পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে প্রতিবেদন

<2.015.128-129>

 

 

ডিও নংঃ ১১২৪৭(/) ,ঢাকা, ২৩১৯৬১

 

 

প্রিয়,

আমি তোমাকে ছাত্রদের বিশেষত যারা চালাকচতুর তাদেরকে অবাঞ্চিত কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত রাখার বিষয়ে লিখছি যা পরবর্তিতে তাদের ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে গভর্নমেন্ট হাউসে গোয়েন্দা কার্যক্রম সমন্নয় কমিটির একটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং পালটা তৎপরতা পরিচালার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।    

 

 

যে সকল প্রার্থীরা সামরিক বাহিনীতে কমিশন , সিভিল সার্ভিস, আন্তর্জাতিক স্কলারশীপ ইত্যাদির জন্য বিবেচিত হবেন তাদের সত্যায়নকৃত তালিকা পরীক্ষনের সময়ে আমাদেরকে ক্ষেত্রে বিশেষে কিছু মেধাবীকে অনাকাংখিত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বিবেচনায় অনুপোযুক্ত ঘোষনা করতে হয়।    

 

 

এতদ লক্ষ্যে আমি আমার ডিও নং ৫২৪১(১৭)১৬৯-৫৯/গ তারিখ ২৫ মার্চ ১৯৬১ মারফত ডি.আই.বি (ডাইরেক্টরেট অফ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) নির্দেশিকার রুল ১০৯ অনুসরন করার জন্য আপনার একান্ত দৃস্টি আকর্ষন করেছি যাতে এধরনের কর্মকান্ডে যে সকল শিক্ষার্থীরা নিযুক্ত হবে তাদের বাবা-মা/অভিভাবকরা শুরুতেই এ বিষয়ে সতর্ক হতে পারে। অভিভাবকবৃন্দের প্রতি এধরনের সতর্কবার্তা উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যাতে তাদের অভিভাবকত্বে থাকাদের এধরনের কাজে পুনোরাবৃত্তি রোধ করতে পারে। সুতরাং এই নিয়ম এমন ছাত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে যে ইতিমধ্যে বিপজ্জনক কোনো দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।  

 

মেধাবী অথচ নির্দলীয় এমন ছাত্রদেরকে যারা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সংগঠনভুক্ত করার চেস্টা করবে সেই সব অবাঞ্চিত সংগঠনের কুমন্ত্রনা সম্পর্কে ছাত্রদেরকে সতর্ক করার বিষয়ে আমাদের এখনই চিন্তা করা উচিত। 

 

সুতরাং এই মর্মে পরামর্শ প্রদান করা যাইতেছে যে, নিদেনপক্ষে চালাকচতুর সিনিয়র ছাত্রগন ধরুন রেজাল্টের ভিত্তিতে প্রত্যেক ব্যাচ থেকে ৪/৫ জনকে প্রত্যেক সেশন শুরুতে ডেপুটি কমিশনার যিনি যথাযথ কৃর্তপক্ষ তিনি ডেকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন। 

 

 

সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে চায়ের দাওয়াতের মত কোনোধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের আমন্ত্রন করা যেখানে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা যেমন প্রবীন শিক্ষাবিদ, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন এবং কিছু গন্যমান্য ব্যাক্তিরা আমন্ত্রিত হতে পারেন। অনুষ্ঠান মেধাবী ছাত্রদের অভিনন্দন জানানোর এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে আরো ভালো করার অনুপ্রেরন প্রদানের উপলক্ষ হতে পারে । এখানে কোনো আনুসঠানিক আলোচনা হওয়া অনুচিত তবে ছোটো ছোট আলাপের ফাঁকে ছাত্রদের সাফল্যের মুল্যায়নের কথা দিয়ে শুরু করে ডেপুটি কমিশনার উল্লেখ করবেন দেশ মেধাবী ছাত্রদের কাছে কি প্রত্যাশা করে।     

 

এর ধারাবাহিকতায় তাদের কাছে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তাদের ব্যাক্তিগত দৃস্টিভঙ্গী যাই হোক না কেনো অন্যারা যখন রাজনীতি ও অন্যান্য ব্যাপারে আগ্রহী  তখন ছাত্রদের উচিত হবে এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা যা তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোস্টির সাথে সম্পৃক্ত করতে পারে। এমন কি শিক্ষাঙ্গনে এমন গোস্টির সহচার্যে আসা যাদের রাজনৈতি দলের সাথে সমন্ধ আছে যেমন ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্ট ইউনিয়ন।

 

<2.015.129>

 

 

   (এমন কি শিক্ষাঙ্গনে এমন গোস্টির সহচার্যে আসা যাদের রাজনৈতি দলের সাথে সমন্ধ আছে যেমন ইস্ট পাকিস্তান –ব্রাকেটে থাকা অংশ পুর্ববর্তি পেজের কন্টিনিউশন) 

 

স্টুডেন্ট ইউনিয়ন তাদের (ক্যারিয়ারে) দাগ ফেলতে পারে যা তাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলবে।

 

এরপর আলাপের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাখা থাকা উচিত যারা ছাত্রদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিপথগামী করে ভুল পথে পরিচালনা চেস্টা করে যার মধ্যে কখনো কখনো বৈদেশিক আনুগত্যের মত বিষয়ও থাকে। পরের ধাপে আলাপটি ছাত্রদের সাধারন সুযোগসুবিধার সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে মোড় নেয়ানো যেতে পারে যাতে হ্নদ্যতাপুর্ন পরিবেশ বজায়ে থাকে এবং সকলে যাতে অনুভব করে যে কর্তৃপক্ষ ছাত্র এবং যুব সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংশ্লিস্ট বিষয়ে সচেতন রয়েছে।

 

এ সকল পরামর্শ সংক্রান্ত বিষয়ে ডেপুটি কমিশনার মহোদয়ের সাথে আলাপ করতে আমি আপনাকে বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি, তাকে এ চিঠি দেখানো যেতে পারে এবং প্রত্যাশিত ফল লাভে আরো কোনো বিকল্প পরামর্শ থাকলে আমাকে জানান।যদি ডেপুটি কমিশনার আগামী মাসেই এটা বাস্তবে রুপদানের(অনুষ্ঠান) প্রস্তাব দেন,তাবে এ বিষয়ে প্রয়োজনে আমি আলাপের পয়েন্টসমুহের খসড়া তৈরি করে দেয়ার ইচ্ছা রাখি। বৈরী রাজনৈতিক রেকর্ড আছে এমন লোকজনকে আমরা পাবলিক সার্ভিসে আসতে দিতে পারি না, এ আমাদেরও দায়িত্ব যে তাদের ছাত্রাবস্থার প্রাথামিক পর্যায়েই এ সত্য উপরের প্রস্তাবনা মাফিক বছরে একবার তাদের সামনে তুলে ধরার চেস্টা করা। এরপরেও যদি তারা অসৎ রাজনৈতিক সংগে মেশে তাহলে তারা যখন সকল প্রকার সরকারি ও গুরুত্বপুর্ন চাকরি থেকে বাদ পরবে তখন কেবলমাত্র নিজেরাই এর জন্য দায়ি থাকবে।

আমি ৮-৭-৬১ তারিখের মধ্যে অবশ্যই একটি উত্তর আশা করছি।

আপনার বিশ্বাস্ত,

এ.এম.এ কবির

Scroll to Top