<৪,২০২,৪২৩-৪২৮>
অনুবাদকঃ অনুরাধা চৌধুরী, সাবরিনা, খন্দকার কাফি আহমেদ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
২০২। বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্যের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে মাওলানা ভাসানির আবেদন | প্রেস বিঞ্জপ্তি | ২১ আগস্ট, ১৯৭১ |
বিশ্ব নেতাদের কাছে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির সনির্বদ্ধ আবেদন
তারিখ – এপ্রিল ২১,১৯৭১।
(i)
সেক্রেটারি জেনারেল ইউ-থাস্ট, জাতিসংঘ,
নিউ ইয়র্ক,ইউ এস এ।
সাত কোটি পাঁচ লাখ বাংলাদেশীর পক্ষ থেকে আমি আপনাকে মধ্যস্থতাকারী হয়ে আমি আপীল করছি যে আপনি আপনার দক্ষ অফিসারদের ব্যবহার করুন এবং এক নায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অধিনস্থ সৈন্যদের কর্তৃক বাংলাদেশের ধর্ম,বর্ণ,মতবাদ নির্বিশেষে নারী,শিশু ও মায়ের কোলের সদ্যজাত শিশুসহ নিষ্পাপ,নিরস্ত্র ও অসহায় বাংলাদেশীর উপর সম্পাদিত নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও জন্মগত অধিকার দমনে পশিম পাকিস্তানের হস্তক্ষপের বিরুদ্ধাচার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। মানবতার নামে বর্বর এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে যত দ্রুত সম্ভব যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিবেদন জানাচ্ছি। সেই সাথে বাংলাদেশে এক নায়ক ইয়াহিয়া খানের মিলিটারি আইনের শিকার মানুষের জন্য সম্ভাব্য সকল ত্রাণ সহায়তা দানে সনির্বদ্ধ আবেদন জানাচ্ছি। জন্য।আমি আপনার পাঠানো পর্যবেক্ষকদের স্বাগতম জানাতাম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা দেখার জন্য এবং লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ,গণহত্যা ও নারীদের প্রতি উৎপীড়ন পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা,যাতে করে বিশ্ববাসীর কাছে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের শোচনীয় কাহিনীর প্রকৃত ছবি প্রকাশ পায়।
(ii)
প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং,চাও এন লেই পোকিং,চায়না
সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শ হল নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই। আমি আপনার নিকট একনায়ক ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা দ্বারা সম্পাদিত নৃশংসতা থেকে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি নিপীড়িত মানুষকে বাঁচানোর অনুরোধ করছি। আপনার সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সাহায্যে ইয়াহিয়া সামরিক সরকার নির্দয় ও নিষ্ঠুরভাবে বাংলাদেশের নিষ্পাপ,নিরস্ত্র, অসহায় কৃষক,শ্রমিক,ছাত্র,বুদ্ধিজীবি,নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। যদি আপনার সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ কায়েমে তাদের মিলিটারিজান্তা কর্তৃক বাংলাদেশের উৎপীড়িত জনসাধারণের উপর বর্বর নৃশংসতার প্রতিবাদ না করেন,তবে বিশ্ব ভাবতে পারে আপনি নিপীড়িত মানুষের বন্ধু নন।
নিপীড়নের যে উদাহরণ পাকিস্তানী বাহিনী অসহায় বাঙ্গালীদের উপর প্রদান করছে তা চ্যাং-খাই শেখের আমলে , রাশিয়াই সিজারের শাসনামলে অথবা ভারতীয় মহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলেও দেখা যেত না । বিভিন্ন ভারতীয় এজেন্সি পাশবিকতা ও নির্যাতনের যে চিত্র পেশ করছিল তা আসলে বাঙ্গালীদের উপর চলে আসা নির্যাতন ও পাশবিকতার তুলনায় কিছুই না । সমগ্র বিশ্ব প্রকৃত চিত্রের ভয়াবহতা তখনই জানতে পারবে যখন সাংবাদিক , বুদ্ধিজীবী এবং ইয়াহিয়া সরকারের মিত্রপক্ষসহ বিশ্বের যে কোনো দেশের রাজনীতিবিদরা অনুসন্ধান চালাবে ।
আপনারা জানেন যে কম্বোডিয়ার সিহানোক সরকারের তুলনায় এখা্নে স্বাধীন বাংলাদেশের পিছনে বিস্তর মানুষের সমর্থন আছে । সুতরাং আমি আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি আপনারা আমাদের সমর্থনের মাত্রা বাডিয়ে দিন, স্বীকৃতি দিন এবং আপনাদের পক্ষে যতটা সম্ভব স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের জন্য সম্পূর্ণ সাহায্য করুন ।
ইন্দো-পাক উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য এবং পাকিস্তানীদের অধিকার রক্ষার্থে আমাকে ৩১ বছর জেলবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে । এখন আমি ৮৯ বছরের বৃদ্ধ । এ পর্যায়ে আমার বাড়িঘর ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী পুড়িয়ে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা আমার বহু মুল্যবান বই ও এর সাথে পুড়ে গেছে । আমি এও জানিনা আমার পরিবারের মানুষের ভাগ্যে কি হয়েছে আমার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর ।
(iii)
সেক্রেটারী জেনারেল ব্রেযনেভ , প্রেসিডেন্ট পজর্নি , চেয়ারম্যান কোসিগিন , ক্রেম্লিন , মস্কো , ইউএসএসআর
বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়নের মানুষের পক্ষ থেকে আমি কি পূর্ব পাকিস্থানের অবস্থা সম্পর্কে সুপ্রীম সোভিয়েতের প্রেসিডিয়ামে প্রেসিডেন্ট পজর্নি কর্তৃক বর্ণিত প্রদত্ত উক্তিতে আপনার মনোযোগ আকর্ষন করতে পারি?
বাংলাদেশের অসহায় , নিরস্ত্র অসংখ্য মানুষের উপর শাসক ইয়াহিয়া খানের হানাদার মিলিটারী বাহিনীর হিংস্র ধ্বংসযজ্ঞ থামানোর জন্য যে আরো পদক্ষেপ দরকার এই বিষয়টিতে আপনার দৃষ্টি আলোকপাত করতে চাই । পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে আমারিকা ও চায়না প্রদত্ত অতি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছে । মহিলা , বাচ্চা এমনকি মায়ের কোলে থাকা নবজাতক শিশুসহ জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ এদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে । তাদের এই হিংস্রতা ইতিহাসের যে কোনো ঘটনাকে হার মানাবে । এই রক্তাক্ত ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে পাকিস্তানী সরকারকে যে কোনো সাহায্য প্রদানে বিরত থাকতে আমি আপনাকে আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি । লেলিনের বিজ্ঞ ও দৃঢ়বিবেচক নেতৃত্বাধীনে আপনি ও আপনার দেশের জনগন এর আগেও আর্ত মানুষের সাহায্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞার সাথে পাশে দাড়িয়েছেন এবং স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে নৈতিক , রাজনৈতিক এবং সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করেছেন । গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সম্মতি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকেও একইভাবে সাহায্য করতে আমি আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এশিয়া এবং ইউরোপের অংশবিশেষ । লেনিনীয় শান্তির প্রথা উন্নয়নের পথে উত্তম দিকনিদর্শন বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য । বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নির্যাতন ও সাম্রাজ্যবাদের এক নিক্কৃষ্ট নিদর্শন । লুটতরাজ , ডাকাতি , ছিনতাই , গনহত্যা , নারীনির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা । হিংস্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিপক্ষে সোচ্চার হতে আমি আপনাদের জনগনের সাহায্য প্রার্থনা করছি । আমি আশা ব্যক্ত করছি আপনাদের সরকার এই গুরুতর বিষয়টিতে অতি দ্রুত দৃষ্টি আলোকপাত করবেন এবং বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভাগ্য নির্ধারণের স্বাধীনতা অর্জন করবে ।
ইন্দো-পাক উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য এবং পাকিস্তানীদের অধিকার রক্ষার্থে আমাকে ৩১ বছর জেলবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে । এখন আমি ৮৯ বছরের বৃদ্ধ । এ পর্যায়ে আমার বাড়িঘর ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী পুড়িয়ে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা আমার বহু মুল্যবান বই ও এর সাথে পুড়ে গেছে । আমি এও জানিনা আমার পরিবারের মানুষের ভাগ্যে কি হয়েছে আমার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর ।
( IV )
প্রেসিডেন্ট নিক্সন , ওয়াশিংটন ডিসি , ইউএসএ ।
ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে আমারিকা ও চায়না প্রদত্ত অতি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানী মিলিটারী বাহিনী মহিলা , বাচ্চা এমনকি মায়ের কোলে থাকা নবজাতক শিশুসহ জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে নিষ্পাপ , নিরস্ত্র , অসহায় মানুষের প্রাণ নাশ করছে ।
আমি আপনার কাছে পাকিস্তানীদের যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি এবং পূর্বে সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে অনুসন্ধান করার আবেদন করছি যেন ইয়াহিয়া সরকার সেগুলো নিরস্ত্র বাঙালীদের নিধনে আর ব্যবহার না করতে পারে ।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে আপনার সর্বোচ্চ সাহায্য কামনা করছি ।
আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব যদি বিভিন্ন বিদেশী সংবাদপত্রের প্রতিবেদকদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয় যেন তারা পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের উপর লুটতরাজ , ছিনতাই , ডাকাতি , গণহত্যা , নারীনির্যাতনসহ যে অবিচার করে আসছে তার পরিমাণ ও স্বরুপ যেন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারে ।
(V)
প্রেসিডেন্ট পম্পিদৌ , প্যারিস , ফ্রান্স
৭৫ মিলিয়ন বাঙালীর পক্ষ থেকে আমি কি আপনার প্রতিবাদের উচ্চস্বর আহবান করতে পারি যখন স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী মিলিটারী বাহিনী আপনাদের এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের দেওয়া অস্ত্রের সাহায্যে যে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ?বাংলাদেশের জনগনের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এই নির্মমতার বিপক্ষে আপনার প্রতিবাদের জন্য আবেদন জানাচ্ছি । যুগান্তকারী আন্দোলনে ফ্রান্সের অবদান তাদের ঐতিহ্য এবং এই মর্মে আমিও আশাবাদ ব্যক্ত করি যে আপনার নেতৃত্বাধীনে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকবে পশ্চিম পাকিস্তানী মিলিটারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভাগ্য নির্ধারনে এবং তাদের অধিকার বাস্তবায়নে । ভিয়েতনাম এবং আলজেরিয়ায় চলে আসা ঘটনার সত্যতা নিরুপনে পূর্বেই ফ্রান্স মাহাত্মের নিদর্শন রেখেছে এবং আমরা আশা রাখি আপনি জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন । গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আমাদের প্রতি আপনার সর্বোচ্চ সাহায্য কামনা করছি । আপনাদের সংবাদ প্রতিবেদকদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয় নিজেরাই তারা দেখতে পারবে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের উপর লুটতরাজ , ছিনতাই , ডাকাতি , গণহত্যা , নারীনির্যাতনসহ যে অবিচার করে আসছে তার পরিমাণ ও স্বরুপ ।
(VI)
প্রাইম মিনিস্টার এডওয়ার্ড হিথ , লন্ডন , ইউকে
৭৫ মিলিয়ন বাঙালীর পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি তাদের জন্মগত অধিকার নিজেদের ভাগ্য নির্ধারনের স্বাধীনতার স্বপক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য । শাসক ইয়াহিয়া খানের ধ্বংসযজ্ঞ যা শত শত বাঙালীর জীবন নাশ করছে তার বিপক্ষে দয়া করে সোচ্চার হয়ে উঠুন । আমি আপনার কাছে আরো অনুরোধ করছি তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ না করতে যেন আর কোন অসহায় , নিরস্ত্র বাঙালীকে প্রাণ না হারাতে হয় । আমি আশা ব্যক্ত করছি লন্ডন সরকার ঘটনার বাস্তবতা অনুধাবন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে যথাযথ সহযোগীতা করবে । ব্রিটিশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান হৃদয়বিদারক হলেও তা পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের উপর যে পরিমাণ লুটতরাজ , ছিনতাই , ডাকাতি , গণহত্যা , নারীনির্যাতনসহ অবিচার করে আসছে তার প্রকৃত পরিমাণ ও স্বরুপের তুলনায় কিছুই না ।
(VII)
প্রেসিডেন্ট টিটো , বেলগ্রেড , যুগোস্লোভিয়া
৭৫ মিলিয়ন বাঙালীর পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি
শাসক ইয়াহিয়া খানের ধ্বংসযজ্ঞ যা শত শত নিরস্ত্র , অসহায় বাঙালীর জীবন নাশ করছে তার বিপক্ষে দয়া করে সোচ্চার হয়ে আওয়াজ তোলার জন্য । বাংলাদেশের মানুষ যে অধিকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান করছি । যখনই কোথায় মানবাধিকার বঞ্চনার শিকার হয়েছে আপনি সেখানে সোচ্চার হয়েছেন । প্রেসিডেন্ট সাহেব আমি আপনাকে অনুরোধ করছি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ধ্বংশযজ্ঞের পক্ষে এবং নির্মম শক্তির প্রয়োগে যেভাবে মানব স্বাধীনতা অস্বীকার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধেও একইভাবে আওয়াজ তুলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আমাদের পাশে এসে দাড়াতে । আপনাদের সংবাদ প্রতিবেদকদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয় নিজেরাই তারা দেখতে পারবে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের উপর লুটতরাজ , ছিনতাই , ডাকাতি , গণহত্যা , নারীনির্যাতনসহ যে অবিচার করে আসছে তার পরিমাণ ও স্বরুপ ।
(VI I I)
প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত,কায়রো, ইউ. এ. আর.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,একজন মুসলিম বিশ্বের মহান ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে আপনার কাছে আমি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি অসহায় মানুষের পক্ষে সমর্থন জানানোর জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি যাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা খুনে স্বৈরশাসক জেনারেন ইয়াহিয়ার সৈন্য কর্তৃক নৃশংস ভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে। এটি ইসলামের নামে একটি প্রহসন যা বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা সৃষ্ট। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত হয়ে শত শত হাজার হাজার নিরীহ,নিরস্ত্র,অরক্ষিত মানুষদের হত্যা করছে। অস্ত্রের জোড়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুন্ডামি,শ্লিলতাহানি এবং হত্যাযঙ্গ না দেখে বিশ্বাস করা দায়। আপনার কাছে আমার অনুরোধ আপনি কি এই নৃশংসতা ও দমনীয় মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন এবং অবিলম্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান এবং সহায়তার হাত প্রসারিত করবেন যাতে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী মিলিটারি হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা যেন নিজেদের অধিকার এবং ভবিষ্যত নির্ধারন করতে পারি?
IX
জনাব আবদেল খালেক হাসাওনা
সেক্রেটারি জেনারেল,আরব লিগ,কায়রো, ইউ. এ. আর.
আমি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে আপনার কাছে আরব লীগকে খুনি স্বৈরাচারী শাসক ইয়াহিয়া খানের বাংলাদেশে অসহায়,নিরস্ত্র এবং অরক্ষিত মানুষের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। নারীদের পালাক্রমে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এমনকি নবজাতক শিশু কোলে থাকা মায়েদেরকেও রেহায় দেয়া হচ্ছে না। এসব অবর্ণনীয় কর্মকান্ডগুলি একটি মুসলিম দেশের সৈন্যরা সিংহভাগ মুসলিমদের ওপর চালাচ্ছে। আরব লিগ সর্বদাই নিপীড়ন ও অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। বাংলাদেশে এই ভয়ানক ঘটনায় আরব লীগের নীরবতা জনমনে হতাশা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হিংস্র সৈন্যদের লেলিয়ে দেয়ার পর থেকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাবলী আমি আপনাদেরকে আরব লীগের সামনে পেশ করার অনুরোধ করব, যাতে করে লীগের সদস্যদের উদ্যোগ/বক্তব্য বাংলাদেশে বর্তমানে চলমান রক্তপাত ও মানুষের অধিকার দমনকে থামাতে সক্ষম হয়। আমি আপনার প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের নিরীহ, নিরস্ত্র এবং অসহায় মানুষ যেভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর দ্বারা সংগঠিত লুটপাট,অগ্নিসংযোগ,হত্যা এবং নারীদের ওপর চালানো শ্লীলতাহানির মতো অপরাধ প্রত্যক্ষ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
(X)
মিঃ ডিয়াল্ল টেল আই
সেক্রেটারি জেনারেল ও এ ইউ আদ্দিস আবাবা
আমি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ হতে ও এ ইউ ‘র কাছে ইয়াহিয়া খানের খুনে সেনাবাহিনী দ্বারা বাংলাদেশের অসহায়,নিরস্ত্র ও অরক্ষিত মানুষের ওপর বর্বরতা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী দ্বারা পুরুষ,নারী ও শিশু হত্যা এবং নারীদের শ্লীলতাহানি একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। একটি ক্ষুদ্র সামরিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের জনগণেরর মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার দমন করার জন্য জোড় শক্তি প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ও এ ইউ যা উপনেবিশবাদ দমনের জন্য লড়াই করছে,বাংলাদেশে দানা বাঁধতে শুরু করা ঔপনেবিশবাদের নগ্ন কথনের বিরুদ্ধে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মাননীয় মহাসচিব,মানবতার নামে আমি আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি নিরীহ জনগণের ওপর এই নৃশংস গণহত্যা বন্ধ করুন এবং বাংলাদেশে সৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের শিকার সকলের জন্য সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।