জেনারেল ইয়াহিয়ার তিন দফা শান্তি প্রস্তাব

৭.৮৯.২০২ ২০৩

শিরোনামঃ ৮৯। জেনারেল ইয়াহিয়ার তিন দফা শান্তি প্রস্তাবঃ জাতিসংঘের মধ্যস্থতা প্রয়াস অভিনন্দিত

সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান

তারিখঃ ২৬ অক্টোবর, ১৯৭১

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তিন দফা শান্তি প্রস্তাব

জাতিসংঘের মধ্যস্ততা প্রয়াস অভিনন্দিত

থান্টকে অবিলম্বে সফরে আসার অনুরোধ

(নিজস্ব প্রতিনিধি)

 

        ইসলামাবাদ, ২৫শে অক্টোবর। -প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান উপমহাদেশে শান্তি রক্ষার জন্য উথান্টের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং উভয় পক্ষের সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য তাঁকে অবিলম্বে পাকিস্তান ও ভারত সফরের অনুরোধ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সীমান্তের উভয় পার থেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে তিন দফা শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছেন এবং সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের প্রতি তা কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

        এই তিন দফা প্রস্তাব হচ্ছেঃ প্রথমতঃ উভয় দেশের সেনাবাহিনী পাক-ভারত আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে সরে যাবে। দ্বিতীয়তঃ সৈন্য প্রত্যাহারের তদারকের জন্য জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে এবং তৃতীয়তঃ সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য উথান্ট উপমহাদেশ সফর করবেন। উপমহাদেশে বিস্ফোরণোম্মুখ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য উথান্ট মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন তার জবাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান উক্ত প্রস্তাব দিয়েছেন।

        উথান্ট ২০শে অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষিপ্রতার সাথে ২১শে অক্টোবর জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় জবাব গতরাত পর্যন্ত জাতিসংঘে পৌছায়নি। উথান্টের পত্রের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা না হলেও বোঝা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিস্ফোরণোম্মুখ পরিস্থিতি এবং অর্থহীন ও ভয়াবহ যুদ্ধের গুরুতর পরিণতির তিনি একটা বাস্তব বিশ্লেষণ করেছেন।

 

                                 

ব্যক্তিগত মধ্যস্থতার সম্ভাবনা

        উথান্টের মধ্যস্থতা প্রস্তাব সুনির্দিষ্ট ভাষায় গৃহীত না হলেও তার অর্থ নিম্নলিখিত দুটোর একটি হতে পারেঃ

 তিনি ব্যক্তিগত মধ্যস্থতা করতে পারে কিংবা, বিকল্প পথ হিসাবে জাতিসংঘ সনদের ৯১ ধারা অনুযায়ী তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে চিঠি দিতে পারেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে চিঠি দিলে তিনি হয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকবেন কিংবা অন্ততঃপক্ষে কঠোর মনোভাব গ্রহন করা হবে।

        উথান্টের জুলাই মাসেও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছেও চিঠি দিয়েছিলেন কিন্তু তা ৯১ ধারা অনুযায়ী দেয়া হয়নি। সেটি ছিল গোপন ও ঘরোয়া ধরনের চিঠি। উথান্ট তার পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি সীমারেখা বরাবর শান্তিরক্ষা তদারকের জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রয়েছে কিন্তু পাক-ভারত সীমান্তে জাতিসংঘের অনুরূপ কোন ব্যবস্থা নেই।

        এই পর্যবেক্ষণের অর্থ সম্পর্কে কোন আভাস পাওয়া না গেলেও প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত ধরে নিয়ে তার পূর্বের প্রস্তাবের পুনরুল্লেখ করেছেন যে, সৈন্যদের স্বাভাবিক শান্তিকালীন অবস্থানে সরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলেও উভয়পক্ষে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির জন্য তাদের অন্ততঃপক্ষে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।

 

জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক

        প্রেসিডেন্ট আরোও প্রস্তাব করেছেন যে, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকগণ সীমান্তের উভয় পারে সৈন্য অপসারণ তদারক ও শান্তি বজায় রাখবেন। একই সঙ্গে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান সীমান্তের ভেতর গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে।

        প্রেসিডেন্ট এর এ চিঠি ভারতকে বেকায়দায় ফেলেছে। জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের অধিবেশন চলতিকালে উথান্টের সফর এবং শান্তির জন্য জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মোতায়েন এই উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা ভারতের পক্ষে কঠিন হবে।

   

প্রেসিডেন্টের চিঠির বিবরণ

        আমি আপনার ১৯৭১ সালের ২০শে অক্টোবরের বাণী আমার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে পেয়েছি। পাক-ভারত সীমান্তে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে আপনার এই অভিমতের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। উভয় দেশের শান্তি রক্ষা এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানোর ব্যপারে আপনার মতো আমিও গভীর উদ্বেগ বোধ করছি।

        কারণ ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাতে কোটি কোটি লোকের শুধুমাত্র দুর্ভোগই নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণের ফলে শত শত নারী ও শিশু হতাহত এবং অসংখ্য লোক গৃহহারা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯৭১ সালের ১৯শে অক্টোবর নয়াদিল্লীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন।

 যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, সীমান্তে ভারত অপেক্ষা পাকিস্তানী সৈন্যরা আরো কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই প্রশ্নে আমি কোন বিতর্কে না নেমে প্রস্তাব করছি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয় অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর থেকে গোলন্দাজ ও সাঁজোয়া বাহিনীসহ উভয় দেশের সেনাবাহিনীকে শান্তিকালীন অবস্থানে সরিয়ে নেয়া না গেলেও অন্ততপক্ষে উভয় পক্ষের নিরাপত্তা বোধের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য পরস্পরের গ্রহণযোগ্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।

        একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের সীমান্তে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ ও গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। আমি আরো সুপারিশ করছি যে, সৈন্য প্রত্যাহার পর্যবেক্ষণ ও শান্তি তদারকের জন্য সীমান্তের উভয় পারে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হোক। সীমান্ত ঘাঁটিগুলোতে শুধুমাত্র স্বীকৃত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

 আমি আপনার মধ্যস্থতার প্রস্তাবকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং খুবই আশা করছি যে, সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য আপনি অবিলম্বে পাকিস্তান ও ভারত সফর করবেন। এতে ইপ্সিত ফল পাওয়া যাবে এবং শান্তির পথ প্রশস্ত হবে বলে আমি সুনিশ্চিত।

        পাকিস্তানী সীমান্তবর্তী শহর লাহোর ও শিয়ালকোট দখলের জন্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দের হুমকির ফলে পরিস্থিতির সংকট নিষ্পত্তির জন্য আপনি ভারত ও পাকিস্তান সফরের প্রকাশ্য ঘোষণা করলে তা খুবই অনুকূল হবে।

        উপসংহার আমার দেশের পক্ষ থেকে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।

Scroll to Top