পাকিস্তানকে সাহায্য দান ও শরণার্থী ত্রাণ সম্পর্কিত পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি ও এ সংক্রান্ত বিতর্ক

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানকে সাহায্য দান ও শরণার্থী ত্রাণসামগ্রী সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি ও  এ সংক্রান্ত বিতর্ক কমনস সভার কার্যবিবরণী ১৭ মে, ১৯৭১

 

জনাব শোর যুক্তরাজ্য থেকে পাঠানো কি ধরণের ত্রাণসামগ্রী পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে পৌছেছে;আর ত্রাণদানকারী সংস্থাগুলো বিতরণ কাজ পরিদর্শন করার সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সম্পর্ক বিষয়ক সচিবের নিকট জানতে চাইলেন।

পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সম্পর্ক বিষয়ক সচিব(স্যার এলেক ডগলাস হিউম) এর বক্তব্যঃ আমি আমার পূর্বতন বক্তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমি এই বিষয়ে গত ১১ই মে এবং ১৪ই মে হাউজে পৃথক বক্তব্য রেখেছিলাম।(ভলিউম ৮১৭. সি.২০৬-২১৩ ; ভলিউম ৮১৭. সি. ৭৬১-৭৬৭)

জনাব শোর এর বক্তব্যঃ সম্মানিত বক্তার খেয়াল আছে কি,পাকিস্তানে একটি পর্যবেক্ষণকারি দল প্রবেশের প্রস্তাব,পুনরায় পাকিস্তান সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য,তিনি ইউ থান্টকে কিছু কাগজ জমা দিয়েছিলেন।সে বিষয়ে পাকিস্তান সরকার ইউ থান্টকে কোন জবাব দিয়েছে কি?তিনি কি অবগত আছেন,গত ১৩ তারিখ চিঠি-আদান প্রদানে বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে,তাতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ আমি এই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি।জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংক পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ করছে।আমি আজকে,নতুন কোন তথ্য জানাতে পারছি না,তবে বলতে চাই যে,তাদের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ আছে এবং প্রত্যাশা করি তারা বিষয়টির গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পেরেছে।

জনাব হিলে এর বক্তব্যঃ প্রেস রিপোর্টে বলা হচ্ছে-জাতিসংঘ পূর্ব বাংলায় ত্রানসামগ্রী পাঠাতে চায়, এই মর্মে পাকিস্তানকে “ইউ থান্ট” যে অনুরোধ করেছিল,পাকিস্তান সরকার সে অনুরোধ প্রত্যাখান করেছে।এই বক্তব্যটির সত্যতা কতটুকু-সেটা কি মাননীয় সচিব আমাদের জানাতে পারবেন?প্রকাশিত রিপোর্টসমূহ সত্য হতে পারে–এই ধারণা করে কি তাঁর সরকার কি কোন বিবৃতি তৈরি করেছে?

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ এখানে দুইটি বিষয় আছে।প্রথম বিষয়টি হল,ভারতে অবস্থিত শরনার্থী ক্যাম্পগুলোর কথা চিন্তা করে বলা যায় যে,ত্রানসামগ্রী দুটি ভাগে ভাগ হওয়া উচিত,এমনকি এক্ষেত্রে ভারতের শরনার্থী ক্যাম্পগুলোকেই প্রাধাণ্য দেওয়া উচিত।পরের চিন্তা হল,যদি পুর্ব পাকিস্তানে তীব্র দুর্ভিক্ষ হয়ে থাকে তাহলে সেখানেও প্রচুর ত্রানসহায়তার দরকার পড়বে।বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সরকার বলছে-ত্রানসামগ্রী শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো উচিত এবং সেটা অবশ্যই সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করা উচিত।ত্রাণসামগ্রী জাতিসংঘ কর্তৃক বিতরণের ব্যাপারে,ইউ থান্ট এবং পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে।

জনাব হিলে এর বক্তব্যঃ পূর্ব বাংলার প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ এখন বন্যাজনিত কারণে প্রচন্ড দুর্দশার মধ্যে আছে,চট্টগ্রামে এখন যে খাদ্য মজুদ আছে,তা যদি দ্রুত সবার কাছে পৌঁছান না যায়,তাহলে সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যাবে।একথা গত শুক্রবার বৈদেশিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন।–এবিষয়ে আমরা সকলে অবগত আছি। এ বিষয়ে কি কোন অগ্রগতি হয়েছে?

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ ভারতীয় সরকারের অনুরোধে,এ বিষয় বিবেচনায় জাতিসংঘের একজন দূত এখন ভারতে অবস্থান করছেন। আমি আশা করি যে, অতি শীঘ্রই তাঁর কাছ থেকে এই বিষয়ে কোন সুপারিশ আমরা পাব।আর হ্যাঁ,যদি প্রয়োজন হয়,আমরা ত্রাণপরিবহন কাজের ব্যাপারে সাহায্য করব,কিন্তু সেটা হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার ছত্রছায়ায় এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভালো উপায়/মাধ্যম হতে পারে।

২৮। জনাব গ্রেভিল জেনার, বৈদেশিক এবং কমনওয়েলথ বিষয়ক সচিবের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিষয়ক তিনি(বৈদেশিক এবং কমনওয়েলথ সচিব) কি কোন পুনঃ কোন নোটিশ দিবেন কিনা তা জানতে চাইলেন।

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত যুক্তরাজ্যের কোন নাগরিকের হতাহত হওয়ার নিশ্চিত খবর পাওয়া যায় নি। একটা রিপোর্টে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রমকালে এক যুক্তরাজ্যের নাগরিকের আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু তদন্ত ব্যতিরেখে ঐ ঘটনার কোন সত্যতা নিশ্চিত করা যায় না।

জনাব জেনার এর বক্তব্যঃ সম্মানিত বক্তা কি অবগত আছেন,আমাদের দেশে অবস্থানরত অনেক মানুষের আত্মীয়-স্বজন পুর্ব পাকিস্তানে আছেন,তাঁদের আত্মীয়-স্বজন জীবিত কি মৃত সেই খবর তাঁরা পাচ্ছেন না ? তিনি কি এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন,যাতে এখানকার মানুষগুলো (ব্রিটিশ নাগরিক বা নাগরিক নয় সবাই)তাঁদের পরিবার ভালো আছে কি নেই, সেই খবর নিতে পারে?

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ লন্ডনে পাকিস্তান দুতাবাস থাকার অন্যতম কারণ তো এটাই। তাঁদের আত্মীয়দের পাকিস্তানের রাস্ট্রদূতের কাছে যাওয়া উচিত যে কোন ধরণের তথ্য ও পরামর্শের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

জনাব,জর্জ কানিংহাম এর বক্তব্যঃ মাননীয় সচিব কি স্বীকার করবেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্ব বাংলার কোন ব্যক্তির পক্ষে হাইকমিশনে গিয়ে তাঁর আত্মীয়ের খোঁজখবর নেওয়া নিতান্ত অসম্ভব? ব্রিটিশ নাগরিকরা ব্রিটিশ কূটনৈতিক দপ্তরসমূহ থেকে যেরকম সুবিধা পায়,এই দেশে অবস্থানকারী কিন্তু ব্রিটিশ নাগরিক নয় এমন ব্যাক্তিদেরও এই ব্যাপারে অনুরূপ সাহায্য দেওয়া হবে,এইরকম কোন নিশ্চয়তা কি তিনি(সচিব) আমাদের দিতে পারেন?

স্যার এলেক ডগলাস হিউম এর জবাবঃ হাইকমিশনের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য থাকলে,পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হাইকমিশনে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য গিয়ে কোনরকমের অসুবিধায় পড়ার কথা না।আমি ভেবেছিলাম যে,পার্লামেন্টের সম্মানিত সদস্যরা হয়ত ভালোভাবেই জানেন-আমাদের কাছে যে পরিমাণ তথ্য আছে,তার চেয়ে বেশি তথ্য হাইকমিশনের কাছে আছে।যদি মানুষ অসুবিধায় পড়ে,আমরা তাঁকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারব এবং তা করব।কিন্তু হাইকমিশনই এক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা-যেখান থেকে তাঁরা সাহায্য পেতে পারে।

স্যার এফ. বেনেট. এর বক্তব্যঃ আমার বিরোধীদলীয় সদস্যের বক্তব্য,পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রতি নীরব অসমর্থনের প্রমান নয় কি?এটা কি এমন কোন ব্যাপার যে, ডেপুটি হাই কমিশনার একজন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালী নয় বলে তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন না?

স্যার এলেক ডগলাস হিউমঃ হ্যাঁ,আমার ভাবা উচিত যে, হাইকমিশনার এবং তাঁর সহকারীরা পাকিস্তানি নাগরিকদের তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করবে।যদিও বর্তমানে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩১) জনাব জুড পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক সচিবের কাছে জানতে চাইলেন,পূর্ব পাকিস্তানে চলমান সংঘাত এর পর থেকে পাকিস্তানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পুনঃমূল্যায়নের জন্য তিনি পাকিস্তানের ত্রাণদানকারী সংস্থাকে তিনি কি কি প্রস্তাব দিয়েছেন?

বৈদেশিক উন্নয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রী(জনাব, রিচার্ড উড) এর বক্তব্যঃ আমি প্রস্তাব দেওয়ার মতো এমন কোন অবস্থানে নেই।আমাদের মত হল,বর্তমানে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে যে আলোচনা হচ্ছে,তা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

জনাব জুড এর জবাবঃ আমার পুর্বতন বক্তাকে তাঁর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাঁকে অনুরোধ করতে চাই,পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যাতে ত্রাণসুবিধা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করার নিমিত্তে ,তিনি যাতে সবসময় কনসর্টিয়ামের(সংস্থাটির) রিভিউ আহব্বান করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

জনাব উড এর জবাবঃ এই বিষয়ে সংস্থাটির(কনসর্টিয়াম)মতৈক্যে পৌঁছানো উচিত, আমি এই বিষয়ে খুবই চিন্তিত এবং এজন্য সংস্থার(কনসর্টিয়ামের) সামনের সভায় আমাদের অবস্থান কি হবে নিশ্চিত করতে,আমি বিষয়টি সতর্কতার সাথে বিবেচনা করছি।

জনাব টিলনে এর বক্তব্যঃ গত কয়েক বছর ধরে,ঝড় ও বন্যার মতো জরুরি পরিস্থিতির জন্য ফান্ড সংগ্রহের যে কথা চলে আসছিল,সেটা কি আমার মাননীয় সহকর্মী বিবেচনায় রাখবেন না?

জনাব উড এর বক্তব্যঃ আমি এই বিষয়ে নোট নিয়ে রাখছি।

জনাবা হার্ট এর বক্তব্যঃ এই জুনেই দাতাসংস্থার প্রস্তাবিত বৈঠক আয়োজিত হবে,এই বিষয়টি কি আমার পূর্বতন বক্তা কি নিশ্চিত করতে পারবেন?গত শুক্রবারে,হাউজে এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নানা মতের উদ্ভব হয়েছে। আমাদের প্রস্তাব এবং সংস্থার(কনসর্টিয়াম) সাধারণ আলোচনা অনুযায়ী,এই বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতির খবর কি আমার পূর্বতন সম্মানিত বক্তা হাউজকে নিয়মিতভাবে জানাতে পারবেন?

জনাব উডের বক্তব্যঃ আমি আশা করি আমার পূর্বতন বক্তা কে উভয় বিশয়ের আমি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারব।

Scroll to Top