পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসে জেনারেল ইয়াহিয়ার বাণী

৭.৬০.১২৪ ১২৫

শিরোনামঃ ৬০। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার বানী

সূত্রঃ কারেন্ট নিউজ ডঃ হাসান জামান সম্পাদিত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ‘ ৭১

তারিখঃ ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা দিবসের বার্তা

নিচে রাষ্ট্রপতির সম্পূর্ন বার্তাটি বিবৃত করা হলো।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসটি সমগ্র জাতির জন্য ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে সশস্ত্র সংঘাতে আমাদের বীর প্রতিরক্ষা বাহিনীর গৌরবময় কীর্তির কথা স্মরণের একটি উপলক্ষ্য। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের জন্য এটি একই সাথে গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণের দিন এবং বিদেশি আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ সকল হুমকির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে দেশের সীমান্ত রক্ষার মহৎ ও পবিত্র অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্তকরণের দিন। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সবসময়েই তাঁদের প্রতি স্থাপিত আস্থার মর্যাদা রেখেছেন। জাতীয় সংহতি, অখণ্ডতা এবং আদর্শের প্রশ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে তাঁরা কখনই দ্বিধা করেননি। সকল সংকট তাঁরা শক্তিমত্তা ও ইস্পাত দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছেন।

পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহী ও দুষ্কৃতকারীদের দমনে যে ভূমিকা তাঁরা পালন করেছেন তা আমাদের দ্বারা সবসময়ে গৌরব ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হবে। যারা ষড়যন্ত্রকারী এবং সীমান্তে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের প্ররোচনা ও সক্রিয় সমর্থনে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা করেছিল, তাদের পরিকল্পনা এবং শক্তিকেন্দ্র তাঁরা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখনও সেখানে দুষ্কৃতকারীদের দমনে নিয়োজিত আছেন।

দেশকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষায় যে ত্যাগ আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা করেছেন তা সর্বোচ্চ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা দাবি করে। তাঁদের নিঃস্বার্থ সেবা, আত্মত্যাগের মানসিকতা এবং দেশের জন্য যুদ্ধ করার সদিচ্ছাই আমাদের অস্ত্র। তাঁরা এর উদাহরণ রেখেছেন পঁয়ষট্টির যুদ্ধে এবং আবারও তা প্রমাণ করেছেন আমাদের অস্তিত্বের প্রতি বহুমুখী হুমকি নিকেশ করে।

আমরা একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্য ও সহযোগী মনোভাব বজায় রাখতে অটল। তবে একই সাথে, আমরা আমাদের দেশের সংহতি এবং অখণ্ডতা বজায় রাখতেও বদ্ধপরিকর এবং প্রস্তুত। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনোরূপ বর্হিশক্তির হস্তক্ষেপ সহ্য করবো না; আমরা স্বাধীন, গর্বিত এবং আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার অধিকার রাখি।

আজকের এই দিনে, আমরা ১৯৬৫ এর যুদ্ধে দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শাহাদত বরণকারী সাহসী সন্তানদের স্মরণ করছি। একই সাথে আমরা গৌরবের সাথে স্মরণ করছি তাঁদের, যাঁরা সুস্থ সবল দেহে সেই যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছেন গাজি হিসেবে এবং দেশপ্রেম এবং কর্তব্যপরায়নতার দীর্ঘ ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন।

এদের উদাহরণ পাকিস্তানি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আগামী প্রজন্মের জন্য বাতিঘর হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় স্বার্থে তাঁদের আত্মত্যাগ এবং দুর্ভোগবরণ নিষ্ফল হবে না। এই আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ পাকিস্তানকে একটি দুর্ভেদ্য দূর্গে পরিণত করতে বাধ্য।

পাকিস্তান, আল্লাহর রহমতে, থাকবে, এবং পৃথিবীর কোনো শক্তি একে ধ্বংস করতে পারবে না। এখানে আমি কায়েদে আযমের এই কথাটি স্মরণ করতে চাই।

“যারা নির্বোধের মত ভাবে যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে তারা দুঃখজনক ভাবে ভুল করছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি পাকিস্তানের সংহতি ভঙ্গ করতে পারবে না। পাকিস্তানের ভিত্তি এখন সত্যের উপর এবং গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত।”

Scroll to Top