২০। আমার ভাইকে তোমরা হত্যা করো না (৩৯২)
আমার ভাইকে তোমরা হত্যা করো না
সৈয়দ আকবর হোসেন মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বার আক্রমণে পলায়নপর পাকিস্তানী বর্বর জল্লাদদের হাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হওয়ার ঠিক আগের দিন নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার তিনি।
আগরতলা থেকে নভেম্বর মাসে তিনি তার গ্রাম সরাইলে ফিরে আসেন। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে মুক্তিবাহিনীকে প্রয়োজনীয় সংবাদ সরবরাহের উদ্দেশ্যে। রাতের বেলায় হিংস্র পাকিস্তানী পশুরা অতর্কিতে তার গ্রামের বাড়ী ঘিরে ফেলে।
তার ছোট ভাই সৈয়দ আফজাল হোসেন (যিনি গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন) তাকেও আকবর হোসেনর সাথে গ্রেফতার করা হয়।
ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ (১৯৭১) যখন উভয়কে চোখ বাঁধা অবস্থায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আকবর হোসেনের ছোট ভাই আফজাল হোসেন জল্লাদদের কাছে অনুনয় করে বলেন,”আমাকে হত্যা কর। আমি নিজেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্য স্বীকার করছি। আমার ভাইকে তোমরা হত্যা কর না। তিনি নির্দোষ। আমি ছেলেমানুষ। আমি অবিবাহিত। আমাকে মেরে ফেলা হলে কারো কোন ক্ষতি হবে না। আমার ভাই বিবাহিত তিনটি শিশু সন্তানের পিতা। নিষ্পাপ শিশুদেরকে এতিম করবে না। ওদেরকে দেখাশুনা করার মতন কেউ আর পৃথিবীতে নাই।“
সে আকুল আবেদন নির্মূল হল । গর্জে উঠলো মেশিনগান। অন্যান্য ৪০ জন বুদ্ধিজীবীর সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দুই ভাইয়ের নশ্বর দেহ। একই মায়ের দু’ছেলে একই মুহূর্তে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত ঢেলে দিয়ে বাংলার শস্য শ্যামল বুককে আরও উর্বর করে দিয়ে গেল। আকবর হোসেন ঢাকা হাইকোর্ট বার এর এডভোকেট ছাড়াও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকারী সংসদের সদস্য ও মগবাজার আওয়ামী লীগ ইউনিট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।