৭.১০.৩০-৩১
শিরোনামঃ ১০। পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি: বে-আ্ইনী অনুপ্রবেশের সকল দায়িত্ব ভারতকেই বহন করতে হবে
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৯ এপ্রিল, ১৯৭১
.
সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে
বে-আ্ইনী অনুপ্রবেশের সকল দায়িত্ব ভারতকেই বহন করতে হবে
ইসলামাবাদ, ৮ই এপ্রিল, (এ পি পি)- পাকিস্তান ভারতের কাছে ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংসাত্বক কার্যে লিপ্ত হওয়া অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। এটা যদি না হয়, তাহলে পরিণতির সকল ঝুঁকি ভারতীয় নাগরিকদেরই বহন করতে হবে।
পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার মি: বি, কে, আচার্যকে আজ পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে এনে একথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এক সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, ধ্বংসাত্বক কাজ করার জন্য পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরাস্থ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তানী এলাকায় বে-আইনী অনুপ্রবেশের প্রশ্নে পাকিস্তানের ঘোরতর আপত্তির কথা ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানানো হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে আরও জানানো হয়, চিকিৎসা ও সাহায্য সামগ্রী নাম দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে- এটা পাকিস্তান সরকার জানতে পেরেছে।
পাকিস্তান সরকার পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরাস্থ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে পাকিস্তানী এলাকায় ভারতীয় নাগরিকদের বে-আইনী অনুপ্রবেশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অব্যাহত হস্তক্ষেপ, ভারতীয় বেতার এবং অন্যান্যা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মারফত পূর্ব পাকিস্তানের পবিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা ভারতীয় হাই কমিশনারকে জানানো হয়।
আজ পররাষ্ট্র দফতরে ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে এনে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাকে আরো জানানো হয়েছে যে, চিকিৎসা ও রিলিফ সামগ্রী নাম দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর বিষয়টি পাকিস্তান সরকারের গোচরে এসেছে।
তাকে বলা হয়েছে: ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তানী এলাকায় অনুপ্রবেশ এবং সেখানে তাদের ধ্বংসাত্বক তৎপরতা অবিলম্বে ভারত সরকারের বন্ধ করা উচিত। তা না করা হলে, যেসব ভারতীয় নাগরিক এভাবে অনুপ্রবেশ করবে তারা সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বেই করবে। একথাও তাকে বলা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকাসমূহে ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবকদের চলাফেরা এবং সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাতের ফলাও বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে। যেমন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সংবাদদাতা দুই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের ১০০ মাইল এলাকা ভ্রমণ করেছেন বলে দাবী করেছেন।
অনুরুপভাবে তথাকথিত অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার খবর ভারতীয় সংবাদপত্র ও বেতারে প্রচার করা হয়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনারকে এ সব কথাও বলা হয়েছে।
ওষুধ এবং সাহায্য সামগ্রীর নামে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের লোকের জন্য অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে। এপিপির কূটনৈতিক সংবাদদাতা এ খবর জানিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র চালান এবং লোক পাঠানোর কাজটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই করা হচ্ছে। এর জন্য পাক-ভারত সীমান্তে এগারোটি প্রবেশ ঘাঁটি খোলা হয়েছে।
গত ৫ই এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চীফ সেক্রেটারীর কথাতেই এর স্বীকৃতি মিলেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত মোহাজেরদের অভ্যর্থনার সুবিধার্থে ১১টি প্রবেশ পথ খোলা হয়েছে। এছাড়া ৯টি শিবির খোলা প্রকৃত পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে উল্টো দিকে চলাচলের জন্য এসব ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে অনিবার্য ভাবেই ভারত সরকারের দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোতে বর্ষার আগে পূর্ব পাকিস্তানে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবারহের জন্যে ওকালতি করা হচ্ছে।
এদিকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের জনগণের জন্য তহবিল ও সাহায্যে সামগ্রী সংগ্রহের জন্য দিল্লী, কলকাতা, শিলং এ সংস্থা গঠন করা হয়েছে।
গত সোমবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার কোন ব্যবস্থা আছে কিনা,- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তিনি প্রকাশ্যে কিছুই বলতে পারেন না। অবশ্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ সমর্থন করেছেন- কেননা এগুলো মোহাজেরদের সাহায্য করার কাজে ব্যয় করা যাবে।