৭.৮১.১৭০ ১৭৫
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮১। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতার ও টেলিভিশন বক্তৃতা
( অধিবেশন আহ্বান, ক্ষমতা হস্তান্তর ও ভারতীয় হামলা ) |
জাতিসংঘের পাকিস্তান মিশনের তথ্য কেন্দ্রের দলিল | ১২ অক্টোবর, ১৯৭১ |
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে বৈঠক
নতুন কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে গঠন করা উচিত
পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অভিযোগ করেন ভারতের অগ্রগতিশীল সেনা ও বিমানবাহিনী ইউনিট সব পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে রেখেছে
ইসলামাবাদ, ১২ অক্টোবর ১৯৭১:প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, রেডিও এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এ আজ জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণে বলেন, যে পাকিস্তানের নতুন সংবিধান ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশ করা হবে। ৯০ দিনের জাতীয় পরিষদ দ্বারা এই সংবিধানের সংশোধনী একটি বিশেষ সহজ কার্যপ্রণালী দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর শুরু হবে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বললেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ২ডিসেম্বর তারিখে জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন পর গঠন করা হবে।
নিম্নলিখিত বিবৃতি পাঠ করা হয়:
“আমি আমাদের সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার আজ উল্লেখ করছি। আপনারা অবগত আছেন যে, বিরুদ্ধ বাহিনী যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও তার অস্তিত্ব স্বীকার না এবং ক্রমাগত আমাদের দুর্বল করতে এবং পরিণামে এই দেশ ধ্বংস করতে উন্মুখ হয়ে আছে। গত ২৪ বছর ধরে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আমি দু:খের সাথেবলছি ভারত পাকিস্তানের ক্ষতি করার কোন সুযোগ মিস কখনও করেনি। আমাদের দিকে তার প্রতিকূল নকশা দিয়েযে সংখ্যায় যে সমস্ত কর্ম গ্রহণ এবং আমাদের বিরুদ্ধে নেওয়া অব্যাহত রেখেছে তা থেকে এটিস্পষ্ট হয়েছে।
জোরকরে কাশ্মীর দখল, ১৯৬৫সালে পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ক্ষতির কারণ হবে বলা সত্ত্বেও ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণআমাদের দুর্বল করার এবং প্রত্যেক সম্ভাব্য উপায়ে আমাদের ক্ষতি করতে ভারতের প্রচেষ্টার প্রধান কিছু উদাহরণ। পাকিস্তানে প্রতি তাদের বৈরী আচরণের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।
ভারতের সর্বশেষ পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রচেষ্টা সম্পর্কে আপনারা ভালভাবে পরিচিত। তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়ে দুর্বৃত্তদের সহযোগিতা এবং অনুপ্রবেশকারীদের পাঠিয়েদেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানীদের জীবন ও সম্পত্তি ক্ষতিসাধন করেদেশের বাকি অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে। তারা গোলাবর্ষন করেছে এবং ঐ অংশের বেশ কয়েকটি এলাকায় আর্টিলারি ও মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষন অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব ধীরে ধীরে জানতে পারছে যে পূর্ব পাকিস্তানে সেতু উড়িয়ে দেয়া এবং যোগাযোগ ব্যাহত করার মত সব ধরনের নাশকতা কার্যক্রম বিচ্ছিন্নতাবাদী নামে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে । ভারত কর্তৃক সামরিক এবং স্যাবোটাজ প্রশিক্ষণ এবং প্রেরণের মাধ্যমে পূর্ব শাখার মধ্যে এবং আমাদের বন্দরে প্রায় খাদ্য-জাহাজ ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা তা মোকাবিলা করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ তৈরী এবং মানুষকে না খাইয়ে রাখা ছাড়া ভারতের অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। সুতরাং আমাদের পূর্ব শাখার লোকদের জন্য সমবেদনা তাদের দাবির জন্য অনেক।
এই প্রতিকূল কার্যক্রম ছাড়াও ভারতের পদাতিক, বর্ম এবং কামান সব পূর্ব পাকিস্তানের সীমানায় সরানো হয়েছে। একইভাবে ভারতীয় বিমানবাহিনী ইউনিট যেখান থেকে সরাসরি হুমকি হতে পারে ঐখানে অবস্থান নিয়েছে। পশ্চিম দিকেও, ইউনিট এবং ফরমেশনগুলোর বড় সংখ্যক তাদের শান্তি স্টেশন থেকে স্থানান্তরিত এবং আমাদের সীমানা দিকে এগিয়ে আনা হয়েছে। এই সকল সামরিক কার্যক্রম হতে এটা অনুমান করা যায় যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভয়াবহ আগ্রাসনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অসুস্থ সামরিক প্রস্তুতির কিন্তু একটাই উপসংহার হতে পারে, তারা তড়িঘড়ি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করতে পারে।
ভারতের প্রতিকূল আচরণ সম্বন্ধে যা বর্ননা করেছি এখানে কোন অযৌক্তিক এলার্ম নাই কারণ জাতিকে অবশ্যই দেশের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে।
তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, এই দেশের উভয় অংশের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসনের ব্যাপারে সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি জাগ্রত ও সচেতন রয়েছে। আপনাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের পবিত্র মাটির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহর সাহায্যে বিশ্বাস ন্যায়ে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সফলভাবে আগ্রাসন চ্যালেঞ্জ পূরণ করবে যেমন তারা অতীতে সম্পন্ন করেছে।
কিন্তু আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, যুদ্ধ বা সমানভাবে জরুরী ঘটনায় এটা যথেষ্ট নয় যে শুধুমাত্র সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী চ্যালেঞ্জ পূরণ করার জন্য প্রস্তুত হবে। আপনাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। বর্তমান সঙ্কটাবস্থায় সবাইকে প্রকৃত মুজাহিদ চেতনায় তার নিজস্ব বিশেষ গোলক আক্রমনাত্মক বাহিনীর সঙ্গে অবশ্যই কঠিন ভাবে কাজ করতে হবে, আমাদের সমস্ত পার্থক্য , সংকীর্ণতা এবং প্রাদেশিক কুসংস্কার পরিহার এবং সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতে হবে। প্রতিটি স্তরের মানুষকে সম্প্রতি রক্ষায় এবং একতা আনতে কাজ করতে হবে যেন দেশের প্রতিরক্ষায় আমরা পাথরের মত কঠিন হয়ে দাড়াতে পারি। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে মানুষ এই উপলক্ষ্যে জেগে উঠবে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ও দেশপ্রেম ও সাহসের সঙ্গে অখণ্ডতার চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে হবে।
ভারতীয় নেতারা তাদের মারমুখো বিবৃতি দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনে কোন সন্দেহ রাখেনি। তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ সম্পর্কে কথা বলছে এবং তাদের কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ উন্মত্ততামূলক কথা বলছে। বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিদেশ ভ্রমণ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিচ্ছিন্নবাদীদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। সারা পৃথিবী ভারতীয় খেলা দেখছে এবং প্রচারণা দ্বারা এই প্রোপাগান্ডাকে ঢাকা যাবে না।
বিশ্বের সকল শান্তিকামী দেশ সহানুভূতির সঙ্গে বুঝেছে যে আমরা সমস্যার সম্মুখীন এবং সমাধান করতে চেষ্টা করছি। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ত্রাণ ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সরাসরি এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছে। আমি তাদের ধন্যবাদ প্রকাশ করতে চাই।
বড় সংখ্যক দেশ এ ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছে যে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার আছে এবং কেউ আমাদের বলুন কিভাবে আমাদের কাজ করতে হয় সে অধিকারই তাদের নেই।
সম্প্রতি, আমি বিশেষ দূত প্রেরণ করেছি কিছু আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর নেতাদের কাছে যারা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দূর করার ব্যাপারে অবিচল, মুসলিম বিশ্বের এবং এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর বন্ধুদের কাছ থেকে উষ্ণ সংহতি প্রকাশের বার্তা গৃহীত হয়েছে।
আমরা গভীরভাবে চীন গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের বন্ধুত্ব এবং সমর্থনকে প্রশংসা করি। বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান যে প্রত্যেক জাতি নিজস্ব সমস্যার একটি সমাধান খুঁজেপাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আমি আগ্রহ নিয়ে লক্ষ করেছি প্রিমিয়ার Kosygin মস্কোতে একটি সাম্প্রতিক ভাষণে প্রখর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উপমহাদেশে শান্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তি ভঙ্গের প্রতিরোধ করতে সম্ভব সবকিছু করবে। আমি স্বাগত জানাই এবং আন্তরিকভাবে আশা করি যে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভাব ব্যবহার করে ভারত একটি সশস্ত্র সংঘাত হতে বিরত রাখতে পারবে। তবে আমি দু: খ প্রকাশ করছি প্রিমিয়ার Kosygin জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সেইসাথে আগমন এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের সহজতর সম্পর্কে গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ করেননি।
U.N. পর্যবেক্ষকদের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফেরত সহজতর এবং সীমান্তে বিস্ফোরক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার মত অনেক প্রস্তাবকে আমাদের তরফ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে কিন্তু ভারতীয়রা অগ্রাহ্য করেছে। এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নয়।
সরকার দ্বারা সাধারণ ক্ষমা এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থার ফলে দুই লক্ষ মানুষ পাকিস্তানে ফিরে এসেছে কিন্তু ভারত এখনো একটা বড় অংশ ধরে রেখেছে, যদিও তাদের সংখ্যা একেবারেই অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, আমরা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা মূল্যায়ন করতে যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্বাগত জানাব। এই প্রস্তাবও ইন্ডিয়ানরা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুস্পষ্ট উপসংহারে এই যে যেমন স্ফীত পরিসংখ্যান ভারত দ্বারা দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যে হতে পারে এবং সেটি মিথ্যা অজুহাতে সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যের চেষ্টা। তারা জোর করে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তি ও শিবিরে একটি শোচনীয় অবস্থায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের রেখেছে এবং তাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয় নি। আমরা সব বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ যদি তারা একটি মানবিক সমস্যা হিসেবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ভারতকে প্রভাবিত করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুজি তৈরীর পরিবর্তে, তাদের ঘরে ফিরে আসতে দেয়া হোক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং আমাদের সীমানা থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করার প্রয়োজন ভারতের উপর প্রেসার দেয়া উচিত।উত্তেজনা হ্রাস এবং একটি সর্বনাশা যুদ্ধ যাতে উভয় দেশের জীবন ও সম্পদের প্রভূত ক্ষতি স্থাপিত হবে তা থেকে রক্ষার এটি একমাত্র সমাধান।
এটা আমরা আন্তরিক বিশ্বাস করি যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফেরত সহায়ক অবস্থা সৃষ্টির জন্য এটি অপরিহার্য যে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাজ করা উচিত এবং উত্তেজনা কমাতে এবং দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। মনের মধ্যে এই হচ্ছে আমরা অতীতে গ্রহণ করেছেন এবং সবসময় কোনো মহল এই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে থেকে কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ বিবেচনা করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। এট মনে রেখে আমরা অতীতেও গ্রহণ করেছি এবং সবসময় যে কোনো মহল এই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে এরকম কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ বিবেচনা করার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এখানে, আমি আমার দেশের যারা বিদেশে বসবাসকারী এবং যারা ভারতীয় প্রচারক এবং তাদের খলনায়কদের ভয়াবহ কাহিনী দ্বারা বিভ্রান্ত তাদের কিছু বলতে চাই। আমি আনন্দিত যে এসব তথ্য এখন তাদের পরিচিত হয়ে উঠছে । আমি চাই যদি এটা সম্ভব হয় তারা তাদের দেশে এসে নিজেরা কিছু দেখতে এবং কিভাবে ভারতীয় প্রচারক সত্য বিকৃত করেছে তা আবিষ্কার করতে।
আমি বারবার বলেছি এবং আমি এটা আবার বলতে চাই যে আমরা একটি শান্তিকামী দেশ এবং বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশ্বের সব জাতির সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা অন্য মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার কোন ইচ্ছা নেই এবংআমাদের ব্যাপারে অন্যদের হস্তক্ষেপ করতে দেবো না। নির্বিঘ্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য এবং আমাদের জনগণের জন্য ভাল। আমরা সর্বত্র সংঘাত এড়াতে এবং যেকোন অশান্তিমুলক কাজে না জড়াতে সদা সক্রিয়। যাইহোক, আমাদের দ্বারা একতরফা প্রচেষ্টা যেমন একটি পরিস্থিতির জন্য একা যথেষ্ট নয় এবং সেখানে ভারত থেকে প্রতিক্রিয়া এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আসছে। আমরা জানি এবং আমি আশা করি আমাদের প্রতিবেশীও বুঝতে পারবে যে সশস্ত্র সংঘাতে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। আসলে এ ধরনের দ্বন্দ্ব আরও সমস্যার সৃষ্টি করে এবং অগ্রগতি গতি ব্যাহত করে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে দুই দেশের মধ্যে সব বিদ্যমান সমস্যার কাশ্মীর ও ফারাক্কা বাঁধ সহ একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করা উচিত। যদিও শান্তি কামনা করি, তাহলেও আমরা সম্পূর্ণরূপে আত্মরক্ষা এবং আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হয়।
আমি এখন ক্ষমতায় হস্তান্তরের আমার পরিকল্পনার বিবরণ যা আমি এই বছর ২৮ জুন তারিখে ঘোষণা করেছিলাম এবং যা ১৮ সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম, সে সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করতে চাই। আমি এখানে যে পরিকল্পনা জানাতে যাচ্ছি তা সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং তাদের আমি কি ঘোষণা দিতে যাচ্ছি সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে অবগত করা হয়েছে।
আপনারা অবগত আছেন যে, আমি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বারা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনগুলিতে খালি রাখা জাতীয় পরিষদের সীট সেইসাথে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের খালি সীটগুলো পূরণের জন্য।
সংবিধান ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বরে ও জাতীয় পরিষদ ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ডাকা হবে।
এছাড়াও আপনি সচেতন যে জাতীয় পরিষদে সংবিধান ও এই কাজের সুবিধার জন্য একটি বিশেষ সহজ পদ্ধতি সংশোধনের পরামর্শের প্রতিটি সুযোগ ৯০ দিনের প্রাথমিক সময়ের মধ্যে করার সুযোগ থাকবে।
এই পদ্ধতি এমন হতে হবে যে বিধানসভা পরিষদের একটি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন সংখ্যা এবং প্রদেশের একটি ঐক্যমত্য দ্বারা সংবিধানের একটি সংশোধনী উত্থাপন করা হতে পারে যেখানে প্রতিটি প্রদেশের মোট আসনের সর্বনিম্ন ২৫% থাকবে। এইগুলো সংখ্যাগুলো আসার উদ্দেশ্য হল, একটি ভগ্নাংশ সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করা হবে। আমি যোগ করতে পারি যে আমার বিবেচনা বা প্রস্তাবিত সংশোধনী পুনর্বিবেচনার জন্য ৯০ দিন সময় গ্রহণ করা হয়েছে। আমি এইভাবে অনুমান করি যে প্রস্তাবিত সংশোধনী তার প্রবর্তনের থেকে এই সময়ের সর্বত্র আমার নিকট পেশ করা চলতে থাকবে। সর্বশেষ সংশোধনী, যাতে তিন মাস সময়ের প্রবর্তনের ঘোষনার পর থেকে ৮০ দিনের মধ্যে হাউস দ্বারা আমাকে জমা করা হবে যেন আমাকে তাদের বিবেচনা বা পুনরায় বিবেচনার জন্য কমপক্ষে ১০ দিন থাকে। সুতরাং এই প্রক্রিয়ার পুরো সমাপ্তির ৯০ দিনের মোট সময়কাল অতিক্রম করবে না।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে সম্পন্ন করা হবে। জাতিয় পরিষদ হাউসের প্রাচীনতম সদস্য যাকে আমি মনোনীত করব তার সভাপতিত্বে ২৭ ডিসেম্বর তারিখে সমবেত হবে। এরপর সদস্যদের দ্বারা শপথ এবং স্পিকার এবং ডেপুটি ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে।
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন পর গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার পর জমা এবং সংশোধনী বিবেচনার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা আরম্ভ হবে।
উপনির্বাচনে দ্বারা কয়েকটি নারী-আসনের জন্য নির্বাচন সম্পন্ন করার পর শীঘ্রই পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ তলব করা যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষণা করা হয়েছে। ১০৫ আসনে উপনির্বাচনের জন্য ১২ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর মধ্যে ৭৮টি সীটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৮৮টি সীটে ১লা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এইভাবে প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের কার্যকরীতা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং প্রদেশে সরকার গঠনের জন্য মঞ্চ সেট করে দেয়া হয়েছে।
আমি বিস্তারিতভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমার পরিকল্পনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। আগেই বলেছি, এই পরিকল্পনা পুরোপুরি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জানানো হয়েছে এবং এখন আমি এটা জাতির জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। এখন আর সন্দেহ করার কোন কারণ নাই। আমি আশা করব সব রাজনৈতিক দল আন্তরিকভাবে এ পরিকল্পনার সিদ্ধির দিকে তাদের মনোযোগ উৎসর্গ করবে, আমি নেতাগণ এবং জাতির কাছে আবেদন জানাই যে আমাদের দেশের সংহতি এবং অখণ্ডতার বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ ভয়াবহ হুমকি ভুলবেন না।
পুরস্কার অনেক উচ্চ এবং বিপদ অনেক বড় যে কোনোক্রমেই আমরা দেশের প্রতিরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক পথের আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে নিবৃত্ত হওয়া যাবে না। দেশে কোন কর্ম বা যে কারো বিবৃতি গণতান্ত্রিক পথের কৃতিত্ব। দেশে কোন কর্ম বা কারো দ্বারা বিবৃতি যা জাতিকে লক্ষ্য থেকে বিমুখ করতে পারে তা দেশপ্রেমিক হতে পারে না।
আমি, আমার জাতির কাছে আবেদন করব বিশেষ করে জাতীয় প্রেস ও রাজনৈতিক নেতাদের খাপ বা ফটকা এবং গুজবে কান না দিতে যা, যদি এগুলো না থামান যায়, একটু আগে আমি যা উল্লেখ করেছি সেগুলোকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে এবং আমাদের শত্রুদের আনন্দিত করবে।
জাতি এক ব্যক্তি হিসাবে দাঁড়ানো এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাক। কাপড় আমরা পাকিস্তানিরা কি দিয়ে তৈরি তা দেখিয়ে দিন বিশ্বকে। আমার মনের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের দেশপ্রেম তুলনাহীন, যাদের অন্তরে রাসূল (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এর প্রেম স্পন্দিত হয় এবং যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাদের ইমান এবং যারা ভরসা করে আল্লাহর সাহায্যের উপর এবং যে কোন দিক থেকে যে কোনো চ্যালেঞ্জ পূরণে সক্ষম।
অবশেষে, আমি আবার বলতে চাই অযৌক্তিক বিপদাশঙ্কার কোনো কারণ নেই কিন্তু সেখানে অবশ্যই আত্মপ্রসাদেরও কোনো স্থান নেই। শান্ত এবং ধীরস্থিরভাবে পদ্ধতিতে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আমরা সতর্ক হতে হবে এবং আমাদের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব এর কোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সব পার্থক্য ডুবে যাক এবং যারা আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করছে আমরা সংঘবদ্ধ জাতি হিসেবে দৃঢ়ভাবে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ প্রমান করব। পৃথিবীর কোন শক্তি ইসলামের ১২০ মিলিয়ন মুজাহিদদের তাদের স্বাধীনতা রক্ষা এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারন করা থেকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। চলুন আবার প্রমাণ করে দেই প্রত্যেক পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার মত মহান দায়িত্ব পালন করতে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত।
আল্লাহ আমাদের সাহায্য এবং আমাদের পাকিস্তান রক্ষার গণতন্ত্র পুনরূদ্ধার এবং আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান উত্থাপন সাফল্য দান করুন। খোদা আপনাদের সহায় হোন, খোদা আপনাদের সকলের মঙ্গল করুন।