পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধের জন্য বাঙালি শ্রমিক নেতাদের আহ্বান

<৪, ৪২, ৮০-৮১>

অনুবাদকঃ ইফতি

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৪২। পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধের জন্য বাঙালি শ্রমিক নেতাদের আহ্বান ‘ওয়ার্কার প্রেস’ লন্ডন ৯ জুলাই ১৯৭১

 

 

৯ জুলাই শুক্রবার, ১৯৭১

ওয়ার্কার্স প্রেস

বাংলাদেশ এক্সক্লুসিভ

 

পাকিস্তানে সরবরাহ বন্ধ হোক: ইউনিয়নিস্টদের কাছে আবেদন

রবার্ট ব্ল্যাক

 

বৃটিশ শ্রমিকেরা পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা রোধ করুক, গতকাল চল্লিশ লক্ষ লোকের নেতা- ‘বাংলাদেশ জাতীয়  শ্রমিকলীগ’ শক্তিশালী বক্তব্য  ওয়ার্কার প্রেসকে

 

লীগ সভাপতি শাহজাহান এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বৃহত্তর ব্যবসায়ী সমিতিগুলো বিশেষত বন্দর ও পরিবহন সমিতির কাছ থেকে সংহতির অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে লন্ডনে আছেন।

বাঙালি এবং বৃটিশ শ্রমিকদের মধ্যে তাদের মৌলিক অধিকারগুলোর সাধারণ আন্দোলনে একতার উপর গুরুত্বারোপ করে শাহ জাহান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগ এর মধ্যেই বৃটিশ বন্দর শ্রমিকদের ‘পাকিস্তানি বা পাকিস্তানে দ্রব্যাদি ও অস্ত্র পরিবহনে জড়িত যেকোন জাহাজে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে’ অনুরোধ জানিয়েছে।*

তিনি এই প্রস্তাবনাটি নিয়ে বৃটেনের সিংহভাগ বন্দর শ্রমিকদের একতাবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত পরিবহন ও সাধারণ শ্রমিক সমিতির কর্ণধার জ্যাক জোনস-এর সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ ব্যক্তকরেছেন। (টি অ্যান্ড জি ডাব্লিউ ইউ কনফারেন্স স্কারবার-তে আগামী সোমবার শুরু হচ্ছে।)

শাহজাহান বলেন যে সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সাথে বৈঠকের পর তিনি ধারণা পেয়েছেন যে যদি বৃটিশ শ্রমিকেরা বাংলাদেশ সমর্থনে নেতৃত্ব দেয়, তবে অন্যরাও শীঘ্রই তাদের অনুসরণ করবে।

 

প্রভাব

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি ইউরোপ, আমেরিকা এবং কানাডার শ্রমিকদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, শ্রমিক ও তাদের নেতাদের বিশ্ব রাজনীতিতে ‘ক্ষমতা বিবেচনায়’ বাংলাদেশ সমর্থন থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিৎ না।

তাদের একমাত্র বিবেচনা হওয়া উচিৎ বিশ্বব্যাপী শ্রমিকেরা যে লক্ষ্যে আন্দোলনে জড়িত – রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি।

এ বিষয়গুলো প্রাক্তন পাটকল শ্রমিক আবদুল মান্নান কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। তিনি আইয়ুব খানের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম জনআন্দোলন সংগঠনের অভিযোগে সাত বছর ধরে পাকিস্তানি জেলে কারাভোগ করেন।

২৫ মার্চ থেকে এযাবৎ তার মা-সহ পরিবারের সাত সদস্য পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হয়।

 

জবাব

তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা চাই টি ইউ সি এর অন্তর্ভুক্ত সকল বৃটিশ শ্রমিক তাদের নেতৃবৃন্দ আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন।‘

     ‘পাকিস্তান বর্জন করুন। ইয়াহিয়া খানের জন্য সকল প্রকার সরবরাহ বন্ধ করুন। যদি বৃটিশ শ্রমিকেরা নেতৃত্ব গ্রহণ করে, বিশেষ করে তাদের নেতৃবৃন্দ, তবে সারা পৃথিবীর শ্রমিকেরা তার অনুসারী হবে।‘

 

২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সময়ে জাহান এবং মান্না উভয়েই বাংলাদেশে ছিলেন।‘ব্যবসায়ী সমিতিগুলো এ আক্রমণের সরাসরি শিকার হয়েছে।‘ শাহজাহান একথা বলেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য শহরে আন্দোলনকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এমনকি বেতন সংগ্রহের আহ্বানে আসা শত শত শ্রমিকদের মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে।

     ‘কিন্তু তাদের চেতনা অক্ষুণ্ণ রয়েছে’। শাহজাহান ওয়ার্কার প্রেসকে এই বলে নিশ্চিত করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে শতকরা ৩০ শতাংশ বাঙালি শ্রমিক ইয়াহিয়া শাসনের অধীনে সেনাপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

এসকল শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং নবগঠিত বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছে।

উভয় নেতাই বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিকদের সাথে বৃটিশ ব্যবসায়ী সমিতির দৃঢ় সংহতির জন্য আয়োজিত প্রচারণা কার্যক্রমের জন্য ওয়ার্কার্স প্রেসকে ধন্যবাদ জানান।

পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য সকল দ্রব্য সামগ্রী ও অস্ত্রের উপর বাণিজ্যিক সমিতিগুলোর জন্য দাপ্তরিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাদের আবেগপূর্ণ এ আবেদন জ্যাক জোনস, হিউ স্ক্যানলন এবং টি ইউ সি সাধারণ সম্পাদক ভিক্টর ফেদারের বিবেচনাধীন।

সকল সমিতির শ্রমিকদের এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানানো দরকার।

Scroll to Top