পাক-ভারত যুদ্ধঃ বৃটিশ কমন্স সভায় পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাক-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায়  ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি কমনস সভার কার্যবিবরণী ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

 

  স্যার এলেক্স ডগলাস স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারি ব্রিটিশ    হাউজ অফ কমনস ডিসেম্বর ১৩, ১৯৭১

 

ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে চলছে প্রচন্ড শত্রুতা। ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে, যশোর শহর পুরোটা দখল করে নিয়েছে এবং রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছে। শুধু তাই নয় বরং ভারতীয় ও পাকিস্তানী বাহিনীর মাঝে প্রচন্ড যুদ্ধ চলছে বিভিন্ন বর্ডার এলাকাতেও, যেখানে পাকিস্তানী বাহিনী ঢুকে পড়েছে ভারতের অভ্যন্তরে।

 

আপনারা জানেন ডিসেম্বর এর ৯ তারিখে করাচীতে একটি ব্রিটিশ জাহাজ আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে ৭ জন ব্রিটিশ নাগরিক মারা গিয়েছে এবং ৬ জন আহত হয়েছে। অবশ্য এই ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করেছেন। আমরাও এর ক্ষতিপূরণ দাবি করি। তবে এই ঘটনা ছাড়া আর কোন ব্রিটিশ নাগরিকদের হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি।

                             এয়ারলিফট

আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে করাচী, ইসলামাবাদ ও ঢাকা থেকে বিমানযোগে সকল ব্রিটিশ ও অন্যান্য বিদেশিদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। খুলনা ও চট্টগ্রাম এ কোণো আমেরিকান রয়ে গিয়েছে কিনা সে বিষয়ে আরো নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কেউ কেউ অবশ্য নিজ ইচ্ছায়ই পাকিস্তানে অবস্থান করছে। এছাড়া সকল ব্রিটিশ নাগরিক যারা ফিরে আসতে চেয়েছিলেন তাদেরকে বিমানযোগে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মাত্র তিন দিনে ১৩০০ এর অধিক মানুষকে রয়্যাল এয়ার এর মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটা খুব সহজ কাজ ছিল না। বিশেষত এমন একটা সময় যখন ঢাকা শহর এরকম প্রচন্ড হুমকীর সম্মূখীন। আমার বিশ্বাস হাউজের সবাই আমাদের এই অসাধারণ অর্জনে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করবে না। আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনার এবং কিছু স্টাফ এখনও ঢাকা রয়েছে।

                                অস্ত্র বিক্রয়

যুদ্ধ শুরুর পর আমরা অস্ত্রবিক্রির নীতিমালায় কিছু রিভিউ করেছি। আমি ডিসেম্বর এর ৬ তারিখে দেওয়া কথামত সেইসব রাষ্ট্রের সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছি যারা ভারত ও পাকিস্তানে অস্ত্রের মূল যোগানদাতা। এ ব্যাপারে আমি বলতে চাই, এমন যোগাযোগের কারণে অস্ত্র বিক্রির উপর সাধারন নিষেধাজ্ঞা আসার কোন সম্ভাবনা নাই। এমতবস্থায় আমাদের আচরন কেমন হবে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আপনারা সবাই জানেন ভারতের জন্যে কোন সামরিক সহায়তা নেই। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রীর জন্যে ভারতীয় সরকারের সাথে বিভিন্ন কোম্পানীর দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি, উপমহাদেশের বর্তমান শত্রুতামূলক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এর আচরণের উপর ভিত্তি করে উক্ত অস্ত্র সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। বিগত কয়েকটি বছর ধরে আমরা পাকিস্তানকে নিয়মিত অস্ত্র সরবারহ করছি না। তাই পাকিস্তানের সাথে আমাদের এমন কোন চুক্তি নাই।

                           যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা

এই হাউজ ইতোমধ্যেই জেনে থাকবে যে রাজনৈতিক উপায়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একাধিকবার দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর এর ৭ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল এসেম্বলি তে ভোটাভুটি হয়েছিল। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই যুদ্ধবিরতি ও নিজ নিজ সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নেবার আহবান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে সব উদ্যোগই ব্যার্থ হয়।

 

এমতবস্থায় বাস্তবতার আলোকে যুদ্ধ সমাপ্ত করার জন্যে একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান প্রয়োজন। এই জন্যে আমরা সিকিউএইটি কাউন্সিলের সকল সদস্যের সাথেও যোগাযাওগ রাখছি যেন দ্রুততম সময়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো যায় এবং একটি গঠনমূলক প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

Scroll to Top