প্রতিবেদনঃ সত্যেন সেন

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ পাবনা

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৩। পাবনা জেলায় সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধের বিবরণ ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ’ গ্রন্থ ১৯৭১

 

<৯, ১৩.১, ৩৪৮-৩৫০>

পাবনা শহরে পুলিশ ও জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধ

(প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ’ গ্রন্থে ‘পাবনার মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অংশ হতে সংকলিত)

 

ইয়াহিয়ার জঙ্গী বাহিনী ২৫শে মার্চ তারিখে পাবনা শহরে এসে ঢুকে পড়ল। শহরের মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিল। শিগগিরই এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটে যাবে।  তারা মনে মনে এই আশঙ্কা করছিল। কিন্তু সেই ঘটনা যে এত তাড়াতাড়ি ঘটবে, সেটা তারা ভাবতে পারেনি। এই তারিখেই ঢাকা শহরে আক্রমণ শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেটা গভীর রাত্রিতে। ওরা ২৫শে মার্চ শেষ রাত্রিতে পাবনা শহরে এসে হামলা করল।

 

শহর থেকে মাইল চারেক দূরে হেমায়তপুরের কাছে ইপসিক এর অফিস। পাক সৈন্যরা সেখানেই এসে ঘাঁটি গেড়ে বসল। তারপর সেখান থেকে কিছু সৈন্য শহরে এসে ট্রেজারী দখল করে নিল। তাছাড়া ২৭ জন সৈন্য টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কেন্দ্র দখল করে বসল। তারা সারা শহরে কারফিউ জারী করে দিয়েছিল।

 

হামলাকারী সৈন্যরা শহরে এসেই আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম,এল,এ আমিনুদ্দীন সাহেব, ভাসানীপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ডাক্তার অমলেন্দু দাক্ষী এবং আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করল। যারা ওদের হাতে ধরা পড়ল, শেষ পর্যন্ত তাদের সবাইকে ওদের গুলির শিকার হয়ে মরতে হয়েছিল। এর কয়েকদিন আগেই শহরের ডি,সি ও এস,পি স্থির করেছিলেন যে শহর আক্রান্ত হলে তারা প্রতিরোধ দেবেন। তাদের কাছ থেকে প্রেরণা ও উৎসাহ পেয়ে পুলিশ ব্যারাকের ১০০ জন সশস্ত্র পুলিশও মনে মনে প্রতিরোধের জন্য তৈরি হয়েছিল। যতক্ষণ শক্তি আছে, ততক্ষণ এই শহরকে তারা পশ্চিমাদের হাতে ছেড়ে দেবে না। যেটুকু শক্তি আছে, তাই নিয়েই ওদের বিরুদ্ধে লড়বে।

 

২৭শে মার্চ তারিখে সৈন্যরা পুলিশ ব্যারাকে যায়। এবং পুলিশদের অস্ত্রাগার তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পুলিশরা এতে অসমর্থ জানায় এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে ডি,সি তাদের অস্ত্রাগার সামরিক কতৃপক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন। তার এই আদেশ কিছুতেই তারা অমান্য করতে পারবে না। এই নিয়ে দুই পক্ষে প্রথমে বাক-বিতন্ডা এবং পরে গুলিবর্ষণ চলে। তখন বলা শেষ হয়ে এসেছে। এই যুদ্ধে তিনজন সৈন্য মারা যায়। পাক সৈন্যরা বাহাদুর পুলিশ ভাইদের হাতে উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু এ শিক্ষাও ওদের পক্ষে যথেষ্ট হয়নি। সেই রাত্রিত্রে তারা নতুনভাবে আক্রমণ করবার জন্য তোড়জোড় চালাতে লাগল। রাত যখন সাড়ে চারটা তখন ওরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে অতর্কিতে পুলিশ ব্যারাকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু পুলিশ ভাইয়েরাও আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। সৈন্যরা যে আবার ফিরে এসে আক্রমণ করবে সে বিষয়ে তাদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না। এবার আর ব্যারাকে নয়, ব্যারাক ছেড়ে নিকটবর্তী বাড়িগুলোর ছাদে এবং পথের মোড়ে মোড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আড়াল নিয়ে হামলাকারী শত্রুদের জন্য বাঘের মত ওত পেতে বসে ছিল। তারা তো ছিলই, জেলখানার পুলিশ ভাইয়েরাও তাদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছে। এইভাবে সারাটা রাত তারা শত্রুর জন্যে মৃত্যুফাঁদ সাজিয়ে বসে ছিল। রাত সাড়ে চারটার সময় দুপক্ষে সংঘর্ষ ঘটল। সৈন্যদের পরিবর্তে পুলিশরাই প্রথম আক্রমণ করল। এইভাবে অতর্কিত চারদিক থেকে আক্রান্ত হয়ে ইয়াহিয়ার সুশিক্ষিত সৈন্যরা হতভম্ব হয়ে গেল। এই সংঘর্ষে ২১ জন সৈন্য নিহত হবার পর বাকী সৈন্যরা ঊর্ধশ্বাসে প্রাণ নিয়ে পালাল। পুলিশদের মধ্যে একজনও মারা যায়নি। সাবাস! পাবনার পুলিশ ভাইয়েরা।

 

২৭শে মার্চ তারিখে পাবনা শহরের বুকে এ লড়াই শুরু হয়েছিল। ২৭শে থেকে ২৯শে, এই তিন দিন ধরে লড়াই চলল। ২৬শে আর ২৭শে এই দুইদিন ওরা শহরের উপর কারফিউ জারী করেছিল। তা সত্ত্বেও ঐ অবস্থাতেই শহরের যুবক ও ছাত্ররা ২৬শে মার্চ সারাদিন ও সারারাত প্রতিরোধের জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। ঐ একটি দিনের মধ্যে তারা বেশ কিছু অস্ত্র হাত করে নিয়েছিল। সেই একটি দিনে কারফিউ আইন ভঙ্গকারীদের মধ্যে ৮/১০ জন সৈন্যদের গুলিতে মারা গিয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধকারীদের মনোবল তাতে একটুও ভেঙ্গে পড়েনি।

 

পাবনা শহরে প্রতিরোধের ব্যাপারে ডি,সি-র প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা আমজাদ সাহেব আর তিনি মিলিটারীর সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলবার জন্য ভেতরে ভেতরে চেষ্টা করে চলেছিলেন। তাঁরা দুইজন চর-অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং প্রতিরোধের ব্যাপারে তাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলেছেন। মানুষ ভেতরে ভেতরে তৈরি হয়েই ছিল। তাদের এই আহবানে উৎসাহিত হয়ে দলে দলে কৃষক এই হামলাকারী শত্রুদের খতম করে দেবার জন্য শহরের দিকে ছুটে আসতে লাগল।

 

২৮শে মার্চ। ২৭ জন সৈন্য টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে নিয়ে পাহারা দিয়ে চলেছিল। চরের কৃষকরা ছুটতে ছুটতে এসে তাদের ঘেরাও করে ফেলল। তাদের হাতে লাঠিসোটা, বর্শা-বল্লম, ধনুক, তীর আরও কত রকমের হাতিয়ার। ব্যারাক থেকে সকল পুলিশ চলে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তাছাড়া শহরের যুবক ও ছাত্ররা দলে দলে ছুটে এসে তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াল। শেষ পর্যন্ত জনতা প্রায় ১৫ হাজারে এসে দাঁড়াল। তাদের গগনবিদারী জয়ধ্বনিতে সারা শহর কেঁপে উঠল, থরথরিয়ে কেঁপে উঠল অবরুদ্ধ পাক সৈন্যদের মন। এবার দু’পক্ষে গুলিবর্ষণ চলল। সৈন্যদের হাতে মেশিনগান ও উন্নত ধরনের অস্ত্রশস্ত্র। পুলিশরা শুধু রাইফেল নিয়ে লড়ছিল। জনতার মধ্যে যাদের হাতে বন্দুক ছিল, তারাও সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। সৈন্যরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুরক্ষিত আশ্রয়ে থেকে আড়ালে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছিল। কাজেই সংখ্যাই কম হলেও তাদের খতম করে ফেলা সহজ কাজ ছিল না। ওদের মেশিনগানের অবিরাম গুলিবর্ষণকে ভেদ করে টেলফোন এক্সচেঞ্জ কেন্দ্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতই দুঃসাহসের কাজ। সেই কারণেই অনেকক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলল। হাজার হাজার জনতা এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে কোন কার্যকর সাহায্য করতে  না পারলেও তাদের আকাশ-ফাটানো জয়ধ্বনি পাক সৈন্যদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করে তুলেছিল। তারা হতবুদ্ধির মত হয়ে গিয়েছিল। তাই উন্নততর অস্ত্রশত্র হাতে থাকলেও তারা তাদের যথাযত প্রয়োগ করতে পারেনি। এমনিভাবে ঘন্টা খানেকের মধ্যে এক এক করে তাদের ২৭ জনই মারা গেল। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কেন্দ্র মুক্তিবাহিনীর হাতে এসে গেল।

 

জয়োল্লাসে মেতে উঠল সারা শহরের মানুষ। বুড়ো থেকে বাচ্চারা পর্যন্ত আনন্দধ্বনি করতে করতে ঘর ছেড়ে পথে এসে দাড়িয়েছিল। যে সমস্ত সৈন্য ট্রেজারী ও শহরের অন্যান্য জায়গায় মোতায়েন ছিল মুক্তিবাহিনীর প্রতি-আক্রমণের সূচনাতেই তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নিহত হয়েছে, বাকী সবাই পালিয়ে গিয়েছে। সারা শহরের পথে পথে জনতার বিজয় মিছিল চলছে।

 

শহর থেকে শত্রুসৈন্যরা নিহত ও বিতাড়িত হলেও শহর বিপদমুক্ত নয়। শহর থেকে মাইল চারেক দূরেই ইপসিক এর অফিস বাড়িতে শত্রুসেনারা মূল বাহিনীর অধিকাংশ ঘাটি করে বসে আছে। তাদের সংখ্যা দেড়শতের মত। সংখ্যার দিক দিয়ে যাই হোক না কেন অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী। শহরকে বাঁচাতে হলে তাদের রাহুগ্রাস থেকে শহরকে মুক্ত করতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ে যারা উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে, পাবনা জেলায় সেই ইপিআর বাহিনীর কোন অস্তিত্ব ছিল না। পুলিশ ভাইয়েরাই এখানকার একমাত্র সশস্ত্র যোদ্ধা কিন্তু অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়ে তারা খুবই দুর্বল। হামলাকারী পাক সৈন্যদের মূল ঘাঁটি থেকে হটিয়ে দেয়া তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য। এক্ষেত্রেও জনতাই সামনে এগিয়ে এল।

 

পাবনা শহরের লড়াইয়ের খবরটা শহরের বাইরে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বাইরে গ্রামাঞ্চল থেকে বিভিন্ন কৃষক সমিতির লোকেরা শহরকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে আসছিল। তারা দলে দলে এসে শত্রুপক্ষের মূল ঘাঁটিকে ঘেরাও করে ফেলল। রাত্রির অন্ধকারে ঘটনাটা এমন দ্রুতভাবে ঘটে গিয়েছিল যে, ওরা কৃষক জনতার এই অবরোধ থেকে বেরিয়ে পড়বার মত সময় বা সুযোগ পায়নি। পুলিশ ভাইয়েরাও এ আক্রমণে কৃষকদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিল। তারা শত্রুপক্ষের মেশিনগানের পাল্লার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ দিয়ে চলেছিল।

 

অবরোধকারীদের প্ল্যান ছিল এই যে, তারা এইভাবে দিনের পর দিন বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়ে ওদের না খাইয়ে মারবে। কৃষক জনতার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় কুড়ি হাজারে এসে দাঁড়াল। মুক্তিবাহিনীর এই বিরাট সমাবেশের দিকে তাকিয়ে এবং তাদের উন্মত্ত গর্জন শুনে অবরুদ্ধ পাক সৈন্যরা এগিয়ে এসে আক্রমণ করতে সাহস পাচ্ছিল না। দু’পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রক্ষা করে গুলি বিনিময় করে চলেছিল।

 

সময়ের সাথে সাথে অবরোধকারীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছিল। ওদের দিকে তাকিয়ে পাক সৈন্যরা এটা নিশিচভাবে বুঝে নিয়েছিল যে এই সুদৃঢ় প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই তারা বেতারযোগে ঢাকায় সামরিক কতৃপক্ষের কাছে সমস্ত অবস্থাটা খুলে জানাল। জানাল যে, তাদের জীবন বিপন্ন, অবিলম্বে সাহায্য দরকার।

 

খবর পাঠাবার কিছুকাল বাদেই আকাশে জেট বিমানের ঘোর গর্জন শোনা গেল। শব্দ শোনে চমকে উঠে সবাই উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল, সেই বিমান সমস্ত অঞ্চলটা প্রদক্ষিণ করে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। একটু বাদেই প্রচণ্ড বিষ্ফোরনের শব্দ। সেই হিংস্র যন্ত্র দানবটা জনতার ভীর লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা ফেলে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ার্ত চিৎকার আর ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল। শুধু বোমা ফেলা নয়, প্লেনটা মাঝে মাঝে বাজপাখির মত ছোঁ মেরে নীচে নেমে আসছে, আর এক এক পশলা মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করে চলে যাচ্ছে। বোমারু বিমানের এই অতর্কিত আক্রমণে কিছু সংখ্যক লোক হতাহত হল, জনতা ইতস্তত ছত্রভঙ্গ হয় যেতে লাগল। অবরুদ্ধ পাক সৈন্যরা এই সুযোগে অবরোধের বেড়া ভেঙ্গে ঊর্ধশ্বাসে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু তাদের সঙ্গী সবাই পালিয়ে যেতে পারেনি। অবরোধ ভেঙ্গে গেলেও মুক্তিবাহিনীর একদল সশস্ত্র যোদ্ধা তখনও তাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। কিছুসংখ্যক সৈন্যকে হতাহত অবস্থায় রণক্ষেত্রে ফেলে রেখে অবশিষ্ট পাক বাহিনী এই মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচল।

 

এইভাবে শত্রু সৈন্যদের বিতাড়িত করে জয়োন্মত্ত কৃষক-জনতা উল্লাসধ্বনি করতে ফিরে এল। মুক্ত নগরী পাবনা উৎসবমুখর হয়ে উঠল। কিন্তু পরদিন এই উৎসবের আনন্দ-কোলাহলের মধ্যে বিষাদের এক কালো ছায়া নেমে এল। এই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ সাহেব ২৯শে মার্চ তারিখে হটাৎ করোনারী থ্রম্বসিস রোগে মারা গেলেন। এ সম্বন্ধে কোনই সন্দেহ নেই যে, যুদ্ধাবস্থায় কঠিন পরিশ্রম ও দারুণ উত্তেজনাই তাঁর এই অকালমৃত্যুকে ডেকে এনেছিল। একথা বললে ভুল হবেনা যে, পাবনা শহরের মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়ে গেছেন, আমজাদ সাহেব তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

 

কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের এইখানেই ইতি নয়। বিতাড়িত পাক-সৈন্যরা তাঁদের ইপসিকের ঘাঁটি ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালাল বতে, কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। উদভ্রান্ত ও পলাতক সৈন্যদের পালাবার পথে পর পর দু’বার – প্রথম দাশুরিয়া পরে মূলাডুলিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই দুই জায়গাতেই প্রচণ্ড সংঘর্ষ ঘটেছিল। দুই সংঘর্ষের ফলে অবশিষ্ট পাকবাহিনীর প্রায় সকলকেই প্রাণ দিতে হলো, কেবলমাত্র চারজন প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল।

Scroll to Top