শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রচারিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার | দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া | ৩ জুন, ১৯৭১ |
যেকোনো মুল্যে স্বাধীনতাঃ
তাজুদ্দীন
এএইচ ইন্ডিয়া রেডিওকে দেওয়া জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ এর সাক্ষাৎকার এর ওপর প্রতিবেদন
২ জুন ১৯৭১
আজ মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রধনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বলেছেন যে বাংলাদেশ সার্বভৌম ও স্বাধী রাষ্ট্রএবং জনগন যেকোনো মূল্যে এর স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সত্বাকে রক্ষা করবে ।
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, জনাব আহমেদ পুনরায় বলেন সবার জন্য বন্ধুত্ব নীতিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। , যদিও, প্রতিবেশিকিছু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি আমাদের এই দুরাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
“এছাড়া মাত্র দু’মাস বয়সী একটি রাষ্ট্রের জন্য শক্ত একটি পররাষ্ট্র নীতি দাঁড় করানো সম্ভব না”, এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব তাজুদ্দীন এ কথা বলেন । তিনি আরও বলেন , ‘আশাপ্রদ উন্নতি হচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে এখনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, ঢাকায় যদি কোনো সাজানো সরকার গঠনের চেষ্টা করা হয় তা অবশ্যই নস্যাৎ করা হবে কারন “বাংলাদেশের জনগন, যারা তাদের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত ও রক্ষা করার জন্য লড়ে যাচ্ছে, তাঁরা খুনী ও দেশদখলকারীদের কোনো জোটকে প্রশ্রয় দেবে না” ।
পাকিস্তান সরকার দাবী করে যে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি সেনাবাহিনির সাথে সহযোগিতার জন্য জনগনকে আহবান জানিয়েছেন – এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জনাব আহমেদ জানানঃ “ আমরা জানিনা পাকিস্তান সরকার ঠিক কোন স্থানে শেখ সাহেবকে আটকাবস্থায় রেখেছে । কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীরর সাথে জনগনকে সহযোগিতা করার যে আহবান সম্পর্কে করা দাবীকে তীব্র ঘৃনার সাথে প্রত্যাখ্যান করা উচিত । এই দাবি অযৌক্তিক” ।
জনাব আহমেদ বলেন তার সরকার একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে মধ্যস্ততার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করেছে । “আমরা প্রত্যেকের জন্য এটা সুস্পষ্ট করতে চাই পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে সমঝোতার কোনো সুযোগই নেই । বাংলাদেশ সার্বভৌম ও স্বাধীন এবং আমরা যেকোনো মূল্যে এর পৃথক ও মুক্ত অস্তিত্বকে রক্ষা করবো।”
বৃহৎ শক্তিদের নীরবতা
বৃহৎ শক্তি , বিশেষত ইউএসএ, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এর নীরবতা এবং দ্বিধা প্রসঙ্গে তার সরকারের অভিমত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, আমাদের বর্তমান দূরবস্থা নিয়ে বৃহৎশক্তিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া থাকা সত্বেও “সবার জন্য বন্ধুত্ব”- নীতিতেই আমাদের পররাস্ট্র নীতি পরিচালিত হবে ।
তিনি বলেন, তার সরকার কর্তৃক বিদেশে প্রেরিত প্রতিনিধিদের কাজ এসব এলাকায় অনুকূল সুপারিশ তৈরি এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন এর ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে ।
তার সরকারের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জনাব তাজুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের সুবৃহৎ গ্রামাঞ্চলগুলোর সাথে সরকার কখনোই যোগাযোগ হারায়নি এবং দখলকৃত শহর ও নগরগুলোর সাথে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে । আমরা একটি প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছি নিয়ন্ত্রনে থাকা এলাকাগুলোর জন্য এবং একইসাথে শত্রুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অভিযানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ব্যবস্থা ।
বাংলাদেশে বামপন্থীদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশন করা হলে জনাব তাজউদ্দিন বলেন , বাংলাদেশে প্রশ্নে বামশক্তিদের সমস্যা সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই । মাত্রই একটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর একই সাথে রাজনৈতিক মতবাদ নির্বিশেষে সব মানুষ এবং সমস্ত দেশপ্রেমিক সত্বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে একসাথে জেগে উঠেছে ।
তিনি আরও বলেন , “সংগ্রামী জনতা এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মাওলানা ভাসানী এবং ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক নেতা এবং সকলেই তাদের সর্বাত্নক সমর্থন জানিয়েছেন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দাবী করেছেন ।”
(দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লী-জুন ৩, ১৯৭১)