদের প্রতি এর বিপজ্জনক পরিণাম এবং শত্রুদেশের আসল অভিসন্ধি অনুধাবনের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি এখানে শহরের বিভিন্ন স্তরের লোকদের এক জনসমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। গভর্ণর বলেন,
নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ন্যায্য দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা দোষের নয় কিন্তু তা কোন মতেই দেশের শান্তি, সংহতি ও অখন্ডতার বিনিময়ে চলতে পারে না। তিনি দুঃখ করে বলেন, যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের প্রাপ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার লাভের আকাঙ্খা করছিল তখন চরমপন্থী লোকেরা এমনকি দেশকে বিচ্ছিন্ন করার দাবী তুলছিল।
এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গভর্ণর সীমান্ত অতিক্রম করে দেশত্যাগীকারী পাকিস্তানীদের শত্রুর হাতকে শক্তিশালী করে নিজেদের ভুলটাকেই চিরস্থায়ী না করার এবং হাজার হাজার লোকের দুঃখ কষ্ট আরো না বাড়ানোর আহ্বান জানান।
উদ্বাস্তুদের দুর্দশায় বিচলিত গভর্ণর তাদের প্রতি এই মুহুর্তের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার এবং তৎকালীন সমাজের শোষকদের শোষণ মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধ্বংস সাধনের পথ বেছে নেওয়ার জোর নিন্দা করেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে শুধু জনসাধারণের দুঃখ-কষ্টই বাড়ানো যায়।
শিক্ষা বর্জনের সর্বনাশা প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে গভর্ণর বলেন, এই আত্মঘাতী নীতি শুধু ব্যক্তি নয় গোটা জাতির পক্ষেই ক্ষতিকর। এর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা কখনোই পূর্ণ হবে না। মুসলমানরা এভাবে ইংরেজী শিক্ষা বর্জন করে পিছিয়ে পড়েছিল। লোকজনের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে জেলা কর্তৃপক্ষের উৎসাহব্যঞ্জক রিপোর্টের উল্লেখ করে গভর্ণর সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি সহানুভূতি ও তাদের সদয় ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানান।
গভর্ণর প্রত্যাবর্তনকারীদের দ্রুত পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট জেলার এ যাবৎ প্রায় ৪৭ হাজার পাকিস্তানী, অধিকাংশই অননুমোদিত পথে ফিরে এসেছেন বলে জেলা কর্তৃপক্ষ গভর্ণরকে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০ হাজারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। ট্রেনিং প্রাপ্ত সশস্ত্র লোকজনসহ প্রকৃত পাকিস্তানীরা সীমান্ত অতিক্রম করে বহুস্থানে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গভর্ণরকে জানানো হয়।
সরকারী কর্মকর্তা ও চা বাগান মালিকদের সাথে গভর্ণরের আলোচনায় আরো জানা গেছে যে ১০০ চা বাগানে কাজ চলছে এবং ৮৪টি চা বাগানে শতকরা ৬০ ভাগ শ্রমিক কাজে যোগদান করেছে। চা বাগান মালিকদের একজন প্রতিনিধি গভর্ণরকে বলেন, চা বাগানগুলোর উন্নতি ঘটছে।
গভর্ণর জেলার ফসলের অবস্থা, স্বাস্থ্যরক্ষা পরিস্থিতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভায় কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজাকার বাহিনী পুনর্গঠনের এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছেন। তারা বাইরের আক্রমণের মোকাবেলায় সর্বস্তরের লোকের পূর্ণ ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন।
গভর্ণর পরে স্থানীয় রাজাকার ট্রেনিং কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি তাদের শত্রুর মোকাবিলায় সম্পুর্ণ প্রস্তুত থাকার এবং সাহসিকিতার সাথে তা প্রতিরোধ এবং জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হেলিকপ্টার যোগে গভর্ণর স্থানীয় সালটিকর বিমান বন্দরে অবতরণ করলে স্থানীয় পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক অফিসাররা গভর্ণরকে অভ্যর্থনা জানান। সেখান থেকে সোজা তিনি হযরত শাহজালালের (রঃ) মাজারে যান এবং ফাতেহা পাঠ করেন।
.
দৈনিক পাকিস্তান
১৮ অক্টোবর।
ময়মনসিংহের জনসভায় গভর্ণর মালিক
ভারতীয় হুমকি মোকাবিলায়
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
.
ময়মনসিংহ, ১৭ অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক আজ জনসাধারণকে সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ও অবিভাজ্য শক্তি নিয়ে ভারতীয় আক্রমণের হুমকি মোকাবিলায় আহ্বান জানান। তিনি স্থানীয় সার্কিট হাউস ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন।
গভর্ণর বলেন, কে কতটা দোষী একথা বলার সময় এটা নয়। এখন শত্রু দেশের সংহতি বিনাশে উদ্যত। অন্য সব স্বার্থকে ভুলে এমন সব কিছুর ওপর দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নকে স্থান দিতে হবে। পাকিস্তানই যদি না থাকলো তবে বাঁচবে কে এবং পাকিস্তান থাকলে কেউ মরবে না।
ভারতের পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অভিসন্ধির মুখোশ উদঘাটন করে ডাঃ মালিক বলেন, পাকিস্তানের সৃষ্টিকে স্বীকার করতে না পারার দরুনই ভারত এগুলো করছে। পশ্চিম বঙ্গে ক্ষুধা, দারিদ্র ও ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত এই অঞ্চলকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে বলে গভর্ণর উল্লেখ করেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনকি এখনো পশ্চিম বঙ্গের তুলানায় পূর্ব পাকিস্তানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্য সস্তা দরে পাওয়া যায়।
গভর্ণর একটি কঠোর বাস্তব দিকের প্রতি বিপথগামী লোকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি তাদের এ কথাটা ভেবে দেখতে বলেন যে, যখন পশ্চিম বাংলার লোকেরা দিল্লির হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে না তখন পূর্ব পাকিস্তানীদের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, বাংলা বলতে পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গ উভয়কেই বুঝায়।
তাই বাংলা যদি স্বাধীন হয় তাহলে তাতে পশ্চিম বঙ্গও থাকা উচিত। অতএব দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে পূর্ব বাংলাকে ভারতের সাথে যুক্ত করার জন্যে এ আন্দোলন। এই মুহূর্তে প্রত্যেক পাকিস্তনীকে তিনি যেখানেই থাকুন, ভারতের এই খেলা বুঝে নিতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটাকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।
উদ্দীপ্ত জনতাকে উদ্দেশ্য করে গভর্ণর বলেন, বিশ্বাসঘাতকেরা পেছন থেকে ছুরি না মারা পর্যন্ত মুসলমান কখনো কোন যুদ্ধে হারেনি। যারা কথায় এবং কাজে শত্রুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিইয়েছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে গভর্ণর আশা প্রকাশ করেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবক্তাদের মীরজাফরের ভাগ্যের কথাটা একবার স্মরণ করতে বলেন। জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, ক্লাইভ ও অন্যান্যরা তাকে বাংলার মসনদে বসানোর অঙ্গীকার করেও তা পালন করেনি। তাই তিনি তাদের এই ঐতিহাসিক সত্য অনুধাবনের এবং দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেন।
রাজাকারদের উদ্দেশ্য করে গভর্ণর বলেন নিষ্ঠা ও একাগ্রতাই নিয়ে তাদের কাজ করে যেতে হবে। বাইরের শত্রুদের প্রতিরোধ করা ছাড়াও তাদের সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। গভর্ণর শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি শান্তি কমটির সদস্যদের কয়েকটি সুপারিশ আগ্রহ সহকারে শোনেন।
দৈনিক পাকিস্তান
২৩ অক্টোবর।
এ অবস্থায় নিখুঁত নির্বাচন
হতে পারে না
-মালিক
.
পূর্ব পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন হয়ত নিখুঁত হবে না, কিন্তু এটা শাসন ব্যবস্থাকে আবার চালু করার পক্ষে সহায়ক হবে। প্রাদেশিক গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক গত মঙ্গলবার এ এফ পি -এর প্রতিনিধিকে এ কথা বলেছেন। গতকাল শুক্রবার পিপিআই এ খবর পরিবেশন করেছে।
ডাক্তার মালিক এই সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রদেশের এখনকার অস্বাভাবিক অবস্থায় সন্তোষজনক নির্বাচন হতে পারে না। শাসন ব্যবস্থাকে আবার চালু করা গেলে সেটাই হবে এর সাফল্য। বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী দলের ৭৮ জন অযোগ্য ঘোষিত জাতীয় পরিষদ সদস্যের স্থলে আগামী ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানীরা নয়া সদস্য নির্বাচিত করবেন।
জানুয়ারীতে প্রাদেশিক পরিষদের ১০৫ টি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত নির্বাচনে পরাজিত ৬টি দক্ষিণ পন্থী এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এর মধ্যেই জাতীয় পরিষদের ৭৮টি আসন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে এরূপ খবরের প্রতি গভর্ণরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গভর্ণর বলেন, এ ধরনের মৈত্রী জোটকে খুব বেশী গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না।
গভর্ণর বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি দলেরই যে আইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগে ৬ দফার (কয়েকটি দল ছাড়া) অনুরুপ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি রয়েছে।
ডাঃ মালিক বলেন, তার কাছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদিশিক নিরাপত্তা প্রত্যেকটা জেলায় সুষ্ঠভাবে খাদ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে নির্বাচনের স্থান।
————————-
দৈনিক পাকিস্তান
১ নভেম্বর।
সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে ডাঃ মালিকঃ
সেনাবাহিনীর ২৫ শে মার্চের কার্যক্রমে
পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে
.
লাহোর ৩০ শে অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক বলেছেন, ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ চালালে তাকে প্রচন্ড আঘাত হানার ক্ষমতা ও যোগ্যতা পূর্ব পাকিস্তানীদের রয়েছে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। স্থানীয় উর্দু মাসিক পত্রিকা উর্দু ডাইজেষ্টের সম্পাদক জনাব আলতাফ হোসেন কোরেশীর সাথে এক সাক্ষাৎকারে গভর্ণর এ কথা বলেছেন। গভর্ণর মালিক একটা একটা করে প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন।
প্রশ্নঃ- আওয়ামীলীগের পরিকল্পনা নেহায়েতই একটা সুযোগের ফলশ্রুতি অথবা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আবরণে কয়েক বছর আগে শুরু করা সুপরিকল্পিত সংগ্রামেরই পরিণতি কি না?
উত্তরঃ- হ্যাঁ। আমার তাই মনে হয়।
প্রশ্নঃ- বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করেন কি?
উত্তরঃ- যেভাবে তার অভ্যুদয় দেখেছি তাতে নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানী আদর্শের পরিপন্থী।
প্রশ্নঃ- সামরিক বাহিনীর তৎপরতার পর সারা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সফর করে আমার এরূপ ধারণা হয়েছে যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান থেকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। এরূপ মনোভাবের অধিকারী লোকের সাথে এখন কি একত্রে কাজ করা সম্ভব?
উত্তরঃ- ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার মনোভাব নিয়ে এবং যারা ইসলাম বিশ্বাসী তারা যদি ইসলামের শিক্ষাকে কাজে প্রয়োগ করেন, মহানবী (দঃ) ও তাঁর সাহাবারা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা একসাথে থাকতে পারি।
প্রশ্নঃ- ইসলাম ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বন্ধনে আর কোন গ্রন্থি আছে বলে আপনি মনে করেন কিনা। যদি না থাকে তাহলে কোন পথে এগুলো জনগণের মধ্যে সত্যিকার ইসলামী আদর্শের উদ্বোধন ও অনুশীলন ঘটানো যাবে?
উত্তরঃ- পাকিস্তান অর্জনে আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি ইসলামের আদর্শ মোতাবেকই সাধারণ লক্ষ্য, আশা আকাঙ্খা, উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য একত্রে বসবাসের ইচ্ছাই আমাদের বন্ধন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ইচ্ছাও আর একটি কারণ, যখন আমরা বলি, আমরা মুসলিম এবং ইসলামের অনুসারী, সাথে সাথেই ইসলামী ভাতৃত্ববোধ সামনে এসে যায়। আর এজন্যই ইকবাল বলেছেন, মুসলমানদের কাছে ‘সারা জাহান হামারা’।
প্রশ্নঃ- কোন কোন মহলের ধারণা যারা পাকিস্তানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে তারা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছে। এরূপ ধারণাকে আপনি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন কি?
উত্তরঃ- যে মহল এরূপ ধারণা পোষণ করেন এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে তাদের হাতে সুস্পষ্ট তথ্য থাকলে তাদের যুক্তি ঠিক, অন্যথায় নয়।
প্রশ্নঃ- আপনি কিভাবে বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালীদের সম্পর্কের উন্নতি করতে চান। অবাঙ্গালীরা নিজেদের রাষ্ট্রে সম মর্যাদার নাগরিক হিসেবে ভাবতে তাদের মধ্যে এরূপ কোন মনোভাব জাগানোর পরিকল্পনা আপনার আছে কি?
উত্তরঃ- এর জবাবটাও দু’অংশের বন্ধন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবেরই অনুরুপ হবে।
প্রশ্নঃ- সেনাবাহিনীর তৎপরতা অপরিহার্য দায়িত্বসমূহ পালনের সকল লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে কি?
উত্তরঃ- ২৫ শে মার্চের রাতে সেনাবাহিনী যে কার্যক্রম নিয়েছে তাতে পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।
প্রশ্নঃ- আপনার বেসামরিক সরকার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে কি?
উত্তরঃ- বর্তমান সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যে বেসামরিক পরশাসন ও সেনাবাহিনীকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা দু’পায়ে হাঁটি এবং আমরা তাই করছি।
প্রশ্নঃ- আপনার মন্ত্রীরা কেউই তেমন বিশিষ্ট ব্যক্তি নন। এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে অথবা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে কি?
উত্তরঃ- আমার মন্ত্রীরা বিশিষ্ট ব্যক্তি নন একথা আমি স্বীকার করি না। তাদের মধ্যে দু’জন জনাব আবুল কাসেম ও জনাব সোলায়মান সারা পাকিস্তানে পরিচিত। প্রথমজন পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক। এক সময়ে জাতীয় পরিষদে ডেপুটি স্পীকার ছিলেন এবং অতীতে গণ পরিষদের সদস্য ছিলেন। জনাব সোলায়মান একজন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা এবং পাকিস্তান কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি। তিনি বেশ কয়েক বছর জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।
প্রশ্নঃ- আপনার বর্তমান মন্ত্রীদের দ্বারা বর্তমান সংকটের সমাধান হবে কি?
উত্তরঃ- আমার সেটাই বিশ্বাস।
————————–
দৈনিক পাকিস্তান
২৬ নভেম্বর।
করাচীতে ডাঃ মালিক
রাজাকারদের ভূমিকার প্রশংসা
.
করাচী, ২৫ শে নভেম্বর, (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক দুষ্কৃতকারীদের নাশকতামূলক তৎপরতা কার্যকরভাবে রোধ করার ব্যাপারে গতকাল পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকারদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
ঢাকা থেকে এখানে আগমনের পর বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করছিলেন।
ডাঃ মালিক বলেন যে, রাজাকাররা চমৎকার কাজ করছে। তারা দেশ প্রেমিকদের জান মাল রক্ষা করছে এবং নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রাষ্ট্র বিরোধী ব্যক্তিদের নাশকতামূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রহরা দিচ্ছে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
———————-
দৈনিক পাকিস্তান
২৭ শে নভেম্বর।
পিন্ডিতে গভর্ণর মালিক
জনসাধারণ বুঝতে পেরেছে
বাংলাদেশ আন্দোলন একটা ভাওতা
.
রাওয়ালপিন্ডি, ২৬ শে নভেম্বর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক আজ এখানে বলেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর কতিপয় বিদ্রোহী ও ভারতীয় চর ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনই একটা ভাওতা।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে গভর্ণর বলেন যে, এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বর্তমানে যারা ভারতে রয়েছেন তারাও এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে তারা তাদের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মালিক বলেন, তার কাছে এ ধরনের সঠিক খবরও আছে যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের এসব নেতা ও কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসার জন্য খুবই আগ্রহী। কিন্তু তাদের কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে। প্রহরী, ভারতীয় পুলিশ ও সামরিক নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের ছাড়া তারা এক পা-ও বাড়াতে পারেন না।
মুক্তিবাহিনীর ছদ্মাবরণে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানোর জন্য ভারতে যথাযথ ট্রেনিং লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানে আগত সেসব হতাশ যুবকদের বহুসংখ্যকই আত্মসমর্পণ করেছে এ ঘটনা থেকেই উপরোক্ত বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর বীর সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে এ মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, জনসাধারণ, রাজাকার, পুলিশ ও মুজাহিদদের সক্রিয় সহযোগিতায় সশস্ত্র বাহিনী শত্রুকে চরম পরাজয় বরণে বাধ্য করবে।
৫৫২
পাকিস্তানীরা যথা সময়েই শত্রুচরদের উৎখাত করবে। পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতে কুক্ষিগত করার জন্যই পাকিস্তান সীমান্তে তারা আক্রমণ শুরু করেছে। এ উদ্দেশ্য সাধনে ভারতীয় বাহিনী শুধুমাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশের চেষ্টা করছে না, অধিকন্তু ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও গোলাবর্ষণ করছে।
এসব সত্ত্বেও জনসাধারণের মনোবল অটুট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তারাবির নামাজ কালে মসজিদে, জনসমাগমপূর্ণ বাজার এলাকা ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভারতীয় চরদের বোমা নিক্ষেপের বিষয়ও গভর্ণর বর্ণনা করেন।
পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি দিন দিনই জনসাধারণের আস্থা জোরদার হচ্ছে এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় তারা সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করছে বলে গভর্ণর জানান।