শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৩৫। পূর্বপাকিস্থান দুর্যোগোত্তর যন্ত্রনা | ইভনিং ষ্টার | ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ |
<১৪, ৩৫, ৮০–৮১>
ইভনিং ষ্টার, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ১৯৭১
সাইক্লোনের পর পূর্বপাকিস্থানে নিদারূণ যন্ত্রণা
হেনরি এস. ব্র্যাড শিয়ার (ইভনিং ষ্টার স্টাফ )
হংকং – “এই সাইক্লোনের ধ্বংসযজ্ঞ এখনো শেষ হয়নি” গত ৪ঠা মার্চে জুলফিকার আলী ভুট্টোর এক সাক্ষাৎকারে করা এমন মন্তব্যে দেখা যায় যে পশ্চিম পাকিস্থানের সামরিক-আমলাতান্ত্রিক-জমিদার-অভিজাত শ্রেণী পূর্বপাকিস্থানে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে রক্তপাত ঘটাতেও ইচ্ছুক। এর তিন সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার রক্তবন্যা শুরু হয়। পাকিস্তানের দুই অসম খণ্ডের মাঝে এই গৃহযুদ্ধ দীর্ঘ এবং রক্তাক্ষ হতে পারে, যদিও সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে যে লড়াই বস্তুত শেষ. এই ঝড়ে ধারণা করা হয় প্রায় ৪,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। সঠিক সংখ্যা হয়তো কেউ কোনোদিন জানাতে পারবেন না, না পারবে কেউ কোনোদিন জানতে যে ঠিক কত মানুষ এই গ্রহযুদ্ধে মারা গেছেন। পাকিস্থানী সরকার সব তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনের ফলাফল বের হবার পর থেকেই ভুট্টো পূর্বপাকিস্থানকে তাদের আশানুরূপ একটি সংবিধান থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। ভুট্টো, একজন সামন্ততান্ত্রিক জমিদার এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একটি সফল কিন্তু সুবিধাবাদী ক্যারিয়ারের অধিকারী, পশ্চিম পাকিস্তানে গরিবদের সমাজতান্ত্রিক সুবিধা দেবার কথা বলে নির্বাচনে জিতেছেন। (শেখ মুজিবর) রহমানের বিরুদ্ধে তার ধ্বংসাত্মক রণকৌশল বরং গরিবদের চেয়ে পশ্চিমা অভিজাতন্ত্রের স্বার্থ জন্যই বেশি রক্ষা করছে। তার বয়কট করার হুমকির ফলেই পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ অধিবেশন পিছিয়ে যায়। প্রত্যাহত রহমান সাধারণ ধর্মঘট ডাকেন যা একসময় বেড়ে আওয়ামীলীগের হাতে পুর্বপাকিস্থানে সব বেসামরিক ক্ষমতা ন্যাস্ত করে। সাধারণ ধর্মঘটের সময় থেকে, বিভিন্য তথ্যসূত্র হতে জানা যায় যে পশ্চিমপাকিস্তান থেকে পূর্বে ক্রমাগত সৈন্য উড়িয়ে নেয়া হয়েছে। সরকারের হাতেই জাতীয় বিমান সংস্থা ও ঢাকায় বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এইসব রিপোর্ট সত্য প্রতিপন্য হয়। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায় যে জাহাজে করেও পূর্বে সৈন্য আনা হয়েছে। নৌবন্দরগুলোয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম , কারণ সেসব আওয়ামীলীগ সমর্থকদের দখলে এবং তারা সেনা সরঞ্জাম খালাস হতে দিচ্ছিলেন না। রহমান সেনাবাহিনীকে খাদ্য ও সরঞ্জাম হতে বিচ্ছিন্য করে রেখেছিলেন। অনুমান করা যায় যে সংকট শুরুর সময় পূর্ব পাকিস্তানে, যেখানে ৭৫ মিলিয়ন মানুষের বাস, ২৬,০০০ সৈন্য ছিল। সংঘাত শুরুর সময় সেই সৈন্য সংখ্যা ৩০,০০০ বা তার ও বেশি হয়। গত বুধবারে দেখা যায় যে সৈন্য সঞ্চলন শুরু হয়েছে। চিটাগাং বন্দরে একটি গোলাবারুদ বোঝাই জাহাজ কয়েকসপ্তাহ ধরে বসে আছে কারণ খালাসীরা মালামাল খালাসে বাধা দিচ্ছে। বুধবার হতে সেনাবাহিনী নিজেই তা খালাস করার চেষ্টা চালায়। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায় সাধারণ মানুষ সেনাচলাচলের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন এবং শহরে ১৪টি ট্যাংক আনা হয়েছে। পূর্বপাকিস্তানের নানাস্থানে সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এখনপর্যন্ত ৫০ জন নিহত হবার কথা শোনা যায়।