৭.২৫.৫৮-৫৯
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২৫। ওয়াশিংটনস্থ পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত কর্তৃক সিনেটর ফুলব্রাইটকে লিখিত চিঠি | পাকিস্তান দূতাবাসের দলিলপত্র | ৪ মে, ১৯৭১ |
পাকিস্তান দূতাবাস
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০০৮
মে ৪, ১৯৭১
মাননীয় জে. ডব্লিউ. ফুলব্রাইট
সিনেট অফিস ভবন
ওয়াশিংটন, ডিসি
প্রিয় সিনেটর ফুলব্রাইট,
আমি রয়টারে মিচেল ক্রাফটের একটি রিপোর্ট দেখতে পেলাম, পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত একজন প্রাক্তন আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক মি. রোড পূর্ব পাকিস্তানে গনহত্যা এবং পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবি হত্যার অভিযোগ সম্বলিত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
২. আমি আপনাকে জানাতে চাই, দূর্ভাগ্যবশত মিঃ রোড কখনোই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী বিচার করেন নি। পহেলা মার্চ থেকে সৃষ্ট বর্তমান সংকটের বহু পূর্বেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধাচারন করে আসছেন। ১৩ নভেম্বর ১৯৭০ এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরেই এর সূত্রপাত যখন মিঃ রোড ঘূর্নিঝড়-বিধ্বস্ত অঞ্চলে সাহায্য প্রদানের জন্য বিদেশী কর্মকর্তাদের একটি টীমকে নেতৃত্ব দেন। আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে আরো অন্যান্য বিদেশী সংস্থাও একই সময়ে একই জায়গায় সাহায্যকারী টীম পাঠায়। কিন্তু অন্যান্য টীমের মত পাকিস্তানী সিভিল ও মিলিটারি কর্তৃপক্ষের সাথে একত্রে কাজ না করে এবং শুধুমাত্র সাহায্য প্রদানে মনোযাগ না দিয়ে, মিঃ রোড প্রকাশ্যে বাঙালি জাতীয়বাদের সমর্থন শুরু করেন এবং প্রতিনিয়ত সরকারী বিশেষত পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের সাথে কলহে লিপ্ত হন। এমনকি তিনি তার কাজের জন্য নির্ধারিত অঞ্চল, মনপুরার বাসিন্দাদের নিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধর্মঘটও করেন। এতে সন্তষ্ট না হয়ে, তিনি বিবিসির এলেন হার্টকে দেয়া এক ইন্টারভিউতে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনাবাহিনীকে পূর্ব-পাকিস্তানে “গনহত্যা”র দায়ে অভিযুক্ত করেন। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি গুলি ছোড়েনি (নভেম্বর ১৯৭০), তখন এরকম অভিযোগ তার অসহযোগিতামূলক আচরনেরই প্রমান। এই ইন্টারভিউটি ব্রিটেনে “প্যানারোমা” প্রোগ্রামে গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রচারিত হয়। আমি বিবিসির কাছে এই প্রোগ্রামের ভাষ্য জানতেচেয়ে আবেদন করেছিলাম। এই ইন্টারভিউ ব্রিটিশ দর্শকদের একটি পরিষ্কার ধারনা দেয়, মি রোড অন্যান্য সাহায্য সংস্থার ন্যায় সাহায্য কার্যক্রমের চেয়ে সাইক্লোন পরবর্তী ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার প্রতিই অধিক মনযোগী ছিলেন।
৩. মি. রোড এরপর ৭ই ডিসেম্বরের নির্বাচনের পূর্বে ও পরে, আওয়ামী লিগের বিছিন্নতাবাদী অংশের সাথে যুক্ত ছিলেন। এরুপ কর্মকান্ডের মাধ্যমে একটি বন্ধু রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত সুবিধাদির অপব্যবহার করেছেন। আমেরিকাসহ আরো বিদেশী সাহায্য সংস্থার সাহায্যকর্মসূচীর পাশাপাশি বিদেশী সাহায্যের উদ্দ্যেশকেই ব্যহত করেছেন। তাই এটি আশ্চর্য নয় যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনেরাল ই. থান্টকে দেয়া সাম্প্রতিক চিঠিতে, স্পষ্টত উল্লেখ করেছেন, যদিও পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য সাহায্য প্রয়োজন কিন্তু সাহায্য বন্টনে শুধুমাত্র পাকিস্তানী সংস্থা কাজ করবে, বিশেষত যারা সাইক্লোনের পর সুসজ্জিত এবং প্রস্তুত এ ধরণের কাজ করার জন্য। স্পষ্টতই পাকিস্তান সরকার সাইক্লোন-পরবর্তী বৈদেশিক সাহায্যকারী মি. রোডের ন্যায় তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনারাবৃত্তির আশংকায় শংকিত। নাইজেরিয়ার ঘটনার পর, যেখানে কিছু সাহায্য সংস্থা বায়ফ্রান বিছিন্নতাবাদিদের সাথে রাজনৈতিকভাবে যু্ক্ত হয়ে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করবে।
৪. আমি সিনেট পররাষ্ট্র কমিটিকে আশ্বস্ত করতে চাই, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান তার অনুসারীদের অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ প্রদানের পর যে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা দমনে, অস্ত্রধারী জনতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেনি। অস্ত্রধারী জনতা লুট-তরাজ এবং নিরীহ নাগরিকদের হত্যাকান্ড লিপ্ত হয়। মি. রাহমান পহেলা মার্চের পর সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার পর, পূর্ব-পাকিস্তানে বিরাজমান অরাজক পরিস্থিতি দমনে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে, সেনাবাহিনীকে আদেশ প্রদান ছাড়া আমার সরকারের আর কোন পথ ছিলোনা। এছাড়া দেশের ঐক্য এবং হাজারো শান্তিপ্রিয় নাগরিক যারা বিছিন্নতা চায়নি, তাদের রক্ষা করা সম্ভবপর ছিলো না।
৫. সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের দরুন হতাহতের সংখ্যা অতিরন্জিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় বেসামরিক প্রশাসনের সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ হলেই, আমার সরকার বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পূর্ব-পাকিস্তানে আমন্ত্রন জানাবে যাতে তারা বর্হিবিশ্বে ঘটনাবলি সঠিকভাবে প্রচার করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, তার আগ পর্যন্ত আপনার কমিটির সম্মানিত সদস্যরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিরত থাকবেন। একই সময়ে, আমি প্রফেসর ডর্ফম্যানকে লিখিত একটি চিঠির কপি প্রেরন করছি যা আমার সরকারের অবস্থান বর্ননা করে।
শুভেচ্ছান্তে,
একান্তই আপনার
এ. হিলালী