একজন মেজরের বিদ্রোহ

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৯। একজন মেজরের বিদ্রোহ নিউজ উইক ১০ মে ১৯৭১

 

Razibul Bari Palash

<১৪, ৩৯, ৮৭>

 

নিউজউইক, মে ১০, ১৯৭১

মেজর হকের বিদ্রোহ

-মিলান জে কিউবিক

 

প্রথম দিন একটি ছোট খামারবাড়ি , পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ২ মাইল ভিতরে , বাড়ির পিছনের দিকের উঠোনের  মধ্যে মেজর হকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি কেডস এবং একটি কৃষকদের লুঙ্গি (একটি স্কার্ট এর উপর একটি দীর্ঘ সাদা শার্ট) পরিহিত ছিলেন। সামনের অনিবার্য সামরিক বিপর্যয় থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরুদ্বিগ্ন। এক সপ্তাহের কম সময়ে আমি কর্দমাক্ত ট্র্যাক দিয়ে নডিং করে বাংলাদেশে আসি। ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী পালাতে পালাতে এখানে এসে পৌঁছাবে এবং পদদলিত হবে। তাদের আসতে দিন। যুদ্ধের প্রথম অংশ শেষ হবে তখন এবং তারপর ফেজ দুই আরম্ভ হবে। ‘

 

এলাকায় হকের একটি আহত উইলিস জীপের  মাধ্যমে আমরা যতখানি এলাকা দেখেছি ইতিমধ্যে সেগুলো মুক্ত। নারী ও শিশুদের অধিকাংশই ভারতে শরণার্থী শিবিরে চলে যায়। আর দেশের বাকি অঞ্চলে মাসব্যাপী তেল, জ্বালানি তেল ও শিল্পজাত পণ্যের  সংকট ছিল। “আমার কাছে টাইফয়েড এবং কালাজ্বর এর কোন ওষুধ নাই। ‘ এক ফার্মাসিস্ট আমাকে বলছিলেন।  “আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এস্পিরিন শেষ হয়ে যাবে। ‘

 

তবুও এই সব যন্ত্রণার পরেও গ্রামবাসী এখনো বাংলার  স্বাধীনতা সমর্থন করে।  উদাহরণস্বরূপ, শাহাপারে কয়েকশ কৃষক প্রচুর উদ্দীপনার সাথে হকের আবেদনে সাড়া দেয়। তিনি বলেছেন আগামী মাসে ধান কেটে আনতে। ‘ আপনারা সব যদি ভারতে পালিয়ে যান তাহলে বাংলাদেশ একটি ভয়ানক দুর্ভিক্ষে  ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  ফসল কাতাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আপনাদের যুদ্ধ করার পরিবর্তে। তারা সাদাসিধা বাংলা পতাকা উড়িয়ে একত্রে উচ্চারণ করল “জয়বাংলা জয়বাংলা!”

 

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হক ও তার প্রধান নিয়োগকারী, ২৪ বছর বয়সী শাহ আবদুল খালেকের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য বাংলাদেশের  স্বেচ্ছাসেবকদের বাছাই করতে কোন কষ্ট হলনা। আমার স্কুল গাইবান্ধার এক গ্রামে। আমার দেশ আর বিপদে পড়েছে। আমার  দায়িত্ব যুদ্ধ; পালান নয়। মাদিলে একটি পিতার দুই ছেলে ১৭ ০ ২৩ বছর বয়সী যুদ্ধে অংশ নেবে। আমি গর্বিত । ভেড়ার মত জবাই হয়ে মরার চেয়ে হাতে রাইফেল নিয়ে মরা অনেক সন্মাঞ্জনক।

 

এত উৎসাহের পরেও বাঙালি এখনও বাঁধার মুখোমুখি হচ্ছেন। অস্ত্র বলতে তাদের কাছে ৩০০০ প্রাচীন এনফিল্ড রাইফেল এবং প্রায় ১০০ ছোট মর্টার । তার উপরে, বাঙালিদের গুরুতর নেতৃত্বের সমস্যা আছে।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র এক মাইল দূরে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের সরকার এখনো তেমন জোরালো ভাবে প্রকাশিত হতে পারেনি। হক নিজে আমাকে বলেছিলেন ,  “আমাকে দ্রুত ভারত যেতে হবে, কিন্তু আমি পারব না। সবচেয়ে কাছে অবস্থিত বাঙালি অফিসার ২০ মাইল দূরে এবং এই মানুষগুলো আমার মত আশা হৃদয়ে ধারণ করে।

 

বাঙ্গালীদের কিছু সুবিধাও আছে। নিউ দিল্লি ইতিপূর্বেই “মুক্তি বাহিনী”র জন্য স্বর্গ করে দিয়েছেন বিভিন্ন গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্প এবং কিছু ট্রাক ও সরঞ্জাম ও আশ্রয়স্থল প্রদান করে। অনেক কূটনীতিক, পরন্তু, অদূর ভবিষ্যতে বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র চালান করার আশা প্রকাশ করেন ভারত সরকারের কাছে। বাঙালিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ৭০০০০ সদস্যের ফেডারেল দখলদার বাহিনী কখনো স্থায়ীভাবে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে নিশ্চিনহ করে দিতে পারবেনা। “যদি আপনি এখন থেকে চার মাস পড়ে আসেন তাহলে কিছু কাজ দেখাতে পারবো – হক আমাকে জানান – আমি চলে যাচ্ছিলাম। এবং তিনি সেটাই করবেন।

 

Scroll to Top