<৪,২৮,৪৯-৫০>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২৮। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির আবেদন | অ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | এপ্রিল, ১৯৭১ |
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দিন
আমরা বাংলাদেশের জনগণ, যারা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছি, জনগণ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে, বিশ্বব্যাপী সরকার এবং জনগণের কাছে আবেদন করছি যেন তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দেয়া হয়।
আমরা শুধুমাত্র মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যই নয় বরং আমাদের অস্তিত্বের জন্যও যুদ্ধ করছি এবং আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আপনাদের সাহায্য কামনা করছি।
২৩ বছর আগে যখন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়, উভয় প্রদেশে স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখা পূর্বক, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সঙ্ঘ গড়ে তোলে।
বিশ্বাস ও ভ্রাতৃতবোধের চেতনায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ‘পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ’ করেছিল, কিন্তু বিনিময়ে তারা চরম বিস্ময়ে পেয়েছে কেবল অমানবিক নির্যাতন আর লাগামহীন শোষণ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের মুনাফা এবং সম্পদের যোগান দিতে গিয়ে ২৩ বছর ধরে আমরা দারিদ্রের সাথে লড়াই করে যাচ্ছি।
বিগত ১২ বছর ধরে সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থকগণ আমাদের জোর করে দমিয়ে রেখেছে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে এবং আমাদের নেতাদেরকে জেলে আটকে রেখেছে।
গতবছর পাকিস্তানের প্রথম সাধারন প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ প্রথমবারের ভোটে অংশ নিয়েছিলো, যার মাঝে ৯৮% ভোট ছিল মুক্তির পক্ষে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে মুক্তির। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের ৭০% আসনে জয়লাভ করেছিল!!
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক সকল নীতি বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। তাদের আধুনিক এবং উৎকৃষ্ট যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা হত্যা করে আমাদের শিক্ষক-ছাত্র-ডাক্তার-আইনজীবী এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের। ট্যাংক-কামান-মেশিন গান ব্যবহার করে তারা হত্যা করে হাজার হাজার নিরাপরাধ ও নিরস্ত্র নারী, পুরুষ ও শিশুদেরকে।
রক্তই যদি হয় স্বাধীনতার মূল্য তবে বাংলাদেশের আত্মত্যাগ বর্ণনাতীত!!!
যদি কোন মানুষ কিংবা সরকার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে থাকে, তাহলে মুক্তিকামী, লড়াকু বাংলাদেশিদের সাথে সংহতি প্রকাশের এটাই সুযোগ!!
যদি সত্যিকার অর্থেই জাতিসংঘ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে থাকে, তাহলে “সকল মানুষের আত্মমর্যাদা অধিকার” চুক্তিটি বাস্তবায়িত করার এটাই সময়।
বিশ্বের সকল মানুষের কাছে, আমরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছি যে, শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত কিংবা সকল বিদেশি হানাদারদেরকে বিতাড়নের আগ পর্যন্ত আমাদের জনগণ লড়াই করে যাবে।
১৯৪০ সালের পূর্বে যুক্তরাজ্য যখন অন্ধকার যুগ পার করছিল, আমরা আপনাদের পাশে থাকতে কার্পণ্য বোধ করিনি- এখন আমাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন না!!
কন্ঠে ঝংকার তুলন, যাতে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারে যে, তারা অসহায় কিংবা একলা নয়!!!
বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি
৫২, ওয়ার্ডসওরথ রোড,
স্মল হিথ,
বিরমিংহাম ১০
০২১-৭৭৩১৪৫৬