৭.১১৬.২৫৫ ২৬১
শিরোনামঃ ১১৬। নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান প্রতিনিধি আগাশাহীর বিবৃতি
সূত্রঃ জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
জনাব আগা শাহীর বিবৃতি, পাকিস্তানের প্রতিনিধি
৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
আমার বর্তমান বক্তব্যে, আমি শুধু কিছু নির্দিস্ট বিষয়াবলি স্পষ্ট করার ব্যপারেই সচেতন থাকবো যেগুলোকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের প্রতিনিধিদের বক্তব্যসমূহে দুঃখজনকভাবে বিভ্রান্তিপূর্ণ এবং বিকৃত করা হয়েছে।
গতকাল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত মালিক, নথী S/10412 থেকে পাঠ করেছিলেন, যেটিতে কাশ্মীরের অস্ত্র-সংবরণ রেখার পরিস্থিতির ওপর মহাসচিবের একটি প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এটি উল্লেখ করতে হয় যে, প্রতিবেদনটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সাথে সম্পর্কিত, যেটি একটি বিতর্কিত এলাকা। এটিও উল্লেখ করতে হয় যে, এই প্রতিবেদনটি নিরাপত্তা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় গৃহিত ১৩ আগস্ট ১৯৪৮, এবং ৫ জানয়ারী ১৯৪৯ এর ভারত ও পাকিস্তানের জন্য জাতিসংঘের রেজুলেশনের বিধমালা ছাড়া রজু করা যেত না।
সোভিয়েতের প্রতিনিধি স্মরণ করতে পারবেন যে, ভারত-পাকিস্তান প্রশ্নটি বিগত ২৩ বছর যাবত নিরাপত্তা পরিষদের আলোচ্য বিষয়সুচীতে রয়ে গেছে এবং ১০০টিরও অধিক সভায় পরিষদের মনোযগকে আকর্ষণ করেছে। তিনি এটিও স্মরণ করে থাকবেন যে, এটি তারই প্রতিনিধিদল ছিলো যে নিরাপত্তা পরিষদে তিনটি প্রস্তাবনায় ভেটো দিয়েছিলো যেগুলো জম্মু ও কাশ্মির বিতর্কের একটি নিষ্পত্তিকে সহজতর করতো। জম্মু ও কাশ্মীর অস্ত্র সংবরণ রেখায় কথিত উল্লঙ্ঘনবিষয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযোগ করেছেন, তাকে প্রতিহত করে সেই একই নথীর (S/10412) দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ থেকে আমায় উদ্ধৃত করতে দিনঃ
‘… (c) ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছিলো যে, ২০ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে তারা জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের বাহিনীকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় জোরদার করেছিলো, এতদনুসারে করাচী চুক্তির অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরে অনুমোদিত সেনা স্তরকে ছাড়িয়ে রয়েছে এবং তারা এটি চালিয়ে যাবে যেহেতু ভারতীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি প্রয়োজনীয় বিবেচিত হয়েছে।
“(d) প্রধান সামরিক পর্যবেক্ষক দেখলেন যে পাকিস্তানও সেই অস্ত্র সংবরণ রেখায় নিজেদের দিকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিলো… কিন্তু ‘অনুমোদিত স্তরকে অতিক্রম করা ছাড়াই।”
এট উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যে তারিখে ভারত করাচী চুক্তির উল্লঙ্ঘন করে, ২০ অক্টোবর, আর যখন পকিস্তান ইতিরিক্ত বাহিনী ,ওতায়েন করে, কিন্তু অনুমোদিত সীমার মধ্যে, সেই ২৯ নভেম্বর চল্লিশ দিন ব্যবধানে। করাচী চুক্তির উল্লঙ্ঘনের চল্লিশ দিন বাদেই কেবল পাকিস্তান ভারসাম্য পুনঃস্থাপনের দিকে গিয়েছিলো, এবং তার পরেও চুক্তির অধীনে অনুমোদিত সীমার ভেতরে থাকার ব্যাপারে সে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধির দ্বারা ব্যক্ত সেই বিশেষ তথাকথিত উল্লঙ্ঘন প্রসংগে, কথিত অস্ত্র সংবরণ রেখার অতিক্রম সম্পর্কে আমাকে পরিষদকে অবহিত করতে দেয়া যাক যে, এই ধরণের উল্লঙ্ঘন ভারতের দ্বারা প্রায় প্রতিদিনই সম্পন্ন হচ্ছে, UNMOGIP এই ধরণের প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে, এবং মহাসচিবের কার্যালয়ের মাধ্যমে সেগুলো সহজলভ্য করা যেতে পারে। সুতরাং, সীমা অতিক্রমের একটি ছোট কথিত ঘটনাকে পৃথক করা, যাকে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের ভার আক্রমণের অভিপ্রায়, আমি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, কোন মাত্রাবোধের পরিচায়ক নয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তার অনেকগুলো মধ্যবর্ত্তিতায় অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছেন, এবং তিনি পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্কগুলোরও কতিপয় দিক নিয়ে বলেছেন। শরণার্থীদের সমস্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে, পাকিস্তান সীমান্তে সেনা বর্ধিতকরণে ভারতকে সমর্থন করা হয়েছিলো কারণ, রাষ্ট্রদূত মালিকের উদ্ধৃতিতে, একটি আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র যে কিনা তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক, সে এমন একটি অঞ্চলে কী তার সেনা দ্বারা স্থানাপন্ন করবে না যেখানে ১০ মিলিয়ন শরণার্থীর স্রোত এগিয়ে এসেছিলো? যদি এটি ন্যায়সঙ্গত হয়ে থাকে তাহলে আমদের জিজ্ঞেস করতে হয় যে পূর্ব পাকিস্তানে নাশকতা ও ধ্বংসলীলা পূরণকল্পে সশস্ত্র গেরিলাদের জন্য ঘাঁটি তৈরী করা, তাদের সজ্জিত করা, প্রশিক্ষিত করা আর লেলিয়ে দেয়াও কিভারতের জন্য ন্যায়সংগত ছিলো? ভারতে ১০ মিলিয়ন শরনার্থী আছেএই কারণেএটিও কি ন্যায়সঙ্গত? এবং এটিও কি ন্যায়সঙ্গত যে অবশেষে ২১ নভেম্বর ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বিরাট আকারে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে পাকিস্তান আক্রমণ করেছিলো- যেটি ভারতীয় প্রতিনিধির দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে?
আমরা দুঃখ প্রকাশ করি যে সোভিয়েত প্রতিনিধি পরিস্থিতিটির সেই অন্যান্য দিকগুলোকে গ্রাহ্য করে নি। কিন্তু একটি বিষয়ে আমি তার বিবৃতিকে স্বাগত জানাই। এ বছরের এপ্রিল থেকে আমরা ভারতের কাছ থেকে বারংবার গণহত্যার অভিযোগ পেয়েছি যে, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে শয়ে শয়ে এবং হাজারে হাজারে নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করেছিলো, তারা অকথিত সব ধরণের পাশবিকতা চালিয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধির বিবৃতিতে এবং তার সরকারের বিবৃতিতে সতর্কতা এবং দায়িত্বজ্ঞান লক্ষ্য করে আমরা আনন্দিত, যখনই তারা পরিস্থিতিটি নিয়ে কথা বলেছেন তারা এ বিশৃঙ্খলায় হাজার হাজার হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন- যদিও তারা ১০ মিলিয়ন শরনার্থীর কথা বলেছেন।
পরিষদকে আমার জানাতে হয় যে, আমার কোন ইচ্ছা নেই ভারতের প্রতিনিধির সাথে এই করুণ পরিস্থিতির ব্যাপারে কোন বচসায় যেতে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক, যেমন লন্ডন গার্ডিয়ানের সংবাদদাতাগন, এমনকি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের কিছু সংবাদদাতা ২৫শে মার্চের আগে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রবিরোধী এবং বিচ্ছন্নতাবাদী উপাদানদের দ্বারা চালানো এই গণোহত্যার ব্যাপারে প্রতিবেদন করেছিলো। এবং যদি ভারতের প্রতিনিধি চিত্রের অন্য পাশটিকে উপেক্ষা করার কথা ভেবে থাকেন, আমরা শুধুই বলতে পারি যে এই নিরাপত্তা পরিষদে তার উপস্থাপনকে ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়স্ংগত বিবেচনা করা যায় না। এই ব্যাপারে আমি তার মনযোগ এই প্রতিবেদনগুলোর ওপর আকর্ষণ করাতে পছন্দ করবো যেগুলো বিশ্ব সংবাদে উঠে এসেছে, যা জন মতামতের সবচেয়ে দায়িত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত মাধ্যম।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি ভীষণ একটি রৈখিক চিত্র এঁকেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যে ১০ মিলিয়ন রিফিউজি জাতিসংঘের ৮৮ সদস্য রাজ্যের জনসংখ্যার চে বড় একটি জনসংখ্যা গঠন করে। সন্দেহাতীতভাবে, এটি একটি বিরাট সংখ্যা। চলে যাওয়া শরনার্থীর আসল সংখ্যা নিয়ে কোন বিতর্কে না যেয়ে আমাকে বরং প্রদর্শন করতে দেয়া হোক যে পাকিস্তানি শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার প্রশ্নে থার্ড কমিটি বিতর্কে উগান্ডার প্রতিনিধি বলেছিলেন, তার দেশ প্রতিবেশী আফ্রিকান দেশগুলো থেকে ১৮৮,০০০ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলো। এবং একই সময়ে উগান্ডার প্রতিনিধি এটিও উল্লেখ করেন যে তার সরকার কঠিন পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করেছিলো এটি দেখতে যেন সেসব শরনার্থীদের কেউ সসস্ত্র না থাকে এবং উগান্ডার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্বক কাজ সম্পন্ন করতে যেন কাউকে পাঠানো না হয়।
ভারতের জনসংখ্যার সাথে শতকরার অনুপাতে শরনার্থীরা, যেমনটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের বিতর্কের ৫১তম সেশনে গ্রীসের প্রতিনিধির দ্বারা দেখানো হয়েছিলো, ভারতের জনসংখ্যার ২ শতাংশ গঠন করে। কিন্তু আমরা স্বীকার করি যে এটি অনেক বড় একটি সংখ্যা, যাদেরকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার শর্তে ফিরিয়ে নিতে আমরা সবচেয়ে চিন্তিত যা জাতিসংঘ সত্য বলে জ্ঞান করতে পারে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রকৃতই সমস্যাটির একটি মানবিক সমাধানের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকে এবং একে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক অখন্ডতায় বিভাজন সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে এটিকে ব্যবহার করে না থাকে।
আমি অন্য কোথাও জনগোষ্টীর উৎখাত সম্পর্কে, ব্যাপক আকারে মানুষের স্থানান্তর সম্পর্কে, এমন কি একটি প্রজন্মের পর তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার প্রত্যাখ্যান সম্পর্কে বলতে পারতাম, তবে আমি মনে করি না যে এই ধরণের বিতন্ডায় গিয়ে কোন উদ্দেশ্য সফল হবে, কাজেই, এই বিষয়ে আমি আর কিছু না বলি।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক মিমাংসার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারেও অনেক কিছু শুনেছি। অবশ্যই আমরা জানি যে এটি শুধু পূর্ব পাকিস্তানেরই না, পশ্চিম পাকিস্থানেরও টিকে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক, কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে নাগরিকদের মানবিক অধিকার নিয়ে, জাতীয় মুক্তির আন্দোলন নিয়ে, এবং গনতন্ত্র নিয়ে। আমরা জানি, জাতিসংঘের অনেক সদস্য রাষ্ট্রই সমশ্রেনীভুক্ত নয়। আসলে, তাদের অনেকেই বহুত্ববাদী সমাজের অথবা বহুজাতিক রাষ্ট্রের হওয়ার দাবি রাখে, কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যখন পাকিস্তানকে বলা হয় যে এর উচিৎ নয় স্বায়ত্বশাষনকে দমন করা, এর উচিৎ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে শ্রদ্ধা জানানো- আমরা প্রশ্ন করি কতটা মাত্রায় (we ask to what extent the right to autonomy demands respect does?) আমাদেরকে যারা এটি বলে এমন অনেক রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাই জানেন যে তাদের নিজেদের দেশে কোন স্বায়ত্বশাষণ নেই; তারা একক রাষ্ট্র যদিও আপাতদৃষ্টিতে তারা গঠনে ফেডেরাল হয়ে আছে।
আমরা পাকিস্তানের ভেতর সমস্যাটির মিমাংসা করে ফেলতে সক্ষম হতাম যদি দাবিটি পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা পর্যন্ত না গড়াতো, একটি ফেডারশন থেকে একটি কনফেডারেশনে। আমরা আশা করবো যারা বস্তুনিষ্ঠ, এবং যারা সত্যিই বহুত্ববাদী সমাজের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন যেখানে নানান বৈচিত্রের মানুষ রয়েছে, যেখানে সমাজ দ্বি-বিভাজিত, যে তারা সহায়ক হবার এবং বোঝার চেষ্টা করবেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসনের দাবিদার রাষ্ট্রের প্রাদেশিক অখন্ডতা ও জাতীয় ঐক্য অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয়তার সমন্বয়সাধনের এই উভয়সংকটের একটি সমাধান খুঁজবেন যেটি সন্দেহাতীতভাবে অকৃত্রিম। কিন্তু, তার বদলে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি প্রোপাগান্ডার দ্বারা এবং তাদের দ্বারা যারা জোটের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে সেই পক্ষাবলম্বন করতে চাচ্ছে যে পাকিস্তানের উচিৎ চরমপত্র মেনে নেয়া যেগুলো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে, স্বায়ত্বশাসনের জন্য নয়, বিভাজনের জন্য।
আমরা পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা প্রণয়ন করছি, কিন্তু হতাশাজনকভাবে এটি কোন রাজনৈতিক মিমাংসা নয়, এটি হবে ভারতের পছন্দানুযায়ী যে চায়ই পাকিস্তানের বিভাজন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় নেতাদের বিবৃতিতে এই সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না, যেগুলো রাষ্ট্রদূত মালিক সম্পূর্ণই অবজ্ঞা করার কথা ভেবেছেন। তিনি মনে করেন যে, পাকিস্তান অপরাধী পক্ষ, এবং এর অপরাধের জন্য জোরপূর্বক বিভাজনের জন্য সমর্পন করানোর মাধ্যমে একে শাস্তি দেয়া উচিৎ। সে যাই হোক, আমি বলতে চাইবো যে, আমাদের টিকে থাকার একটা ইচ্ছা আছে, এবং আমরা যেকোন এলাকা থেকে আমাদের প্রাদেশিক অখন্ডতা ধ্বংস করতে আসা সকল চেষ্টাকে প্রতিহত করবো। যে কারণে ভারত এই সময়ে আমাদের বিপক্ষে আগ্রাসন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তার একটি কারণ হলো পাকিস্তানে একজন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার অভিষিক্ত করানোর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রস্তুতকৃত নির্ঘন্টকে ব্যাহত করা যেটি এ মাসের ২০ থেকে ২৭ তারিখের মাঝে ধার্য করা হয়েছিলো। ইতিহাস বৃহৎ এবং ক্ষমতাবান রাষ্ট্রসমূহের অভিপ্রায় থেকে উদ্গত বিপদজনক সব ফাঁদে পূর্ণ, যেগুলো তুলনামূলক ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশীদের ওপর রাজনৈতিক বন্দোবাস্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, মিউনিখ একটি প্রথম শ্রেণির উদাহরণ। আমরা জানি যে ভারত পাকিস্তানের আস্তিত্বকে এর নিরাপত্তার নিকট একটি হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করে, কিন্তু এখন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য নতুন নিরাপত্তা তত্ত লিপিবদ্ধ করেছে, এটি কী ভবিষ্যতবাণী করতে পারে তা সম্ভবত আমাদের সকলেরই উচিৎ গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি তাসখন্ডের মূলভাবের কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেই মূলভাব (স্পিরিট) ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার অনেক আগেই প্রভাবশালী ছিলো, যেটি সম্পর্কে কোমলভাবে বলা হয় বধুত্বের ও সহযোগিতার একটি চুক্তি। বিশয়বস্তু এবং প্রভাবে, এটি একটি সামরিক জোট ছাড়া কিছুই নয়। ঘটনাবলি অবশেষে একে এমনটাই প্রমাণ করেছে। কথায় নয়, কাজে পরিচয়, বন্দুকে আরও বেশি। এ কাজগুলো কী ছিলো? এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই মস্কো আর নয়াদিল্লীতে চুক্তির অনুচ্ছেদ ix এর অধীনে কয়েকটি উত্তেজনাপূর্ণ সামরিক আলোচনা অনুষ্টিত হয়েছিলো, যা আলোচনার পক্ষগুলোকে কূটনৈতিক ভাষায় গ্রহণ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়, তা যেকোন শান্তিচুক্তিকে অপসারণ করার একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের সামরিক চুক্তির যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে যাতে করে জানা যায় যে একই রকমের ক্লজ সেই দলিলগুলোতে থাকে, এবং বৈশ্বিক মতবাদ ও দলগুলো নিজেরা এই ধরণের ভাষাগুলোকে একটি সামরিক চুক্তি গঠন করার জন্য যথাযোগ্যভাবে বিশ্লেষণ করে। উন্নত যুদ্ধোপকরণের সরবরাহ, যথাঃ মিগ-২৩এস, ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সামরিক যন্ত্রপাতি খুবই দ্রুততার সাথে কলকাতা এবং অন্যান্য ভারতীয় বন্দরগুলোতে প্রেরিত হয়েছিলো। এইরূপে উপমহাদেশের ক্ষমতার ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করে, ইন্দী-ভারতীয় চুক্তি ভারতীয়দেরকে আত্মরক্ষার বাহানা দেখিয়ে একটি সামরিক বহিরাক্রমণের জন্য উৎসাহিত করেছে। অক্টোবরে প্রথম কমিটিতে, এবং গতমাসের প্লেনারি সভায় আমি বলেছিলাম যে, চুক্তিটিকে অবশ্যই এর পরিণতির দ্বারা বিচার করতে হবে, এটি কি যুদ্ধে বাধা হিসেবে কাজ করবে নাকি যুদ্ধকে থিতিয়ে দেবে। আমাদের এখন উত্তর আছে, এটি আমরা পাই ভারতের আগ্রাসনে এবং যুদ্ধবিরতি এবং প্রত্যাহারের প্রস্তাবনায় গত রাতে সোভিয়েতের ভেটোতে। ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তিতে একটি দ্বৈত ভনিতা রয়েছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের জন্য একটি তৃতীয় রাষ্ট্রের বিপক্ষে ধ্বংস ও আগ্রাসনের সূত্রপাতকে সম্ভব করে তোলে এবং তারপরেও তাসখন্ডের মূলভাবকে আবাহন করে। আর অন্য পক্ষ নিজেকে একটি সামরিক জোটে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ফেলে এবং তারপরেও পক্ষপাতহীন হবার দাবি করে। এইসব ভনিতাকে না দেখার মত সরল কে আছেন? যদি আরও প্রমাণাদি প্রয়োজনীয় হতো, সোভিয়েতের বিবৃতির দ্বারা সেটিও প্রদান করা হয়েছে, যেটি তাস সংবাদ সংস্থা থেকে এই সকালেই প্রচারিত হয়েছে। কার্যত বিবৃতিটি বলে যে, পাকিস্তান নিজেকে রক্ষার একটি বিপজ্জনক পথ অনুসরণ করছে, এবং একটি সামরিক দখলদারিত্ব প্রতিহত করছে, এবং আভাস দিয়েছিলো যে, পাকিস্তানের কাজকর্ম এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতিও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি নিবেদন করি, কীভাবে আমরা আর তাসখন্ড স্পিরিটের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করতে পারি? সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি কয়েকমাস আগে তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন যাকে তিনি বলেছিলেন ৩ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দ্বারা একটি আক্রমণ। উনি পূর্ব পাকিস্তানেঢ় ওপর সব দিক থেকে সেই বড় আকারের আক্রমণগুলো সম্পর্কে একেবারেই উল্লেখ করেন নি, যেটি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কথায় ২১ নভেম্বর শুরু হয়েছিলো, পাকিস্তানের জন্য ধ্বংস সৃষ্টি করা অথবা যুদ্ধে যাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্পই রাখে নি।
এটি বারবার জোর দিয়ে বলতে হয় যে, পরিষদ শুধুমাত্র একটি সাধারণ পরিস্থিতি বা বিতর্কে নিয়েই চিন্তিত নয়, বরং একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। শরনার্থীদের ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা কি থাকতে পারে যদি না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না আন্তর্জাতিক শান্তি নিশ্চিত হচ্ছে? কোন সন্দেহের ছায়ায় না রেখে আমাকে এটি খুবই পরিষ্কার করে বলতে দিন যে এই সংঘাতের কোন নিষ্পত্তির প্রস্তাবই কোন প্রভাব তৈরী করবে না যদি এটি ভারতীয় অনুপ্রবেশের এবং একই মাত্রায় ও একই বাহিনীর দ্বারা পরোক্ষ আগ্রাসনের অবসান নিশ্চিত না করে, যেহেতু এটি সংঘাতের নিবৃতিকে আহবান করে।
নিরাপত্তা পরিষদের এই ধরণের একটি সিদ্ধান্তের জন্য জিজ্ঞাস্বরুপ আমরা পরিষদের কোন সদস্যের কাছ থেকে কোন পক্ষীয় সমর্থন চাচ্ছি না, বা সহানুভুতি চাচ্ছি না। আর আমি আমার ভালো বন্ধু জনাব জানিল বারুদিকে বলতে চাইবো আমাকে যা বলতে হচ্ছে তার ভালো নোট নিতে। আমরা পরিষদের সদস্যদের কাছ থেকে কোন পক্ষীয় সমর্থন চাচ্ছি না, আমরা জাতিসংঘের আইনকে আবাহন করছি। আমরা নীতির বিধিসম্মত ঘোষণা জারি করছি- হস্তক্ষেপহীনতার ঘোষণা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার করার ঘোষণা, রাষ্ট্রসমূহের ভেতর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতিকে প্ররোচিত করার ঘোষণা- কিন্তু যখন সময় আসে সেই নীতিগুলোকে প্রয়োগ করার, আমরা সেগুলোকে সরিয়ে রাখতে চাই। এটাই কি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আদর্শগুলোকে প্রতিপালন করার জন্য আবশ্যক নয় যে কোন রাষ্ট্র অন্যের এলাকায় আত্মবিরোধ উসকে দেবে না, যে কোন রাষ্ট্র অন্যটিতে ধ্বংস ও নাশকতাকে মদদ ও সাহায্য প্রদান করবে না? যৌক্তিকভাবেই কি এমনটি অনুসরণ করা উচিৎ নয় যে, একে এই ধরণের কাজের জন্য নিন্দা পেতে হবে? ‘নিন্দা’ শব্দটি রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলিতে হস্তক্ষেপহীনতার বিবৃতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। যদি নিরাপত্তা পরিষদ নিন্দা জানাতে ইচ্ছা পোষণ না করে, তার কি উচিৎ নয় ভারতকে অন্ততপক্ষে পাকিস্তানের ব্যাপারে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ থেকে বিরত হতে বলা?
এটি হয়েছিলো কারণ যে খসড়া রেজুলেশনটিতে গত রাতে ভোট দেয়া হলো এই প্রসংগে সেটি ছিলো অসম্পূর্ণ- এবং আমাকে স্পষ্ট হতে হবে- যে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। এটি আগ্রাসনকে নিন্দা জানায় নি। আমি আবার বলি, পক্ষগুলোকে লড়াই বন্ধ করতে বলাই যথেষ্ট নয়। বরং দ্বন্দ্ব প্রকৃয়াটির দ্বিতীয় স্তর, যেটি শুরু হয়েছিলো ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানে ভারতের অনুপ্রবেশের সাথে।
যেমনটি আমি আগে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া রেজুলেশল ভারতকে তার আগ্রাসনের জন্য শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছিলো, যেহেতু ভারতের সাজাপ্রাপ্ত হওয়া উচিৎ ছিলো। এটি স্পষ্টভাবে ভারতকে পাকিস্তানের বিভেদ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টাসমূহ থেকে বিরত থাকতে আহবান জানায় নি, যেমনটি নিরাপত্তা পরিষদের দাবি করা উচিৎ। তা সত্ত্বেও, সেই খসড়া রেজুলেশনের ভিত্তিতে আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছিলাম, কারণ এটি পরিষদের ১১ জনের মত সদস্যের সমর্থন বহন করেছিলো। এটিই পাকিস্তানের আচরণ।
পরিষদের সদস্যরা এই আচরণকে পাকিস্তানের আচরণের সাথে তুলনা করুক। অস্ত্র সংবরণের কোন প্রশ্নই আসে না, ভারত বলে। ভারতের প্রতিনিধি গতকাল নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করেছিলো যে, ভারত পাকিস্তানবিরোধী আগ্রাসন চালিয়ে যাবে। পরিষদের এই সভা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারুক আর না পারুক, ভারতের এই বার্তাটি পরিষদের সদস্যদের কানে বাজতে থাকার কথা।
ভারতের প্রতিনিধির কিছু বক্তব্যের দিকে ফিরে আমি তার বিবৃতির দিকে মনযোগ আকর্ষণ করবোঃ
“… আমরা পাকিস্তান অঞ্চলের ভেতরে গিয়েছিলাম ২১ নভেম্বর। আমরা গিয়েছিলাম, আমি অস্বীকার করি না।”
এবং তবুও, যুক্তরাষ্ট্রীয় খসড়া রেজুলেশন আমার প্রতিনিধিদলের জমা দেয়া ভারতীয় আগ্রাসন সম্পর্কে তথ্যগুলো সম্পর্কে প্রমাণ এবং ভারতের স্বীকারোক্তি হিসাবে নেয় নি। আরো কোন প্রমাণ প্রয়োজনীয় ছিলো?
ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তান অঞ্চলের জন্য ব্যাখ্যা প্রদান করেছিলো যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘আমাদের বেসামরিক গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণ শুরু করেছিলো’। ‘আমাদের জন্য আর কী প্রতিকার ছিলো?’ সে প্রশ্ন করেছিলো। এবং সে বলেছিলো, প্রতিকারটি ছিলো পাকিস্তান আক্রমণ করা।
সভাপতি জনাব, আপনি স্মরণ করে থাকবেন যে, পাকিস্তান এই প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলো যে, ভারত ও পাকিস্তানের সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর উচিৎ সীমান্ত থেকে তাদের শান্তিকালীন ঘাঁটিতে পিছিয়ে আসা। প্রস্তাবটি ভারতের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো। ভারতের কি এই বিকল্পটি ছিলো না যাতে করে পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাবর্ষনের যে অভিযোগ তিনি করেছেন সেটি প্রতিরোধ এবং বন্ধ করা যেতো? ভারতের সন্ধির উপায় ছিলো, কিন্তু যুদ্ধ বেঁছে নিয়েছে।
পরিশেষে, আমি শুনেছি যে একজন প্রতিনিধি এই সভায় আগেই এটি বলেছেন যে বাংলাদেশের সমস্যাটি জাতিসংঘে আলোচিত হয়েছে। আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতে দিন যে, এই তথাকথিত সমস্যা জাতিসংঘে আলোচিত হয় নি, অথবা যদি এই ধরণের কোন আলোচনা সংঘটিত হয়ে থাকে, পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের এই সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না এবং কখনোই এতে অংশগ্রহণের জন্য রাজী হতে পারতো না।
আমাকে স্মরণ করতে দিন যে পাকিস্তান সংক্রান্ত মাত্র দুইটি সমস্যা এখন পর্যন্ত জাতিসংঘে আলোচিত হয়েছে। একটি হচ্ছে শরনার্থীদের মানবিক সমস্যা, এবং এটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদে এবং সাধারণ সমাবেশের তৃতীয় কমিটিতে আলোচিত হয়েছিলো। অপরটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি যেটি এই মুহুর্তে নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা আলোচিত হচ্ছে। এগুলোর কোনটিই বাংলাদেশের সংকট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
আর্জেন্টিনার প্রতিনিধির দ্বারা যে কারণগুলো এতোটা অলংকারপূর্ণভাবে পেশ করা হয়েছে সেগুলো ছাড়াও প্রস্তাবনাটি যেটি এ সভায় পূর্বে আলোচিত হয়েছে, আমাকে নিরাপত্তা পরিষদকে তথ্যগুলো আবার মনে করিয়ে দিতে দিন যে এই আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ প্রতাবনাটিতে পাকিস্তানের বিভাজনকে প্ররোচিত করার একটি অশুভ নকশা ওৎ পেতে আছে। গতকাল, আমি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের একটি কাগজ থেকে জাতিসংঘে পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে কীভাবে ভারতের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে এগোনো উচিৎ এ সম্পর্কে উদ্ধৃত করেছিলাম। আমার রচনাংশটি আবার উদ্ধৃত করতে চাইতে হয়ঃ
‘এতে কোন সন্দেহই নেই যে নিরাপত্তা পরিষদ উভয় জাতিকে যুদ্ধ শেষ করার আহবান জানাতে মিলিত হবে। যুদ্ধটি কি অবিলম্বেই সমাপ্ত হওয়া উচিৎ নাকি কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকা উচিৎ, এটি ভারতের বিবেচনা করার বিষয়।
এই পর্যায়ে, ইন্ডিয়ার প্রচেষ্টা থেকে থাকবে বাংলাদেশকে এ দ্বন্দ্বের একটি স্বীকৃত পক্ষ হিসেবে পাওয়া। আসলে, এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জয়ের উপযুক্ত পথ। এটা পরিষ্কার করা উচিত যে, বাংলাদেশ সেক্টরে যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করা যাবে না যদি না বাংলাদেশের কমান্ডার যুদ্ধুবিরতির উদ্দেশ্যে একজন স্বাধীন সেক্টর কমান্ডার হিসেবেস্বীকৃত হয়, এবং বাংলাদেশ সরকার এই বিতর্কটির একটি পক্ষ হিসেবে স্বীকৃত হয়।”
ভারতের প্রতিনিধি এই বক্তব্যকে তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদদের উদ্গীরন বলে খারিজ করে দিয়েছে, কিন্তু এই বিতর্কে আপনার একেবারে চোখের সামনে যে কার্যধারা উন্মোচিত হচ্ছে তা এই বিবৃতির প্রতিটা শব্দ ও বর্ণকে নিশ্চিত করে। এই ধারাটিই অনুসরণ করা হচ্ছে, একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শুনানির জন্য দিতে অনুরোধের ভারতের প্রতিনিধির জামিনদারিত্বে শুরু হচ্ছে- এবং আপনি যদি সেই ব্যক্তির শুনানির জন্য অনুরোধটিকে পরীক্ষা করেন, আপনি দেখবেন যে তিনি বাংলাদেশের জনগণের ও সরকারের নামে কথা বলার দাবি করছেন।
আমরা আমাদের সেই বিশিষ্ট সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করতে চাইবো যারা খসড়া রেজলুশন প্রণয়ন করছে, আপনারা কি খসড়া রেজলুশনটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের অভিসন্ধিকে উৎসাহ দিতে তৈরি করা পরিকল্পনাকে ছদ্মাবরণ দিতে সেই খসড়া রেজুলেশনগুলো প্রণয়ন করছেন?
আমি সকল খসড়া রেজলুশনের স্পন্সরদেরকে পরামর্শ দেবো যে আমার প্রতিনিধি এই সকল প্রস্তুতিসমূহকে সতর্কভাবে দেখবে যেন পরিশেষে জাতিসংঘের চার্টারের উল্লঙ্ঘন করতে এই সকল অস্পষ্টতাগুলোর যেন সুযোগ নেয়া না হয়।