নিউইয়র্কে সমাবেশসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতার ওপর প্রতিবেদন

 <৪,১৫১,২৮৩-২৮৯>

অনুবাদকঃ অভি সরকার, জয়ন্ত সেন আবীর

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৫১। নিউইয়র্কে সমাবেশসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতার ওপর প্রতিবেদন বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার মুখপাত্র (নিউইয়র্ক) ‘বাংলাদেশ’ ভলিউম – ১ ১৬ জুন, ১৯৭১

 

বাংলাদেশ

সাহায্য পাঠান এই ঠিকানায়:

বাংলাদেশ ত্রান তহবিল
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউইয়র্ক, এন.ওয়াই. ১০০২৫
এবং/অথবা আপনার স্থানীয় চ্যাপ্টারের ঠিকানায়

 

বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার অংগসংস্থা  
ভলিউম ১, সংখ্যা ৩ নিউ ইয়র্ক: জুন ১৬, ১৯৭১

 

নিউ ইয়র্কে সমাবেশ

নিউ ইয়র্ক : জুন ১২, ১৯৭১। বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, বাংলাদেশ মৈত্রী সংস্থা এবং ইন্ডিয়ান অর্গানাইজেশনের যুগ্ম কমিটির যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিউ ইয়র্কে ১৯৭১ এর ১২ জুন তারিখে একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বস্তরের প্রায় এক হাজার মানুষ এ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জনাব জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণ, ডঃ ইকবাল আহমাদ, জনাব উইলিয়াম রায়ান, ডঃ প্লাস্ট্রিক, মিসেস অ্যান টেলর, ডঃ আলমগীর, মিঃ এ পুলি। অশীতিপর মুক্তিযোদ্ধা জনাব পি সি মুখার্জী সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হতে চায় নি যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাদের এক রকম ভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে তাদের বাধ্য করে। জনাব নারায়ণ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী কেননা ঐ অঞ্চলের সকল বাঙ্গালির জীবন মৃত্যুর প্রশ্নের সাথে জড়িত এটি। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি, বিশেষ করে মুক্ত পৃথিবীর প্রতি আবেদন জানান যাতে [বাংলাদেশ] এলাকার জনগণের ইচ্ছানুযায়ী সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতেতাঁরা তাঁদের আনুষ্ঠানিক সকল পদাধিকার প্রয়োগ করেন। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বৃহৎ শক্তিগুলোর গুরুদায়িত্বের কথা তিনি উল্লেখ করেন; তিনি সতর্ক করেন, বৃহৎ শক্তিগুলোর নেতৃবৃন্দ যদি বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন, তাঁরা বাঙালিদের এ দূর্ভোগের জন্য দায়ী থাকবেন।

পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিদ্বজ্জন ডঃ ইকবাল আহমাদ ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের নির্মমতার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে “উগ্র ফ্যাসিস্ট সরকার” নামে আখ্যায়িত করেন।ডঃ আহমাদ বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসসদস্য মিস্টার উইলিয়াম রায়ান র‍্যালির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে সকল ধরণের সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকার। তিনি বাঙ্গালির স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বাস্তবায়নের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানান। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ প্লাস্ট্রিকও পূর্ব বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পাঠানো স্থগিত করার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করেন, বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপ্রদান চলতে থাকলে, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নিজস্ব মৌলিক অধিকার দমনকারী গোষ্ঠীভুক্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মিসেস অ্যান টেইলর, যিনি ইতোপূর্বে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনে অনশন ধর্মঘট করেছিলেন, তিনি পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র জনগনের বিরুদ্ধে সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মমতার প্রত্যক্ষ বিবরণ দেন, সর্বশেষে, আমেরিকার শুদ্ধচিন্তার জনগণের উদ্দেশ্যে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তা করারআবেদন জানানতিনি। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ সৈন্যটি বাংলাদেশের মাটি থেকে সরে যাওয়া না পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে দেয়া সব রকম সাহায্য-সহায়তা বন্ধ রাখতেবাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার ডঃ আলমগীর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে তাদের সরকারের ওপর সর্বাত্মকভাবে প্রভাব খাটানোর জন্যআকুল আবেদন জানান।

সম্পাদনা পর্ষদ

চেয়ারম্যান: কে এম আলমগীর, সদস্য: গুলশান আরা বানু, আশরাফুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, রফিকুল হুদা চৌধুরী

সম্পাদকীয়

মার্চের ২৬ তারিখ মধ্যরাতে জন্ম নেয়া আমাদের দেশটি অসহ্য বেদনা আর দুঃখের সময় পার করছে। অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণার মৃত্যু হয়েছে, বাস্তবিক সকল প্রয়োজনেই। অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে; এ ভূখণ্ডের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মাত্রই শুরু হয়েছে। ইয়াহিয়ার পশ্চিম পাকিস্তানি ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের শুরু এভাবেই।

ইয়াহিয়ার এজেন্ট টিক্কা খান মীরজাফর তৈরি করতে চাইবে; বাংলাদেশ থেকে কিছু বিশ্বাসঘাতক বেছে নেবে। তাদের কেউ কেউ হয়তো বন্দুকের নলের সামনে, চাপে পড়ে বক্তব্য দেবে। সত্যি জানার কোন সুযোগ আমাদের নেই, কেননা খবর পাবার কোন উপায় নেই, আমাদের সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। বিদেশী প্রতিনিধিরাও হয়তো এখন [বাংলার ভূখণ্ডে] ঢুকতে এবং সামরিক তত্ত্বাবধানে কিছু কিছু জায়গায় যেতে পারছেন।

ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি প্রাক্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সরাসরি ম্যান্ডেট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটিকে অবৈধ ঘোষণা করে, পার্টির নেতাদেরকে “বিশ্বাসঘাতক” আখ্যা দিয়ে, ফ্যাসিস্ট সামরিক সরকার শহর-গ্রামে বোমা হামলা করল, ছাত্রাবাস-বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলো, ট্যাঙ্কের তলায় চাপা দিল হাজার হাজার জনতাকে। এরই মধ্যে তারা মিলিয়নেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে; ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বাড়িঘর ফেলে পার্শ্ববর্তী ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের মতে, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সকলেই দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারী। সভ্য সমাজ স্তব্ধ হয়ে গেছে, শুধু তাই নয়, এ রকম তুলনাহীন বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানানোরও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় অনেক কিছুই। আমাদের এখনই এটা উপলব্ধি করতে হবে যে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে আমরা আর থাকতে পারবো না। জয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। জনমত গঠনের লক্ষ্যে সেমিনার আয়োজন করে, শিক্ষাদানের মাধ্যমে, ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করে, বিক্ষোভ সমাবেশ-র‍্যালির মাধ্যমে আমেরিকার জনগণকে আমাদের জানাতে হবে যাতে আমেরিকার সরকার পশ্চিম পাকিস্তানি ইয়াহিয়া সরকারকে সকল সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে। আমেরিকার জনগণকে আমাদের অনুরোধ করতে হবে তাঁদের প্রতিনিধি এবং নেতৃবৃন্দকে টেলিগ্রাম, চিঠি এবং মেমোরেন্ডাম পাঠানোর জন্য, যাতে করে নেতা-প্রতিনিধিরা উচিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন– বাংলাদেশ এবং এর জনগণের পক্ষ নেন। আমাদেরকে পাকিস্তান দূতাবাস ও ইসলামাবাদ থেকে প্রচারিত মিথ্যে প্রচারণার দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেগুলোকে সত্যি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী এখন আরও সুসংগঠিত। প্রতিদিন স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বাড়ছে হাজারে হাজারে, আরও বেশি করে, অধিক সমরাস্ত্র-যন্ত্রসজ্জিত প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ জেনারেল ওসমানী পূর্বাভাস দিয়েছেন, ১৪ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই দেশ দখলদার বাহিনীমুক্ত হবে।

নিশ্চয়ই বিজয় হবে আমাদের।

আমাদের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেওয়ান মাহবুব আলী নামেই যিনি বাঙালিদের পরিচিত, তিনি এ মাসে বুদাপেস্টে একটি রাজনৈতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা অবস্থায় হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে…)। আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। জাতি হারালো একজন সাহসী যোদ্ধাকে, একজন শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক নেতাকে, যাঁর শুন্যতা আরও অনেকদিন সহজে পুরণ হবে না।

মাওলানা ভাসানী এবং মুজাফফর আহমেদের সংহতি প্রকাশ

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর নেতা মাওলানা ভাসানী এবং অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে যাবতীয় বস্তুগত এবং নৈতিক সমর্থন দেয়ার জন্যউভয় নেতাই বিশ্বের গণতান্ত্রিক জাতিগুলোর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যে [বাংলাদেশের] যন্ত্রণার কাহিনী

ঢাকা থেকে বরিশাল এবং খুলনা হয়ে যশোরে সম্প্রতি ভ্রমণ করে আসা জনৈক আমেরিকান বরিশালে সেনাবাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা দেন নিম্নোক্ত রেকর্ডকৃত ভাষ্যে: “যেখানেই গিয়েছি, সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিহ্ন সেখানেই ছিল স্পষ্ট। বরিশালে প্রতি দিন প্রায় ১৫-২০ জন লোক নিহত হচ্ছে হিন্দু হওয়ার অপরাধে এবং আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে। ঠিক দুপুর ১টার দিকে ছাত্র-তরুণ যে কেউই মৃত্যুর ডাক শুনতে পেতে পারে।ক্ষমা প্রদর্শনের নাম করে লোকদেরকে ধরে এনে হত্যা করা হয়… গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এখনও চলছে… সেনাবাহিনীর এহেন বর্বরতার পরও মুক্তিবাহিনী তাদের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে সফলতার সাথে… সব কিছ স্বাভাবিক রয়েছে মর্মে সরকারের দাবি নেহাতই প্রহসন…”

শরণার্থীরা ফিরছে না

এ পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে বর্তমানে প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সফররত বিশ্ব ব্যাঙ্কের সরেজমিন দলের আগমন উপলক্ষে পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেছে এবং তাদেরকে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে, পাকিস্তান শরণার্থী ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ইন্টারএজেন্সি কমিটির চেয়ারম্যান জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত ‘কোন শরণার্থী ফিরে এসেছে এমন কোন সংবাদ আসে নি’। ইয়াহিয়া খানের চাল জনগণকে টলাতে পারে নি।

বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা (নিউ ইয়র্ক)

-এক নজরে কার্যক্রমসমূহ

ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা, যা বর্তমানে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা নামে পরিচিত, সেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা হিসেবে গঠিত হয়। এর পর ১৯৭০ সালের ১২ ডিসেম্বর এর নাম পালটে ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা রাখা হয়। গঠিত হবার পর থেকে দেশে-বিদেশে বাঙালিদের কল্যাণে লীগ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করে। বাঙালিদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনায় লীগের কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল:

সাইক্লোন: পূর্ব বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লীগ “সুতরাং” চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী আয়োজন করে। পূর্ব বাংলায় বন্যাদূর্গতদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ঔদাসীন্যের প্রতিবাদে লীগ নিউ ইয়র্কে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। পূর্ব বাংলার ঘূর্ণিঝড়দূর্গতদের জন্য খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ করাচীতে পাঠানোর প্রতিবাদে লীগ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসালকে চিঠি, টেলিগ্রাম প্রেরণ করে। এ ছাড়াও, পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আচরণের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে স্মারকলিপি পেশ করে এবং পূর্ব বাংলার জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার রক্ষার জোরালো সুপারিশ করে।

সাধারণ নির্বাচন: প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে ৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পাঠানো টেলিগ্রামে লীগ প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিয়ে তাঁদের এ জয়ে অভিনন্দন জানায় এবং আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। পূর্ব বাংলারস্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে লীগ ইয়াহিয়া খানকেও টেলিগ্রাম প্রেরণ করে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণা: পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে সেনাবাহিনী দমন করা শুরু করলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির ডাকে সাড়া দিতে লীগ সম্ভাব্য সব কিছুই করেছে। লীগ সাথে সাথেই স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধ করতে সর্বাত্মক কর্মসূচী গ্রহণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টদের এবং যুক্তরাজ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে চিঠি ও টেলিগ্রাম প্রেরণ করা হয়, তাঁদেরকে বর্তমান সংকটের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে এবং পূর্ব বাংলায় গণহত্যা বন্ধ করতে তাঁদের হস্তক্ষেপ করতে জোরালোভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

অনতিবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রকার সাহায্য বন্ধ করার এবং গণহত্যা বন্ধ করতে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং কংগ্রেসের সদস্যদেরকে চিঠি এবং স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। লীগের প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাতিসংঘের প্রায় সকল সদস্যরাষ্ট্রের দূতদের সাথে দেখা করেন এবং পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদলের বর্বরতার প্রতিবাদ জানানোর অনুরোধ করেন, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাস্তবায়নে সমর্থনলাভের চেষ্টা করেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব জনাব উ থান্টকেও টেলিগ্রাম পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয় এ সংকটে হস্তক্ষেপ করার। জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ৯৯ অনুসারে তাঁকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠানোর এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ত্রাণকার্যের ব্যয়ভার বহনের অনুরোধ জানানো হয়। জনাব থান্টের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনের বেশ কয়েকটি চেষ্টা করা হয়, যদিও সবগুলোই ব্যর্থ হয়।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড: ৩০ মার্চের একটি বৈঠকে জনাব নুরুল আমিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়। পূর্বেই গঠিত কার্যকমিটিকে ৪ এপ্রিলের বৈঠকে বর্ধিত করা হয়। লীগের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৫ এপ্রিল, জনাব শাহাদাত হোসেনকে চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত করে একটি নির্বাচন নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হয়।

চ্যাপ্টার নিউজ

  • বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসি চ্যাপ্টার বাংলাদেশের স্বার্থ আরও এগিয়ে নিতে পুরোদমে কাজ করে চলছে। চ্যাপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শক্তিশালী তদবির ক্যাম্পেইন চালু করেছে, যাতে বাংলাদেশের ইস্যুটি প্রমাণ করার জন্য রুটিন অনুযায়ী লীগ সদস্যদের একটি গ্রুপ পর্যায়ক্রমে সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদেরকে প্রাসঙ্গিক রচনাসমগ্র প্রদান করবে। এরুপ প্রচেষ্টায় খুবই ফলপ্রসূ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। লীগ, স্থানীয় বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ এসোসিয়েশন চ্যাপ্টার এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় ভারত থেকে আগত সর্বোদয় নেতা জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণের জন্য সেমিনার আয়োজন করে। আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লীগ তহবিল সংগ্রহের অভিযান জোরেসোরে শুরু করেছে। লীগের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে লীগের তহবিলে লীগের প্রত্যেক সদস্য মাসিক বেতনের অন্ততঃ ৫% প্রদান করবেন। এ অঙ্গীকারের পক্ষে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
  • আইওয়ার মেসন সিটির ডঃ বদরুদ্দোজা স্থানীয় চ্যানেলে একটি টিভি প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন, যেখানে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা ঘোষণাপূর্ব ঘটনাসমূহ ব্যাখ্যা করেছেন। তাছাড়াও তিনি তাঁর স্থানীয় আমেরিকান বন্ধুদের মাধ্যমে আমেরিকান সিনেটর এবং কংগ্রেসসদস্যদেরকে ৪০টিরও বেশি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন।
  • ১৯৭১ এর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল হাউজে বাংলাদেশের ওপর একটি প্যানেলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জনাব বিমান বসু এবং তাঁর স্ত্রী, ডঃ রশিদুজ্জামান এবং অন্যান্যরা এ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে বাংলাদেশের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ইন্টারন্যাশনাল হাউজের সদস্যদের পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
  • ন্যাশভিল, টেনেসির ডঃ জিল্লুর রহমান আলহার(আজহার?), ডঃ হাবিবুর রহমান, ডঃ ইউনূস, ডঃ ইসমাইল এবং আরও কয়েকজন তাঁদের স্থানীয় চ্যানেলে টিভি প্রোগ্রাম আয়োজন করেন এবং তাতে বাংলাদেশে সেনাসংঘটিত ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ দেন।

বাংলাদেশ লীফ অফ আমেরিকার শাখা সমূহ:

–     
১) নিউ ইয়র্ক
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা, ইনক.
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫
সভাপতিঃ কে. এস. আহমেদ
সচিবঃ ফাইজুর রাহমান
কোষাধ্যক্ষঃ আব্দুল হক

২) ক্যালিফোর্নিয়া
আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ
৪১৬ সিনক্লেয়ার অ্যাভিনিউ
গ্যানডেল, ক্যালিফ. ৯১২০৬
সভাপতিঃ এস. এম. এস. দোহা

৩) কলোরাডো
বাংলাদেশ অফ আমেরিকা
৩৭২৮ পূর্ব ৭ম অ্যাভিনিউ
ডেনভার, কলো. ৮০২০৬
সভাপতিঃ জেরাল্ড আর. হেনড্রিকস
সচিবঃ এম. শের আলী

৪) ম্যাসাচুসেটস
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
২৪ পিবডি টেরেস, অ্যাপার্টমেন্ট ৫১০
বোস্টন, ম্যাস.
সভাপতিঃ খুরশেদ আলম
সচিবঃ এম. আলমগীর

৫) ইলিনয়
বাংলাদেশ অফ আমেরিকা(আরবানা শাখা)
১১০৭ ওয়েস্ট গ্রীন স্ট্রিট, আরবানা, ইলিনয় ৬১৮০১
সভাপতিঃ এম. রাহমান
সচিবঃ এ. এস. সাহাব-উদ-দীন
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা (শিকাগো শাখা)
৫২৪৫ দক্ষিণ কেনউড অ্যাভিনিউ
শিকাগো ১১১.৬০৬১৫
সভাপতিঃ এফ. আর. খান

৬) অহাইও
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
৫১১৫ প্রেসকাট অ্যাভিনিউ #ডি
ডায়টন, অহাইও ৪৫৪০৬
সভাপতিঃ এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম
সচিবঃ এ. এইচ. জাফরুল্লাহ

৭) নর্থ ক্যারোলিনা
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
২১৮ ব্রড স্ট্রিট (পূর্ব)
এলিজাবেথ সিটি, এন. সি. ২৭৭০৯
সভাপতিঃ এ. এল. চৌধুরী

৮) মিশিগান
পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা
ইনক. ৩১৩০ কাস অ্যাভিনিউ
ডেট্রয়েট, মিশ. ৪৮২০১
সভাপতিঃ আব্দুস শহীদ
সচিবঃ মুস্তাফিজুর রাহমান

৯) পেনসিলভানিয়া
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
৫৯০৩ ফিফথ অ্যাভিনিউ
পিটসবুর্গ, পেন.
সভাপতিঃ কিউ. এম. আহমেদ

১০) টেক্সাস
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
পিও বক্স ৩৩২৫
কলেজ স্টেশন, টেক্সাস ৭৭৮৪০
সভাপতিঃ হাফিজুর রাহমান
সম্প্রতি বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ-এ পরিবর্তিত হয়েছে।

১১) ওয়াশিংটন ডি.সি.
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
পিও বক্স ৪৪৬৫
ব্রুকল্যান্ড স্টেশন, ওয়াশিংটন ডি.সি. ২০০১৭
সভাপতিঃ এনায়েতুর রহিম
সচিবঃ মহসিন আর. সিদ্দিক

১২) টেনেসি
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা, ইনক.
৮০৮ হিলউড বুলভার্ড
ন্যাশভিল, টেনেসি ৩৭২০৯
সভাপতিঃ জিল্লুর রাহমান আতহার
সচিবঃ প্রযোজ্য নয়

১৩) কেন্টাকি
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
২০৮ জে উইলিয়ামসবার্গ রোড
লেক্সিংটন, কেন্টাকি ৪০৫০৪
সভাপতিঃ জর্জ এইচ. ব্র্যাডবয়েস জুনিয়র
সচিবঃ মুখতার এম. আলী
কোষাধ্যক্ষঃ শামসুল এইচ. মোল্লা

Scroll to Top